লেবেল

সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০২২

স্বাধীনতার৭৫।। মুক্ত গদ্য -২৩।স্বাধীনতা ও আমরা — দীনেশ সরকার।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 





স্বাধীনতার৭৫

মুক্ত গদ্য -২৩


                    

স্বাধীনতা ও আমরা

 দীনেশ সরকার

 

 

            শত শত শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা নয় নয় করে পঁচাত্তরটা বছর পার করে ছিয়াত্তর বছরে পদার্পণ করলো ।  আজও আমরা সকলের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারিনি । ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেলেও চেতনায় আমরা আজও স্বাধীন হতে পারিনি । পারিনি আমরা শাসককুলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মেরুদন্ড সোজা রেখে  চলতে । অজানা আশঙ্কায় সর্বদা কুঁকড়ে থেকেছি । অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য আকাশচুম্বী ।  বিশ্বাস অপেক্ষা অবিশ্বাসের পাল্লা বহুগুন ভারী । ‘ বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে !’   

        এ কোন্‌ ভারতবর্ষ ! যে অগনিত ভারতবাসীর ত্যাগ ও শত শত শহিদের আত্মবলিদানে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা, তারা কি এই ভারতবর্ষ চেয়েছিলেন ? তারা স্বপ্ন দেখেছিলেন এক শোষণমুক্ত, বন্ধনমুক্ত ভারতবর্ষের, মুক্তচেতনার মানবিক এক ভারতবর্ষের, এক সাম্যের ভারতবর্ষের । স্বাধীনতা লাভের ৭৫-বছর পরেও আমরা তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি, এ ব্যর্থতার দায় আমাদেরকেই নিতে হবে । 

        একটু পিছনে ফিরে দেখা যাক । স্বাধীনোত্তর যুগে যাদের হাতে শাসনতন্ত্রের ভার পড়েছে তারা জনসেবার চেয়ে আত্মসেবাতেই বেশী মনোনিবেশ করেছে । হাতে গোনা কয়েকজন নেতা-মন্ত্রীর কথা বাদ দিলে বাকিরা সবাই স্বাধীনোত্তর যুগে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে---- বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়েছে ।  দুর্নীতি আর স্বজনপোষণ হাত ধারাধরি করে চলেছে । যত দিন-মাস-বছর গড়িয়েছে দুর্নীতি আর স্বজনপোষণের  মাত্রাও তত বেড়েছে, আজকের দিনে যা লাগামছাড়া । ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে । স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও দেশের মানুষ অনাহারে মরে, বিনাচিকিৎসায় মরে, মাথা গোঁজার চালাটুকু অনেকের নেই । আর শিক্ষা নামক গড্ডালিকা প্রবাহ চলেছে ---- দেদার টাকার লেনদেন । টাকা যার শিক্ষা তার । হায় স্বাধীন ভারতবর্ষ !  

          এই অবস্থার জন্য শাসনতন্ত্রের লাগামছাড়া দুর্নীতি আর স্বজনপোষণ যেমন দায়ী তেমনি দায়ী আমাদের আত্মসচেতনতার অভাব ও লোভ ।  আমরা অর্থ-যশের লোভ ত্যাগ করতে পারি না বলেই শাসনতন্ত্রের কাছে মাথা নোয়াই, মেরুদন্ড সোজা রাখতে পারি না । আর বহুলাংশে দায়ী বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা ।

একজন অপরাধী অপরাধ করে গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে জামিন নিয়ে বেরিয়া আসে। তারপর কোমরবেঁধে আবার ঘৃণ্যকর্মে লিপ্ত হয় । বিচার চলতে থাকে । বছরের পর বছর গড়িয়ে যায় । তারপর লোয়ার কোর্ট, হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ, হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চ, সুপ্রিম কোর্ট, এবং সুপ্রিম কোর্টের ডিভিসন বেঞ্চের পর যখন চূড়ান্ত সাজা ঘোষণা হয় ততদিনে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে যায়,  দশ, পনেরো এমন কি বিশ বছরও অতিক্রান্ত হয় ।  এই ব্যবস্থার আশু পরিবর্তন দরকার । তা নাহলে চুরি, ডাকাতি, ঘুষ, ভেজাল, জালিয়াতি, খুন, ধর্ষণ প্রভৃতির মতো ঘৃণ্য অপরাধ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে ।  অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে এই সমাজেই অবস্থান করবে ।  দেশবাসীর দুরবস্থা বাড়বে বই কমবে না ।

সর্বোপরি সুস্থ সমাজ গড়তে চাই নাগরিক সচেতনতা ।

 

              




             


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন