লেবেল

শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১

প্রকাশিত হল অঙ্কুরীশা-র পাতায় বড়দিন সংখ্যায় ৫০জন কবির কবিতা সংখ্যা।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 


কলমে-

অজিত বাইরী 

তৈমুর খান 

শাহীন রেজা 

সঞ্জীব  দে

অনিন্দিতা শাসমল 

নীলম গঙ্গোপাধ্যায়ের 

বাবলু গিরি

শিবাজি সান্যাল 

সৌহার্দ্য সিরাজ 

অমিত কাশ্যপ 

বিশ্বেশ্বর রায় 

রাখহরি পাল

বিকাশ যশ

তীর্থঙ্কর সুমিত

সন্দিপ রায়

 সুজিত রেজ

বিশ্বদীপ ঘোষ 

সুকুমার হালদার 

তপনজ্যোতি মাজি

দীপক বেরা

বিপ্লব চক্রবর্তী

গোবিন্দ মোদক 

নীলিমা উপাধ্যায়

অলক্তিকা চক্রবর্তী

হামিদুল ইসলাম

মুকুল ম্রিয়মাণ

প্রেমাংশু শ্রাবণ

সালেহা আকতার

বাবুল চৌধুরী

মুস্তফা হাবীব

রেজা স্বপন

জাহিদ রেজা

শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ

মধুবন

আযাদ কামাল

সমুদ্র শাহরিয়ার

প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী 

ফটিক চৌধুরী

রাজীব ঘাঁটী

সুধাংশুরঞ্জন সাহা 

দালান জাহান

ফরমান সেখ

জয়শ্রী সরকার

নারায়ণ চন্দ্র দাস

দীনেশ সরকার

চন্দন-ভট্টাচার্য্য

অলোকা বিশ্বাস সাহা

দেবপ্রসাদ জানা 

মোহর ভট্টাচার্য্য

বিমল মণ্ডল 




          
বড়দিনের  কবিতা  সংখ্যা 


উত্তরের ঝরাপাতা  
অজিত বাইরী 


হেলাফেলায় বেলা গেল,গেল কী বেলা!
উত্তরের ঝরপাতা যাবার সময় 
                            কি কথা বলে গেল?
এখনও একচিলতে আলো লেগে আছে 
                            আকাশের কোণায়।
গোধূলি, আহা গোধূলি, কী বিষণ্ণ, মধুর শব্দ!

আমি তো অরণ্যের পাতা বিছানায় শুয়ে
                                  আকাশ  দেখি;
জীবনানন্দের কবিতা  থেকে উঠে এসে
ঘাসফড়িঙেরা ডানা মেলে বাতাসে।।
নৈঃশব্দ্য গভীর হলে তারও ভেতর ছন্দের
                                    আভাস পাই।

কে লেখে কবিতা  আমার ভেতরে?
                          বর্ণমাল ঝরে হেমন্তসন্ধ্যায়।
হয়তো কিছু পরে একরাশ পাতার পিছনে
জড়ো হবে স্বাতী, রোহিনী, কৃত্তিকা।
এত মুগ্ধতা! তবু কেন মনে হয়,দিন গেল
হেলাফেলায়? আমি কি কবিতার কাছ
                              গ্রহণ করিনি ঋণ?




সরলতার গল্প
তৈমুর খান 


 সরলতাগুলি খুঁজতে এসেছি
                     কোথাও সরলতা আছে?
চারিদিকে রাতজাগা কোলাহল
সঙ্গমের অন্ধকারে ঝরছে শীৎকার
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গল্পের প্রয়াসে
আলো জ্বলে ওঠে
                         আবার আলো নিভে যায়

কতদিন এই রাস্তায় হেঁটেছিল ব্যঞ্জনাময়ী
কতদিন দুলেছিল বেণী
স্মৃতির আমলকি বন ছুঁয়ে
                         আমাদের প্রথম কানাকানি

তারপর বৃষ্টি এসেছিল
শ্রাবণের ভরা নদীর কূলে
আমাদের ছাতা উড়ে গেলে
প্রথম ভেজার গন্ধে আনন্দে হেসেছিল জল
তুমিও সরল আর আমিও সরল
সাঁতার জানি না বলে
          পৌঁছাতে পারিনি কেউ গল্পের ভেতর

তবু গল্প আছে
সরলতাগুলি এখনও জটিল হয়নি
যদিও অব্যয়-ক্রিয়ায় রাস্তা ভ'রে গেছে!





অস্তরাগ
শাহীন রেজা 

তোমার চোখে চোখ রেখেছি; চোখ
আতুর ঘরে জ্বলছে দিনের শোক
এবার আকাশ ছড়িয়ে দুটি হাত
ধরবে শালিক প্রবল অকষ্যাৎ–
আমরা দু'জন ; পাশে ফড়িং রোদ
মিঠেকড়া কেমন যে তার বোধ 
তবুও আমার বুক-ঘড়িটা জাগে
সুরুজ ভাঙা গহীন অস্তরাগে।




অনিশ্চয়তা
সঞ্জীব  দে

ফোটা ফোটা হয়ে ঝালকাঠি র    
                    মাথায় ঝুলতে থাকা
অস্বাভাবিক ভাবে,

মাটির দাওয়ায় বাঁশের খুঁটি র মাথায়
         ঝুলন্ত হ্যারিকেনের আলোর মতোন চাঁদ
এক পটভূমিকা রচনা করে।

গভীর অরণ্যে জমাট বাধা পাতার
আলসেমিতে
     চোরাগোপ্তা ভাবে এক মাদকতার আবেশ

তুমি শেলি'র কবিতা হয়ে
      শরীরের গোপনতায়
           আমার ভালোবাসা ঝুলিয়ে রাখো,
বাস্তবতা যেভাবে পৌষে ঝুলে থাকে
                           অনিশ্চয়তায়।





কাগজের নৌকো
অনিন্দিতা শাসমল
 

প্রদীপের বাতিটা নিভে আসছিলো ক্রমশ ;
একটু একটু করে তেল দিয়ে, কাঠি দিয়ে উসকে দিয়েছো কাপাস তুলোর সলতে ।
 নরম আলোর শিখা আগলে রেখেছিলে দুহাতে আড়াল করে , সামান‍্য বাতাসে এমনকি প্রবল ঝড়েও...

আমার সব আবেগ,ভালোবাসা অভিমান আজ পাথরের দেওয়ালে মাথা ঠুকে ঠুকে ক্লান্ত, অবসন্ন ! 
শুধু তুমি নেই বলে...

আমার সব শব্দকে তাই , কাগজের নৌকো করে  ভাসিয়ে দিলাম তমালের জলে।

তুমি ছাড়া আমার কোনো অক্ষর নেই,কবিতা নেই,কন্ঠ নেই,ভাষা নেই ,সুর নেই ;
অস্তিত্বও নেই ।

যে তুমি জড়িয়ে ছিলে এতগুলো বছর ,
কেন ছেড়ে চলে গেলে সখা ? 
প্রতিদিনের ভালোবাসা ক্লান্ত করলো তোমাকে?
আমাদের সবার বাঁধন কী এতটাই আলগা ছিলো? 

তোমাকে লতার মতো জড়িয়ে থাকতে থাকতে ,
তোমাকে  অবলম্বন করেই বাঁচতে শিখেছি ।
সব জেনেও তুমি ... !



সাক্ষী রেখে 
নীলিম গঙ্গোপাধ্যায়

দ্যাখো মৃত্যু কেমন আটপৌরে কান্নায় পালটি খেয়ে
 শিখে নিল রঙমশালের গমক

আত্মবিজ্ঞাপনের সংক্রমণ পাথর রঙিন বড়োজোর
 ডিঙানো এক উপায়, আর উপায় পাথরের সেতু
রাক্ষসের বাস, অস্ত্রের ঝনঝন, দাউদাউ স্বর্ণলঙ্কা জ্বলে
তবু পতঙ্গের টানে যাবে, কালকেতু ফুল্লরা
চতুর চ্যানেলের স্পর্শজাত তুমি
ভোকাট্টা ঘুড়ির লেজে চলে গেছে আয়ুর খানিক
লোভের সুরসুরি পিঁপড়ে বাসা বাঁধে আস্তিনে তোমার

মৃত্যুর আয়নায় ঢুকে যাও
গ্রহের মতো শূন্যে ঘোরে চরকি, জ্বলে আগুনের রঙ
গাণ্ডিবের জ্ঞান আনো, এবং মাছের চোখ

রয়েছে কি লক্ষ্য সেখানে, ছিল কোনোদিন?

অথবা প্রকৃতই মহামীন? মীনাক্ষী, মাপছে তোমায়?



নবান্ন আসছে
 বাবলু গিরি 

হেমন্তের ছাতিম কামিনীকাঞ্চন 
খবর দিলো সে আসছে •••
খবর দিলো খেজুর রস,
খবর দিলো নলেন গুড়,
খবর দিলো কণকপ্রভা ধান,
খবর দিলো শিশিরের অঘ্রাণ।
ঝরাপাতা ঢেকে দিচ্ছে পৃথিবীর যন্ত্রণা।
সোনাঝরা রোদ্দুর ঠান্ডা বাতাসের উষ্ণতা,
শিশিরভেজা ঘাসের ঘ্রাণে 
খবর ছড়িয়ে গেলো -নবান্ন আসছে।
নবান্ন আসছে কনকপ্রভা রোদ্দুরে।





আবার হল দেখা
শিবাজী সান্যাল

সাত বছর পর , আবার হল দেখা

এ এক দীর্ঘ  সময় , মানুষ ধীরে ধীরে 
ভুলে যায় ( সত্যি ? ) অনেক স্বর্ণালী সন্ধ্যার কথা
বাঁধনহারা হাসি , অপার খুশি , স্বপ্নের জলতরঙ্গ 
হারিয়ে  যায় সাক্ষী শহর , মেঘমালা , রেস্তোরাঁ  
হাতের মিঠেল স্পর্শ , সীমাহীন অনুভূতির মালা। 

সহসা উঠেছিল ঝড় , ওরা বানালো দেওয়াল
আমাদের মাঝখানে , বন্দী তুমি
আমিও শিকলে বাঁধা , দুজনেই অসহায় । 
শেষ বার তুমি এসে ফিরিয়ে  দিয়েছিলে
আমার কবিতার বই , বলেছিলে ,“ আমি নিরুপায়,
আমাকে নিয়ে আর  লিখোনা কবিতা ।”

সাত বছর পর আজ আবার হল দেখা
হঠাৎ ।  নিজেকে  সামলে বললাম ,“ কেমন - ?”
' আছো ’ বলার আগেই পড়ল চোখে
তোমার সিঁথিতে টকটকে লাল সিঁদুর, আর
তোমার দুচোখে  কুয়াশার ঘনঘটা ।



চোখ খুলে মহাজন
সৌহার্দ সিরাজ


কত পথ হেঁটে দ্যাখো বিশ্বাস একাই এসেছে
আকাশের পর্দা খুলে বেমালুম সে
বলে দেয়—
জল শূন্য জলের ভাগাড়!

শীতের অভিষেকে আমাদের দৌড়
কাছাকাছি জলপুত্র হাঁটু গেড়ে তুলে ধরে
অবিরাম অনুভব।

চোখ খুলে মহাজন ধুলোর বাতাস খেয়ে লাভ কী!
এখন তো দেয়ালে দেয়ালে লিখে দিলেই হয়
মিথ্যের ভোজসভার রঙিন নিমন্ত্রণ পত্র!
 


আহ্লাদের বড়দিন
অমিত কাশ‍্যপ

একা নদী শুয়ে আছে নিরিবিলিতে
আজ একটু অগোছালো রোদ
শীত ছুঁয়ে আছে নদী ঘেঁষে 
আজ যেন দূরে বড় কোলাহল 
গাড়ির পর গাড়ি মহাসমারোহ
বনভোজনের আনন্দ হেলে পড়েছে পাড়ে 

বর্ণাঢ‍্য শীত পোশাকে নানান বয়সী মানুষ 
পায়ে পায়ে যেন কত ব‍্যস্ততা
যেন সুখ পড়ে আছে মাঠে 
কুড়িয়ে কুড়িয়ে জমা করছে আহ্লাদ
রান্নার সামগ্রীর মতো নেড়ে নেড়ে দেখছে খুব 
আজ বড় আনন্দ হে, আজ বড় আনন্দ 
গলা মিলিয়ে গান ধরে কেউ 
বড়দিন মেতে উঠেছে একলা নদীর পাশে 



মাটি  
বিশ্বেশ্বর রায়

আমি আকাশের পানে বাড়ালুম হাত।
আকাশ-গঙ্গায় হাত গেলো ডুবে,
আর আকাশ ভেঙে নেমে এলো অঝোর বৃষ্টি।
আমি সেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে
নগ্ন কোমল হতে হতে রজ:স্বলা হলুম।
তারপর ফুটে উঠলো অঙ্কুর,
মাথা তুললো সূর্যের মুখোমুখি,
আমি সম্পূর্ণা হলুম।


আনন্দ আঁধার
রাখহরি পাল

কোন্ পথে ছো মেরে তুলে নেবে আগন্তুক চিল
মৃত্তিকার পাঁক ঘেঁটে, খুঁটে খাওয়া ইতরের প্রাণ 
আজও বলেনি চাঁদ, ফাঁদ পেতে জ্যোৎস্নার নীল
কর্মের অজুহাতে বিছিয়েছ বীজতলা, ফসলের ঘ্রাণ।

তবু যারা,বন্দী ভাবে, এই লুব্ধ বীতংস জাল
পাহাড় শিখর ঢালে ঢলে পড়ে মুক্তির খোঁজে
শ্যামের বাঁশির সুরে সমুদ্রের নীল অন্তরাল
কুয়াশার অভিমানে জীবনের ভাবার্থ বোঝে।

মৃত্যুকে মৃত্যু দিয়ে চেনা,--- এই অশরীরী বোধ
বার বার ছিন্ন করে ছন্দময় পৃথিবীর স্নেহ
অবসাদ-দীর্ণ চোখে সুন্দরের ঠুনকো অবরোধ
ঝরে পড়ে উল্কা থেকে নন্দনের পৌত্তলিক দেহ।

তুমি স্থিতধী, সত্যের নিষ্ঠাখানি তুলে দাও হাতে।
তবুও যে কথা,মৃত্যুর কাছে গোপন রেখেছ দ্বিধায়
অথবা কোন্ অমোঘ সত্য তুমি যা পারনি বোঝাতে
ডুব দাও,অদ্ভুত আনন্দ আঁধার সিজোফ্রেনিয়ায়।




 দুষ্টু ছেলে
বিকাশ যশ

তোমার ছেলে খেলার ছলে
ভাঙছে ঘর-বাড়ি
তোমার ছেলে জেলে বসে
চালায় জমিদারি ।

তোমার ছেলে খুঁজছে টাকা
পকেট কেটে কেটে
তোমার ছেলে কাটায় জীবন
নরক ঘেঁটে ঘেঁটে

তোমার ছেলে ঘুরছে দেখো
বোমা পিস্তল হাতে
তোর ছেলে ভাটিখানায়
মদের নেশায় মাতে।

তোমার ছেলে রকে বসে
দিচ্ছে গাঁজায় দম
তুমি বলছ আমার খোকার
বয়স এখন কম



ঐতিহাসিক ভুল
তীর্থঙ্কর সুমিত


এ এক ঐতিহাসিক ভুল
তবে ইতিহাস কখনো ভুল করে না
পিরামিডের গায়ে লেখা থাকে
অসহায়তার সংজ্ঞা
ভোরের সাইরেন এখনো বাজে
এক দুই সবই
ভালোবাসার বিন্দু
হারাবার কিছু নেই

তবে গান শিখে নাও কামনার আগুনে।



পলাশ কথা
সন্দীপ রায় 

একটা সাদা কাগজ , নিতান্তই সাদামাঠা --
হাওয়ায় ভেসে গেলে কাটা ঘুড়ি, 
মন ক্যানভাস ...
সূক্ষ্ম অনুভূতির ছোঁয়ায় বসন্ত রঙিন,

কোন্ জাদুবলে
কিভাবে যে মনের ক্যানভাস হয়ে যায়!
বোঝা দায়।

মন বড় অবুঝ, 
বুঝতে বুঝতে দশক পেরিয়ে গেলেও 
মন একটা মনের ছবি আঁকতে পারলো না।

কী করে বোঝাই 
রঙ, তুলির কাছে হার মেনেছে!
মন জুড়ে এত রঙের সমাবেশ 
অথচ তুলি রঙ খুঁজে পায় না,
চোখে পট্টি বাঁধা গান্ধারী। 

এভাবেই হাজার বসন্ত শেষে 
হয়তো একদিন পলাশ ফুটবে!






অপেক্ষা 
সুজিত রেজ

কার অপেক্ষায় কেন বসে আছি 
কেন এই কানামাছি খেলা এবেলা ওবেলা 
মুহূর্ত গলে যায় 
মনে হয় এক পলকপুরাণ
অজান্তেই কে যেন লেখে নখ দিয়ে
এলইডি পোকা জেগে থাকে              
       ভলবো বাসের মতো এই শরীরে
জানালা খুলে দিলেই ফিচেল হাওয়া 
বয়ে নিয়ে আসে মুড়ি ভাজার গন্ধ

জানি,চলে গেলে পাব না কিছুই
ভুলে গেলেও মনে পড়বে সবই



 বিজ্ঞাপন
বিশ্বদীপ ঘোষ 

পড়ে আছে পড়ে থাক অবিশ্বাসী প্রণয় সাজ,
ধুলো পড়ুক বিনিদ্র চোখে... 
ঘুণপোকা চেটেপুটে খাক খামখেয়ালি সত্য।
চাপা থাক, ফেলে আসা কিছু অনিন্দ্যশোক,
সঙ্গে হাতে গোনা কয়েকটা অনেক্ষণ।
জমা থাক, ভাঁজ করা ভুল-ত্রুটির পাঁজরে 
রতি লগ্নের যত আগুন ভরা আছে সব...
এই ছিল ভাঙা মেলার ওবেলার বিজ্ঞাপন।

এবেলায় লেখা —
হয়তো একদিন এই উঠোনেই 
মুখোমুখি হাতেখড়ি দেবে 
আমার প্রতিরাতের পোড়া আয়ু  
আর তোমার খিল বন্ধ বয়সের খুঁত। 



ঋতুমতী স্রোত 
সুকুমার হালদার 

আমার দিনগুলো ইদানীং 
অন্ধকারের দিকে ক্রমশ পা বাড়াচ্ছে

এবার বৃষ্টিভেজা গল্পটা বলতে হবে

আমার ঘরের ভিতরের ঘরে বৃষ্টি পড়ে 
বৃষ্টিভেজা তরঙ্গ -সুর
চোখের কোন মনের কোনকে নদী করেছে 
বন-বাদাড় পথ ভাসায় 
প্রতিকূল ঠেলে আবার ঋতুমতী স্রোত 
ঘরের অন্দরের ঘর ভাসায় 

এবার শুধু বৃষ্টি 
অঝোর ধারায় অবিরাম...

আমার খুব মনে পড়ছে 
পৃথিবীর তিনভাগ জল 
একভাগ স্থল 
শিশুকালে যেটা পড়ে ভয় পেতাম 

এখন ভয় আমাকে ভয় পায়! 


হৃদয় পর্যটক
তপনজ্যোতি মাজি

রাত বাড়লে কথা কমে যায়। সম্পর্ক জানে এর কোনও 
শব্দবন্ধ নেই। যে যেভাবে বলতে চায় বলুক। 
আমি বলি  তন্ময় প্রহর। 

নদীর যে উৎস তাকে কেউ কেউ বলে উদগমন। সুন্দর। 
বিশুদ্ধ কবিতাময়। সব শব্দ কি মস্তিস্ক বাহিত হয়ে 
হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছায়?

বিদ্যুৎ আলোকিত সন্ধ্যায় জাতীয় সড়ক মায়ামৃগ হয়ে যায়।
গাড়ির দৌড় দেখে মনে হয় জীবন আক্ষরিক অর্থে 
যান্ত্রিক ও গতিময়। 

আকাশ কি সর্বজনীন ? মধ্যরাতে নির্বাক আকাশ মুক যুবকের
মতো তাকিয়ে থাকে ঘুমন্ত  পৃথিবীর দিকে। পৃথিবী কি
রজস্বলা নারী?

তন্ময় প্রহরে জেগে থাকেন শব্দঅনুসন্ধিৎসু কবি। ঘুমন্ত সংসার
পাশে রেখে হয়ে যান হৃদয় পর্যটক। ভ্রামণিক তিনি 
তরঙ্গ দেখেন সম্পর্কের।

রাত বাড়লে কথা কমে যায়। বোবা হয়ে যায় আলো। বোবা হয়ে 
যায় অন্ধকার। শরীর কি আগুন পাথর? পুরুষ কি
জানে ? শরীর নয় আগুন জ্বলে মনে।



উদাসীন ঈশ্বর
দীপক বেরা

"থ্রী চিয়ার্স ফর মেরি ক্রিসমাস"..
বেজে চলেছে দ্রুত লয়ের 'ডি-জে'র অর্কেষ্ট্রা
উন্মত্ত নর-নারীর হাতে হাতে শ্যাম্পেন গ্লাস
কর্পোরেট দুনিয়ায় সদ্য উত্থিত আমার আমিত্ব
পার্ক স্ট্রীট জুড়ে রঙিন আলোর ইন্দ্রজালে 
আমরা সবাই আজ আনন্দে ভীষণ মশগুল
বিশাল কেকের চারপাশে শাণিত ছুরির ফলা
টলোমলো পা, রঙিন পানীয়, লকলকে জিভ
না,.. আমারও কোনও দুঃখ নেই, কষ্ট নেই 
আমার কোনও অতীত নেই, কোনও স্মৃতি নেই! 
তবু, কেন বারবার মনে পড়ে যায়, 
বাবার ক্রমশ ক্ষয়ে যাওয়া পায়ের তলা, আর 
মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়া মায়ের রক্তবমির কথা? 
কিন্তু, বিশ্বাস করুন ---
আমি আর দুঃখের কবিতা লিখতে পারি না, 
আজ আর সে ক্ষমতা আমার নেই! 
নৃত্যের তালে তালে পায়ের বুটের শব্দগুলো 
ক্রমাগত দূরে চলে যায়, ক্রমবিলীয়মান.. 
দেবদূতের মত আবির্ভূত ক্ষণিক রূপময়তা
ক্রমশই ঢলে পড়ে নিকষ আলোহীনতার দিকে 
টল টল করে ওঠে মরমী অশ্রুকণাগুলি
কেবলই অনুভূত হয় আমার অতীত, নিজস্ব শূন্যতা! 
শুধু, সেন্ট পলস্ গীর্জার নির্জন গম্বুজ থেকে 
ক্রুশবিদ্ধ যীশুর মূর্তি অপলক তাকিয়ে থাকে 
অনেক আলো-আঁধার পেরিয়ে জাগতিক দুঃখের 
শেষতম পেরেকটি শরীরে গেঁথে ক্ষমার মন্ত্রণা নিয়ে
বড়দিনের শীতের রাতে যিনি আজ উদাসীন ঈশ্বর! 



মূল্যবান পড়ে গেল

বিপ্লব চক্রবর্তী

প্রথমে চড়তে পারিনি, ইচ্ছে ইশাড়ায় ডাকতো  কোনো অনুশীলন ছিল না নদী সাঁতারের
আহ্বান ছিল দীর্ঘ , চোখ আর মুখের ব্যাপ্তিতে
সময়ের স্পর্শতে  কতবার  বুক থেকে নিতম্বে
আঙুলে করেছি চিরুনি তালাশ সবে মাধ্যমিক
নেবেই প্রথম ডুবে গেলাম খোলা বুক ধরে 
উৎসাহের প্রগলভতায় ফেলে দিলাম মূল্যবান
রেখে দিলাম দয়িতার হাতে শরীরে কৌতূহলে
তাপ্পর আর ভুল হয়নি পাহাড়ে কিংবা নদীতে।



শীত-পার্বণ !
গোবিন্দ মোদক 

পৌষ আসলেই। শীতের বুড়ি। থুত্থুড়িয়ে আসে ! 
কুয়াশা ঘেরা। শিশির মাখা। হিমঝরানো ঘাসে !! 
পাতা ঝরার। দিন এসে যায়। কনকনানো হাওয়া !
কপি পালং। মটর-শুঁটি। শীতের ফসল পাওয়া !! 

সর্ষের  ফুল। হলুদ  বরণ। সমস্ত  মাঠ  জুড়ে! 
শীতের হাওয়া। বেড়ায় কেবল। হি-হি কাঁপা সুরে!!
বাগান জুড়ে। মরশুমি ফুল। গোলাপ নানা জাতের! 
টবের বাহার। চোখ টানছে। রূপ খুলেছে ছাতের !!

ইতু - পুজো । নবান্ন  শেষ ।  বড়দিনের  মেলা ! 
কেক পেস্ট্রি। কমলালেবু। মিঠে রোদের বেলা !!
গরম পোশাক। উলের চাদর। লেপ-কম্বল-শাল ! 
খেজুর রস । নলেন গুড় । দিচ্ছে কৃষক জ্বাল !! 

পৌষ-পার্বণ। মিঠে-পিঠে। পাটিসাপটা, পায়েস ! 
নকশি-পিঠে। সরুচাকলি। খাওয়ার কত আয়েশ !!
শীতের আমি। শীতের তুমি। শীতের সকালবেলা !
খুব আয়োজন। জলসা শীতের। চলো রে বইমেলা!!




ছলনা
নীলিমা উপাধ্যায়, মুম্বাই

হে ঈশ্বর ! ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত আমি।
 অসহায় মানুষগুলো, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কঙ্কাল সার হাতের রেখাগুলো, আজ ক্লান্ত খুঁজে মরে তোমারে...
বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধা কাঁদে,অনাহারে শিশু কাঁদে
   বৃষ্টি হলে আকাশ কাঁদে।
আড়ালবীক্ষন থেকে চেয়ে থাকো মহানীল চোখে!
আমাকে বিস্মিত করে যদি আবার কোনোদিন নাই ডাকো,
এই পরমাশ্চর্য দিন বলবে আমার হয়ে -

দ্বিপ্রহর, ভোর নীশিথকাল শেষ ;
বন্ধন ছিন্নকরা আর্দ্র রজনীর অধিক কিছু
  থেকে যাবে আমার আর্তনাদে।

অজানা গন্তব্যে অজান্তেই চমকে উঠি
      জীবন ফুরালো নাকি!
তোমারে না পেয়ে নিভল আঁখি ,
এ জীবন বৃথায় হল ফাঁকি।

এমনি করে সবাই যাবে;  যাবে ফিরে -
না জেনেই সত্যেরে ।


সে
অলক্তিকা চক্রবর্তী

বাতাসে অবিশ্রাম খোঁড়াখুঁড়ি কোথায় ফিরে আসে জীবন

সে আস্তে আস্তে তার হাত খোঁজে পা খোঁজে ঘাড় - মাথা ঘোরায়
চোখদুটো আরো সুদূরে মেলতে গিয়ে থমকে যায়...

তার ডালপালা ছেঁটে ফেলা হয়েছে বহুদিন
তবু ইচ্ছেটুকুই আর কাগজ  কলম...

'সংসারের রক্তচক্ষু...' বিশেষণে সে লেখা শুরু করতেই তার হাত কাঁপে
তাড়াতাড়ি দাঁড়ি টানে জলের শীতল ফোয়ারায়

তার বহুবার মুচড়ে দেওয়া ডান হাতে হাত বোলায় কলম দিয়ে
মানবিক মাপকাঠির আরো কাছাকাছি হতে 
সে চোখ দুটো সুদূরে পাঠায় আকাশের আশ্রয়ে
নাঃ,জানলায় আটকে যায় অলিন্দ বিলাস

দরজায় গুমগুম শব্দ কানে পাতা দায় 
 ওই ধেয়ে আসে প্রতিরোধ সভা
সে মরীয়া ব্যাপ্তি বোঝাতে এবার তার 
পুরো অস্তিত্বটা কে বের করে আনে শরীরের খোল থেকে

জন্মান্তর ঘোষণায় নশ্বরতায় দেহপটে তার জাগতিক ঐশ্বর্য
সবটুকুই  ঢেলে দিতে চেষ্টা করে
মন ও মেধায় সার্থক একটি নিপীড়িতের কাব্য হয়ে উঠতে...



বড়োদিন
হামিদুল ইসলাম
                               

পৃথিবীতে যখন অন‍্যায় অত‍্যাচার নেমে আসে 
নেমে আসে নিকষ অন্ধকার 
তখন আলোর মশাল হাতে নিয়ে 
আঁধার রাস্তায় এসে দাঁড়ায় কোনো এক আলোর পথিকৃৎ।

যিশু সেই আলোর মশাল 
আলোক বর্তিকা 
তিনি মানুষের মুক্তির পরিত্রাতা 
তিনি পৃথিবীর অব‍্যক্ত যন্ত্রণার পাণ্ডুলিপি ভাসিয়ে দেন ক্ষীর সমুদ্রে।

তিনি ঈশ্বর পুত্র 
ঐশ্বরিক ভাবনা তাঁর অস্থি মজ্জায় 
তিনি ধ্রুবলোকের শ্বাশত কাণ্ডারী 
অগোছালো আলোছায়ায় গোছালো আলোর জোনাক।

ঈশ্বর অনুসরণের পথ কী হবে 
তা নিয়ে বিতর্ক তাঁর নির্মম যিহুদিদের সাথে 
বিচারে সাজা তাঁর 
বিষাক্ত ক্রুশে ক্রুশে মৃত‍্যু বরণ।

নিভে যায় বাতিঘর 
এক অদৃশ‍্য অন্ধকার ঘিরে ফেলে প্রাচীন শহর 
তবু ফিরে ফিরে আসে বড়োদিন 
পঁচিশে ডিসেম্বর। তাঁর জন্মদিন উৎসব।


অন্ধকার মগজ ও রঞ্জন কবিতাকেন্দ্র
মুকুল ম্রিয়মাণ

না সরে না।
প্রেতের মতো ঘাড়ে চেপে আছে উড়ুক্কু শব্দরা,
বুকদেয়ালে বেড়ে ওঠে কবিতার লোবানগাছ।
মেহেবুবা রাত জাগৃতির উঠোনে জোনাকীর নাচ বসায়;
গহিন আবডালে ডাকে ফুলমুখ,
সুগন্ধির মতো ভেসে বেড়ায় জীবনের কোরাস,
সম্প্রীতির মিহিদানা।

ডানাওয়ালা অক্ষরগুলোর রঙিন পেখম খোলে,
উৎসাহ আনে নান্দনিক বৃষ্টির বীজ বোনে,
অন্ধকার মগজ হয়ে ওঠে রঞ্জন
কবিতাকেন্দ্র।



সমুদ্র
প্রেমাংশু শ্রাবণ


আয়না জুড়ে যখন থৈই থৈই জল
জীবিকার অন্য পিঠে তখন চাঁদ ঘুমিয়ে থাকে
স্নানঘরে ভেসে যায় অজস্র বুদবুদ

ফেংশুই বিশ্বাসে বুদ্ধ হাসেন অম্লান

আয়না ভেঙে কলঙ্করা ছড়িয়ে পড়ে
ঘরের আনাচ-কানাচে

জলজ বাতাসে ভাসে সাগরের স্বাদ
নোনা ভালোবাসার... 

তৃষ্ণা
সালেহা আকতার


মাটি রংয়ের মেয়ে তুমি
গলায় পরেছ পুঁথির মালা
শিকড় খুব ভালোবাসো
জলের তৃষ্ণা গন্ধ পাগল।

উর্বর আকাশ ছায়া
তুমি ঢেলে দাও



রুগ্ন রোদের উঠোন
বাবুল চৌধুরী


নিরাকার বিশ্ব নিরাকার মন
শুনেছি সতর্ক বাঁশির সুর
পীড়া ও প্রদাহে অন্তঃপুর
দৃষ্টিতে রুগ্ন রোদের উঠোন




রেশমি চুড়ির রুমঝুম
মুস্তফা হাবীব


রাতজাগা পাখির গানে ঘুম ভাঙে সচকিত
ধ্যানমগ্ন মাছরাঙা, চোখ রাখি বসন্ত ঝিলে,
পুষ্পের সুবাসে প্রজাপতির ছুটে চলা দেখে
নিশীথে মাধবী তলায় এসে থমকে দাঁড়াই।

অষ্ট প্রহর প্রমোদ তরীর মাস্তুলে শিস দিয়ে
রূপালি নদীতে ঝাঁপ দেই গ্রীষ্মের দুপুরে,
যৌবন ঝড়ে ভাঙি ভরা নদীর বাড়ন্ত সাহস
কেউ পারে না রুখতে আমার স্বপ্নের উচ্ছ্বাস।

এখন আমি দুর্বার বেগানা সাহসী পুরুষ
যুদ্ধ করি প্রতিপক্ষ দিকভ্রম পথিকের সাথে,
কুমারির লাল ঠোঁট ভিজিয়ে দেই চুম্বন রসে
চমকে উঠি রেশমি চুড়ির রুমঝুম শুনে। 


পেছনের দরজায়
রেজা স্বপন


তোমার ব্যক্তিগত উৎপাদন
তা থেকে উদযাপন
শরৎ-ঝরা রাত
কিছু পলক ঝরা হাসি ফেলে দেওয়া কিছু
রংধনু  কতদূর?
সন্ধ্যার যানজটে সেবন্তী ছায়ারা
মুক্তির পথ খুঁজছো?
এসো পেছনের দরজায়
দেখ এই আমি সেই আমি 



স্মৃতিময় রুমাল
জাহিদ রেজা


বৃষ্টি এলো বলে খুব তড়িঘড়ি
রুমালটা হাতে ধরে নিই
অযুত স্মৃতি লেগে আছে যার সুতোয়
ভাঁজে ভাঁজে উঁকি দেয় সহস্র রাত।

বৃষ্টি ফুরিয়ে গেলে চোখ মেলে দেখি
রুমালের দুপাশ গেছে ভিজে
এক পাশে তখনো কালো কালো মেঘ
অন্য পাশে প্রত্যাশার সাদা ঘুড়ি ওড়ে

রুমালটা আকাশে মেলে দিলে
পুরণো সেই ব্যথায় আবার জেঁকে ধরে দাঁত। 

আর একবার পাঠালাম। গেল কিনা জানান।




  বড়দিন
শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ

একটু একটু করে ছোট হয় দিন
একটু একটু করে বেড়ে যায় শীত,
উদ্যান হয়ে যায় ফুলেল-রঙিন
পরীক্ষা শেষে কারো হার কারো জিত।

তারপরে উৎসব মেরি খ্রিস্ট-মাস
ছোট হতে হতে দিন বাড়া শুরু হবে
গির্জায় জড়ো হবে মানুষের রাশ
মেলা-খেলা হবে বড়দিন উৎসবে।

বড়দিন মানে শুধু মেলা-খেলা নয়
এদিনে জন্মেছেন খ্রিস্ট জেশাস,
সবাইকে ডেকে নিয়ে বড়দিন কয়:
সবার হৃদয়ে তোরা হৃদয় মেশাস।

বড়দিনে আর আছে সান্তাসাহেব ,
সে বলে;আয় রে শিশু, দুঃখী আতুর,
সব ব্যাথা হয়ে যাক আজকে গায়েব
হয়ে যাক বড়দিন খুব সুমধুর।


জানিনা
মধুবন 

চোখে চোখ রাখলে, তোমার ঠোঁট কখনো কোজাগরির চাঁদ হয়ে উঠবে কিনা জানিনা,
তামাটে রোদের আলোয় তোমার গালের টোল দেখতে দেখতে,
টোল ট্যাক্স দিতে ভুলে যাবো কিনা জানা নেই,
সেলফি কখনো জীবন্ত হয়ে সামনে দাঁড়ালে, আমার মরণ হলেও হতে পারে–
জেনেও বর্ষার মেঘ এসেছিল ঝিমলির আদিবাসী মাতাল অরণ্যে,
একবার আকাশ নদীর তরঙ্গ পান করেছিল 
কিঞ্চিৎ পাওয়াতেও যে এত রাত্রি সকালও জানতো না।




জানালায় চোখ ঠেকাই
আযাদ কামাল


আলোর জানালা ছুঁয়ে রোদের অক্ষর
শব্দের মালা গাঁথে সৌরভে ভোরের উঠোনে সূর্য হাসে
মিছিলে মিছিলে বিচ্ছুরিত কণা
ব্যাপ্তি ছড়ায় নান্দনিক কোলাহলে;

প্রাত্যহিক প্রবেশমুখে কিছু খড়কুটো, শত্রুর অযাচিত মুখ!
আঁধারে ঢেকে দেয় সোনালি আকাশ
ক্ষমতার কাছে পরাস্ত হয়
জীবনের বোধ, সময়ের নিখুঁত উপমা!

জানালায় চোখ ঠেকাই
সুদূরপ্রসারী-  মুক্তধারার সহস্র স্বপ্নবুকে।


আমি ঠিক কত পারসেন্ট
সমুদ্র শাহরিয়ার



আমি কিছুটা পাগল হয়ে আছি।

ঠিক কত পারসেন্ট এবং কিসের জন্য
সেটা বুঝি না।

দীর্ঘদিন ফাঁকা আকাশ না দেখা
দিগন্তব্যাপী সবুজ বনভূমিতে না মেশা
একটা কারণ হতে পারে

নদী থেকে দীর্ঘদিন দূরে সরে আছি
স্বজন সুজন থেকে আড়ালে আছি
এটাও হতে পারে

গবেষণার জন্য ছোট একটা পাখি হলেই হয়
সোনা সোনা রং সবুজ সবুজ মন



নলেনের প্রেমরসে 
প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী 

এই শীতে অঘ্রাণ     আছে সুখ ম্রিয়মান
পেয়েছি নতুন ঘ্রাণ      সকালে ,
নলেনের হাসিমুখ     মেতেছে খরায় বুক 
দিবারাতি উৎসুক     চেয়ে রই ,
আগুনে ফুটছে রস    মনকে করলো বশ 
প্রাণ করে টস টস       বুঝি ওই
পুড়ে পুড়ে হলো দানা    কামাগুনে দেহখানা
দিনলিপি ছিল জানা    ভাসালে ।

কত সুখ ছিল জানা     মধুরস  আটখানা
 সৃষ্টির  চাঁদপানা       মুখটা ,
জীবনের প্রতি ক্ষণে   কত খুশি আনমনে 
 বোঝে তা কয়জনে     জানিনা ,
রস জ্বলে ঝিকমিক    সুবাসিত চারিদিক 
টিকটিকি ঠিক ঠিক    মানিনা 
নলেনের হাসি নিয়ে    টগবগে প্রেম দিয়ে
দেবে কি  সে কাঁদিয়ে    সুখটা ।

কামরসে  প্রেম সাজি   নয় তাযে ভোজবাজি
এই সুখে সব রাজি      হরদিন ,
জীবনের মৌবনে   উচ্ছল যৌবনে 
রসপানে চনমনে    প্রাণটা ,
আলুথালু চন্দ্রিকা   প্রেমবনে হাঁটে একা 
সারাদেহে সুধামাখা  গানটা 
হৃদে ভরা রসক্ষীর   আগুনেতে থাকে ধীর 
 প্রেমজ্বরে সেই বীর  আলাদিন ।


মা-তোমাকে
বরুন চক্রবর্তী 

মা
তোমার বকা খেতে ইচ্ছা  জাগে 
জানো মা--তুমি বকলে দুঃখ পাই
আবার  মনে মনে এও ভাবি
বকা খেলে সোজা হবো  

হ্যাঁ, মা তুমি চোখ রাঙাও
অভিমান  ঝ'রে  পড়ে , ভয়ে মরি
যখন বুঝি ভয়ে ভয়ে আমার
এই বোধ হয় মেরুদন্ড বেঁকে যাচ্ছে
তখন তোমার কাছে এসে দাঁড়াই
যদি একবার আরও একবার
বকা খাবার সুযোগ  পাই

বলবো মা! 
তোমাকে  চুপি চুপি  বলবো?
মা, তোমাকে  ধরেই আমাদের  বাঁধন
সাত সকালে তোমার  মুখ দর্শন করলে ভালো থাকি 
এমন ভাবেই তোমার  প্রসন্ন মুখের আশির্বাদ পাই

অন্য কখন্ও,তোমার স্নেহ-বিজড়িত  মায়া -মন
যখন দুঃখকাতর ব্যথাতুর হৃদয় রাগ জর্জর ;
তোমার  সংবেদনশীল মন-মেজাজ আগুন তপ্ত
পীড়িত মনে তখন তোমার বকা বাড়ে, নিপুণ বক—
যখনই বেড়ে চলে,তোমার  বকা সহনীয়  লাগে

তোমার  বকা খেয়ে এমন করেই সোজা  হই
এই দ্যাখো কেমন সোজা হয়েছি... 

মা , -- ওমা 
আমার প্রাপ্য বকা দিলে কৈ
এখনও তোমার বকা দাবি করি  

মা- তুমি  আমায় আজ বকলে না তো 
তুমি কি  চাও না  আমি  সোজা  থাকি !



বড়দিন
ফটিক চৌধুরী

এই শীতে
ঝুলে থাকে বিকেল
ততটা মর্যাদা না পেয়ে
বিকেল সন্ধেমুখি হয়
ধোঁয়াশার জড়িয়ে চাদর
নিজেকে নিপুণভাবে
আড়ালে রাখে।

শীতার্ত আলোয়
প্রকাশিত দিনগুলি
ছোট হতে হতে যেদিন
অন্তিম লগ্নে পৌঁছয়
তখন অঘ্রাণ পা বাড়ায়
পৌষের দরজায়।

আমরা সান্তাক্লজ, কেক,
ঝকমকে পার্ক স্ট্রিট-রাত
পিকনিক, চিড়িয়াখানা
এই সব নিয়ে ব্যস্ত
থাকতে থাকতে
দিন বড় হতে থাকে
ইংরেজি নতুন বছর তখন
অপেক্ষায় অপেক্ষায় থাকে।



প্রত্যুত্তর
রাজীব ঘাঁটী


কোনো এক মৃত্যু উপত্যকায় আমাকে খুঁজে পাবে একদিন , ঠিক যেমনভাবে আমার হারিয়ে যাওয়া টা অপেক্ষা করছিলে !  পরে পরেই সভ্যতার শিকল মুক্ত হয়ে আমি হুল্লোড় করবো‌ । দামামা তোমরাই বাজাও ,আমি রণ দুন্দুভি শুনেছি আর শঙ্খধ্বনি।

সকালের অবয়বে কুয়াশা থাকবেই , সূর্য উঠলেই 
সব জড়তা সরে যায়। আলো মাখতে মাখতে
সরলতায় মিশি ,এ যাপনেই অভ্যস্থ । শব্দগুলো কথা হয়ে গেলেই সহজ হয় জীবনের মানে।

আনন্দ খুঁজে পাওয়া সময় কবে কার হয়ে যায়
প্রতিটা ব্যথিত হৃদয় জানে । সব স্বরলিপি মন ছুঁতে পারেনা । যাপন সর্বস্বতাই জীবনের মানে।
কথারা বাক্য হবার আগে‌ দেখে নিই সত্যতা ।

জীবন  দাঁড়িয়ে এক মৃত্যু উপত্যকায় সময়ের প্রত্যুত্তরে একটি শব্দ জীবন্ত হয়ে আছে "সত্য" ।


বড়োদিনের কবিতা
সুধাংশুরঞ্জন সাহা

শীত এবার লজ্জায় ঘোমটাই তুললো না!
প্রকৃতি নতুন খেলায় মেতেছে বলা যায়।
শরৎ ও হেমন্তকে দুরমুশ করে শীতকে করেছে খর্ব।
করোনা বিশ্রামে যেতে না যেতেই, মহাশক্তি নিয়ে
আবার ফিরে আসছে তার নতুন আত্মীয়!
বিপদ আর বিপর্যয়ের শেষ নেই।
তবু, বড়োদিন আসছে আবার
মনে মনে উৎসবের হাতছানিতে
গাছে গাছে গেয়ে উঠছে রঙিন পাখি
পার্কস্ট্রিট সেজে উঠছে নব-আনন্দ সাজে।
এবার শীত নামবে নির্দ্বিধায়।


জাল
দালান জাহান

আকাশ আর অন্ধকারের মাঝখানে
যে ফুল ফোটে
আমি সে নামে ছড়িয়ে থাকি
রাত হলেই নগ্ন হয় মানুষ
আমি-রাত নগ্ন হয়ে অন্ধকারে বসে থাকি।
একটি কুকুর হেঁটে যায়
একটি বেড়াল একটি রাস্তা একটি সমুদ্র
অগণিত আগুন নিয়ে
শয়তান মুখগুলো দৌড়ে যায়
সুবেহ-সাদিকে'র আযানের সাথে
আয়নায় ত্রিভুজ অদ্ভুত মুখ
রাত একটি পরিস্কার প্রাগৈতিহাসিক জাল
আমরা শীৎকার চিৎকারে তার বুক ঢাকি
আমি-রাত নগ্ন হয়ে অন্ধকারে বসে থাকি।



শীতের বৃষ্ট

ফরমান সেখ


ঝর ঝর শীতল  বৃষ্টি পড়ে
   আজকে সারাবেলা,
চারিদিকে  চলছে এখন
   মস্ত শীতের মেলা।

মাঠের সবুজ  স্নান করে
    শীতের বৃষ্টির জলে,
মাঠের শিয়াল ডাক পেড়ে যায়
     মেটো রাস্তার কূলে।

পাখির ছানা  বাসার ভিতর
      চুপটি করে আছে,
বানর-বাদুড়  ছাতার আশায়
    ছুটছে গাছে গাছে।

ঘরের ভিতর  শীতল হাওয়ায়
    খোকা কাঁপছে থর থর,
নদীর ঘাটে   নৌকা বেঁধে
   ফিরছে মাঝি নিজ  ঘর।

চায়ের সাথে  চাল ভাজা আর
    আসছে কতক মিষ্টি,
ঘরের ভিতর  গল্পের আসর
     বাইরে শীতের বৃষ্টি।


বড়দিনের সান্তা
জয়শ্রী সরকার
   
মর্ত্যে এলেন ভগবান যীশু ,
ওদের কথা ভাবেন ?
আগেই তো তিনি ঠিক করে নেন
কাদের কাছে যাবে!

কী করে যাবে সান্তা বলো তো ?
ওরা থাকে ঝুপড়িতে
সান্তা থাকে যে অনেক আয়েশে
কেন যাবে খুপড়িতে!

সান্তার চলা জেনে রাখো শুধু
তারাদের আশেপাশে
যার যত আছে সান্তারই কাছে
তবু আজ ছুটে আসে!

কনকনে শীতে আদুল শিশুরা
পথের ধারেতে শুয়ে
জুবুথুবু হয়ে হাড়হিম দেহে
পড়েছেই যেন নুয়ে!

সান্তার ঝুলি খোলে না কখনো
পথশিশুদের পেলে
খুসবু ছড়িয়ে চলে যায় সে তো
নিদারুণ অবহেলে!

বড়দিনে কেক পায় না তো ওরা
পায় শুধু পোড়া রুটি
বিপুল বিশ্বে নিঃস্ব ওরা যে
অসহায় ছোটাছুটি!

তোমার আশায় চেয়ে থাকে ওরা
ওরা যে আলোর শিশু
প্রাণের পরশ দিয়ে যাও শুধু
ভগবান প্রভু যীশু! 



কবিতাপাঠ

 নারায়ণ চন্দ্র দাস

 

বাবা চলে যাওয়ার এতদিন বাদে

আজকাল মাঝেমাঝে ভাবি,

লেখার খাতাটা এগিয়ে দিলে

আমার কবিতাগুলি আদৌ পড়তেন?

 

সকালে জানালা খুলে তক্তপোশে গ্যাঁট হয়ে বসে

কাগজ পড়তেন খুব ধীরে ধীরে

অচেনা শব্দগুলো আলগোছে এড়িয়ে।

 

ছোট বড় মাঠে

ঘাম ঝরিয়ে ফিরে আসা বিদ্বানেরা

আমার তুচ্ছ লেখালেখি এগিয়ে দিলে

স্মিত হেসে অচেনা মাঠে শুরু করেন

অন্ধ দৌড়।

 

যতদূর পারি যুক্তাক্ষর এড়িয়ে চলি –

বাবা হয়তো আমার কবিতা ধরে ধরে পড়তেন

আর দুই পঙক্তির মাঝখানের নিশানগুলি

নিজের রঙে ছুপিয়ে নিতেন।




বড়দিন উৎসব
 দীনেশ সরকার

পাপীদের পাপ করতে মোচন প্রভু ধরাধামে
মাতা মেরীর কোলে এলেন যীশুখ্রীষ্ট নামে।
চারিদিকে ঘন্টাধ্বনি খুশির কলরোলে
জ্যোতি ছড়ান প্রভু যীশু মেরীমাতার কোলে।

প্রভু যীশুর আবির্ভাবের সেই শুভদিনটিকে
শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে সবাই দিকে দিকে।
পালন করে 'বড়দিন' আর মাতে যে উৎসবে
মুখরিত আকাশ-বাতাস খুশির কলরবে।

খ্রীষ্ট ধর্মের জনক তিনি ব্যাপ্ত চরাচরে
বুকে ধরেন পাপীকে যে পাপকে ঘৃণা করে।
ক্ষমাই হলো পরম ধর্ম, তাঁর যে মহান বাণী
শত্রুকেও করেন ক্ষমা, সে তো সবাই জানি।

ডিসেম্বরের পঁচিশ আসে বড়দিনের সাজে
গির্জায় গির্জায় প্রার্থনা আর ঘন্টা ধ্বনি বাজে।
আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে গির্জা আছে যত
প্রভুর আশিস্‌ ঝরে পড়ে যেন অবিরত।

বড়দিনে বেড়াতে যাই পাহাড়-সাগর-বনে
কেউ বা মাতি পিকনিকে আর কেউ বনভোজনে।
কেউ বা করি নৌকাবিহার কেউ গির্জাতে যাই
ক্রূশবিদ্ধ যীশুকে দেখে হৃদয়ে ব্যথা পাই।



প্রকৃত প্রেম ও পরা শান্তি
চন্দন-ভট্টাচার্য্য

 আজকে আমার খুবই প্রেম করতে মন চাইছে
শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু, প্রতিটি কোষ, প্রতিটি অনুকনা যেন দরবিগলিত অশ্রুস্রোতে ভাসতে ভাসতে ভাসতে ভাসতে প্রেমের জন্য পাগলপারা।
হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে, মন করছে উচাটন
এ এক অদ্ভুত বিরহযন্ত্রনায় কাতর আমি।
আমার মনের মানুষকে পাবার জন্য আমি হাজার বার নর্দমার জল পান করতে পারি
ধুলোকাদায় গড়াগড়ি খেতে পারি অনায়াসে
বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করেই হাসিমুখে করতে পারি ভয়ঙ্কর বিষ পান
হাজার অযুত লক্ষ নিযুত বছর ধরে মৌন তপস্বী হয়ে থেকে যেতেও পারি
শুধু একটা নিষ্পাপ নিখাদ প্রেমের জন্য
শুধু পরা ভক্তিযুক্ত একটা নিষ্কাম প্রেমের জন্য
আমি আমার এই প্রিয়তম প্রাণটাকেও বলিদান দিয়ে দিতে পারি,... কিন্তু ক'জনই বা দিতে পারে !!!
সেই বাল্যকাল থেকেই দেখে দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে গেছি অনুরাগ প্রেম
সেই প্রেম পদ্ম পাতায় একবিন্দু জলের মতো...
খুবই টলমলে, 
টলমল করতে করতে কখন যে কোথায় হারিয়ে যায়, কেই বা বলতে পারে!!
মধ্যাহ্নে দেখলাম স্বকীয়া প্রেম, দেদার চাওয়া পাওয়া, খুনসুটি ঝগড়াবিবাদ  বৈধ যৌনক্রীড়া সন্তান উৎপাদন  সন্তান প্রতিপালন...
তিতিবিরক্ত জীবন,  কিছু একটা না পাওয়ার অনুভূতি,বিকৃত যৌনকামনা ও নিপাতনে সিদ্ধ অবাধ পরকীয়া।
আমার মনের সাগরে ঢেউ উঠতে থাকে ক্রমাগত, ভয়াল ভয়ঙ্কর  ঢেউগুলো সুনামিতে পরিনত হয়
হাতের মুঠোয় মুঠোফোন নিসপিস করে, বিছিয়ে দেয় সশাগরা দিগন্ত বিশারী নেটওয়ার্ক তার
হাজার হাজার প্রলোভন...!
আমি কিন্তু বুঝে গেছি সেই বিকৃত যৌন- মদালশ - ক্ষনিকের শরীর তৃপ্তির- অপরা শান্তির অপরিমেয় ভাষা, বিকৃতকাম ইঙ্গিত।
আমি জেনে গেছি-- আমি বুঝে গেছি-- আমি পেয়ে গেছি প্রকৃত সুখ -- প্রকৃত শান্তির প্রকৃত পথ, প্রকৃত রূপরেখা
তাই প্রকৃতির দেওয়া -- সমাজের দেওয়া সব শাস্তি আমি মাথা পেতে নিয়েছি
কারন পরা প্রেম ও প্রকৃত শান্তি--- শাস্তি না পেলে যে কখনোই পাওয়া না
.... পাওয়া যেতেও পারে না ।




আফসোস
অলোকা বিশ্বাস সাহা

চলো একটা স্বপ্ন দেখি, যে স্বপ্নে তুমি আমি নেই।
কিন্তু গোটা একটা জীবন আছে। 
থেমে থাকা নেই চলে যাওয়া আছে। 

থামতে হবে বলছো? তীরে না পৌছানোর আগেই?
কতবার‌ই তো এভাবে থেমেছি তুমি আমি দুজন।
চলেছি কতক্ষণ একসাথে, মনে নেই।

স্মৃতির গুঁড়ো পয়সা শুধু উড়ো খ‌ইয়ের ধাঁচে অদৃশ্য।
তবে কি সে অমৃত দহন?
পুড়ছে, পুড়ছে গন্ধ!

সদ্য ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের স্থগিতাদেশ..
তীরে পৌঁছানোর আগে, নৌকাডুবি হোক।
জীবন্ত জ্বলার আগে ভুলুক,
মৃত দহনের শোক।

আহা রে, জীবন!



অনুভব 
রঞ্জন ভট্টাচার্য

পৌষের প্রতিটি অনুভব অবগুন্ঠিত একটি চাঁদ
কখনও বা মেঘে ঢাকা তারা  
কখনও বা রসে ভরা পরিপূর্ণ  একটি গাছ
কখনো শিউলি ঝরা উঠান 
আবার মাঠে মাঠে রকমারি ফুলের মেল বাহার 
খুনসুটি করে বেড়ায়  ...
গোধূলি বেলায় দৃষ্টি নন্দন খেলা
চলে উষ্ণতার আলিঙ্গন
কে যেন হরণ করেছে মন 
কোনো সে আপনজন।
দিকচক্রবালের যখন সূর্য আপন-মনে ঢলে পড়ে 
ঠিক কে যেন ডাকে 
উত্তরে হাওয়া নিয়ে শির শির শব্দ করে 
চাদর মুড়ি তাকে আমার-ই হৃদয় কোণে।


বড়দিন 
দেবপ্রসাদ জানা 

বড় কোনো দিন নয় বড় হোক মন।  
বড় সে বাড়ির নিচে, ফুটপাত থাকে। 
মানুষের বেশে থাকে, কত দুষ্টুজন,  
মুখোশের পিছে কত, পাপ চেপে রাখে।

বড় যিনি বড়দিনে, ফুটপাতে আসে।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আশা পূর্ণ, করে যেই জনে। 
দিন বড় হয় তাঁর , মহিমা পরশে,
বড় ঐ বাড়ির মতো, রয়ে যায় মনে। 

ক্রুশে বিদ্ধ যিশুখ্রীস্ট,এই করে বানী। 
ফুলের মতন হও, সুগন্ধ আধার । 
ক্ষমা করো দুষ্টজনে,ওরা যে অজ্ঞানী । 
জ্ঞানের পরিধি হবে, নীরব পাহাড়। 

বড় ঐ কুটিরে থাক,বড় এক মন। 
হৃদয় ভাষায় কবে, বড় এক জন।

প্রতিফলিত জীবন
মোহর ভট্টাচার্য্য


জীবন থেকেছে প্রতিফলিত অংশে,
প্রতিবিম্বরা বলে গেছে জমানো কথা।
প্রশ্নরা জমাট বেঁধে করেছে উত্তরের অপেক্ষা,
দৃষ্টি থেকেছে অগোচরে।
আকাশের বুকে প্রজ্জ্বলিত ধ্রুবতারা থেকেছে সাক্ষী,
কথারা আকাশ গড়েছে, নিভৃতে।


শীতের রাতের পথে
বিমল মণ্ডল 

সন্ধ্যা এলে কুয়াশা ঘিরে ধরে
ফুটপাত আমার ঠিকানা 
রাস্তার পরিমাপ বুঝতে পারি না
চৌরাস্তার মোড়ে উঁচু লাইটপোস্ট ঘিরে
ছায়া কিনে নিয়েছে বড়দিনের চাঁদ 
যদিও  দুপুরের  পিকনিক কিংবা চড়ুইভাতি 
সামনে ফাঁকা মাঠের  পাশে সেরে আসছে
অন্ধকারে  রেখে যাওয়া শীতের রাতের পথ
বড়দিনের  শুভেচ্ছা জানিয়ে  রাখি 
বিকেলের হলুদ ও গোলাপি সূর্যকে
পেছনের  কিছু কোলাহল পেরিয়ে এলে 
ঘরের সামনে গভীর রাত দাঁড়িয়ে আছে 
একটা একটা  করে তারা মিটমিট করে জ্বলছে 

বড়দিনের এই শীতের রাতের পথে...




২টি মন্তব্য:

  1. অনেক কবিতা পড়লাম। অনেক কবিতা বেশ ভালো। বড়দিন শুরু করলাম এই অঙ্কুরিশা পাঠ করে।

    উত্তরমুছুন
  2. সব কবিতাই খুব ভালো লাগলো। এই সংখ‍্যায় আমার কবিতাটি স্থান পাওয়ার আমার খুশি আর ভালোলাগা পাঠিয়ে দিলাম কবি ও সম্পাদক বিমল মন্ডলের কাছে। সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাই।

    উত্তরমুছুন