অণুগল্পের আড্ডা -৩৫
মা
বাবলু গিরি
রোজ মাকে স্নান করাতো, গা মুছিয়ে বিছানায় শুইয়ে।মাকে খাওয়াতে খাওয়াতে গল্প বলতো,- বুল্টিদের বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে। পাশের বাড়ির সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে ইত্যাদি।আজকাল মা একদম শিশুর মতো হয়ে গেছে। গল্প বলে ভুলিয়ে ভুলিয়ে না খাওয়ালে খাবেই না। পরমা মাকে খাইয়ে নিজে খেয়ে, মায়ের কাপড় কাচে। দুখানাই তো কাপড়। দিনে দুবার পাল্টাতে হয়। একটা পাল্টেই ধুয়ে দিয়ে শুকতে দেয় গাছতলায় । সেটা শুকোলে সন্ধেবেলায় আবার পাল্টাতে হবে। না হলে মা কেঁদে অস্তির হবে।পরমার বাবা পাঁচ বছর আগেই গত হয়েছেন। সেই থেকে মা অসুস্থ,ক্যান্সার।
পরমা মাকে ছাড়া কিছুই জানে না। মা ও বলে হ্যাঁরে মরলেও আমি তোর কাছেই থাকব।মায়ের জন্য বিয়েও করেনি। মা অনেক বলেছে কিন্তু একটি কথাও শোনেনি।শ্মশানে আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। পরমা কাঁদছে না। সবাই বলছে মা নেই, মারা গেছে। পরমা শান্তভাবে বলছে।মাতো বলেইছে -মরে গেলেও আমার কাছে থাকবে।হঠাৎ পরমার মনে হলো মায়ের ভাত রান্না করা হয়নি। উঠে পড়লো পরমা শ্মশানতলা থেকে, আর বড় বড় চোখ করে জ্বলন্ত চিতার দিকে চেয়ে বলল -
মা তোর পোড়া শেষ হলে তাড়াতাড়ি ঘরে চলে আয়। আমি ভাত বসাতে যাচ্ছি। তোকে গল্প বলতে বলতে খাইয়ে দেব। তোর কাপড় পাল্টে দেবো, দেরী করিস না।বলেই আলুথালু আঁচল লুটোতে লুটোতে দৌড়তে লাগলো ঘরের দিকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন