লেবেল

বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ধারাবাহিক ভ্রমণ কথা (পর্ব-২৫) ।। পৃথিবীর উল্টো পিঠ বিশ্বেশ্বর রায়।। Ankurisha ।।E.Magazine ।। Bengali poem in literature ।।

 






ধারাবাহিক ভ্রমণ কথা (পর্ব-২৫)



পৃথিবীর উল্টো পিঠ
বিশ্বেশ্বর রায়


বাবাই সকাল সাড়ে আটটার দিকে অফিসে বেরিয়ে যায়। ফিরতে ফিরতে প্রায় আটটা সাড়ে আটটা। ফলে ডিনারে তো বটেই, ব্রেকফাস্টেও ওর যাওয়া হয়ে ওঠে না। আবার অ্যাপার্টমেন্টে ফিরেও নিস্তার নেই।  শুরু হয়ে যায় call. চলে এক-দেড় ঘন্টা।
      সারাদিন শুয়-বসে কাটিয়ে সন্ধ্যায় ডিনারে গেলাম। এখানে ডিনারের সময় বিকেল ছটা থেকে সন্ধে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। স্বাভাবিকভাবে আমাদের, ভারতীয়দের এটা নৈশাহারের সময় নয়। দেখলাম অনেকেই রেস্টোরেন্টে না খেয়ে খাবার নিয়ে ঘরে যাচ্ছে এবং তারা সবাই প্রায় ভারতীয়। যদ্দৃষ্টং তৎ শিখিতম। আমারাও খাবার  নিয়ে ঘরে এলাম। তারপর খাবারগুলো ঘরে রেখে আমারা দু'জনে ঘন্টাখানেক আশপাশে সান্ধ্যভ্রমণ সারলাম। যায় পরবর্তী মাসাধিককাল


আমাদের নৈমিত্তিক রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাবাই ফোন করে জানালো ওর ফিরতে দেরি হবে। একেবারে ডিনার করে একটা call সেরে ফিরবে।

      আজ 2রা অক্টোবর। মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। অবশ্য এখানে তার আভাস পাইনি। স্বাভাবিক। অবশ্য জানি না এখানে সরকারিভাবে কোনও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয় কিনা। বারাক ওবামা তো শুনেছি গান্ধীজীর একজন বড় ভক্ত।
      বাবাই ফিরলো প্রায় দশটায়। ওর খাওয়ার পাট ছিল না। তবে call-এর পাট ছিল। চললো প্রায় বারোটা পর্যন্ত। ইতিমধ্যে আমরা খাওয়ার পাট চুকিয়ে ফেলেছি। এখানে রাত্রি বড় তাড়াতাড়ি গভীর হয়।
      Residence Inn Marriott থেকে একটা বই দিয়েছে। আসলে সব অ্যাপার্টমেন্টেই বইটা রাখা থাকে 'Where guest book, Charlotte.' বইটার পাতাগুলো উল্টেপাল্টে দেখছিলাম শার্লটে কী কী দ্রষ্টব্য আছে। কয়েকটা spot দেখলাম। তবে বেশিরভাগ দ্রষ্টব্যগুলি হল Art Gallery, Museum, Mall ইত্যাদি।
      টিভির সংবাদে জানাচ্ছে এখানে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা। তিন-চার দিন ধরে আকাশ জুড়ে কখনও কালো মেঘ, কখনও ছাড়া ছাড়া ঝড়ের মেঘ জমে আছে। সূর্যের মুখ প্রায় দেখাই যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে মিহি ধুলোর মতো বৃষ্টি পড়ছে। এতো মিহি যে রাস্তায় বেরোলেও প্রথম দিকে বৃষ্টির অস্তিত্ব অনুভব করাও যায় না। তবে একটু পরে মাথার চুল ভিজে ভিজে ভারী হয়ে ওঠে। রাস্তাঘাটও ভিজে ভিজে হয়ে ওঠে।  আমাদের দেশে ঘন কুয়াশা হলে যেমন রাস্তাঘাটের অবস্থা হয়। রাস্তায় জল জমে না বা গড়ায় না। টিনের চালের কানাত বেয়ে দু'এক ফোঁটা গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে, তেমনই।
      ওই সামান্য বৃষ্টিতেই আমার মাথায় জল বসে ঠাণ্ডা লেগে গেল। আসলে ঠাণ্ডাটা আমার লেগেছে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই। হার্টফোর্ডে থাকতে থাকতেই। অল্প অল্প ঘুষঘুষে জ্বর, সঙ্গে কাশি। আর আগেই বলেছি এখানে আসার দিন ফ্লাইটে কানে ভীষণ ব্যথা করছিল, এখন বুঝতে পারছি তার কারণও ওই ঠাণ্ডা লাগা। আসলে বুকে, গলায়, নাকে, কপালে ভয়ানক সর্দি জমে গেছে এবং তার থেকে Infection হয়ে গেছে। প্রথমে কান দিয়ে জলের মতো রস বেরোচ্ছিল, পরে তার সঙ্গে হালকা হালকা রক্ত। Ear bud দিয়ে কান পরিস্কার করতে গিয়ে ব্যাপারটা মালুম হল। এছাড়াও কফের রংও প্রথমে ঘন হলুদের পর লালচে হয়ে উঠলো। এত দুর্বল লাগছিল যে কিছুই করতে ইচ্ছা করছে না। শুয়ে থাকলে ঘুমতো আসছে না। ভীষণ অস্বস্তি আর কাশির দমকে ঘুমটুম ছুটে যাচ্ছে। ডাক্তার দেখাতে পারলে ভালো  হতো। তবে এখানে কোথায় ডাক্তার, কোথায় হাসপাতাল কিছুই জানি না। আর বাবাইয়েরও আগামী শুক্রবার পর্যন্ত ফুরসত নেই। সকাল আটটা থেকে রাত্রি আটটা-নটা পর্যন্ত অফিসেই কাটছে। অ্যাপার্টমেন্টে ফিরেও call চলছে মাঝরাত পর্যন্ত। ফলে কানের ইনফেকশন সারাতে একটা নিওসপোরিন জেল কিনতে হলো। দু,দিন লাগাবার পর দেখছি রক্ত বন্ধ হয়েছে। কফের রংও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। দুর্বলতাও বহুলাংশে কেটে গেছে। বুক, গলায়, নাকে,কপালে যে লালচে ভাবে ছিল  তাও প্রায় মিলিয়ে যাবার অবস্থায়। অর্থাৎ বুঝতে পারছি ইনফেকশন তার থাবার শক্তি হারিয়ে ফেলছ।
   
      দুপুর একটা থেকে তিনটে পর্যন্ত বাবাইয়ের নতুন প্রজেক্টে প্রেজেন্টেশান ছিল। এর জন্য প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ও notes তৈরি করেছে। India এবং U S A-এর অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে কনফারেন্স করে প্রেজেন্টেশানাকে রপ্ত করেছে, ঝালিয়ে নিয়েছে। আজ এই প্রেজেন্টেশানের জন্য ও অফিস যায়নি। বাড়ি থেকে Net Conference-এর মাধ্যমে ওর বক্তব্য রেখেছে। ইংরেজিটা ও বরাবরই ভালো বলে এবং সাবলীলতাও খুবই ভালো। ফলে প্রায় দু'ঘণ্টার ওপর ও একটানা ওর বক্তব্য বলে গেল। তারপর প্রায় সাড়ে তিনটের দিকে presentation শেষ করে তবে স্নান-খাওয়া করলো। আমরাও তখনই খেলাম। কারণ, প্রেজেন্টেশান বা call-এর সময় সামান্য শব্দেও ওর অসুবিধা হয়। ফলে আমরা নিশ্চুপে কাটালাম দু'ঘন্টার ওপর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন