লেবেল

রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০

মারাদোনা সংখ্যা। ফুটবলের যুবরাজ দিয়েগো মারাদোনা (শ্রদ্ধা ও স্মরণে ) অঙ্কুরীশা-র ছড়া ও কবিতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি

 


মারাদোনা সংখ্যা  
ফুটবলের যুবরাজ  দিয়েগো মারাদোনা 
(শ্রদ্ধা ও স্মরণে ) 

অঙ্কুরীশা-র ছড়া ও কবিতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি       



সূচিপাতা-

দীপ মুখোপাধ্যায়
গৌতম হাজরা
অনীশ ঘোষ    

মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি

বাবলু গিরি

শুভঙ্কর দাস

অশোককুমার লাটুয়া  

বিমল মণ্ডল 

সুধাংশু রঞ্জন সাহা  

অলক জানা

ভবানী প্রসাদ দাশগুপ্ত  

দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

অশোক রায়

তপনকান্তি মুখার্জি

দীপক বেরা

অমরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

অমরেন্দ্র কালাপাহাড়

সঞ্জীব রাহা

মিনতি গোস্বামী

গৌতম বাড়ই

শুভ্রাশ্রী মাইতি

রাজা দেবরায়

ঐশ্চর্য্য কৃষ্ণ

ব্যোমকেশ দত্ত

সম্পা দাস

একাদশী চৌধুরী

মায়া দে                   

মালা ঘোষ(মিত্র)

শ্রাবণী বসু

অঞ্জনা চক্রবর্তী 

  



 

সেরাদের সেরা

দীপ মুখোপাধ্যায়


ফুটবল হয় না ভাই মারাদোনা বিনা

কথাটা শিখিয়েছিল আর্জেন্টিনা 

বেঁটেমোটা লোকটার বাঁ-পায়ের জাদু

ফ্রি-কিকের গোল দেওয়া অতি সুস্বাদু।


সেরাদের সেরা তিনি এই দুনিয়ার 

চিনেছিল নাপোলি বা বোকা জুনিয়ার

পাঁচজন প্লেয়ারকে যেই না কাটায়

তিনকাঠি ভেদ করে বল ঢুকে যায়।


হাত দিয়ে গোল দেওয়া ভুলে যেতে পারি?

ধরতে পারেনি কোনও তুখোড় রেফারি

যতই বিতর্ক হোক তবু আরাধনা

বিশ্বকাপের হিরো সেই মারাদোনা।



জাদুকর

গৌতম হাজরা

বল দেখি কার নাম মাঠে যায় শোনা? 
ফুটবল জাদুকর, নাম মারাদোনা। 

ফুটবল মাঠে তাকে আটকানো সোজা? 
চোখ স্থির যেন যাদু, যায় নাকো বোঝা। 

ড্রিবলিং-এ ঘোরে ফেরে বলটা দু'পায়ে, 
শরীরটা হেলে দোলে ডান আর বাঁয়ে। 

বাঁ পায়ের শটে বল জালে আটকায়, 
দর্শক মাতোয়ারা বলে হায় হায়। 

নিখুঁত পাসিং আর ব্যাক ভলি মারে, 
তাকিয়ে দেখতে হয় তাকে বারেবারে। 

রূপকথা রাজা তিনি, তোমায় প্রণাম, 
রেখে গেলে ইতিহাস, লেখা রবে নাম! 


এফিটাফ: দিয়েগোর প্রতি
অনীশ ঘোষ 

ওই যে সবুজ ঘাসের ওপর ঈশ্বর মারাদোনা
শুরু করবেন এক্ষুনি তাঁর শিল্পের জাদু বোনা
এই ছবিটাই ডালপালা মেলে আকাশটা ছিল ছুঁয়ে
একটি বিদায়ী বাতাস এসে মুছে দিল এক ফুঁয়ে
ম্যাচ শেষ, মাঠ ছেড়ে গেলে রেফারির বাঁশি বাজে
এই ভাসানে যাবো না আমরা সর্বহারার সাজে
ভুল থেকে গেছে এই প্রস্থানে প্রিয় ফুটবল-কবি
মনখারাপের পিছুটান রঙে বিষণ্ণ এই ছবি।

ফুটবল-মারাদোনা

মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি


গোল-গোল-গো-ও-ল

পায়ে নয় হাতে

রেফারির চোখ এড়িয়েছে তা

হয়েছে কী তাতে?

 

এমন গোল তো দেখে

দুচোখ জুড়িয়ে যায়

ঈশ্বর! তিনিও মুগ্ধ

তাই হলেন সহায়

 

ফুটবল - মারাদোনা

লীন এক সত্তায়

একরাশ মুগ্ধতা

পায়ের সে খেলায়

 

মারাদোনা বিশ্বের

আলোক আবেশ

মরণে তা কখনোই

হবে না তো শেষ


মারাদোনা এক উজ্বল সূর্য  

    বাবলু  গিরি                      

কি ছিলো তার পায়ের ওস্তাদি,

ফুটবল আছড়ে পড়তো ভক্তের মতো ।

অশ্বের মতো ছুটতো যুদ্ধের ময়দানে ।

মারাদোনা তুমি খেলা জগতের চেতনা ।

মারাদোনা তুমি ফুটবলের প্রেরণা ।

মারাদোনা আমরা তোমায় ভুলবোনা ।


ওই যে সাতজন যোদ্ধাদের কাটিয়ে

সপাটে বাঁ পায়ের ভেল্কি, গো ও ও ওল -

সারা পৃথিবী চমকে উঠে দাঁড়িয়েছিল,

দেখছিলো ফুটবলের অবতারকে ।

চমকে গেছিলো গোলপোস্টের প্রহরী ।

আর সেই মারাদোনা, ফুটবলের অবতার 

ব্রহ্মান্ডের ময়দানে ছুটে চলেছে -

ছুটে চলেছে নক্ষত্রের জ্বলন্ত বল নিয়ে,

উজ্বল সূর্যের কাছে  ।


গোল

শুভঙ্কর দাস 


পৃথিবী নিয়ে খেলছেন যিনি

রোজ,অক্লান্ত, অবিরাম 

তিনিও মানুষের মতো জন্ম চান...


তিনিও গোলপোস্টের জালে বল 

ঢুকিয়ে দেখাতে চান,চোখের জলে 

আর অভাবের অন্ধকারেও


গোল দেওয়া যায়,একেবারে পৃথিবীর 

মতো দেখতে...


সেই গোলের নাম মারাদোনা দিতে 

পারো,তাতে কিছু এসে যায় না!


শুধু গোলপোস্ট সর্বদা তৈরি যেন 

থাকে,কারণ জীবনের খেলায় কোনো 

দিনরাত নেই


শুধু লড়াইটা আছে...



হঠাৎ হাততালির তুমুল কোরাস 

   অশোককুমার লাটুয়া 


হাতে পায়ে চে আর ফিদেলের উল্কি নিয়ে 

দশ নম্বর নীলসাদা জার্সিটা ছুটে 

চলেছে হরিণের মতো ক্ষিপ্রতায়

 প্রতিপক্ষের গোলবক্সের দিকে। 

বিষাক্ত ট্যাকল এড়িয়ে সৌখিন 

ড্রিবলে সমস্ত প্রতিরোধকে চুরমার 

ক'রে এগিয়ে চলেছে ফুটবল 

সাম্রাজ্যের যুবরাজ দিয়েগো 

আর্মান্দো মারাদোনা। স্টেডিয়ামের 

সমস্ত আলো জ্বলে উঠেছে তার 

জন্যেই। লাখ লাখ চোখ উজ্জ্বল 

বিস্ময়ে অপলক দেখছে শুধু তাকেই। 

হঠাৎ হার্টবিট বন্ধ ষাট বছরের  

ফুটবল শিল্পীর। বলতে পারছিনা 

তাকে বিদায়। চোখের জল পাথর 

হয়ে গেছে। হার্টবিট বন্ধ আমাদের। 

হঠাৎ হাততালির তুমুল কোরাস — 

গো-ও-ও-ও-ল। 

কত গোল পেরিয়ে গেছে সে তবু মাঠ 

ছেড়ে চলে যেতে পারেনি ফুটবলের 

স্মৃতি — প্রিয় মারাদোনা। 


অশ্রুর রজ্জুতে

বিমল মণ্ডল 

এই গ্যালারি ভরা ফুটবল প্রাঙ্গণ;শবচক্র মহাবেলা 
দশ নম্বর জার্সির কোলাজ গোলপোস্ট থেকে গোলপোস্টে
তোমার পিঠের ঢালে সূর্য ছিল,বুকে দুরন্ত শক্তির আভা 
এই দীর্ঘ দেহখানি  অসময়ে  ঝরে যায়ঃ
 একমাত্র ইতিহাস সাক্ষী 
তুমি ফুটবলের যুবরাজ;রাশি রাশি ক্ষুধা নিয়ে
কত দেশে দেশে: 
ফুটবল মাঠ বেদনাপ্রধান
প্রিয় দর্শক জ্যোৎস্নারাতে পায়ে পায়ে এসে
বেঁধেছে তোমার শেষ যাত্রায়;অশ্রুর রজ্জুতে। 


মারাদোনা

সুধাংশুরঞ্জন সাহা


মারাদোনা বিরল এক বর্ণময় চরিত্র ।
একটা স্বপ্নের নাম মারাদোনা ।
তোমায় আমরা ভুলবো না ।
তুমি ফুটবলের জাদুকর।
বিশ্বের চির বিস্ময় ।

কেন এতো দ্রুততায় ফিরে গেলে
হেমন্তের না-ফেরার দেশে !
তুমি কি এই গ্রহের কেউ নয় !
নিছকই কাটিয়ে গেলে কিছু সময়  !

আমার সমস্ত কান্না পাঠালাম
ঘনমেঘের মেঘবলয়ে ।


ফুটবলেশ্বর

অলক জানা


পায়ে বল জ্ঞানবল 

একাকার হলে

ঈশ্বর এগিয়ে যান, 

অনিবার্য গোলে

মারাদোনা ফুটবল

দুয়ে একাকার 

গোল ! গোল ! থেকে গেছে

অন্তরে সবার

ফুটবল ফুটবল

ফুটবলেশ্বর

অজাতশত্রু মারাদোনা

অবিনশ্বর।


ফুটবলের নায়ক

ভবানী প্রসাদ দাশগুপ্ত 


ফুটবলের রাজ ম্যারাদোনা 

দেহ রাখলেন ভবে,

দুঃখ কাতর হৃদয় নিয়ে

মর্মাহত সবে।


বিশ্ব  সেরা  এই  ফুটবলার

পায়ের যাদু দিয়ে,

সুনাম বাড়ায় আর্জেন্টিনার

সেরা খেতাব নিয়ে।


মাঠের রাজা খেলার নায়ক

ছিলেন ম্যারাদোনা,

বিদায় নিলেন  ভুবন ছেড়ে

খেলার যাদু সোনা।


ঘাসের ঘামে ঈশ্বর

 দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়


ঘাসের সাথে গল্প বলের

শিল্পী পায়ের আদর গায়

গর্বের স্পর্শ যেন খামে ভরা

জিয়নকাঠির ঠিকানায়


নিশানা নির্ভুল আঁকাবাঁকা কাটা

চ্যুতির গণনা নিখুঁত আঁকা

তুলি নিয়ে যেন শিল্প গড়া

মাঠ থেকেছে প্রাণে ভরা


শিল্পীর তুলিটা তুলে রেখে আজ

 স্মৃতি শুধু দর্পন হাতরায়

যেখানে ফুটবল সতত শিরায় শিরায়  

 সবুজ হয়ে রক্ত ছোটায়


             

গোল তারাদের মাঠে

অশোক রায়


তোমার তুলনা পেলে নয় তোমার তুলনা তুমি নিজে

পৃথিবী থাকত তোমার মুঠোয় যখন পায়ে বল দৌড়তে

জাদুকরের ইন্দ্রজালে যখন তখন বল জড়াত গোলপোস্টে   

ছিল ড্রিবলিং মন মাতানো অবিশ্বাস্য বুলেটের মত শট    

হেলায় মেরেছ বুল্-আই শত্রু-ডিফেন্স করে তছনছ্

নীল-সাদা দশ নম্বর জার্সি ভোলেনি শক্তিমান নট   

শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গোলের শিরোপা তোমার দ্বিধাহীন      

দিয়াগো আর্মান্দো হৃদয় জিতেছ লক্ষ-কোটির দুঃখ দিয়েছ অসীম  

তোমায় নিয়ে লেখা যায় ধ্বংসের মহাকাব্য সব বেদনা রঙীন

শুয়ে সোনার বাক্সে গোল-তারাদের মাঠে ছোটাও ফুলঝুরি রং-মশাল।। 

                                        


মারাদোনা 
তপনকান্তি মুখার্জি 

মারাদোনা মানে বাঁ পায়ের জাদু 
সবুজঘাসেতে আলপনা , 
মারাদোনা মানে একাই একশো 
বিজয়ীর বেশে আনাগোনা । 
মারাদোনা মানে আর্জেন্টিনা
দেশের একক প্রতিনিধি , 
মারাদোনা মানে শূন্য হাতেতে 
জল থইথই নদী । 
মারাদোনা মানে উথালপাথাল 
যৌবনভরা স্তোত্র , 
মারাদোনা মানে মারাদোনা শুধু 
ফুটবল রাজপুত্র । 



ঈশ্বরের মৃত্যু নেই 
দীপক বেরা
                

চলে গেলেন ফুটবলের ঈশ্বর, রাজপুত্র, বিস্ময় কিংবদন্তি
বিষাদ বেদনায় আপামর মানুষের চোখের জল মিশে যায়
ল্যাটিন আমেরিকার আন্ডিজ পর্বতমালার ঢাল বেয়ে 
ইউরোপ ঘুরে সমস্ত মহাদেশের সাত-সমুদ্রের লোনা জলে!

বিপ্লব, প্রতিবাদ, ভালোবাসা রেখে ঈশ্বর চলে গেলেন 
যুদ্ধবাজ, মাফিয়া, অশুভ মাতামাতি, মহামারি, ধ্বংস
ছিটিয়ে দেওয়া কলঙ্ক, ষড়যন্ত্র পেরিয়ে নক্ষত্রের দেশে
রেখে গেলেন বাঁ-পায়ের অলৌকিক জাদু, শিল্প-নৈপুণ্য
পায়ের অসামান্য ড্রিবল্ নিয়ে তেজী ঘোড়ার খুরের শব্দ 
গ্যালারির উত্তাল উদ্বেল ঢেউয়ের সেইসব বর্ণময় স্মৃতিগাথা! 

ঈশ্বরের মৃত্যু নেই, আপামর মানুষের হৃদয়ে আঁকা থেকে যাবে 
নীল-সাদা-নীল আর্জেন্টিনার জার্সি, মারাদোনার শিশুমন হাসি!


মারাদোনার ফুটবলের কাব্য
অমরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী

হে ফুটবলের যুবরাজ আজ
শোকস্তব্ধ বিশ্ব তোমার বিদায়ে
ছিল যে বিস্ময় প্রতিভা। 
আমাদের হৃদয়ের ভালোবাসা
আর ফুটবলের যাদু সৃষ্টি কে, 
স্মৃতির ভান্ডারে উজ্জ্বল রাখে-
ছিয়াসি সালের সেই গোল
আজও শিহরিত করে অন্তরে। 
মৃত্যু তো তাই পরাজিত, 
সবুজ ঘাসের উপর 
হৃদয়ে দেখি অবিরত।

   চলে গেলে তুমি!
অমরেন্দ্র কালাপাহাড়

চলে গেলে তুমি বিশ্ব ছাড়ি 
   না ফেরার সেই দেশে,
 বিশ্ব ফুটবলে বাঁ পায়ের জাদুতে
 রেখে অদ্ভুত আবেশে!

 ফুটবলের রাজপুত্র বর্ণময় চরিত্র
 বিতর্ক তোমাকে না ছাড়ে,
 মাদক কারবারি মাদকাশক্ত
 ভগবানের হাত গোল ঘাড়ে!

 আর্জেন্টিনার দুদুবার বিশ্বকাপ 
নেপোলিকে দুবারের চ্যাম্পিয়ন,
বিস্ময়ে হতবাক ফুটবলবিশ্ব
 মারাদোনার এ প্রয়ান!



মারাদোনা মারাদোনা
সঞ্জীব রাহা


দুই হাজার কুড়ি সালের পঁচিশ নভেম্বর,

হাহাকার  ওঠে রাজপ্রাসাদে চলে গেল জাদুকর।


বস্তির ঘরে দমবন্ধ কাটছিল ছেলেবেলা,

ফুটবল পায়ে দেখিয়ে দিলে কোনটা রাজার খেলা।



বাম পায়েতেই প্যাঁচ-পয়জার ওটাই চরম অস্ত্র,

বিপদের মাঝে বন্ধু এসেছে কমরেড ফিদেল কাস্ত্রো।



ফুটবলপ্রেমী রাখবে মনে ভগবানের হাত কোনটা?

দাপিয়ে খেলা সারা মাঠজুড়ে দেখে ভরে ওঠে মনটা।



ফুটবলের বরপুত্র সম্রাট মারাদোনা,

কিংবদন্তি দিয়েগো তোমায় কোনও দিনই ভুলবোনা।।



          

ফুটবলের ঈশ্বর
মিনতি গোস্বামী

অনেক সবুজ মাঠ পেরিয়ে
ফুটবলের ঈশ্বর এসেছিলে বঙ্গ শহরে
সুদূর আর্জেন্টিনা থেকে আবার তুমি
ভেসে উঠলে আমাদের খবরে।

মারাদোনা দেখো, মৃত্যু তোমাকে ছিনিয়ে
নিয়ে,নিজেও পড়েছে মহা লজ্জায়
অগণিত ভক্তের চোখের জলে
মৃত্যু আজ একা হয়েছে মৃত‍্যুশয‍্যায় ।

ফুটবলের ঈশ্বর চৌকো মাঠে তুমি
নক্ষত্রের. মত চিরদিন থাকবে উজ্জ্বল
মাঠ দাপানো তোমার পা দুটি
আগামী ফুটবলের হবে শ্রেষ্ঠ সম্বল।





মারাদোনা ভুলব না
গৌতম বাড়ই



একটা দামাল ছেলের ভীষণ মনখারাপ
পণ করেছে খেলবে না আর সে বিশ্বকাপ।
ফুটবলটা না খেলে ওরা মারছে যে পায়
রেফারীটা না দেখে তা অন্য দিকে চায়।

পায়ের পাতায় তাঁর হাজার যাদুর ছোঁয়ায়
ফুটবলটা যেন খেলে পায়ের হেলাফেলায়।
মারাদোনা! মারাদোনা! অবাক বিশ্ববাসী
বিশ্বকাপের মেক্সিকো উনিশশো ছিয়াশি।

একাই দেখি এনে দিল দেশকে বিশ্বকাপ
সবাই বলে সেরার সেরা যত আসুক চাপ।
কুড়ি-কুড়ি সেঁটে ষাটে এই গেলেন দূরলোক
মারাদোনা অমর রহে ভুলবে না এই গোলক!



মাঠের রাজপুত্র
শুভ্রাশ্রী মাইতি

বলটা ছুটে চলে মাঠে,সে ও।ফ্ল্যাগপোস্ট,কর্ণার,গোললাইন ছুঁয়ে ছুঁয়ে 
একেবারে গোলপোস্টের মুখ বরাবর সাম্রাজ্যবিস্তারের অদম্য আবেগে---
যাতে মাঠের প্রতিটি সবুজ ঘাস লিখতে পারে,শুধু বল নয়, 
এক জ্বলন্ত স্ফুলিঙ্গের দাবানল হয়ে ওঠার ঈশ্বরীয় ফুটবল কথা।
রাজপুত্র কি শুধু সোনার চামচ মুখে জন্মায় রাজপ্রাসাদে!
নাকি হেসেকেঁদে ওঠে কোন দুর্ভিক্ষপীড়িত বস্তির নোংরা বিছানাতেও!
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে, শোকজন্মের এই উড়ন্ত পৃথিবীটা 
 ডজ আর ড্রিবলের জাদুকরী তুলির খেলায় স্বপ্নের দৌড় শেষে 
সোজা সেঁধিয়ে যায় তেকাঠির আটগজী সীমানায় দুরন্ত গতিতে।
সকলের হয়ে গোল সে দেবেই দেবে,এই গভীর বিশ্বাসে
তুরী-ভেরী হয়ে জন্মজয়ের নিবিড় উল্লাসে আমরা বেজে উঠলেই
এক বস্তির যুবক চরম আভিজাত্যে শুধু রাজার সিংহাসনেই নয়,
আশ্চর্য ভালোবাসায় এসে বসে হৃদয়ে, অনন্ত অভিষেকে




দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা
রাজা দেবরায়


হে ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনা
তোমাকে বিশ্ববাসী করে আরাধনা
ফুটবলের শেষ কথা তো তুমি
তোমার সোনার চরণে মোরা চুমি
ছিয়াশির বিশ্বকাপের তুমিই নায়ক
তোমার ফুটবল জীবন খুবই সার্থক
ব্যক্তিগত জীবনে তুমি বিতর্কিত
সেই শিক্ষা নিয়ে মোরা সতর্কিত
তোমাকে চিরদিন সবাই রাখবে মনে
তোমার অমলিন স্মৃতি ভাসে ক্ষণে ক্ষণে



ঈশ্বর
 ঐশ্বর্য্য কৃষ্ণ

ফুটবল পায়ে মারাদোনা

ফিরে আসে না আর।

মানুষ তাকে কাছেই রাখে।

এমন জাদু পায়ে যার।


আওয়াজ উঠলে মাঠে।

গোল হয়ে যায় ফের।

ভগবান থাকলে কাছে,

খোঁজ করো কিসের।


এমন আলো জ্বালায় প্রদীপ

চির উজ্জ্বল থাকে।

ঈশ্বর তো ঘরের মানুষ

হাত ধরে পাশে হাঁটে।



দিয়েগো...তারার দেশে 
ব্যোমকেশ দত্ত

ঘাসের কার্পেট মোড়া সবুজে সবুজে 
অপেক্ষায় শিল্পী এক ছবি যাবে এঁকে
মননে যা আছে রাখা ঠিক নেবে খুঁজে
সর্পিল গতিতে দৌড় বেগে একে বেকে। 

চিত্রপটে ওঠে ফুটে শিল্পের কোলাজ 
মোহিত হাজার চোখ মহিমার তেজে 
নানা বর্ণ নানা ছন্দে রঙ ঝরে আজ
জাদুময় পরিবেশে সুর ওঠে বেজে। 

শক্ত পোক্ত শরীরটা পাঁচ ফুট পাঁচ
সবুজের ক্যানভাসে বাম পা টা তুলি
সাদা কালো বল পায়ে আগুনের আঁচ
বিচ্ছুরিত শিল্পকলা কিকরে যে ভুলি! 

ফুটবল ঈশ্বর সে সোনার দিয়েগো
গিয়েছ তারার দেশে, আকাশেই জেগো। 


দিয়েগো ম্যারাডোনা
সম্পা দাস

ঈশ্বরের তৈরি নাটকমঞ্চে
এসেছিলেন তিনি,
ফুটবল জগতের যুবরাজ নামে 
তাকে আমরা চিনি।
আর্জেন্টিনার প্লেয়ার হয়ে
এনেছেন অনেক কাপ,
কেড়ে নিয়ে তাকে, ঈশ্বর আমাদের
দিলেন অভিশাপ!
"Hands of God" নামে পরিচিত
দিয়েগো ম্যারাডোনা,
না থাকলেও তিনি এই পৃথিবীতে
আমরা  তাকে কখনও ভুলবো না।


   মারাদোনা
একাদশী চৌধুরী     
ধন্যদেশ আর্জেন্টিনা  জন্মে যেথা মারাদোনা
ফুটবলের রাজপুত্র বলে।
ঊনিশ শত ষাট সালে, জন্মিল এ ধরা-
তলে/ষোল বছরে, ফুটবল দলে।
দশ নম্বর জার্সি গায়,কী যে যাদু বাম-
পায়
চুম্বক লাগানো  বুঝি  তাতে।
ঊনিশ শো ছিয়াশি সালে, বিশ্বকাপ
ফাইনালে
গোল করে মাথায় ও হাতে।
সেই ঈশ্বরের হাত, করল যে বাজীমাৎ/
স্কীল তার  পেলে র  সমান,
নেপোলি তে ছিল ঠাঁই, বিশ্বকে কাঁদিয়ে
ভাই 
দিয়াগোর হল মহাপ্রয়াণ।
                
              

কে বলে নেই?
মায়া দে

বিশ্ব জোড়া নজর কাড়া ফুটবলের যুবরাজ
কাঁদো বিশ্ব কাঁদো তুমি হারালে কাকে আজ।

আর্জেন্টিনার ফুটবলার ফুটবলের মারাদোনা
১৯৮৬সনের বিশ্বকাপ বিশ্ববাসীর জানা।

জ্বলে রোশনাই বাজে দামামা মেক্সিকো ময়দান
ম্যাজিক দেখছে তামাম দুনিয়া লড়িয়ে দিচ্ছে যান।

ঈশ্বর রূপী "হ্যানড অফ গড"সেদিন দেখেছে বিশ্ব
একক ক্ষমতার প্রভাব ৯০। ২০২০ তে করলে নিঃস্ব।

আলোর দেশে দিয়েছোপাড়ি ফুটবলের যুবরাজ
তোমার ঘামের গন্ধ মাখা জার্সি যে কাঁদে আজ।

মহা তারকার মহা প্রয়াণ শূণ্য যে ময়দান
কে বলে নেই?আছো হৃদয়ে বিশ্ব বন্দিত প্রাণ।


ফুটবলের ভাস্কর  
মালা ঘোষ (মিত্র) 

আর্জেন্টিনার মানুষ হয়েও
মারাদোনা তোমার জন্য
বুকের মধ্যে মোচড় দেয় 
মনে চলে উদ্দীপ্ত তরঙ্গ।
কখন হয়ে গেলে প্রিয় ফুটবলার! 
পায়ে তোমার এত জোর
গোলে যে কত দল হারে
জিতে গিয়ে সাহসী হয় প্রত্যয়। 
রাজ মুকুটে ফুটবলের ঈশ্বর। 
ফিদেল কাস্ত্রোর ট্যাটু বাঁ- পায়ে
চে- কেও নিয়েছো ডান হাতে। 
ফুটবলের ভাস্কর যেতে পারে অস্তাচলে!! 


ফুটবলের রাজপুত্র
শ্রাবণী বসু    
অমোঘ নিয়মে লাগাম পরানোর
ইচ্ছেটি যার থাকেনা
মৃত্যুর হাত ধরতেও  সে ভয় পায়না।

 এপারের ময়দান ছেড়ে
ওপারে ড্রিবলিং-এ ব্যস্ত
ফুটবলের রাজপুত্র - মারাদোনা।

পৃথিবীজোড়া ভক্তের কাছে
জনতার নায়ক -হাতে-পায়ে উল্কি,
 ধর্মে ও জিরাফে তিনি ছিলেন।
আছেন ।থাকবেন।

 জীবন একটা খেলার মাঠ
ইচ্ছেমতো খেলেছেন ঘরে-মাঠে।

বাধ্য পাশার মত  ফুটবল নিয়ে
ম্যাজিক দেখিয়েছেন ময়দানে।

 তাঁর স্মৃতি ধরে রেখেছি বুকে।
নেড়েচেড়ে দেখছি। দেখবো।

 কোনোদিন ভুলবোনা। ভোলা অসম্ভব।



ঝাঁকড়া চুলো ছেলেটা
অঞ্জনা চক্রবর্তী

ব্রাজিল কে সরিয়ে বাঙালির ঘরে 
এলো পেলের বদলে ;ঝাঁকড়া চুলো ছেলেটা
"দ সান " নামক পত্রিকায় কতো বিদ্রুপ
"ফুটবল এর ঈশ্বরের হবে পতন"!
তুচ্ছ করে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ব্রাজিলের মাটিতে 
ট্রফি চুম্বনরত যে ছেলে , সে ঈশ্বর গরিব ঘরের ছেলে , দিয়াগো মারাদোনা পাখনা মেলে |
আর্জেন্টিনা থেকে বিশ্ববাসীর মনে,
ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে দাগ কেটে
বাঁ পায়ের পাস বা ড্রিবিল , কারসাজি কেরামতি ভেল্কি
ফুটবলের শিল্পী, আজও অক্ষত সবুজ মাঠে|




২টি মন্তব্য:

  1. কলমে ভালোবাসা ঝরছে। প্রিয় মারাদোনা তুমি রাজার মতো মাথায় নয়, বুকের বাঁদিকে থেকো।

    উত্তরমুছুন
  2. খুব সুন্দর লাগলো। ফুটবলের যাদুকর ম্যারাদোনাকে নিয়ে লেখা ছড়াগুলো বেশ উপভোগ্য। এভাবে কবির কলম চলুক অবিরাম। সব কবিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।

    উত্তরমুছুন