লেবেল

রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২

স্বাধীনতার৭৫ ।। মুক্ত গদ্য-২১।। স্বাধীনতার ৭৫ বছর — অশোক রায়।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 



স্বাধীনতার৭৫

মুক্ত গদ্য -২১



স্বাধীনতার ৭৫ বছর 

অশোক রায় 


আমার বয়েস সত্তর, দেশের স্বাধীনতার বয়েস পঁচাত্তর।
আমার জন্ম স্বাধীন ভারতে। ভারত স্বাধীন হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। আমার জন্ম ১৯৫২ তে। আমি আমার দেশকে স্বাধীন হতে দেখিনি। কিন্তু আমার স্বাধীন দেশমাতৃকার উন্নতি যজ্ঞে সামিল হতে পেরেছি।

জ্ঞান হয়ে ইস্তক পাড়ায়  পাড়ায় শহরে গ্রামে প্রতি বছর ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করা হত। স্কুল ছুটি থাকত কিন্তু যেতে হত। এন সি সি র ড্রেসে। প্যারেড করতাম। সরকারি স্কুল। টিফিন থাকত দারুণ। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদান স্মরণে সভা হত। লালকেল্লার দুর্গপ্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। ব্যস বছরে ওই একটিদিন। তার আগে ও পরে আর স্বাধীনতা শব্দটি বিশেষ কর্ণগোচর হত না। অবশ্য চক্ষু গোচর হত স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে বা লাইব্রেরির বইয়ের মাধ্যমে। সুতরাং বলতে দ্বিধা নেই স্বাধীনতা সংগ্রামের গনগনে আঁচ আমরা স্বাধীন দেশের তরুণ দল সম্যক উপলব্ধি করতে পারিনি।স্বাধীনতা আমরা বলিদানের বিনিময়ে পেয়েছি ব্রিটিশ রাজের কাছ থেকে। সঙ্গে ফাউ পেলাম পার্টিশন। মন্বন্তরে ধুঁকছে যখন দেশ তখন দেশভাগ আনল চরম মর্মান্তিক নৈরাজ্য। বলতে দ্বিধা নেই দেশভাগের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বাংলা। দলে দলে বিতাড়িত শরণার্থীরা বিপুল সংখ্যায় এসে সমাজব্যবস্থা ও  চিন্তাধারার আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছিল।

স্বাধীনতা -পরবর্তী এইসব ঘটনা তরুণ প্রজন্মকে উদ্বেল করেছিল, বাম -চিন্তাধারায় প্রেরণা জুগিয়ে ছিল। সেই বাম আদৰ্শ, খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার ইত্যাদিতে আমরা খুঁজে ছিলাম মুক্তির পথ। একটু বড় হয়ে জানলাম বুঝতে শিখলাম ইনকিলাব - জিন্দাবাদ। লাল সেলাম।পন্ডিত নেহরু টেকনোলোজিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেন। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি স্টিল প্লান্ট তৈরী হল। উচ্চ কারিগরি শিক্ষার জন্য আই আই টি হল। সারাদেশে যখন কর্ম যজ্ঞ চলছে তখন এল বেকারত্ব, খাদ্য সংকট।   বামপন্থী এবং চরম বামপন্থী চিন্তাধারা ঘাঁটি গেড়ে বসল বিশেষ করে শিক্ষিত কর্মহীন বাঙালিদের মনে। দেশ এগোচ্ছে না পেছচ্ছে ঠিক বোঝা গেল না। আবার এল নৈরাজ্যের কালো মেঘ । অন্য রাজ্য যখন প্রগতির পথে, নতুন নতুন কল কারখানা সেখানে স্থাপিত হচ্ছে, তখন বঙ্গে চালু ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হচ্ছে। এই আবহে আমরা আমাদের রাজ্য ছেড়ে  ভালো চাকরির লোভে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলাম। দেখেছিলাম ভিন রাজ্যের মানুষেরা খুব একটা আন্দোলন করছে না। সরকার যা বলে মেনে নেয়। প্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না। তাই সেখানে চাকরি বেশি পাওয়া যায়। শোষণ তো সব জায়গায় আছে। সরকারের যেমন দায় আছে দেশের মানুষের ভালো করার, আমাদেরও কি দায় নেই স্বাধীন ভারতকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার?

১৯৯০ এর দশক থেকে চাকা ঘুরতে শুরু করে। বাজার অর্থনীতি আমাদের দেশের সামনে এক ধাক্কায় উন্নতির নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। আজ আমরা কৃষি, কারিগরি ও তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অনেকটাই স্বনির্ভর। তার জন্য আমরা গর্ব বোধ করি।
আজাদির পুণ্য ৭৫ লগ্নে আমাদের অঙ্গীকার -
শক্ত হাতে সরকারি শাসন যেমন দরকার তেমনি প্রয়োজন দেশ থেকে গরিবী দূর করার। মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে সব ক্ষমতা সব ধন সম্পদ কেন থাকবে? ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। জনগণই তার সম্পদ। তাই তাদের দারিদ্রসীমার ওপরে তুলে আনতেই হবে। তবেই আমরা উন্নতিশীল থেকে উন্নত সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতে পারব। ধন্যধান্যে শক্তিতে  উঠবে ভরে আমাদের এই বসুন্ধরা।।
                                             











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন