লেবেল

মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০

পার্থেনিয়ামের ইতিহাস(পর্ব- ৭)।। - শঙ্কর তালুকদার



   পার্থেনিয়ামের ইতিহাস(পর্ব- ৭)
                     - শঙ্কর তালুকদার 



   আজ  পার্থেনিয়াম আগাছাটিকে সাধারণের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার পাঠে ৭ম পর্ব পরিবেশন করছি!
এই আলেখ্যটির বিগত পর্ব গুলিতে পরিবেশ সচেতনতায় লক্ষ্যে এই বহিরাগত আগাছাটি ধ্বংশ করার উদ্দেশ্যে তাঁর বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে মাথায় রাখার মধ্যে মানুষের স্বাস্থ্যের   ও পরিবেশ তথা গৃহপালিত পশুদের বিভিন্ন ধরণের ক্ষতির সম্বন্ধে   জানতেই এই আলেখ্যটির মূল লক্ষ্যের সাথে উদ্ভিদটির কিছু গুনের কথাও উঠে এসেছিল;সেই সাথে এদের দমন ও নিয়ন্ত্রণে কি ধরণের প্রচেষ্টায় পরিবেশ সংরক্ষণের সঠিক পদক্ষেপটি এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে, সেই আলোতেই " পার্থেনিয়ামের ইতিহাসে"র এই  নিবন্ধের প্রাথমিক ভাবনায় যে রচনাটি লেখা হয়েছে  অঙ্কুরীশার পাতায় এই পর্যায়ে  ৭টি পর্বে সকলের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য এই ছিল আমার আপাত প্রচেষ্টা।আগামীতে উদ্ভিদ, কৃষি ও পরিবেশ বিজ্ঞানের বিষদ ভাবনা নিয়ে এই প্রসঙ্গটিকে আরো বিস্তারিত ভাবে আলোচনার জন্য ফিরে আসা পর্যন্ত এই পর্যায়ের  " পার্থেনিয়ামের ইতিহাস " আলেখ্যটির এটি শেষ পর্ব।


কী ভাবে পার্থেনিয়াম দমন করা যায়? 

পার্থেনিয়াম গাছে কেরোসিন তেল ছিটিয়ে দিলে গাছ দ্রুত মারা যায়। 




বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সাড়ে তিন লিটার জলে এক কেজি লবন ও এক লিটার কেরোসিন মিশিয়ে পার্থেনিয়াম গাছে স্প্রে করলে তিন দিনের মধ্যে ঐ গাছ শুকিয়ে যাবে ও একই সাথে বিষাক্ত জীবানু ধ্বংস হয়ে যাবে।

তবে এতে অনেক অসুবিধাও রয়েছে। পদ্ধতিটি ব্যয় সাপেক্ষ। আর কেরোসিন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়লে জল নষ্ট হতে পারে। তবে সহজ একটি ঘরোয়া উপায়ে পার্থেনিয়াম নিকেশ করা যায়। 



৪-৫ লিটার জলে এক কেজি নুন ভাল করে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ও পাতায় ছিটিয়ে দিয়ে এদের ধ্বংশ করাটাই সঠিক পথ বলে মনে করা হয় কারণ এর ফলে দু’দিনের মধ্যে এই গাছ একেবারে  মারা যায়। 
এছাড়া  ব্রোমাসিল, ডায়ইউরোন, টারবাসিল প্রতি হেক্টরে দেড় কেজি অথবা ডাইকুয়াট আধ কেজি ৫০০ লিটার জলে মিশিয়ে প্রয়োগ করলেও ভাল ফল হবে। 
বাস্তব ক্ষেত্রে সহজ প্রয়োগের জন্য প্রতি হেক্টরে দুই কেজি ২.৪ ডি সোডিয়াম লবণ অথবা এমসিপিএ ৪০০ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করেও পার্থেনিয়াম দমন সম্ভব।আগাছা পুড়িয়ে ফেলেও নষ্ট করা যেতে পারে। গাছগুলিকে কেটে গভীর গর্তে পুঁতে ফেলা যেতে পারে। কীটনাশক ব্যবহার করেও পার্থেনিয়াম ধ্বংস করা যেতে পারে। 





যদি চারা অবস্থায় গাছগুলিকে উপড়ে ফেলা যায় তাহলে বীজ ছড়ানোর সুযোগ পায় না গাছ। নানা ধরনের পাতাখেকো বা ঘাসখেকো পোকার মাধ্যমে পার্থেনিয়াম গাছকে দমন করা সম্ভব বলেও মনে করেন  বিশেষজ্ঞরা।

পার্থেনিয়াম দমনের সময়ে কিছু সাবধানতা নেওয়া দরকার। পার্থেনিয়াম গাছে কোনও ভাবেই হাত দেওয়া উচিত নয়। বাচ্চাদের এই গাছ থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন। পার্থেনিয়াম সাফাই অভিযানে অবশ্যই মুখোশ ও দস্তানা পরা জরুরি। এ ছাড়া ফুলহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরে সাফাই করা ভাল। গাছগুলি উপড়ে ফেলে কিছুদিন ফেলে রাখতে হয়। তারপর সেগুলি শুকনো হয়ে গেলে পুড়িয়ে ফেলা দরকার। পোড়ানোর সময় রেণু ছিটকে যাতে না আসতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। 
সাফাইয়ের পর জামাকাপড় ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সাফাই অভিযানের পরে স্নান করে বাড়িতে ঢোকা দরকার।



পার্থেনিয়াম উচ্ছেদের এই সব পদ্ধতি গুলিতে একাধিক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তবে সম্প্রতি একটি গবেষণায় পার্থেনিয়াম দমনের একটি ভাল দিক আবিষ্কার করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। 

 এই প্রসঙ্গে ভারত সরকারের জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের জাতীয় পরামর্শদাতা কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে  ‘‘পার্থেনিয়াম একটি বিষাক্ত আগাছা। এই গাছে ফুল ফোটার সঙ্গেই নষ্ট করে ফেললে এর ক্ষতিকর প্রভাব খুব বেশি ছড়াতে পারে না।’’ বাস্তব ক্ষেত্রে পার্থেনিয়াম রেণুর সূক্ষ্ম গঠন ও চেহারার বৈচিত্রে বাতাসে ভেসে থাকার মত ভাসমান বস্তুর মত প্রলম্বিত দেহ গঠন এই বীজগুলিকে বাতাসে ভর করে বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে সাহাজ্য করে।

এ গাছ দমন করা খুবই সমস্যার, তাই উপরোক্ত তথ্যগুলি জানার পর এই সকল সূত্রগুলি সহ সামগ্রিক সচেতনতা ও চেষ্টা নিয়মিত চালিয়ে পার্থেনিয়াম দমনের চেষ্টা চালালে এই ক্ষতিকারক উদ্ভিদটির প্রভূত বিস্তারে মানুষের সামগ্রিক ক্ষতি রোধ করা যেতে পারে !বিভিন্ন সক্রিয় ভাবনা ও পার্থেনিয়াম উৎখাতের সময় ঐ দমন প্রকৃয়ায় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা :
জৈবিক দমন প্রক্রিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হীন একটি ভালো ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিটি বাস্তবায়নে নানাধরণের পাতাখেকো বা ঘাসখেকো পোকার কৃত্রিম চাষের মাধ্যমে অনেক শিশুপোকা উৎপাদন করে পার্থেনিয়ামের জমিতে ছেড়ে দেবার মাধ্যমে পার্থেনিয়াম গাছকে দমন করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
অতএব এই পদ্ধতিতে দমনের জন্য পোঁকামাকড় বিশারদদের মধ্যে বিভিন্ন চরিত্রের জীবনবৃত্তান্তের চর্চার প্রয়োজন নিয়ে গবেষণামুলক কাজকর্ম চালু করা যেতে পারে।তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সকল সাধারণ মানুষকে নিজের পরিবেশ সম্পর্কে  দ্রুত স্বচেতন হয়ে উঠতে হবে। 
আমাদের অসচেতনার  সুযোগ নিয়েই পার্থেনিয়াম এত দ্রুত বংশবৃদ্ধি করছে ; আর এখনকার পরিস্থিতিতে যদি বৃহত্তর প্রচেষ্টায় সমাজের সকল স্তরের মানুষ সম্মিলিত ভাবে এই সর্বনেশে আগাছিটিকে সামগ্রিক ভাবে নির্মূল করতে না এগিয়ে আসার ব্যাপারে অবহেলা দেখায়, তাহলে অচীরেই একদিকে যেমন ক্রমশঃই আমাদের সমগ্র  সবুজ জীববৈচিত্রের ই নির্মূল হতে থাকবে, অন্যদিকে তেমন কৃষিজমি গুলি ক্রমশঃই বন্ধ্যা জমিতে পরিণত হয়ে প্রচন্ড খাদ্যাভাব দেখে দেবে। এর সাথে মানুষ ও গবাদি পশুদের বিভিন্ন প্রকার রোগ  সামগ্রিক ভাবে মানব জীবনে ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।



আমার "পার্থেনিয়ামের ইতিহাস" আলেখ্যটির প্রথম দফার প্রচেষ্টা তাই পাঠক তথা সাধারণ মানুষের জন্য এমন ভাবেই পৌঁছোতে চাইছি, যেন পাঠকদের সাথে সাথে এই ভাবনার প্রচারটি সর্বসাধারণের কাছে তেমন ভাবেই দ্রুত পৌঁছে গিয়ে পরিবেশ রক্ষার তেমন ই একটা বার্তা হয়ে উঠে আসতে পারে।
আর আশা রাখছি, পরবর্তিতে আরো তথ্য ও আধুনিক গবেষণা সমৃদ্ধ নথিপত্র সহ "পার্থেনিয়ামের বর্তমান" নামক কোন আলেখ্য নিয়ে আপনাদের কাছে উপস্থিত হব !
আর আশা রাখব ততদিনে যেন আমাদের পরিবেশের প্রতিটি মানুষ ই এই বহিরাগত আগাছাটির দমনের ভাবনায় সমৃদ্ধ হয়ে, যার যার এলাকায় এটিকে দমনের প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসবেন !

(শেষ) 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন