ধারাবাহিক
উৎসব- উৎস,বৈচিত্র্য,প্রভাব ও কার্যকারিতা
(পর্ব-৬)
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
ভারতের এক উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা আদিবাসী। নানা কষ্টে ও অবহেলার মধ্য দিয়ে দিন কাটলেও, তাদের জীবনেও আসে পরব, উৎসব। অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা মেতে ওঠে নানা উৎসবে। নিজ নিজ সাধ্য মোতাবেক।
আমরা তেমনই কতগুলো উৎসবের কথা এখানে বলব।
ওঁরাওদের উৎসব-
মককা সেঁন্দরা:
বারো বছরে একবার এই উৎসবটি পালিত হয়। এতে শুধু মহিলারাই অঃশগ্রহণ করেন। অদ্ভুত কিছু নিয়মকানুন মেনে এই উৎসব পালিত হয়। মহিলারা পুরুষদের মতো পোশাক পরে শিকার করতে বেরোন। শোনা যায়, এর পেছনে এক মজার ও তাৎপর্য্যপূর্ণ কাহিনি আছে। একবার আফগানরা যখন রোহতাস গড়কে আক্রমণ করে, তখন সমর্থ পুরুষরা বদ্ধ মাতাল হয়ে ছিলেন। বাধ্য হয়ে মহিলারাই তাদের পোশাক ও অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শত্রুর মোকাবিলা করে। সেই থেকে এই উৎসব পালিত হয়। এক অর্থে এই উৎসব মহিলাদের সংগ্রামী চরিত্র ও আত্মমর্যাদা বোধের প্রতীক।
কোরাপুটের বোন্দা উপজাতির লোকেরা ' সুমে গেলিরাক' নামক একটি উৎসবে মেতে ওঠেন। দশদিন ধরে এই উৎসব চলতে থাকে। দেবতাদের পূজায় পশু, পাখি ও পানীয় উৎসর্গ করা হয়।এই উৎসব বোন্দা উপজাতির সংগ্রামী চরিত্রের প্রদর্শন করে।
টুসু, করম ও শিকার উৎসব
টুসু উৎসব:
টুসু উৎসব মানভূম অঞ্চলের জাতীয় পরব বলে পরিচিত। পৌষ মাস জুড়ে টুসু উৎসব পালিত হয়। মাসের শেষদিন অর্থাৎ সংক্রান্তির দিন হয় মূল অনুষ্ঠানটি। টুসু মিলনের উৎসব। মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সময় টুসু উৎসব সচেতনতার কাজ করেছিল।
করম উৎসব:
সাঁওতাল, মুন্ডা, কোল, বীরহোর, খেরিয়া প্রভৃতি উপজাতির খুব জনপ্রিয় এই করম উৎসব । ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীর দিন 'করম' দেবতার পূজা হয়। এটি মূলত শস্যকেন্দ্রিক উৎসব। জঙ্গল থেকে পূজার সামগ্রী যথা কাঠ, ফুল, ফল সংগ্রহ করা হয়।
শিকার উৎসব:
আদিবাসী জীবনে শিকারের এক আলাদা গুরুত্ব আছৃ। যেমন অযোধ্যা পাহাড়ের শিকার উৎসব বা শিকার মেলা। প্রতি বছর বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে এই উৎসব পালিত হয়।
নাগা উৎসব-
হর্ণবিল উৎসব: নাগাল্যান্ডের নাগা উপজাতির কমকরে ষোলটি সম্প্রদায়ের বাস সেই রাজ্যে। এদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা উৎসব আছে। সেই সব উৎসবকে একসঙ্গে পালন করার জন্য নাগাল্যান্ড সরকার ডিসেম্বর মাসের এক থেকে পাঁচ তারিখ কোহিমাতে ' হর্ণবিল ' উৎসব আয়োজন করে।
এছাড়া মোআতসু উৎসব, সেকরেনি উৎসব, নাজু উৎসব বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।
বাদঁনা উৎসব-
কার্তিকের অমাবস্যার সময় পাচঁদিন ধরে বাদঁনা উৎসব পালিত হয়। বিজয়া দশমীর পর থেকে এর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।নানা আচার, লোকগান ও নাচের মাধ্যমে এই উৎসব পালিত হয়।
এছাড়া ভাগতা পরবও বেশ উল্লেখযোগ্য।
মেঘালয় রাজ্যের উৎসব-
মেঘালয় রাজ্যের গারো সম্প্রদায়ের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ওয়াংলা। চাষের দেবতা ' সালজং ' কে তুষ্ট করার নিমিত্তে এই উৎসবের আয়োজন। 'রাগুলা', ' কাক্কাট' ইত্যাদি বিভিন্ন অংশে বিভক্ত এই উৎসব। ড্রামের তালে তালে চলে নাচ। তাই একে ' Hundred Drums Festival ' ও বলা । নানান বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়, যার মধ্যে মোষের শিং দিয়ে তৈরি বাঁশি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া মেঘালয়ে নংক্রেম ও বেদিয়েনখেলাম উৎসবও বেশ ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে।
সিকিমের উৎসব-
সিকের প্রধান দুই উৎসব হলো- ফাং লাবসোল ও বুমচু।
বৌদ্ধ মতের সপ্তম মাসের পন্চদশ দিনে পালিত হয় ফাং লাবসোল। এই উৎসবে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পূজা করা হয়। এদিন লেপচা ও ভুটিয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের চুক্তি হয়েছিল।
অপযদিকে তাশিদিং মনাস্ট্রীতে জানুয়ারি মাসে বুমচু উৎসব পালিত হয়। এই উৎসব শান্তি ও সমৃদ্ধির সূচক।
(চলবে)
----------------------------------------------------------------------------------------এই ধারাবাহিকটির সুচিন্তিত মতামত জানান।
ankurishapatrika@gmail. com
------------------------------------------------



খুব ভালো।
উত্তরমুছুনখুব ভালো।
উত্তরমুছুন