লেবেল

রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০

গুচ্ছ কবিতা। তপনজ্যোতি মাজি

 





গুচ্ছ কবিতা 

তপনজ্যোতি মাজি 


১.

আরোগ্য সরণী


সিঁড়ি বুক পেতে নেয় পদচিহ্ন, নিরভিমান।  তুমি উঠে এলে

ধীরতমগতি। আরোগ্য  সরণী  হোক  তোমার  আগমন পথ। 

মুছে  দাও নির্জন  অভিমান। যে  কোনও  প্রীতিবোধ শস্যের 

 মতো সম্ভবনাময়। 


শস্যের ভারসম্য মাটি। জন্মান্তর নড়বড়ে সাঁকোর মতো দোলে।

তোমাকে দর্শনে  ক্লান্তি দূর হয়। যাকে বলে তীর্থ দর্শন। অঞ্জলি 

ভরে জল নিই।মনে মনে বলি এই নাও আদিতম জীবন প্রবাহ।

আরোগ্য দাও স্পর্শের।


বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে ইচ্ছা প্রস্তুত করে বাষ্প শকট। প্রদক্ষিণ

পথ চিরদিন অবর্তনময়। প্রেম কোনো ভাসমান হিমশৈল্য নয়।

নয় মনের গভীরে রঙিন মাছের সাঁতার। সরোবর ঘিরে ছায়াঘন 

পথ ভ্রমনের। স্বাস্থ্যই সম্পদ।


পরম প্রজ্ঞা নিয়ে যে জীবন আলোকিত, যে জীবন মহাপ্রস্থানের

পরেও ফিরে  ফিরে আসে স্মরণে, প্রাতঃস্মরণীয়। ক্রমশ নিস্ক্রমন

 চিহ্ন মুছে যায়। অতিরিক্ত মনে হয় যাবতীয় যাপন। শুধু আরোগ্য

 সরণীতে মানুষ নিজেকে ভাবে অমৃতের সন্তান।


২.

প্রচ্ছদ


খুলে রেখেছো ঋতু শেষের বহির্বাস। যেন বিশেষণ সরিয়ে বাক্য 

হয়েছে সরল ও ঋজু। তুমি এই চতুরঙ্গ আনন্দ প্রহরের অন্তিম

অতিথি। প্রবুদ্ধ জনেরা জানেন হৃদয়হীন উত্তাপ আসলে কাঠের

আগুন। পুড়ে যায় শিরোনাম।


যে ভাবে ভাবি সে ভাবে ঘটেনা কিছুই। হরিনেরা  তৃষা নিয়ে নদী

খুঁজে ছিলো দ্বিপ্রহরে। স্বাধীন সার্বভৌম হরিণের কথা  কখনও

কি ভেবেছিল বাল্মীকি? ওলটপালট হয়  স্বাভাবিক সময়। স্বপ্ন

ভঙ্গ মানুষেরা বুঝে গেছে দলতন্ত্র প্রতারক।


তবুও প্রার্থনা বাবরের। অকাল মৃত্যু কি সময়ের প্রতারনা ? না

কি অন্য কোনও বিশুদ্ধ ব্যঞ্জনা। তুমি জানো কি থেকে কি হয়।

জীবন  মৃত্যু  প্রতিবাদী  নয়। কেবল  প্রচ্ছদ  পরিবর্তন। ফিরে 

আসা, ফিরে ফিরে আসা।


৩.

 অক্ষর সমগ্র


তোমার উদাসীনতাও প্রেম। নিরুদ্বেগ বৃক্ষের মতো

প্রসারিত হয় সম্পর্কের প্রশাখা। কৃষ্ণরাত্রিতে কেউ 

গায়  ঈশ্বরের গান। সব  গানের  শেষে  থাকে অন্য  

শুরুর সংকেত।


অন্ধকার ও আগুনে ত্যাগ সহজ,এই বিশ্বাসে উজাড়

করেছি জমে থাকা একাধিক  অবহেলা ও ব্যক্তিগত 

 নিস্ফলতা। ভেসে গেছে মেঘের বন্ধু হয়ে আমার এক

দশক বয়স।

 

আবেগের ঘরের জানালা দরজা খোলা রেখেছি স্বেচ্ছা

বশত। আলো হওয়া  থাক  স্বতঃস্ফূর্ত। ঝড় হোক, বৃষ্টি

হোক। সব কিছু গ্রহণ করতে চাই। সাদা পাতায় লিখছি

অক্ষর সমগ্র।


শীত ছুঁয়ে ছিল এক মূহুর্ত তোমার ভেজা আঙুল।অথচ

উষ্ণ কফি কাপে ওষ্ঠ ছোঁয়ালে নাতিশীতোষ্ণ অভ্যাসে।

সব আভাস শিকড়ে ছড়িয়ে যায় বৃক্ষের নিয়মে। প্রকৃত

প্রেমে বৃক্ষ হতে হয়।


৪.

রহস্য বিষয়ক


যে কোনও রহস্যের একটি সমাধান সংকেত থাকে।

একজন দুঁধে গোয়েন্দা জানে সংকেত কোথায় 

অথৈ তরঙ্গে ডুবো পাহাড়ের মতো

লুকিয়ে রয়েছে।


পৃথিবীতে আলো ও বাতাস ছাড়া সবকিছু কম বেশি 

রহস্যময়। কত কি সমাধান করতে হয় এক জীবনে।

তবু কত কিছু রয়ে যায় রহস্যের দুর্ভেদ্য কুয়াশায় 

মোড়া। হয় না উন্মোচন সব ঘটনার প্রকৃত 

কারণ কি ছিল।


এই সব অন্তর্ভেদী অসাফল্য নিয়েও মানুষ বেঁচে থাকে

নির্বিকার। আঙুলের নখ বেড়ে যায় অগোচরে। চুলের 

রুপোলি রেখা দিগন্তের রঙ বদলের গল্প বলে। 

রহস্য গ্রন্থের পাতা সংখ্যা বেড়ে হয়

সুবৃহৎ অমনিবাস।


নারী না পুরুষ কে বেশি রহস্যময়? কে কার কাছে কতটা

অপ্রবেশ্য  শিলা,  কার  জলস্তর কতটা  গভীরে  এই নিয়ে 

লৌকিক উপমা সমুদ্রে এক ঘটি অতিরিক্ত জল।

যথার্থ উত্তর থেকে যায় অমীমাংসিত

রহস্য মোড়কে।


৫.

হেমন্তের ডাকবাক্স


শীতের চিঠিতে ডাকবাক্স ভরে গেছে।

কিছু নীল সাদা মেঘ থমকে দাঁড়িয়ে আছে চৌরাস্তার

মোড়ে। যে কোনও নামে তোমাকে ডাকতে পারি

মধ্যরাতে।


যাকে ভেবেছো জাতক পুরুষ, যার কথা নদীর স্রোতের

মতো  অনর্গল , যে তোমার সুগন্ধ শুষে নেয় স্পঞ্জের

মতো, তাকে কান পেতে শুনতে দাও

বুকের বুদবুদ, শব্দহীন।


এই হেমন্তে সব অনুভূতি হোক নিবেদনময়। শীতের তীব্রতার

আগে সুবিনয় মুখবন্ধ। মনোরম দিন, মনোরম রাত্রি।

ধানের স্বর্ণাভ রঙ মাঠে মাঠে।খেজুরের বুক চিরে 

মাতৃরস। আহা! তোমার গম রঙ পিঠের ওপর

একবিন্দু অসতর্ক জল।


সব ব্যস্ততা স্তব্ধ হয় আলো নিভে গেলে।

জেগে ওঠে অনুভব দ্বীপ। ছুটে আসে কুমারী হরিণ।

নীল চোখ, স্বরবর্ণের মতো শাখা শিঙে একাদশী

চাঁদ। গায়ের ওপর বর্ণময় চাদর দিয়ে  মুক্তকেশ

নারী হেমন্তের রাতে হয়ে ওঠে  হোমের 

জ্বলন্ত চন্দনকাঠ।




----------------------------------------------------------------

মৌলিক ও অপ্রকাশিত লেখা আজই  পাঠান এবং মতামত জানান পত্রিকা দপ্তরে। 

ankurishapatrika@gmail. com


---------------------------------------------------------------------               

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন