লেবেল

বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১

ধারাবাহিক ভ্রমণ কথা (পর্ব-২৩) ।। পৃথিবীর উল্টো পিঠ— বিশ্বেশ্বর রায়।।Ankurisha ।।E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 



ধারাবাহিক ভ্রমণ কথা (পর্ব-২৩)

পৃথিবীর উল্টো পিঠ
বিশ্বেশ্বর রায়

শরীরটা এখানে এসে যেন খারাপই হচ্ছে দিন দিন। অথচ এখানে কোনও বায়ু দূষণ নেই। নোংরা, ময়লা এমন কি শব্দ দূষণও নেই বললেই চলে। তবু শরীরটা যেন ঠিকঠাক চলছে না। এর কারণ মনে হয় একঘেয়েমি আর গতানুগতিকতা। কোনও কাজকর্ম নেই। খাওয়া আর সিনেমা বা সিরিয়াল দেখা। আর ঘুম নয়তো শুয়ে-বসে কাটানো। মাঝে মাঝে বিকেলের দিকে একটু বাইরে ঘুরে আসা বা দোকানে যাওয়া। তার উপর এখানকার জলে বড্ড বেশি ক্লোরিন। তার জন্যই মনে হয় চুল পড়ে যায় সবার। তাই অনেকেই এখানকার জল সরাসরি মাথায় ঢালে না। ব্রিটা বা পার দিয়ে জল শোধন করে তবে ব্যবহার করে। আর এই ক্লোরিনের আধিক্যের জন্যই মনে হয় চুল পেকেও যায় দ্রুত। আমার ক্ষেত্রে দেখছি খুব দ্রুত পেকে চলেছে চুল।
      খুব ছোটবেলায়, সম্ভবত তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় পাঠ্যবইয়ে একটি গল্প ছিল  'যার যেমন তার তেমন' শীর্ষক। গল্পের মূল বিষয়টি ছিল --যে যেমন অবস্থায় দিনাতিপাত করে তাকে যদি তার থেকে অনেক ভালো বা বেশ খারাপ অবস্থায় রাখা যায় তবে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে মনে হয়।

      বাবাই চলে গেল আজ বিকেলে। পৌঁছাবে বেশ রাত্রে। শার্লট(Charlotte) এখান থেকে প্রায় চার ঘন্টার ফ্লাইটের দূরত্ব। তবে সরাসরি ফ্লাইট নেই বলে সময় বেশি লাগে। শার্লটে পৌঁছেই বাবাই আমাদের যাতায়াতের ফ্লাইটের টিকিট কাটার ব্যবস্থা করেছে। টিকিট কাটা অর্থাৎ আগের টিকিটের Reschedule করা। তার জন্য প্রথমেই তিনশো ডলার গুনাগার দিতে হয়েছে। তারপরও বাবাই United Airlines-এ ফোন করেছিল টাকাগুলো refund পাওয়া যাবে কিনা  তা জানতে। কর্তৃপক্ষ তিন-চার দিন সময় নিয়েছিল চূড়ান্ত খবর জানাবার জন্য। শেষমেশ জানিয়ে দিল যে, refund হবে না। Refund-এর জন্য বিশেষ সার্টিফিকেট লাগে বা বিশেষ জরুরি অসুবিধার কথা জানাতে হয়। যা শুনে ওরা refund-এর ব্যাপারে বিবেচনা করে।
      তেমন কিছু ঘটেনি। ফলে শেষ পর্যন্ত অনেক  বেশি দামে টিকিট কাটতে হল। শার্লট যাওয়া হবে Delta Airlines-এর ফ্লাইটে। আবার মুনিয়াদের এখানে দু'মাস পরে ফিরবো United Airlines-এর ফ্লাইটে।
      বাবাইয়ের ওখানে যাওয়ার কথা ছিল ওর সঙ্গে একসাথে একুশে সেপ্টেম্বর। সেখানে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি যে টিকিট পাওয়া গেল তা আটাশে সেপ্টেম্বরের এবং প্রচুর বেশি টাকার।
      বাবাই নতুন যে প্রজেক্ট পেয়েছে সেটা Bank of America-র। ওর চাকরি জীবনে যতগুলো প্রজেক্টে কাজ করেছে এটা সবচেয়ে কঠিন। নতুন করে পড়াশোনা করে শিখতে হচ্ছে ব্যাঙ্কের কাজকর্মের ধরণ। তার উপরে আছে ওর নিজের  কোম্পানি Deloitte- এর কাজকর্ম। সকাল সাড়ে  ছটা থেকে call শুরু হচ্ছে বাড়িতে। তারপর সাড়ে আটটায় অফিসে পৌঁছেই একের পর এক মীটিং। কখনও কখনও একটা মীটিং-এর উপর অন্য একটা মীটিং চেপে বসছে। তারপর সন্ধে সাতটায় বাড়ি ফিরে একটু বিশ্রাম করতে না করতেই আবার শুরু হয়ে যাচ্ছে call. রাত্রি আটটা সাড়ে আটটা থেকে এগারো-বারোটা পর্যন্ত। একদিন তো রাত্রি দুটো পর্যন্ত চলেছে call. আবার পরদিন সকাল ছটা থেকে call. ফলে ঘুম, খাওয়া-দাওয়া প্রায় হচ্ছেই না সময়াভাবে। তার ফলে শরীর-মনও বিগড়ে যাচ্ছে। অথচ উপায় নেই। প্রথম দিকে এই চাপ নিতেই হবে। সোহেল, ওর P.M.  ওকে বলেছিল এই প্রজেক্টের কথা। বলেছিল --এখানে তো আসছিস, দেখবি কী টাফ!'
     
      কয়েকদিন যেতে না যেতেই বাবাই জানতে পারলো যে, ওই প্রজেক্টে যারা আছে তাদের, বিশেষত ভারতীয়দের পারিবারিক জীবন বলে প্রায় কিছুই নেই। চার-পাঁচ জন বিবাহ-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে অফিসের কাজের চাপে বা পরিবারকে সময় না দিতে পারার কারণে। তবে আমি মনে করি বাবাইয়ের ক্ষেত্রে অতোটা খারাপ কিছু ঘটবে না। প্রথম কয়েকদিন এমন প্রবল চাপ থাকবে। তারপর আস্তে আস্তে সবই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এটাই জীবনের ধর্ম। উত্থান-পতন, সুখ-দু:খ, আনন্দ-বিষাদ ইত্যাদি জীবনেরই অঙ্গ। অবিমিশ্র সুখ বা দু:খ বলে কিছু  হয় না।
      তবু  তো একদিক থেকে রক্ষা যে, এক বছরের মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে মাত্র দু'-আড়াই মাসের মধ্যে ভারতে ফিরতে হলো ন। এদিক দিয়ে বাবাই এবং আমরাও ভাগ্যশালী। কারণ, বাবাই ভারতে ফিরে গেলে আমাদের ফেরা  মুশকিল হতো। আমাদের বাধ্য হয়ে আরও দু-আড়াই মাস এখানে, মুনিয়াদের অ্যাপার্টমেন্টেই থেকে যেতে বাধ্য হতে হতো। কারণ, আমাদের ফেরার টিকিট সেই ডিসেম্বরের তিন তারিখে।






ক্রমশ... 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন