লেবেল

রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

। প্রতিদিন বিভাগ।। ।। এপ্রিল সংখ্যা।। ।। অণুগল্প (মুক্ত) -২৩।। উত্তর জানা নেই — দীনেশ সরকার।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।




    ।। প্রতিদিন বিভাগ।। 

   ।।  এপ্রিল সংখ্যা।। 

   ।।  অণুগল্প  (মুক্ত) -২৩।।




উত্তর জানা নেই

দীনেশ সরকার


        সরমা বেশ কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছে সুতনু কেমন মনমরা হয়ে স্কুল থেকে ফিরছে। বাড়িতেও বেশী কথাবার্তা বলছে না। ক্লাস সেভেনের ছাত্র সুতনু। ছটফটে ছেলেটা কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। স্কুল থেকে ফিরে দুটো নাকে মুখে দিয়েই বল পিটতে ছুটতো। সেই ছেলে বিকেলটা চুপচাপ ঘরে বসে থাকে। সবসময় কি যেন ভাবছে। ব্যাপারটা সরমার মোটেই ভালো ঠেকছে না। সরমা ব্যাপারটা সুতনুর বাবা সুবিনয়কেও বলেছে।সুবিনয় হেসে উড়িয়ে দিয়েছে, বলেছে 'ওদের এখন বয়:সন্ধিক্ষণ। ওদের মনের হদিস আমরা কেউ পাবো না এখন। চিন্তা কোরো না। অচিরেই সব ঠিক হয়ে যাবে।' তবু সরমা বারকয়েক জিজ্ঞেসও করেছে, 'বাবু, তোর স্কুলে কি কিছু হয়েছে? কারও সাথে ঝগড়াঝাঁটি মনকষাকষি হয়েছে?' 

        সুতনু সংক্ষেপে উত্তর দিয়েছে, 'কই না তো। কিছু হয়নি তো।'

         তবু সরমার মনে খটকা লাগছে। স্কুলে নিশ্চয় কিছু হয়েছে। আজ সুতনু স্কুল থেকে ফিরে জামা-প্যান্ট ছেড়ে বসতেই সরমা সুতনুর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে জিজ্ঞেস করে, 'বাবু, সত্যি করে আমায় বলতো তোর স্কুলে কি হয়েছে?'

            সুতনু আর নিজেকে সামলাতে পারে না। মায়ের বুকে মুখ গুঁজে হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে। বলে, 'মা, আমি আর স্কুলে যাবো না।'

          'কেন রে স্কুলে যাবি না কেন? কি হয়েছে স্কুলে?'

           'তুমি তো জানো মা বিজ্ঞান আর অঙ্ক আমার প্রিয় সাবজেক্ট। আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেল আমাদের অঙ্ক আর বিজ্ঞানের কোন ক্লাস হচ্ছে না। স্যারেরা স্কুলে আসছেন না। তুমি তো জানো শান্তনুস্যার আমাদের কত ভালো বিজ্ঞান পড়ান আর বিবেকস্যার কত ভালো অঙ্ক শেখান। আমরা যে অঙ্কে ১০০ পাই আর বিজ্ঞানে ৯৭/৯৮ পাই সে তো ওই স্যারেদের জন্যই। স্যারেরা যেমন আমাদের ভালোবাসেন তেমনি পড়াটাও আমাদের মাথার মধ্যে ছবির মতো ঢুকিয়ে দেন। আবার শুনছি ইংলিশ টিচার সমরেশস্যারও স্কুলে আসছেন না। সমরেশস্যার আমাদের পড়াতেন না তাই তার সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানি না। কিন্তু শান্তনুস্যার আর বিবেকস্যার না এলে আমরা স্কুলে গিয়ে কি করবো। আজ আমরা ক্লাসের সবাই হেডস্যারের ঘরে গিয়ে জানতে চেয়েছিলাম শান্তনুস্যার আর বিবেকস্যার স্কুলে আসছেন না কেন? হেডস্যার বললেন, শান্তনুস্যার, বিবেকস্যার আর সমরেশস্যারের চাকরি বাতিল হয়ে গেছে তাই তারা আর স্কুলে আসবেন না। মা, শুনেছি খারাপ কাজ করলে মানুষের চাকরি চলে যায়। শান্তনুস্যার আর বিবেকস্যার তো ভালো মানুষ, আমাদের কত ভালোবাসেন, তারা কোনো খারাপ কাজ করতেই পারেন না। তারা সবাই এম এস সি, বি এড। তারা তো পরীক্ষা দিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন। তাহলে তাদের চাকরি বাতিল হ'লো কেন?'

           কি জবাব দেবে সরমা! মিডিয়ার দৌলতে সবই তো দেখছে। একজনের পাপের ফল আর এক জনকে কিভাবে  ভুগতে হচ্ছে। যোগ্য শিক্ষকেরা  কিভাবে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। তার সন্তানের শিক্ষার কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সরমা। ফ্যাল ফ্যাল করে তার সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে থাকে।

           সুতনু মাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, 'বলো না মা, শান্তনুস্যার আর বিবেকস্যারের চাকরি কেন বাতিল হ'লো? দোষ  না করেও কেন তারা শাস্তি পেল?'

             ছেলেকে বুকে চেপে ধরা গলায় সরমা বলে, 'এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই বাবা। হয়তো ভগবানেরও জানা  নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন