উৎসব - উৎস, বৈচিত্র্য, প্রভাব ও কার্যকারিতা (পর্ব-৫)
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
আগের পর্বগুলোতে প্রধান কিছু উৎসবের আলোচনা সংক্ষেপে করা হয়েছে। এছাড়াও অনেক উৎসব সাড়ম্বরে পালিত হয়ে থাকে।
খ্রিস্টানদের আরো উৎসবগুলোর মধ্যে গুড ফ্রাইডে ও ইস্টার বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।
খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দিনটি গুড ফ্রাইডে নামে পরিচিত। অন্যদিকে লৌকিক উৎসব হিসেবে ' ইস্টার ' কিন্তু চলে আসছে খ্রিস্টজন্মের অনেক আগে থেকে। পরবর্তীতে প্রোটেস্টান্টদের প্রভাবে ইস্টারের নিয়ম কানুনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। তা হয়তো সময়ের সাথে তাল মেলাতে গিয়েই।
ইহুদিদের উৎসব-
পাস ওভার: আট দিন ব্যাপী এই উৎসব পালিত হয় মিশরীয়দের দাসত্ব থেকে ইহুদিদের মুক্তি উপলক্ষ্যে। কাহিনী শোনা ও ভোজের মাধ্যমে পালন করা হয় এই উৎসব।
সাবাথ: ইহুদিদের বিশ্বাস, ঈশ্বর ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন আর সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিয়েছেন। এই বিশ্বাস থেকে প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাবাথ উৎসব পালিত হয়। মোমবাতি জ্বালিয়ে, সিনাগগে প্রার্থনা করে ও খাওয়া দাওয়া করে এই উৎসব পালিত হয়।
রোশ হাশানা: ইহুদিদের নববর্ষের উৎসব। ঈশ্বরের মানুষ সৃষ্টির উপলক্ষ্যে এই দিনে এই উৎসব পালিত হয়। এই দিন থেকে ইহুদিদের নববর্ষ শুরু হয়।
হানুক্কর: নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এ যেন ইহুদিদের ' দীপাবলি '। এক আলোর উৎসব। আর এই উৎসব চলে আট দিন ধরে।
ইয়োম কিপপুর: ' রোশ হাশানা ' উৎসবের দশ দিন পর সাধারণত এই উৎসবটি হয়ে থাকে। তাদের বিশ্বাস, ঈশ্বর এই দিনে ইহুদিদের সব অপরাধ ও পাপকাজ ক্ষমা করেছিলেন। তাই ইহুদিরা তাদের বিশ্বাস মতে প্রায়শ্চিত্তের জন্য উপোস ও ব্রত রাখেন।
জৈনদের উৎসব-
মহাবীর জয়ন্তী: জৈনদের উপাস্য যতজন তীর্থঙ্কর ছিলেন, তাদের মধ্যে চব্বিশতম ছিলেন মহাবীর। তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও পূজিত। তারঁ জন্মজয়ন্তীতে জৈনদের সর্ববৃহৎ উৎসবটি পালিত হয়। জৈন মন্দিরগুলো রঙ বেরঙের পতাকায় সেজে ওঠে। শোভাযাত্রা বের হয়। মহাবীরের প্রতিকৃতি নিয়ে সুসজ্জিত রথ পথ পরিক্রমায় বের হয়।
জৈনদের ও নিজস্ব একটি ' দীপাবলি ' আছে। যদিও কারণটা ভিন্ন। মহাবীর সেদিন নশ্বর দেহ ত্যাগ করেছিলেন ও মোক্ষ লাভ করেন ব'লে কথিত আছে। আর তাই তাঁর জ্ঞানের আলো প্রজ্জ্বলিত করে রাখতে আঠারোজন রাজা উপস্থিত হয়েছিলেন বলে বিশ্বাস। তাই ওই রাতে জৈনরা নিজেদের গৃহ আলোকিত করে রাখেন।
পর্যুশন:
এই উৎসবকালে জৈন সন্ন্যাসীরা বিশ্রাম করে থাকেন। শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ের লোকেরা এই উৎসব পালন করেন আট দিন ধরে আর দিগম্বরেরা দশ দিন ধরে। এই সময় দশগুণের সঞ্চারের জন্য প্রত্যেকে ব্রতী হন।
পারসীদের উৎসব-
গহম্বর: পারসীরা তাদের ছয় ঋতুতে ছয়টি গহম্বর উৎসব পালন করেন। এই সময় বিশ্বের সমস্ত সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়।
জরথ্রুস্ট নো দেশো: পারসীদের কাছে এ এক গুরুত্বপূর্ণ পরব। এ দিন জরথ্রুস্টের নির্মাণের দিন।
খোরাদাদ সাল: জরথ্রুস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। প্রাচীনকাল একে ' নভরোজ ই খাস ' নামে উল্লেখ করার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। সব স্তরের মানুষেরা এই উৎসবের অংশীদার হয়ে থাকেন।
বৌদ্ধদের উৎসব-
বুদ্ধজয়ন্তী: ভগবান বুদ্ধের জন্ম, বোধি লাভ ও মহাপরিনির্বাণ- সবই বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে। আবার কারো মতে, বুদ্ধদেবের স্ত্রী যশোধরা ও কয়েকজন শিস্য ও এ'দিনেই জন্মান। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে তাই বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় উৎসব। জাপান, চিন, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে এটি জাতীয় উৎসবের মর্যাদা পেয়ে আসছে।
লোসার: বৌদ্ধদের নববর্ষের উৎসব হল ' লোসার '। বাড়িঘর আলোকিত করা, প্রার্থনায় সামিল হওয়া ও খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে জমে ওঠে এই জনপ্রিয় উৎসব।
শিখদের উৎসব-
বৈশাখী: দশম শিখ গুরু গোবিন্দ সিংহ এই দিনে শিখদের পবিত্র ' খালসা ' প্রতিষ্ঠা করেন। প্রত্যেক গুরুদ্বারে এ'দিন পবিত্র ' গ্রন্থসাহেব ' পাঠ করা হয়। ' গ্রন্থসাহেব ' নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। কীর্তন, তরোয়াল খেলা ও ভাঙরা নাচের প্রদর্শন করা হয়।
গুরুপরব: দশজন শিগগুরুর জন্মদিনই গুরুপরব হলেও প্রধানতঃ গুরু নানকের জন্মদিনই মর্যাদার সাথে ও উৎসাহের সাথে ' গুরুপরব ' হিসাবে পালন করা হয়। কার্ত্তিক মাসের শুরুতেই প্রস্তুতি আরম্ভ হয়ে যায়। ' আলোর উৎসব' এর রূপ ধারণ করে এই উৎসব। সমস্ত শিখ ধর্মাবলম্বীরা আনন্দে মেতে ওঠেন এই উৎসবের আবহে।
(চলবে)
সূত্র- নানান সাময়িকী পত্রিকা।




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন