স্বাধীনতার৭৫
মুক্ত গদ্য —২৫
স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর
স্মৃতি শেখর মিত্র
ভারতের স্বাধীনতা আর কয়েকদিন পর পঁচাত্তর বছর পূর্ন হবে।বহু কষ্টার্জিত এবং বহু মানুষের জীবন বলিদানের বদলে আমাদের দেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।যে অর্থে স্বাধীনতা ধরা হয় তার পরিপূর্ণ স্বরূপ এই সুদীর্ঘ সময়ে প্রস্ফুটিত হতে পারেনি। স্বাধীনতা পাওয়ার অব্যবহিত পরেই কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাদের অনাস্বাদিত ইচ্ছাগুলি পূরণের ওপর জোর দিয়ে দেশের ধন সম্পদ নিজদের ক্ষুদ্র
স্বার্থে ব্যবহার করে।দেশের মূল সমস্যাগুলি এখনও অবহেলিতই থেকে গেছে। এখনও এ দেশের বহু মানুষই নিরক্ষর। সাক্ষর মানুষই একমাত্র তার পাওনা গন্ডা বুঝে নিতে পারেন। বেশিরভাগ মানুষ
নিরক্ষর হওয়ার কারণে দেশে গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ সাধন হয়নি। নিরক্ষর ও সাক্ষর সব মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে
নির্বাচন হয়ে থাকে। নিরক্ষর মানুষ ও সাক্ষর মানুষের ভোটাধিকার সমান । নিরক্ষর মানুষরা অশিক্ষার অথবা প্রকৃত শিক্ষার অভাবে তাঁদের বহুমূল্য ভোটটি কোন এক অসৎ মানুষেরপাল্লায় পড়ে তার ঝুলিতে জমা করেন। এবং সেই ভোটের দৌলতে একজন অসৎ মানুষ
বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার সুযোগ পায়। এবং তার সমর্থনে মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। এবং সেখান থেকেই গোলযোগ সৃষ্টি হয়।অপুষ্টিজনিত কারণে একটি বিশাল জনগোষ্ঠী প্রভাবিত ফলস্বরূপ রাষ্ট্রশক্তিও দুর্বল হয়ে পড়ছে। দেশের জনতার অর্ধেক নারী এবংনারীদের অনেকেই ভগ্নস্বাস্থ্য। তাঁদের সন্তানদের
অধিকাংশই অপুষ্টিতে ভুগছে এবং জন্মগত ত্রুটির কারণে অনেক ব্যাধির শিকার। এই নারী শক্তির উত্থান না হলে রাষ্ট্রশক্তিও দুর্বল
থাকতে বাধ্য।মাতৃজাতিই সংসারকে ধরে রাখতে সক্ষম। তাঁরাই যদি শারীরিকভাবে অক্ষম এবংঅশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে থাকেন তাহলে সেই দেশের মানুষের ভবিষ্যত অন্ধকারে থাকতে বাধ্য। এখনও প্রত্যন্ত গ্ৰামাঞ্চলে অনেক পরিবারের আয় খুবই কম। সেসব পরিবারের সদস্যদের দুবেলা দুমুঠো ভাতের সংস্থান নেই।তাঁরা দুবেলা পেট ভরে খেতেও পান না।অনেক অঞ্চলে এখনও পানীয় জলের নিদারুণ
সংকট।গ্ৰীষ্মের সময় পানীয় জলের অভাবেমানুষ খুব কষ্টে থাকেন।খরা পীড়িত অঞ্চলের অবস্থা খুবই করুণ। অনেক গ্ৰামেই চিকিৎসার
কোন ব্যবস্থা নেই। রাতের বেলায় কোন গর্ভবতী নারীর ব্যথা উঠলে সুচিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কাও থেকেই যায় ।
আমাদের দেশে কিছু কিছু নারী আছেন যাঁরা উচ্চশিক্ষা পেয়েছেন। একথা অনস্বীকার্য। দুচার জন মহিলা পাইলটও আছেন একথাও জানা আছে। অনেকেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,বৈজ্ঞানিক,অধ্যাপিকাএবং শিক্ষিকা। এইসবশিক্ষিতা নারীদের সংখ্যা শতকরা হিসেবে নগণ্য।
এছাড়া স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই লক্ষ লক্ষ শরণার্থী ভারতভূমিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। বিশেষভাবে বলতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাব এই দুটি প্রদেশের উপর ঐসব শরণার্থীদের চাপ এসে পড়েছে। ফলস্বরূপ সামাজিক ও আর্থিক দুটি ক্ষেত্রেই ভারতের তথা এই দুটি প্রদেশের বিশেষভাবে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তাই যেদিন আমাদের দেশের প্রতিটি নাগরিকের দু বেলা পেট পুরে খেতে পাবেন,শীত, গ্ৰীষ্ম, বর্ষার সময় মাথার উপর তাঁদের ছাদ থাকবে,
কোন মানুষকেই উন্মুক্ত ফুটপাতে শুতে হবে না,যেদিন প্রতিটি মানুষ শিক্ষার আলোকে আলোকিত হবেন সেদিন বুঝবো আমাদের দেশে সব মানুষের ধনী,দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের জন্য পূর্ণ স্বরাজ এসেছে। স্বাধীনদেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষিত
রাখার দায়িত্বও তো রাষ্ট্রের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন