পুনর্দখলের মতো ভাষা আমরা অভ্যাস করে ফেলেছি
আবদুস সালাম
তাৎক্ষণিক আবেগ বাঙালির অন্যতম একটি স্বভাব ধর্ম।পরিব্যাপ্ত নেতা নেত্রীর রাজনীতি এ রাজ্যের প্রতিবাদ-বিরোধী রাজনীতি সমর্থক রূপে গৃহীত । উপরন্ত বাঙালি গণতন্ত্রকে দলতন্ত্র রূপে দেখতে অভ্যস্ত। জোর যার মুলুক তার , এই মাপ কাঠিতে রাজ্যের রাজনীতির উত্তাপ পরিমাণ পরিমাপ করা হয়। এলাকা দখলের মতো মানসিকতা এই মানসিকতার ফসল ছাড়া আর কিছুই নয় । বর্তমানে দখল এবং পুনর্দখলের মতো ভাষা আমরা অভ্যাস করে ফেলেছি।
বন্ধ ডেকে , রাস্তা অবরোধ করে জনজীবন স্তব্ধ করে দিয়ে রাজনৈতিক শক্তির পরীক্ষা যাচাই করায় এখন ভারতীয় গনতন্ত্রের অলিখিত সংবিধান । দলে বেনো জল ঠেকাবার কোন উদ্যোগ নেই। পাইয়ে দেওয়া ,ডানা ছেঁটে দেওয়ার মতো সরল রাজনীতি বাংলার একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
বিগত বছরগুলোতে বস্তাপচা বুলী শুনে শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। কেবল দিতে হবে দিতে হবে এই শ্লোগানে মুখরিত দেশ । কেমন করে দিতে হবে ,কি দিতে হবে ? কেই বা দিবে এসব আমরা কিছুই জানি না। কোথায় গেলে পাওয়া যেতে পারে , তাও আমরা জানি না ,কোনো নেতা মন্ত্রীরা এর সদুত্তর দিতে পারেননি আর জানেন ও না। লোকে ভোট দিয়েছে না জোর করে ভোট আদায় করে জিতেছি, কে দিবে এর উত্তর।!কানার বোলে হরি বোল।
আমরা সব চৈত্র মাসের বাদুলে হাওয়ার সঙ্গী । কোথায় উড়ে চলেছি আমরা কেউ জানি না।
পরিবর্তনের নামে ঠেঙাড়ে বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিচ্ছে সবাই। নেতাকর্মীদের সবাই জেনে গেছে পয়সা খরচ করে ভোটে জিতেছি।কেউ ইচ্ছে করে , আমার নীতি আদর্শ দেখে ভোট যে দিয়েছে তা তো নয়। তাই নীতি আদর্শ নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। নীতি আদর্শ নিয়ে ধুয়ে জল খাব। আগামী পাঁচ বছরে যতটুকু সম্ভব পুঁজি করে নিতে হবে। নিজের ভালো টা নিজেকে বুঝে নিতে হবে । গিভ্ এন্ড টেক পলিসিতে আমরা বিশ্বাস করি ভাইয়া। যদি আমরা এসব ভুলে যায় তবে লোকে মহামূর্খ বলে রাস্তায় রাস্তায় পোষ্টার ঝুলিয়ে শ্লোগান দিবে । সর্বজ্বরহর মাদুলির মতো সমাজতন্ত্র, নৈতিকতাকে ধারণ করে বুকে ঝুলিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মরতে হবে।আরে মশাই আপনি ও খান আমাদের কেউ খেতে দিন। দেখবেন আপনার আসন টলাবার মতো কেউ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না।
এই রাজ্যের শক্তি পরীক্ষা হয় বন্দ এর সাফল্যের উপর । যে যত বেশি বাহুবলী সেই দলের গুরুত্ব ততবেশি রাজ্যের নির্বাচনে।তবে একটা কথা বলতেই হয় ভোট লোকে দিয়েছে তো কি হয়েছে? । জনসমর্থন পাচ্ছেন তো কি হয়েছে । ভোট যুদ্ধ জিতেছি, দায়িত্ব ও প্রশাসনের বিভিন্ন দিকে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি হচ্ছে ।সেইসব অভিজ্ঞতাকে কাজে না লাগিয়ে আবেগ সর্বোচ্চ নীতি আঁকড়ে ধরে মহাকরণের জমি জরিপ করার মধ্যে আর যাই হোক রাজনৈতিক বিচক্ষনতার কোন অস্তিত্ব আমাদের চোখে পডছে না ।
এখন প্রশ্ন হলো ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারলেই যদি সমস্যার সমাধান হবে তার হলে দলে বেনো জল ঢুকছে কেমন করে? অবাস্তব ও বাস্তবজ্ঞান রহিত হয়ে প্রতিশ্রুতির বন্যাতে ভরে দেওয়া কেন ? পরিবর্তনের নামে সামনে সারির উজ্জ্বল মুখ গুলো সরে সরে যাচ্ছে। পরিবর্তন শুধুমাত্র ব্যক্তির হচ্ছে । সাধারণ মানুষের , দেশের কোন উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে কি? অতএব শুধু শুধু উন্নয়ন কথার কথা হয়ে থেকে যাবে। আমাদের দরকার চিন্তা ভাবনার নেতিবাচক মনোভাব সরিয়ে সদর্থক চিন্তা করার। তবেই তো পরিবর্তন অর্থ বহ হয়ে উঠবে।নইলে নতুন বোতলে পুরনো মদ ভরার মতোই অবস্থা হবে।
নৈতিক বিরোধিতা কি শুধু তবে কথার কথা ? প্রশ্ন জাগে মনে। কারণ বাঙালি নেতারা কেবল কথার মধ্য দিয়েই নিজেদের মুখ ঢেকে রাখেন ।কথার মারপ্যাঁচ দিয়ে ফাঁকি লুকিয়ে রাখতে বাঙালি চিরকালই ওস্তাদ । নিজেদের অপকর্ম লুকিয়ে ফেলতে বাঙালি চিরকালই ওস্তাদ একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা । আস্তে আস্তে বাঙালি নেতারা এভাবেই নিজেদের আত্মমর্যাদা হারিয়ে চলেছেন। রাজনীতির টানাপোড়েনে সাধারণ মানুষের ওষ্ঠাগত প্রাণ। বাক্যের ফুলঝুরি দিয়ে মঞ্চ কাঁপানো বাংলা সংস্কৃতির অঙ্গ। সবসময় এর দোষ ওর ঘাড়ে,এর দোষ তার ঘাড়ে চাপাতে আমাদের জুড়ি মেলা ভার। আমি নিজে আমরা নিজেরা ধোওয়া তুলসী পাতা। আমরা কোন দোষ করিনি সব দোষ ওরা করেছে ।
নন্দীগ্রাম পুনরায় দখল পাওয়ার জন্য দেখলাম কি সুন্দর হার্মাদ বাহিনীর কার্যকলাপ। পরিকল্পনা মাফিক নিজদের কাজ সেরে বেরিয়ে পড়ছে। প্রশাসন ও পুলিশ একই সূত্রে গাঁথা। ওরা কেন্দ্রের কথা শুনবে না রাজ্যের কথা শুনবে। জানিনা বলে দায় সারছে। ওদের চাকরি বাঁচাতে হবে তো । আরে বাবা বিপক্ষ দল যদি সরকার গঠন করে তবে আমরা যে ভাতে মরবো । এটা নিয়ে কোনও মতেই উঠে পড়ে লাগবেন না ভাই।বৌ ছেলে নিয়ে পথে বসবো ।এই অন্যায় আবদার টুকু মশায় দয়াকরে জানাবেন না কেউ।দু-বাড়ি দিন ,ভাঙা ইঁট মাথায় পড়ুক,তাও ভালো। দুচার দিন হাসপাতালের বেডে গিয়ে পড়ে থাকবো সব ঠিক হয়ে যাবে। বিবেকের দোহাই দিয়ে আমাদের মনোবল ভেঙে দেবেন না প্লিজ।
স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে জনরোষের দায় বলে প্রতিপক্ষ কে নাজেহাল করার কৌশল আমাদের জানা । নন্দীগ্রামে নতুন সূর্য উঠবে এই কথার মালা সাজিয়ে লোকের গলায় পড়াও। কোন ক্ষতি নেই। নেতা মন্ত্রীদের মনের কথা ( তোরা কুকুরের মতো যতোই ঘেউ ঘেউ করনা কেন যতো পারিস, তোদের কাছে আমরা ভোটের দিন পর্যন্ত আছি। ভোট শেষ তোদের কাছে যাওয়া ওশেষ।)
রাজনৈতিক পালাবদলের কালো মেঘ এখন বাঙলার আকাশ জুড়ে। প্রশাসনের কি এসে যায় কে এলো গেল।আগ বাড়িয়ে আমরা কিছু করতে যাবো না। আমরা তো রাজনীতি নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। সাধারণ মানুষের দল দিতে হবে দিতে হবে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করুক না পাড়া। রাজনীতির আলো-আঁধারিতে সাধারণ মানুষের নাজেহাল অবস্থা "রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় নলখাগড়ার পরাণ যায়"।কত মানুষ মিথ্যা কথার মারপ্যাঁচে পঙ্গুত্বের স্বীকার হয়ে মৃত্যুর দিন গোনে। কতো যুবতী বোনেরা বিধবা হয়ে ভাগ্য কে দোষারোপ করে , কতো মা তাদের সন্তান হারানোর বেদনায় পাগল হয়ে যান। সাধারণ মানুষের মনে সবসময় আতঙ্ক কাজ করে। এটা সব পার্টির নেতাকর্মীর গোপন আঁতাত ভাবনা। কোন দলই ক্ষমতায় এলে এ মানুষদের কথা মনে রাখে ।থানায় তাদের নামের আগে তকমা সেঁটে দেওয়া হয় সন্ত্রাসী।বিরোধী নেতা নেত্রীদের দল নিম্ন পর্যায়ের তর্জা শুরু করে।
ভারতের মতো সবচেয়ে বড় গনতন্ত্র আর পৃথিবীর কোথাও নেই। এতোদিন শুনে এসেছি গুরুজনদের কাছে " বাঙালি আজ যা ভাবছে বাকি ভারত দুদিন পর তার ভাবে"! কিন্তু এখন একেবারেই উল্টো।। ভারতের অন্য রাজ্য যা আজ ভাবছেন বাঙলা দুদিন পর সেই ভাবনা ভাবছে।
কেন্দ্রীয় দল আমাদের উজ্জীবিত করে তুলতে প্রতিশ্রুতির বনলতা বইয়ে দিচ্ছেন। আর বঞ্চনার শিকার হতে হবে না বাঙলা কে। দেশের সব উন্নয়ন দিয়ে সাজাবো সোনার বাংলা কে। বাঙলার মানুষ মনে মনে সেই ইচ্ছেটা কে পূর্ণতা দিতে দিশেহারা হয়ে গাইছে (তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই)।
আগামী সুদিনের প্রতীক্ষায় আমাদের প্রহর গোনা শুরু হোক...!
ভালো প্রতিবেদন।
উত্তরমুছুনঅঙ্কুরীশা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক সহ সকল কর্মকূশলীবৃন্দকে হার্দিক শুভেচ্ছা।এই সংখ্যা তে আমার মুক্ত গদ্য টি রাখার জন্য।
উত্তরমুছুন