উৎসব- উৎস, বৈচিত্র্য, প্রভাব ও কার্যকারিতা / (পর্ব -১)
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
গুহামানব থেকে জেটমানব। এক অনবদ্য জার্নি। কোন কথা বা বর্ণনা দিয়ে একে সম্পূর্ণভাবে আলোচনা করা বা ব্যখ্যা করা অসম্ভব। যখন মানুষ গুহাবাসী ছিল, তখন কিছু হিংস্র জংলী পশুর কাছে বিনাবাধায় প্রাণ দিতে হত। ধীরে ধীরে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে উঠল। তারপর দমন বা নিয়ন্ত্রণ করাও শিখল মানুষ। একইভাবে জেটের যুগেও এমন কিছু অজানা, অনিয়ন্ত্রিত শত্রুর মুখোমুখি হতে হয়। তা কোন জীবাণু বা পরজীবীর বসতও হয়ে থাকতে পারে। তার বিরুদ্ধেও একই লড়াই চলছে, চলবে। হয়ত সময়ের সাথে সাথে তাকে দমিত, নিয়ন্ত্রিত এবং সবশেষে পরাভূত করার রাস্তাও খুলে যাবে। শুধু দরকার সময়, ধৈর্য্য এবং বলিদান। বলিদান কিন্তু দিতেই হচ্ছে ও হবেও । তা সেই ৫০০০ বছর আগেই হোক বা অনাগত ভবিষ্যতে! এই কথাগুলো ' ধান ভানতে শিবের গীত' নয়। বরং এটা বোঝাতে যে, মানবজাতির ইতিহাস বা মানব সভ্যতার অগ্রগতি কখনোই সহজ বা মসৃণ ছিল না বা নেই। প্রতি পদক্ষেপে মানুষকে লড়ে নিতে, বুঝে নিতে হয়েছে তার অধিকার। এর মধ্যে থাবা বসিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি (অতিমারি ও),যুদ্ধ, জরা, অসুখ, না জানি আরো কত কিছু! এসবকে অতিক্রম করে ' সুখ' বা 'স্বস্তি' আদায় করে নিতে তাকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে অনবরত। সুখ যদিও অনেকাংশেই আপেক্ষিক। সঠিক অর্থে সুখ বলতে সব স্তরের মানুষের সঙ্গে মানবিক ও মানসিক বন্ধনকেই বোঝানো হয়েছে। স্বয়ং আইনস্টাইনও আপেক্ষিকতাকে মাথায় রেখেও তা মেনে নিয়েছিলেন। পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরোধা আইনস্টাইনের গতিময়তা এবং সহজ বিচরণ নিয়ে কথা বলা ধৃষ্টতা ভিন্ন অন্য কিছু না। এতসবের মধ্যেও যে তত্ত্বটি আপেক্ষিকতাবাদের মতোই দুনিয়া কাঁপানো সেটি হলো-
E= mc2 ( E= উৎপন্ন শক্তি, m= বস্তুর ভর, c= আলোর গতিবেগ) ।
অর্থাৎ কিছু ব্যায় করতে হবে, মানে কিছু পোড়াতে বা ক্ষয় করতে হবে। তবে গিয়ে কিছু(মানে Energy বা শক্তি) পাওয়া যাবে। কাজেই সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষের সুখ, স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য খোঁজার যে সহজাত প্রবৃত্তি লক্ষ্য করা যায় তা পেতে গিয়ে সর্বদাই কিছু না কিছু মূল্য চোকাতে হয় যা আজো হয়ে চলেছে। তা করতে গিয়ে মানুষকে আর্থিক, সামাজিক বা বিভিন্ন বিষয়ক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে কিছু পাওয়ার বিনিময়ে।
এই সুখ বা স্বস্তি প্রাপ্ত করার একটি বড় সোপান হলো -'আনন্দ '। আবার এও বলা যায় ' আনন্দ ' একটি সিঁড়ি, যা বেয়ে সুখ বা স্বস্তি নামক গন্তব্যে পৌছে যাওয়া যায় । ' আনন্দ ' অর্থাৎ ইংরেজিতে Joy বা Pleasure। অভিধান বলছে Pleasure হলো ' a feelings of happiness, enjoyment or satisfaction '। অনেক রকম আনন্দের মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও টেকসই বোধহয় ' মানসিক আনন্দ '।
কবির কথায়- ' কি আনন্দ কি আনন্দ কি আনন্দ দিবারাত্রি, নাচে মুক্তি, নাচে বন্ধ।'মানুষ যুগ যুগ ধরেই এই আনন্দ খুঁজে চলেছে শয়নে, স্বপনে ও জাগরণে। এই অমলিন, অনাবিল আনন্দ পাওয়ার এক সহজ ও কার্যকরী উপায়- উৎসব। সেই আদিম যুগ থেকেই মানুষ উৎসবে মেতে উঠেছে। যার যার সাধ্যমত। সামাজিক আর ঐতিহ্যগত- তা ধর্ম বিষয়ক হোক বা ধর্ম বহির্ভূত; এককভাবে বা সমষ্টিগতভাবে; কারণে, সামান্য কারণে বা বিনা কারণেও মানুষ মেতে উঠেছে উৎসবে। এই উৎসব কেবলমাত্র সামাজিক, ধর্মীয় বা অন্যান্য পরিপ্রেক্ষিতে আনন্দ লাভ করাকেই বোঝায় না, বরং সমাজের বিভিন্ন দিকগুলোকে অত্যন্ত সুচারুভাবে ও সুনিপুণভাবে তুলে ধরে। পক্ষান্তরে এও বলা যেতে পারে যে, সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই মানুষের জীবন ও যাপনের প্রতিটি অঙ্গ বা পদক্ষেপ উৎসবের উপরে কোন না কোন ভাবে নির্ভর করে এসেছে। তা সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, যেভাবেই হোক ।
(চলবে)
----------------------------------------------------------------
এই ধারাবাহিক নিবন্ধটি প্রতি সোমবার অঙ্কুরীশা-র পাতায় ক্লিক করে দেখুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন