লেবেল

বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২

স্বাধীনতার ৭৫।। মুক্ত গদ্য —১৮।।স্বাধীনতার প্রশ্নচিহ্নে ... রাজীব ঘাঁটী।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 



স্বাধীনতার ৭৫

মুক্ত গদ্য —১৮



স্বাধীনতার প্রশ্নচিহ্নে ...

রাজীব ঘাঁটী



আজ ২০২২ সালের আগস্ট মাসে দাঁড়িয়ে খুব কষ্ট করে বলতে হয় আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক।

অথচ স্বাধীনতার তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ি আত্মজার কাছে। অবাক লাগে সাধারণ গৃহবধূ হয়েও আমার মা কত সহজে আমাদের বুঝিয়েছিলেন যে স্বাধীনতা ! আজ স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরে ক্রমশঃ অসহায় হয়ে পড়ছি ।

আমি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে‌ আমার কলেজের এক অধ্যপককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম "স্যার এই ৫০ বছর কিভাবে মূল্যায়ন করবো?"

স্যার বললেন ১৯৪৭ সালে এক রুপী(টাকা ভারতীয় মুদ্রা) আর এক ডলার (মার্কিন মুদ্রা) সমমূল্যের ছিল কিন্তু এখন এক ডলার প্রায় চল্লিশ টাকার সমান। সেদিন স্যারের এই উত্তর একটা পিছিয়ে পড়া স্বাধীনতার ছবি দেখিয়েছিল ,পরে পরে পঞ্চাশ থেকে পঁচাত্তরের দিকে যত এগিয়েছি ডলারের সাথে টাকার পার্থক্য বুঝিয়েছে অনেক। 

ভাবতে ভাবতে বার বার মনে হয়েছে নেতাজী,ক্ষুদিরাম,ভগৎ সিং দের কথা । মহাত্মা গান্ধী , মাতঙ্গিনী হাজরা , সূর্য সেন কিভাবে একটা দেশ উপহার দিতে চেয়েছিলেন অথচ...


চরম বিষন্নতা নিয়ে এক একটা রাজপথ দিয়ে যখন চলি যতটা স্ফীত হতে পারতো বুক ততটা হয় না।

নদীর স্রোত , সৌধ , হিমালয় বদলেছে‌ বা বদলায়নি সময়ের দায়ে‌ অথচ মানুষ কত তাড়াতাড়ি বদলে গেল ! এই স্বাধীনতার মহোৎসবের বছরে আমি কোন স্বাধীনতার কথা বলবো আমার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ? নিজেদের কামড়াকামড়ি থামিয়ে দেবার ক্ষমতা নেই আমার , আমাদের। এক অজানা লক্ষ্যে ছুটছি প্রতিদিন। এত হিংসা ,এত বিদ্বেষ আমাদের মধ্যে যে সম্পর্কগুলো কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে পড়ছে দিন দিন। কত কত সমস্যা রোজ আমাদের দোরগড়ায়,দেশ নিয়ে ভাববে কে ? অর্থনীতি প্রতিদিন ধসে পড়ছে । আশঙ্কার প্রহর গুনছে যুবসমাজ। এই স্বাধীনতা কতটা এগিয়েছে আমাদের কতটা স্বাধীন করেছে এই প্রশ্ন‌ বারবার উদ্বেগ বাড়ায় । সরকারি অবহেলায় মানুষ যে সঙ্কটের ভবিষ্যতে সেটা বড় অবাক করার !

এরপর আমাদের সম্প্রীতির ভারতবর্ষে আরেকটি বিপর্যয় ক্রমশঃ আমাদের হতাশ করে চলেছে‌ তা হল রাজনৈতিক দলের সুবিধা চরিতার্থ করতে গিয়ে‌‌ ধর্ম বৈষম্যের এক বিভাজন । আগামীর ভারতবর্ষে এটি একটি বড় সংকট হতে পারে বলে মনে করছেন একশ্রেণীর বিশেষজ্ঞ মহল। অথচ আমাদের শৈশব থেকে আজ ও আমরা কতটা মিলেমিশে ঈদ আর দুর্গাপূজা করেছি,করছিও।

ধর্ম নিয়ে কখনো কোন দ্বন্দ্ব কাজ করেনি আর আজ সারা ভারতবর্ষ জুড়ে ধর্মের যে বিভাজন গড়ে  তোলা হচ্ছে তা আশঙ্কার । ব্রিটিশ সরকার যে ধর্ম বৈষম্যের বীজ পুঁতে ছিল তা যেন আবার নতুন করে নাড়া দিয়ে উঠেছে। আমাদের শিক্ষার হার ক্রমশঃ বেড়েছে তবুও আমরা অসাম্প্রদায়িক হতে পারছি না । এ বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় যখন ভারতবর্ষকে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের দেশ বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা হয়। স্বাধীনতার পঁচাত্তর বর্ষে আমরা আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে কতটা গর্ব করতে পারি এটা কারো অজানা নয়। তবুও বলবো এবছর স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উদযাপন করছি , আমাদের এখন অনেক সংকল্প নিতে হবে , সঠিক দেশপ্রেম এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে। হবে হবের শ্লোগান অনেক শোনা যায় অথচ হয় না কিছুই। শ্লোগান হোক প্রয়োগের।

আবারো বলবো লক্ষ্য পথ অটুট রেখে গন্তব্যে ছুটে চলতে হবে সময়ের দায়বদ্ধতা থেকে কিন্তু কখনোই মানবতাবিরোধী হয়ে নয় । এদেশ নেতাজী,ভগৎ সিং, ক্ষুদিরামের আত্মবলিদানের দেশ এ দেশ লক্ষ লক্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামীর রক্তস্নাত । আমাদের পঁচাত্তরের শপথ হোক সততার , মানবিকতার আর আদর্শের । 

আমরা শতবর্ষে যেন লিখে যেতে পারি নিস্কলঙ্ক যাপনের কাহিনী। এক শতাব্দীর ইতিহাস আলোয় সেজে উঠুক ১৯৪৭ এর প্রতিশ্রুতি নিয়ে ডলার আর রুপী(টাকা) র সমমূল্যে।

 জয় ভারত, জয় স্বাধীনতা।









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন