ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব- ১৬)
... এবং ইরাবতির প্রেম
গৌতম আচার্য
রকি আইল্যান্ডের অসাধারণ নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে উঠেছে সত্যেন আর ইরাবতি।। উচ্ছল প্রাকৃতিক জলতরঙ্গ ছুঁয়ে যাচ্ছে তাদের।। অশান্ত ঝোড়াকে পিছনে ফেলে হাত ধরাধরি করে আরো গভীরে হেঁটে চলেছে তারা।। নির্জন নিঃশব্দ শান্ত প্রকৃতি তাদের নাম না জানা পাখিদের কলকাকলিতে আবাহনী সুর হয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।। সত্যেনের বাঁ হাতের কনুই টি তার দুই হাতের শক্ত বন্ধনে ধরে ইরাবতি সত্যেন এর শরীরে নিজের শরীরের অনেকটা ওজন ছেড়ে দিয়েছে।। ক্ষণে ক্ষণে ইরাবতি সত্যেন এর আরও কাছাকাছি চলে আসছে, আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে।।
সত্যেন একটি বড়ো গাছের নিচে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে ইরাবতিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলো।। ইরাবতির কপাল এবং ঠোঁটে চুম্বন এঁকে দিলো।। ছিটকে সরে দাঁড়িয়ে নিজেকে সত্যেন এর বাহুডোর থেকে মুক্ত করে ইরাবতি বলে উঠলো, "শয়তান কোথাকার, কে কোথায় দেখে ফেলবে, একটু ভয়- ডর নেই।। একটি ডাকাত"।। সত্যেন হেসে ওঠে হা হা হা করে।। তারপর যেখানে দুজন ঠিক যেমন দাঁড়িয়েছিলো সেই অবস্থা থেকে ছায়াছবির কায়দায় সত্যেন গেয়ে উঠলো,
"হয়তো তোমার ই জন্য, হয়েছি প্রেমে যে বন্য- জানি তুমি অনন্য, আশার হাত বাড়াই-"।।
ইরাবতি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে সত্যেন এর দিকে।। সত্যেন আহা আহা আহা করে সুর শেষ করে আবার শুরু করে, "যদি কখনও একান্তে, চেয়েছি তোমায় জানতে, শুরু থেকে শেষ প্রান্তে- ছুটে ছুটে গেছি তাই।- আমি যে নিজেই মত্ত- জানিনা তোমার শর্ত- যদি বা ঘটে অনর্থ- তবুও তোমায় চাই-ই-ই..."।। থেমে যায় সত্যেন।। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইরাবতি।। "তুমি এ্যতো ভালো গান গাইতে পারো"? বিষ্ময়ের ঘোর থেকে প্রশ্ন করে ওঠে ইরাবতি।। তারপর আবার বলে, থামলে কেন, গাও বাকিটা।।
সত্যেন মৃদু হাসে।। তারপর আবার শুরু করে, "আমি যে দুরন্ত- দু চোখে অনন্ত- ঝড়ের দিগন্ত জুড়ে স্বপ্ন ছড়ায়।।- তুমি তো বলোনি মন্দ- তবু কেন প্রতিবন্ধ- রেখো না মনের দ্বন্দ্ব- সব ছেড়ে চলো যাই..."।। স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে উপভোগ করে ইরাবতি।। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিয়ে এগিয়ে আসে সত্যেন এর একদম কাছাকাছি।। ঝাঁপিয়ে পড়ে দুই হাত প্রসারিত করা সত্যেন এর বুকে।। গভীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বলে ওঠে, "ইউ আর গ্রেট সত্যেন"।। সত্যেন নিবিড় ভাবে ইরাবতি কে বুকের আরও গভীরে টেনে নিয়ে বলে, "ইয়েস আই এ্যাম গ্রেট, ওনলি ফর মাই মহারানী"।।
হাঁটতে হাঁটতে তাদের নজরে চলে আসে সুন্দর নানা রঙের রঙিন টেন্ট গুলি।। ইরাবতি তার আঙুল তুলে সত্যেন এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।। আবদার করে ওঠে, "এই টেন্টে দুজনে একসাথে থাকবো"।। এক কথায় রাজি সত্যেন।। প্রশ্ন করে, "বুকিং করবো"? ইরাবতি অস্বস্তি মাখা মুখে বলে ওঠে, কিন্তু কাল সকালে তো আমাদের ফিরে যেতে হবে।।
-- তো? প্রশ্ন করে সত্যেন।।
-- আজ রাতেও তো রিসর্ট বুক করা আছে।।
-- তো? আবার প্রশ্ন করে সত্যেন।।
-- তাহলে এখানে আজ রাতে থাকবো কি করে?
-- রিসর্টে আজ রাতে থাকবো না।।
-- ধ্যাৎ।। জামা কাপড় টুথপেস্ট, টুথব্রাশ ব্যাগ সব তো রিসর্টে।।
-- ওটা কোন সমস্যা নয়।। এখানে দোকানে সবকিছু কিনতে পাওয়া যায়।।
-- তাহলেও।। কাল সকালেই তো বেড়িয়ে পড়তে হবে আমাদের।। এখান থেকে আবার রিসর্ট যাওয়া, ফের সেখান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে তবে....
বাধা দেয় সত্যেন।। বলে ওঠে, "নট্ নেসেসারি কালই ফিরে যেতে হবে।। দরকারে আমরা পরশু বা তার পরদিন যেতে পারি"।।
-- শয়তান।। বলে ওঠে ইরাবতি।। তারপর বলে, আমি বাড়িতে কি বলবো? অনেক ম্যানেজ করে এসেছি।। কাল বাড়িতে না ফিরলে হুলুস্থুল কাণ্ড হয়ে যাবে।।
-- তোমার কাছে মোবাইল আছে।। ফোনে জানিয়ে দাও ফিরতে একদিন দেরি হবে।।
-- ধ্যাৎ! সেটি তোমরা পারো।। মেয়েরা পারে নাকি?
চলো সন্ধ্যা হয়ে আসছে।। আমরা রিসর্টে ফিরে যাই।।
-- রকি আইল্যান্ড... টেন্ট...
-- পরের বার হবে।। এবার আমাদের রিসর্ট-ই ভালো।।
-- ধ্যাৎ্।। এ্যতো আশা করলাম।। এ্যতো কিছু প্ল্যান করলাম, ভাবলাম।। সব বৃথা?
-- ইয়েস স্যার।। এবারে সব বৃথা।।
একটু থেমে ইরাবতি আবার বলে, তার কি প্ল্যান তুমি করেছিলে সেটা তোমাকে বলতে হবে।।
-- আজ্ঞে না মহারানী।। প্ল্যান কামিয়াপ্ হলে নিশ্চয়ই সেটি প্র্যাক্টিকাল করে দেখাতাম।। কিন্তু হলো যখন না, তখন সেই আলোচনা করে মনে কষ্ট পেতে আমি রাজি নই।।
ইরাবতি সত্যেনকে চেপে ধরে বলে, বলতে তোমায় হবেই, নইলে ছাড়বো না।। সত্যেন আবার গেয়ে ওঠে, "তুমি নয় নাই কাছে আসলে এ এ-- আমায় নাইবা ভালো বাসলে এ-- তাই হলে আমি কেন ভালো বাসবো না-- আমি কেন কাছে আআসবোবো না য়া য়া".....।। ইরাবতি বলে ওঠে, তোমার নাম কি আমি 'শয়তান' এমনি এমনি দিয়েছি? তোমার বুকের মধ্যে রয়েছি, তবুও বলছো, "তুমি নয় নাই কাছে আসলে", সত্যি একটি আস্ত শয়তান।। সত্যেন বলে, ভাবলাম আজ রাতে টেন্টে দুজনে...।। থামিয়ে দেয় ইরাবতি।। বলে, "চুপ্ একদম্ চুপ্।। আমার বুঝি ইচ্ছে করছে না? ঠিক আছে পরের বার এসে সোজা টেন্ট।।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন