স্বাধীনতার৭৫
মুক্ত গদ্য-২০
স্বাধীনতার অনুভূতি
সন্দীপ দত্ত
ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ৭৫ বছর নিয়ে লিখতে বসে আজ মনে হচ্ছে,আমরা এখনও রবীন্দ্রনাথের সেই 'কর্তার ভূত'টাকে নিজেদের ঘাড় থেকে নামাতে পারিনি। দীর্ঘ এতগুলো বছর পার হয়েও মনে হচ্ছে,কন্ঠরোধ করছে কেউ। গতিরোধ করছে চলার। আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের আমিত্ব,বিকিয়ে দিচ্ছি বুদ্ধি। একটা সার্বভৌম গণতান্ত্রিক দেশের বৈশিষ্ট্য তো এটা নয়। তবুও সবাই চুপ করে আছি। এ কেমন স্বাধীনতা? তোষামোদ আর তাবেদার যখন শাসননীতি হয়ে শাসকের এগিয়ে চলার ইন্ধন হয়ে যায়,সেখানে জনগণ পুতুল ছাড়া আর কী? তাই স্বাধীনতাকে উপলব্ধি করতে হয় ক্যালেন্ডারের ১৫ ই আগস্টের চৌকো বাক্সের ভেতরে আঁকা তেরঙ্গার ছবি দেখে।
পঁচাত্তরটা বছর কম সময় নয়। তবুও আমরা এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারলাম না। কেউ একজন সাহস করে বলতে পারলাম না "রাজা তোর কাপড় কোথায়?" অথচ আমাদের মুখে ললিপপ দিয়ে ভাল করে শোনানো হয় "......হও উন্নত শির,নাহি ভয়।" এ কেমন স্বাধীনতা?
যে দেশের শিশুকে রাস্তায় গড়িয়ে যাওয়া দুধ পথের কুকুরের সাথে ভাগ করে খেতে হয়,উল্টো তেরঙ্গা উত্তোলন নিয়ে প্রতিবাদ করলে তার চোখে রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়,ন্যায্য অধিকারে চাকরির দাবি নিয়ে রাজপথে অতিক্রম করতে হয় পাঁচশো দিন,পুলিশের লাঠির আঘাতে তরুণের শিরদাঁড়া ভেঙে যায়,স্বাধীনতা সেখানে ম্যারাপ বেঁধে ডিজে চালিয়ে মাংসভাত খাওয়া ছাড়া আর কী?
ফি বছর স্বাধীনতাদিবসটা তাই আমার কাছে থিমের মর্ডান দুর্গার মতো লাগে। জৌলুস আর আড়ম্বরে ভরা,রূপের উপর রূপটান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কোনও লাস্যময়ী যেন। যেন "আসছে বছর আবার হবে।" কিন্তু ভারতমাতা তো থিমের দুর্গা নয়,সে দুর্গতিনাশিনী,সে অভয়া।
এভাবেই ভারতবাসী স্বাধীন হয়ে পা পা করে করে পঁচিশ থেকে পঞ্চাশ পেরলো,পঞ্চাশ থেকে আজ পঁচাত্তর। স্বাধীন ভারতবর্ষের নাগরিক হতে পেরে গর্বিত লাগে নিজেকে। যাঁদের জন্য আজ আমরা এই জায়গায় এসেছি,সেইসব অমর বিপ্লবীদের কুর্নিশ জানাতে ইচ্ছে হয়।কিন্তু আঘাতটা পাই তখনই,যখন দেখি আজকের কিশোর কিশোরী'রা মাতঙ্গিনী হাজরার নাম জানে না,নেতাজি আর গান্ধীজিকে গুলিয়ে ফেলে,তেরঙ্গার তিনটি রঙের অর্থ জানে না। অথচ স্বাধীনতাদিবসের ভোর তারা দেখে। স্কুলে দল বেঁধে জড়ো হয় শুধুমাত্র টিফিনটার জন্য।
স্কুলে স্কুলে তাই খুদেদের আজ স্বাধীনতার পাঠ দেওয়াটা শিক্ষকদের আবশ্যিক কর্তব্য হওয়া উচিত। সন্তান হয়ে ভারতমাতাকে আমরা যদি যোগ্য সম্মান দিতে না পারি,তাকে রক্ষা করতে না পারি,তাহলে সন্তান হলাম কেন?
যথার্থ লেখা, বাস্তব চিত্র, খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন