লেবেল

শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২২

ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস (পর্ব-৪)।। মুখোশের আড়ালে — আবীর গুপ্ত।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

  





ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস (পর্ব-৪)


মুখোশের আড়ালে 

আবীর গুপ্ত 


পরদিন সকালে উঠে সাঁতার কেটে, লাইট ব্রেকফাস্ট করে জিমে গেল। জিমে ঘন্টাখানেক কাটিয়ে বাড়িতে ফিরল। তারপর, স্নান সেরে একদম লাঞ্চ করে এগারোটা নাগাদ বেরিয়ে পড়ল। ওর গন্তব্যস্থল লালবাজার পুলিশ স্টেশন। লালবাজারে পৌঁছে গাড়ি পার্ক করে সোজা চলে গেল পুলিশ কমিশনারের ঘরের সামনে। স্লিপে নাম লিখে ভিতরে পাঠিয়ে বসে রইল। মিনিট পাঁচেক পরেই ডাক পড়ল। ও ভিতরে ঢুকতেই কমিশনার সাহেব ওকে বসতে বলে বললেন –

— চা না কফি, কী খাবে?

—কফি। আপনার সঙ্গে একটা দরকারি কথা বলতে এলা। আপনার সাহায্য দরকার।

—কফি খেতে খেতে কথা বলা যাবে।

উনি একটা ফাইল দেখছিলেন। সেটায় সই করে ছেড়ে দিয়ে বললেন –

— এবারে বল কী দরকার? সম্বুদ্ধ ঘোষের কেস সংক্রান্ত কোন কিছু?

—  হ্যাঁ।

— তদন্ত শুরু করেছ?

—  হ্যাঁ।

—  কিছু বুঝতে পারলে?

—  মনে হয় একটা দরকারি সূত্র পেয়েছি। আমার ধারণা একটা ড্রাগ রেকেট কাজ করছে।

— তাই যদি হয় তাহলে আমার কাছ থেকে সবরকম সাহায্য পাবে। বল কী করতে হবে।


— মাস দুয়েক আগেই দিল্লীতে ব্যবসায়ী সুবিনয় ঘোষাল নাম ভাঁড়িয়ে চন্দন রায় নামে গিয়েছিলেন এবং ওখানে খুন হন। দিল্লী পুলিশ আপনাদের সাহায্য চেয়েছিল। আপনারাও ইনফর্মেশন জোগাড় করে ওঁদেরকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এই সুবিনয় ঘোষালের খুন হওয়ার এক মাস আগে থেকে খুন হওয়া অবধি ওঁর সেলফোনের ফোন কল ডিটেইলসটা চাই। এটা দেওয়া যাবে?

— সুবিনয় ঘোষাল এর মধ্যে আসছে কীভাবে! স্ট্রেঞ্জ! ঠিক আছে, তুমি যখন বলছ চেষ্টা করব। ওটা হাতে পেলে তোমায় ফোন করে জানিয়ে দেব। এক কাজ করা যেতে পারে, আমি লেক থানার ওসি সুধাময় সান্যালকে পাঠিয়ে দেব। ওখান থেকে কালেক্ট করে নিও।

অনামিকা ওঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এল। ঘড়ি দেখল দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে। লালবাজার পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেল গাড়ির কাছে। গাড়িতে উঠে দ্রুত ভেবে নিচ্ছিল এর পর কী কী করবে। তারপর, গাড়ি স্টার্ট দিল।

সেন্ট জেভিয়ার্স মিশনারি স্কুলের পিছনের গেটের সামনে যখন পৌঁছল তখন দুপুর একটা বাজে। দেখল ফেরিওয়ালারা গেটের সামনে বসে গেছে। গেট বন্ধ থাকলেও দু-একটা ছেলে এসে গ্রিলের গেটের ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে খাবার কিনছে। ও গাড়ি পার্ক করে গাড়িতে বসেই এসব দেখছিল। তারপর, গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে গেল আইসক্রিম-ওলার কাছে। একটা আইসক্রিম কিনলো। এরপর লজেন্স-ওলার কাছ থেকে গোটা দশেক লজেন্স কিনে গাড়িতে এসে বসলো। আইসক্রিমটা খেল, কোন তফাৎ বুঝল না। এরপর, পরপর দুটো লজেন্স খেয়ে গাড়িতে বসে গেটের দিকে তাকিয়ে রইল। সোয়া একটা বাজা মাত্র হুড়মুড় করে ছেলেরা এসে ভিড় করল গেটের সামনে। কিনতে লাগলো খাবার। ও দুটো অবধি বসে এ দৃশ্য দেখল, তারপর গাড়ি স্টার্ট করল। ওর কিন্তু কোনোরকম মাথা ভার বা ঘুম ঘুম পাচ্ছে না। তাও, কনফার্ম হওয়া দরকার। গাড়ি চালিয়ে চলে গেল পার্ক সার্কাসের কাছে নারকোটিকস্ ডিপার্টমেন্টের অফিসে। ও দুটো লজেন্স খেয়েছে, বাকি আটটা লজেন্স টেস্ট করার জন্য দিয়ে বেরিয়ে এল। ওর মন বলছে টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে। ও যে অফিসারকে দিয়ে এসেছে উনি ওর পরিচিত। সন্ধ্যা নাগাদ ফোন করে অনামিকাকে জানালেন লজেন্সে কোনরকম মাদক দ্রব্য পাওয়া যায় নি। ও এরকমই কোন কিছু এক্সপেক্ট করেছিল তাই হতাশ হল না।


সন্ধ্যার সময় ফোন যখন পেয়েছিল তখন ও বাড়িতে ল্যাপটপ খুলে ইন্টারনেটে ব্রাউজ করছে। দ্রুত ডিসিশন নিল দিল্লী যাবে। ফ্লাইটে দিল্লী যাওয়ার টিকিট বুক করে ফেলল। পাঁচ দিন বাদের টিকিট কাটল যাতে এই পাঁচ দিনে তদন্ত আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। রাতে টিভি দেখতে দেখতে কেসটা নিয়েই ভাবছিল। ও যা সূত্র পেয়েছে তাতে ওর মনে হচ্ছে একটা বিরাট ড্রাগ রেকেট কাজ করছে। ওর চোয়াল ক্রমশ শক্ত হয়ে উঠছিল, ছোট্ট বাচ্চাদের যারা নেশার দ্রব্য ভুলিয়ে-ভালিয়ে খাইয়ে নেশায় আসক্ত করে তোলে তারা মানুষ নয় পশু। এদেরকে ও ছাড়বে না, শেষ দেখে ছাড়বে।


রাতে ভালোমতন ঘুম এল না, বারবার দেবাঞ্জনের কচি মুখটা ভেসে উঠছিল। শুয়ে শুয়েই ডিসিশন নিল কলকাতার বিখ্যাত স্কুলগুলোতে যাবে, ওই সব জায়গাতেও নিশ্চয়ই বাচ্চাদের নেশার দ্রব্য বেঁচার চেষ্টা চলছে, সেটা দেখবে। কীভাবে এই কাজটা ওরা করছে সেটা ওকে জানতেই হবে।পরদিন সকালে দশটা নাগাদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। এবারে ওর গন্তব্যস্থল লোয়ার সার্কুলার রোডের একটি বিখ্যাত ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল। গাড়ি স্কুলের সামনে পার্ক করে সোজা চলে গেল প্রিন্সিপালের ঘরে। উনি ব্যস্ত থাকলেও ওর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হলেন। ও জিজ্ঞাসা করে জানল এই স্কুলেও কয়েকজন গার্জিয়ান কমপ্লেন করেছেন তাঁদের ছেলে-মেয়েরা নাকি এই স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় নেশা করে বাড়ি ফিরছে। ওদের বারবার জিজ্ঞাসা করেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায় নি। এভাবে ও একের পর এক স্কুলে গেল, প্রিন্সিপাল বা হেডমাস্টার মশায়ের সঙ্গে কথা বলল। দুপুর একটা নাগাদ গেল লেক গার্ডেন্সের মোড়ে থাকা একটা বড়ো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। এই স্কুলের প্রিন্সিপালও মাদকদ্রব্যের বিষয়ে খুবই চিন্তিত এবং হাইস্কুলের স্টুডেন্টদের যে নেশার দ্রব্য গোপনে বিক্রি করা হচ্ছে তাও স্বীকার করলেন। ওকে উনি সব রকম সহযোগিতার আশ্বাসও দিলেন।

অনামিকা দেখল টিফিন আওয়ার্স বলে ছেলে মেয়েরা স্কুলের গেট দিয়ে বেরিয়ে সামনের ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে খাবার কিনে খাচ্ছে। চায়ের দোকান যেমন আছে তেমনই আছে পান-সিগারেটের দোকান, পুরি-সবজির দোকান আর ভ্রাম্যমান মিষ্টির ভ্যান। ও একবার ভাবলো সব দোকান থেকে খাবার কিনে খেয়ে দেখবে। পরে বুঝল এটা করে কোন লাভ হবে না। সিগারেটের দোকানে গিয়ে দেখল পান, বিড়ি, সিগারেট ছাড়াও কেক, লজেন্স এসব বিক্রি হচ্ছে। ও স্মোক করে না, তাও এক প্যাকেট সিগারেট আর গোটা দশেক লজেন্স কিনল। দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করল কোন লজেন্সটা বেশি চলে। যে লজেন্সটার দাম সবচেয়ে বেশি, সেটাই কিনলো। তারপর, দোকান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে চলে এল। গাড়িতে বসে বেশ কিছুক্ষন সময় চারপাশ দেখতে দেখতে কাটিয়ে দিল। তারপর গাড়ি নিয়ে সোজা চলে গেল বাড়িতে।


(চলবে)



 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন