লেবেল

শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০

গুচ্ছ কবিতা। সন্দীপ রায়

 


গুচ্ছ কবিতা 

সন্দীপ রায় 


১.

সাপ লুডো 


কেউ কোথাও নেই, ফাঁকা --

একটা অজগর পিচ রাস্তা 

আমাকে একলা ফেলে 

সাপ লুডো খেলছে। 


আজ তোমার জন্যে সাজিয়ে রাখলাম 

সাপ নয়,একগুচ্ছ মই

প্রয়োজনে ব্যবহার করো ;


মই কখনও নিরপেক্ষ হয় না 

কাউকে গাছে তুলতে জানে 

আবার প্রয়োজনে কেড়ে নিতেও ..


সাপের মুখের খুব কাছাকাছি আছি 

যে কোন মুহূর্তেই ... ফণা তুলতে পারে !

সাপ মইয়ের সমীকরণ জটিল 

কখন যে কার ভাগ্য খুলবে 

কার কপাল পুড়বে --বোঝা মুশকিল!


কেউ কোথাও নেই, রাস্তা ফাঁকা 

এখনও বিধাতার সঙ্গে সাপ লুডো খেলা বাকি !

             


২.

 একটু ফিরে দেখা


আমার তখন কলেজ জীবন --

আর তুমি তখন মায়ের কোলে 

পুতুল কেনার বায়নায় ...

আমাকে ঘিরে একঝাঁক বন্ধু বান্ধব 

মেয়ে বন্ধুই বেশি 

কী যেন নাম : শিপ্রা, বীথিকা, মঞ্জুশ্রী ...

আরও কত যে নাম ,মনে নেই --

উড়ন্ত প্রজাপতি ছোঁয়ায় রঙিন নেশা ।

স্বপ্নের বাগান ঘিরে রাত বাড়লে 

পরীদের আনাগোনা ...


হ্যাঁ, মনে পড়েছে, মঞ্জুর বিয়েতেই তো --

ছিপছিপে, লম্বা, শ্যামলা মঞ্জু...

সেই প্রথম রাত জাগা 

বান্ধবীর বিয়েতে একটা গোটা রাত --

তখন আমি কলেজ পড়ুয়া ছেলে নই --পুরুষ ;

কেউ একজন বলছিল :

বাসর জাগলে পুরুষ হতে হয় ,


একটা গোটা রাত সব হিসেব তছনছ করে 

উচ্ছ্বল নদী এসে মিশেছিল সাগর সঙ্গমে ...

                     


৩.

ভাগ্য বিপর্যয় 


ক'দিন ধরে আকাশের মুখ ভার

বৃষ্টি হবে বোধহয়--

অসময়ে একটানা মন খারাপের বৃষ্টি 

ভালো লাগে না।


দু'চোখের পাতা জুড়ে ঝমঝম বৃষ্টি নামলে 

মন খারাপের আগুন জ্বলে 

চোখের দু'কূলে তখন উচ্ছ্বল নদী 

নৌকা ভাসে না সেই জলে ,

শুধু একটানা বিরহের ঢেউ মন-জানালায় --

ধ্রুপদী সংগীতের রাগ রাগিনী 

বিসমিল্লা থেকে ভীমসেনও যোশী..


এমনও তো সময় ছিল 

একহাঁটু জলে আমোদে আল্লাদে 

কাগজের নৌকা ভাসতো জলে ।

আঁচলে মাথার জল মুছে 

তখন এক ছাতার তলায় 

,দমকা হাওয়ায় তোলপাড় ছাতা ...


সময়ের ঘড়ির নিয়মে উল্টো গতি 

ভেঙে দাও ,গুড়িয়ে দাও শব্দে

ছেনি হাতুড়ির নিষ্ঠুর খেলা 

মন ভেঙে খানখান, তবুও...


আজ যদি আবার আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে 

মন ক্যামেরায় নেপথ্যে ফিরে যাবো

কল্পনা এক , ভাবনাও এক 

শুধু পটচিত্র আলাদা। 

               

৪.

চেয়ার খেলা 


চেয়ার কখনও ফাঁকা থাকে না --


শূন্যস্থান পূরণের অপূর্ণ ইচ্ছে --

বাক্যালাপ শেষের দড়ি টানাটানির গল্প। 


এ গল্প মাঝপথে থমকে যায় না 

এ বার্তা কালের অমোঘ নিয়ম

এ লড়াই ময়দানে নিষ্পত্তি হয় না 

পেছন থেকে গোপনে ছুরির আঘাত ।


একবার চেয়ার ছেড়ে দিলে সমূহ বিপদ 

কোথা থেকে উড়ে আসে একঝাঁক চিল-শকুন 

পালিশ করা ধারালো নখ ,

এক নয় -- একাধিক মুখোশের সমাহার 

যেন তীর্থের কাক ,গত জন্মের পাপের দান খয়রাতি। 


দুনিয়া ঘুরছে কালের চক্রে 

মহাকালের শ্যেন দৃষ্টি শূন্য চেয়ার ঘিরে

মাছির মত ভ্যনভ্যান--

যেন মধুমক্ষি , ফুলের রেণুর লোভে 

দিনরাত টোপের চেয়ার ঘিরে

দরাদরির মোক্ষম খেলা। 

                 


৫.

ফেলু মিত্তির 


কেউ কোথাও নেই  

ফাঁকা মাঠে  শূন্যতার মাঝে শুধুই  হাহাকার ,

জনমানবহীন একলা পথে 

হেঁটে যাচ্ছেন তিনি--

আড়ালে কে যেন বলে উঠল --

বাড়ির পথে বুঝি?


নির্বাক তিনি ,গন্তব্যে স্হির ;

পেছনে একবারও তাকিয়ে দেখলেন না। 


অবজ্ঞা তখনও গ্রাস করেনি মনে 

উপেক্ষা ছিল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তীক্ষ্ম বাতাস 

অবহেলা মনের আড়ালে জমানো মেঘপুঞ্জ ...

দরজায় কড়া নাড়লেন তিনি ,

কৃষ্ণেন্দু বাড়ি আছেন ?


উত্তরহীন উত্তরের অপেক্ষায় আবার ডাকলেন--

রীনা বাড়ি আছো ?


দরজা খুলে একটি শীর্ণ হাতের কাঁপা কাঁপা উত্তর--

বড্ড দেরি করে ফেললেন ,

তাঁরা তো চলে গেছে অনেকদিন হলো !

আর যাবার আগে বলে গেছে 

ফেলু মিত্তির এলে এই মুখবন্ধ খামটা তাকে দিও।



-----------------------------------------------------------------

আপনিও আপনার অপ্রকাশিত সেরা লেখাটি পাঠিয়ে দিন। 

ankurishapatrika@gmail.com

---------------------------------------------------------------------               

         

1 টি মন্তব্য: