লেবেল

বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১

ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব-২১)।। পৃথিবীর উল্টো পিঠ— বিশ্বেশ্বর রায়।। Ankurisha ।।E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 




ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব-২১)


পৃথিবীর উল্টো পিঠ
বিশ্বেশ্বর রায় 

      আমাদের পূর্ব পরিকল্পনা বাবাইয়ের হঠাৎ চাকরি যাওয়া এবং পুন-প্রাপ্তির চক্করে ঘেঁটে ঘ হয়েছে গেছে।এখন যা অবস্থা তাতে মনে হয় আরও মাসখানেক এখানে থেকে যেতে হবে। কারণ,বাবাই শার্লটে পৌঁছে এক মাস হোটেলে থাকবে। তারপর অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে তবে আমাদের যাবার ব্যবস্থা করবে। জানি না সেটা ঠিক কবে হবে।
      বাবাই ক্যানসাস সিটিতে চলে যাবার পর তিন দিন পার হল। রোজ যদিও কথা হয় ফোন বা স্কাইপ-এ কিন্তু অনেক কথাই বলা হয় না বা জানা হয় না। ওকে এরপর যেতে হবে শার্লটে। আগেই বলেছি ওখানে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকাতে ওর পরবর্তী প্রজেক্ট শুরু হবে দিন দশ-বারো পর থেকে। মধ্যবর্তী এই ক'টা দিন ওকে ক্যানসাস সিটি থেকেই কাজ করতে হবে। কাজ অর্থাৎ শার্লটের প্রজেক্ট সম্পর্কে নানা পড়াশুনা, টেলি-কনফারেন্স, মীটিং ইত্যাদি। এরই মধ্যে সময় করে অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়ার নোটিস,গাড়ি ছাড়ার নোটিস, দীর্ঘদিন থাকার জন্য যে সমস্ত জিনিসপত্র কিনেছিল সেগুলো ফেরত দেবার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি কাজগুলো সারতে হবে। একই সঙ্গে আবার স্থানান্তরনের গোজগাছ।

      আবার সেই "কাজের মধ্যে দুই / খাই আর শুই" অবস্থায় দিন কাটছে। কোথাও যাবার নেই,কিছু করারও নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাত:কৃত্য সেরে, ব্রেকফাস্ট তারপর কিছু করার থাকে না। মুনিয়ার কাছে বলে রান্নার সবজি কাটার চাকরিটা নিয়েছি। ওতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় কেটে যায়। তারপর জানালায় বসে কাঠবেড়ালি আর পাখিদের নানান কার্যকলাপ দেখা।
      চার-পাঁচ দিন পর আজ বিকেলে সবাই মিলে একটু বেরিয়ে হার্টফোর্ডের সবচেয়ে বড় চার্চটায় গেলাম। চার্চের ভিতরটা অপূর্ব সুন্দর। চতুর্দিকে রঙিন কাচ দিয়ে বিকেলের আলো আসছে। কাচের উপর যীশুর নানা ছবি আঁকা। ছাদের নীচটাও (সিলিং) ভীষণ সুন্দর। প্রায় তিরিশ ফুট উঁচু সিলিং থেকে মৃদু আলো আসছে। নিস্তব্ধ,শান্ত পরিবেশ। দু'চার জন করে মানুষ-জন আসছেন প্রার্থনায় অংশ নিতে। চারটের সময় শুরু হবে প্রার্থনা। আমরা প্রায় সোয়া তিনটের সময় ভিতরে ঢুকে কয়েকটি ফটো তুললাম। তারপর লাইন করে সাজানো অগুনতি  বেঞ্চের একটায় সবাই বসে পড়লাম। এখানে মনে হয় আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ একত্রে  বসে প্রার্থনায় অংশ নিতে পারেন।

      পৌনে চারটের দিকে কয়েকজন ফাদার,নান  এলেন। একজন মঞ্চের মোমবাতিগুলো জ্বালিয়ে দিলেন। মৃদু শব্দে পিয়ানোতে সুর ভেসে  আসতে লাগলো। কী গভীর,শান্ত পরিবেশ। মনটা এমন পরিবেশে আপনাতেই শান্ত হয়ে  আসে।
      সঙ্গে সঙ্গেই আপনা আপনি তুলনা চলে এলো মনে। আমাদের রীতিনীতি,আচারানুষ্ঠানের সঙ্গে কত প্রভেদ! আমাদের যে কোনও মন্দিররে বা পূজাস্থানে কাঁসর-ঘণ্টা,ঢাক-ঢোল,উচ্চৈস্বরে মণ্ত্রোচ্চারণ, যাগ-যজ্ঞ, ইত্যাদি সহযোগে এক দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার। তার মধ্যে শান্তি খোঁজা,স্থৈর্য খোঁজা, ঐশ্বরিক চিন্তা করা পণ্ডশ্রম মনে হয়। স্বয়ং ঈশ্বরও বোধ করি এমন তাণ্ডবে স্থানত্যাগ  করেন।এরপরও তো আছে বিভিন্ন পূজায় ছাগ বলি, মুরগি -হাঁস বলি। এমন কি নরবলিও ছিল পূর্বে।
      ধর্ম আমাকে কখনও টানে না। এখানে ধর্ম বলতে আমি ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান, পূজা-আচ্চা, গুরুমণ্ত্র জপ ইত্যাদি প্রভৃতির কথা বলছি। যেগুলিকে সচরাচর ভারতীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ধর্ম করা বা তীর্থদর্শন করা ভাবেন। এরপর আছে ষষ্ঠীপূজা, অন্নপ্রাশন, উপনয়ন,বিবাহ, শ্রাদ্ধ ইত্যাদি নানাবিধ ক্রিয়াকলাপ। এর মধ্যে ধর্ম বা ঈশ্বরের স্থান ঠিক কতটুকু তা বোঝার সাধ্য আমার মতো নাস্তিকের নেই।
      তবে পশ্চিমি দুনিয়ার খৃষ্টধর্ম বা ইসলামিক দুনিয়ার পালিত ধর্মের সঙ্গে ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের ধর্মীয় আচরণের বহুলাংশে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অবশ্য অধুনা ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা আজানের সময় মাইক ব্যবহার করেন। যা ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে কতিপয় শহুরে মসজিদ ছাড়া গ্রাম-গঞ্জে বিশেষ শোনা যেতো না।





ক্রমশ... 









আরও  পড়ুন 👇🏾👇🏾👇🏾

https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/08/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_11.html


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন