দীর্ঘ কবিতা
তপনজ্যোতি মাজি
হে বর্ণময়!
(সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শ্রদ্ধায় স্মরণে)
এক
জ্যোতির্ময়তার সঙ্গে আমাদের অনেকগুলি
সৌরবৎসর কাটলো।
আমরা পুনরায় রিক্ত হলাম।
আমরা পুনরায় নিঃস্ব হলাম।
বিপুল সাংস্কৃতিক সম্পদ রেখে গেছো দশদিকে।
ঐশ্বর্যময় উত্তরাধিকার।
তবু কেন শূন্য আকাশ?
তবু কেন শূন্য বুকের বাতাস?
কোন দর্শনে কে ছিল কার অনুগামী
এই সব তর্ক উস্কে দেওয়া মিডিয়ার
প্রচলিত খেলা।
আমরা জেনেছি আদ্যন্ত সংষ্কৃতিময় তুমি ছিলে
উজ্জ্বল মানুষ।
তুমি ছিলে আর্য পুরুষ।
দুই
উনিশ পঁয়ত্রিশ থেকে দু হাজার কুড়ি।
হে উজ্জ্বলতম!
স্পর্শে অভিব্যক্তিময় করেছো শিল্পের
একাধিক শাখা।
কবিতার দিগন্তে শব্দের বাঙময় রূপ ঘিরে
মেধার মিশ্রন।
হৃদয় উন্মোচন করে শিখিয়েছো অনহংকারী
কবিতার উচ্চারণ।
বোধের দীপ্তি দিয়ে আলোকিত করেছো অভিনয়
ও চরিত্র রূপায়ন।
রুপোলি পর্দা থেকে নাট্যমঞ্চে তুমি ছিলে রূপময়
হোমাগ্নি শিখা।
এই শতাব্দীর শেষ কিং লিয়ার।
তিন
জীবন কি মানস যাত্রা?
নাকি সৌর পরিক্রমা?
এই সব প্রশ্ন থেকে গেল চির অমীমাংসিত।
আরও কিছুদিন , আরও কিছুদিন
তোমাকে দেখার ইচ্ছা ছিল!
কত কি শেখার ছিল আমাদের !
সাদা পাতার সঙ্গে উড়ে গেল
না পড়া পাণ্ডুলিপির শত শত পাতা
কোন নিখলের হিম প্রান্তরে!
শীতের সঞ্চারী হওয়া বইছে নগরে ও গ্রামে।
আত্মবিস্মৃত আমরা হয়তোবা ভুলে যাবো
একদিন।
গাং চিল উড়ে যাবে নদী পার হয়ে
উদাসীন গর্ভবতী মাঠে।
কার কণ্ঠে শুনবো জীবনানন্দ এমন
ধীর গাঢ় স্বরে?
কে শোনাবে শেষের কবিতা তন্ময়
উচ্চারণে?
এমন বর্ণময় ধূসর বয়স!
আহা! এমন সম্ভ্রান্ত
চিন্তন যাপন।
চার
মিহিন শীতের চাদর গায়ে দিয়ে যে এলো
সে শান্ত নিষ্ঠুর।
শেষ হলো দীর্ঘ যুদ্ধ।
শেষ হলো উদ্বেগ অধ্যায়।
কে জিতল এই প্রশ্ন শিশির বিন্দুর মতো
সূর্যালোক ধরে রাখে কিছুক্ষন।
জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে
তুমি আছো নক্ষত্রলোকে কোনও
রহস্যের সমাধানে।
কিংবা কোনও সংস্কারবিরোধী
আন্দোলনের পুরোধাপ্রতিম হয়ে।
তুমি আসলে স্বপ্নের সওদাগর।
আমাদের শিখিয়েছো কিভাবে যাপিত হয়
উজ্জ্বল জীবন।
পাঁচ
গাঢ় হচ্ছে রাত্রির অন্ধকার।
মহাসিন্ধুপারে আগুনের শিখা দিগন্ত ছুঁয়েছে
যজ্ঞ অগ্নির মতো।
সব শেষ।
তবু আশা জাগে তুমি বার বার জাতক জন্ম
পাবে এই শ্যাম বাংলার বুকে।
জীবনানন্দের রূপসী বাংলায় তুমি
ফিরে আসবে অপরাজিত।
-----------------------------------------------------------------


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন