লেবেল

বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২

আজ বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের ১৬০তম জন্মদিবস শ্রদ্ধা ও স্মরণে — সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 





বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের  ১৬০তম জন্মদিবস

শ্রদ্ধা ও স্মরণে — সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় 



স্বামী বিবেকানন্দঃ প্রসঙ্গ সমাজে বিশ্বাসের অভাব



স্বামীজি চাইতেন বিশ্বাস, বিশ্বাস, আর বিশ্বাস। বিশ্বাসের শক্তিতে মানুষ নিজেকে খুঁজে পাক। যুব সমাজ জেগে উঠুক।খুব গভীরভাবে অনুভব করলে বোঝা যায় তাঁর এই বাণীর মর্ম কথা।

স্বামীজির কথা অনুভব করলে বোঝা যায় এর চাইতে বড় সত্য আর জীবনে কিছু নেই।

বিশ্বাস সকল  ভালোবাসার উৎস।বিশ্বাস সকল সম্পর্কের প্রাণ। বিশ্বাস জীবনকে সফল করে। বিশ্বাস মুক্তির আনন্দ খুঁজে পেতে তাঁর কাছে পৌঁছে দেয়  যাঁর প্রতি বিশ্বাসের অটুট বন্ধন আছে।তাই বিশ্বাসের বন্ধন দৃঢ় হোক, চাওয়া আর পাওয়ার হিসেবে নয়।কারণ চাওয়া-পাওয়ার হিসেবে যে লেনদেন হয় তাদের লাভ-লোকসানের টানাপোড়েনে বিশ্বাসের সম্পর্ক নষ্ট হয়, আর যেখানে বিশ্বাসের সম্পর্ক নষ্ট হয় সেখানে মানুষ তার অন্তরের উৎপত্তিস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। তখন জীবন থাকে জীবনের সুধা বঞ্চিত।তাই

 এই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারার নামই প্রকৃত সুখ, প্রকৃত শান্তির খোঁজ পাওয়া, যা একমাত্র মানুষ পায় ।মনুষ্যত্বের সাধনায়। হ্যা, মনুষ্যত্ব একটি সাধনা।কারণ, মানুষ একটি স্ববিরোধী প্রকৃতির প্রাণী।যা সে চায় তার পাওয়া হয়ে গেলে তার মন অন্য দিকে ঘুরে যায়।তার শুধুই হেথা নয় হেথা নয় অন্য কোথা... অনন্ত ছুটে বেড়ানো তার থামে না, সে আরও চায়, আরো চায়।সেই বনের মধ্যে হরিণের মত ছুটে বেড়ানো কোনো এক সুগন্ধের পিছনে, সেই সুগন্ধ পাওয়ার জন্য। অজানা উৎস থেকে সেই গন্ধ আসছে ভেবে সে ছুটে বেড়ায়, সে জানে না সেই গন্ধের উৎস তারই ভিতরে। তাই নিজেকে খুঁজলেই সবটা পাওয়া হয়ে যায়।

 কিন্তু এই কথায় কি কারুর বিশ্বাস আছে? বিশ্বাস কি আছে নিজের প্রতি? স্বামীজি তাই বলতেন, আগে নিজের প্রতি বিশ্বাস আন।নিজেকে বিশ্বাস কর।তুই নিজেই অমৃতের সন্তান। তিনি বারবার জীবনভর বলেছেন, তুমিই সেই অমৃত পুরুষ।তুমিই ঈশ্বর।তোমার সামনের মানুষটাই ঈশ্বর। কোথায় খুঁজে বেড়াচ্ছ? তোমার মধ্যেই তিনি।তোমার সামনেই তিনি।

 তিনি মানে? ঈশ্বর মানে? সেই পরম শান্তির ঠিকানা।সেটা পেতে বিশ্বাস লাগে। সেটা পেলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায়।মানুষ হওয়ার সাধনায় উত্তীর্ণ হলেই নিজের সমস্ত সুখ, শান্তি অন্যের আনন্দের অনুভবে পাওয়া যায়।নিজের জন্য হিসেব নিকেশ আর দরকার হয় না।অন্য সকলের লাভ হলে নিজের লাভ, অন্য সকলের লোকসান হলে নিজের লাভের আনন্দ হারিয়ে যায়।ঠিক যেমন একজন সফল খেলোয়াড় বলেন সেঞ্চুরি করার পর বা গোল দেওয়ার পর যদি টিম না জয়ী হয়, তখন ম্যান অফ দি ম্যাচ হলেও মনে হয় টিম তো হেরে গেল, টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলাম।আমার খেলার আর জায়গাটাই তো রইল না, সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়ে কি হবে? 

 ঠিক যেভাবে একজন সফল পুরুষ তাঁর উত্তরাধিকারের সাফল্যের মধ্যে নিজের পূর্ণতা খুঁজে পান,নইলে কোটিপতি বাবা বা দাদুও শান্তি পায় না ছেলে মেয়ের বেকারত্ব দেখে, বা নাতি নাতনির অশান্তি দেখে, তাদের ভালো থাকার মধ্যেই যেমন জীবনের চরম পাওয়া তাঁর, তেমনই সকল মানুষেরই অন্যের ভালো থাকার মধ্যেই চরম তৃপ্তি অপেক্ষা করে, জীবনের শেষ পর্বে এলে সেটা বোঝা যায়, নইলে অনেক মালা, অনেক পুরস্কার, অনেক ব্যাংক ব্যালান্স, অনেক সম্পদের পরেও জীবন বড় শূন্য বলে মনে হয়।তাই যার আছে, তার নেই এর কাছে পৌঁছে যেতে হয়।সেই নেই কে আছেতে পরিণত করে নিজেকে পূর্ন করতে হয়।তবেই মানুষ হওয়ার সাধনা সম্পূর্ন হয়।এই গোটা প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ন  করার পথে বারবার আঘাত পেতে হয় তাদেরই কাছ থেকে যাদের জন্য মানুষ কিছু করতে যায়।কারণ? তারা গ্রহণ করতেই পারে না, পারে না তারা নিজেদের বিশ্বাসের অভাব আছে বলেই।তারা বিশ্বাস করতে পারে না সত্যি আপনি তার ভালো চান।

 তাই বিশ্বাস চাই। পরস্পরের বিশ্বাসের মধ্যেই আসে পূর্ণ শান্তি, সুখ, আনন্দ।তৃপ্তি, উন্নতি।কিন্তু স্বার্থের নির্বোধ ব্যাখ্যায় মানুষ সেই বিশ্বাসের পথে হেঁটে লাভ খুঁজে পায় না।ভাবে তাতে তার লোকসান।কিন্তু সেই জন্য যা যা করে সে তার হিসেবে যে লাভ পায় তাতে অন্যের কাছ থেকে সে অনেক দূরে চলে যায়। জীবনের শেষে তার এই জগতের সমস্ত ধন পেলেও তার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে সরিয়ে ফেলে, কখন অনেক দূরে নিজেই কিভাবে হারিয়ে যায় বুঝতে পেতে পারে না।তার সব পাওয়ার সাধনায় সে নিজেকেই আসলে অন্তরে রিক্ত করে একা হয়ে যায়।তখন তার মনে হয় তার চাইতে একটা ফকির ও ভালো, যার হয়ত অত পার্থিব সুখ নেই, কিন্তু মানুষের বিশ্বাস পেয়ে মানুষকে নিয়ে ভালোবেসে জীবনে তৃপ্তি পাচ্ছেন। এইভাবে অন্যকে নিয়ে চলতে হলে নিজের বাইরে এসে অন্যের পাশে দাঁড়াতে হয়।সেটা করতে নিঃস্বার্থভাবে  পারার নাম মানুষ হওয়া। বিনা প্রত্যাশায় সেটা করাই মানুষ হওয়ার সাধনা।

 তাই স্বামীজি বলতেন, সবার আগে মানুষ হ

 তার মানে?

 সবার আগে  চাই অন্যের বিশ্বাসের উপযুক্ত হয়ে ওঠা, আর  সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করতে জীবনকে প্রস্তুত করা। যদি একজন মানুষ তাঁর পরিবারের সকলের প্রতি, প্রতিবেশীর প্রতি, সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি যে কর্তব্য সেটি পালন। করে অন্য সকলের বিশ্বাসের উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে, তাহলে জগৎ তার অনুগামী হয়।নেতা এইভাবেই সেবার মাধ্যমে জন্ম নেয়।রাজনীতি এই ভাবে তখন সর্ব সাধারণের কল্যাণ আর ক্ষমতা বাড়ানোয় কাজে লাগে।তখনই বিশ্বাস রাখা হয়।নইলে নেতার প্রতি অনুগামী, মন্ত্রীর প্রতি প্রজা, রাষ্ট্রের প্রতি সমাজ বিশ্বাস হারায়।

 তাই সকলের বিশ্বাসের মান রাখাটা যেমন কাজ, তেমন সকলের বিশ্বাসের উপযুক্ত হয়ে ওঠাটাই গুণ।

 এই কাজের জন্য এই গুন অর্জন করার নামই মানুষ হয়ে ওঠা।স্বামীজি সেটাই চাইতেন।






1 টি মন্তব্য: