লেবেল

সোমবার, ৮ জুন, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ


                             অশোককুমার লাটুয়া  


 অথচ অমৃতের পুত্রেরা 
       

শরীরকে নিয়ে গেছি আর একটা শরীরের সাথে
স্বর্গ - মর্ত্য - রসাতলে
মানুষ যা চায় সংকলিত অনুভবে
সেই নরম চামড়ার উৎসবে।
কেটে গেছে দীর্ঘদিন খনিজ সম্পদ উত্তোলনে
অথবা শস্যের উৎপাদনে।
বীতকাম তবু হলোনা শরীর অমৃতের মতন।
হৃদয়ে মেখেছি দিনরাত
কত আলো-জল-কাদা।
তবু এ হৃদয়
পদ্ম হলোনা এখনো।

আসলে মানুষ বারোমাস
শরীরের ঘামে শরীরের ক'রে গেছে চাষ। লবনাক্ত আকাঙ্খা ঘেঁটে
যৌনতার সমুদ্রে মগ্ন মানুষ
রয়ে গেছে শরীরের ক্রীতদাস।
কামনায় এখনো লাগেনি তাদের বিকেলের অবসাদ।

হৃদয় খুঁজেছে মানুষ নিজেদের বন্ধ জানালায়।
হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যুগলবন্দী করেনি আলাপ।
হৃদয়কে করেনি বহমান গানের আকাশ।
মানুষের হৃদয়ের পুঁজি শুধু
নিজের পাতে ঝোল টানা
গণিতের খুঁটিনাটি হিসেবি স্বভাব।
তাইতো হৃদয়
           পদ্ম হলোনা এখনো।





বড় বেশী আপেক্ষিক সময়  
       

পৃথিবীতে শেষ ব'লে কোনো শেষ কথা নেই।
কেননা তাহলে শুরুটা কোথায় ?
এক আকাশ জিজ্ঞাসা ।
দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীরা মাথার চুল ছিঁড়ে ছিঁড়ে
খুঁজে ফিরুক এর মীমাংসা ।

শুরুটা তো শুরুতেই
শেষটা তো শেষেই ।
শুরু থেকে শেষ নাকি শেষ থেকে শুরু
কে কার জন্মের আগে
অথবা মৃত্যুর পরে !!!

ততদিন এ পৃথিবী এ সময়
এগিয়ে চলুক
আজ -কাল-পরশুর দিকে
অথবা পরশু-কাল-আজকের দিকে ।

বড় বেশী আপেক্ষিক চরিত্রে সময় ।
শেষ কিংবা শুরু
জন্ম এবং মৃত্যু ব'লে
কোনো কথা নেই।
অতএব তোমার ক্ষতি
তোমার লাভ ব'লে কিছু নেই।
শূন্য থেকে শূন্যে
গন্তব্য একটাই
স্থিতি ব'লে কিছু নেই ।
আমাদের হাতে
বড় বেশী আপেক্ষিক সময় ।




সিকন্দর করো না মন্তব্য 
     

বুকের ভিতরে শব্দনদী
দুরন্ত উৎসাহী স্রোত।
তবু ঠোঁটে তোমার নিষেধের সেলাই
অথচ মহব্বত উন্মুখ জন্নত।
আনারকলি পাখির ঠোঁটে
ধানজ্যোৎস্নার আয়নাবিকেল,
নক্সাকাটা আঙুলগুলি
অপেক্ষায় বোনে স্বপ্নসকাল
প্রতিশ্রুতির সম্ভাবনা।

ভেসে যায় মঙ্গলকাব্যে বেহুলার মান্দাস স্বর্গের দিকে
সাথে নিয়ে লখিন্দরের কঙ্কাল
আশাতীত ভবিষ্যতে নূপুরের ব্যাঞ্জনায়।

এমনই শব্দনদী দুরন্ত প্রবাহ
এমনই নিষেধের বেড়াজাল
দিবারাত্রির উজানের কাব্য।
তবু ভেসে যাওয়া
তবু হেঁটে যাওয়া
উচ্ছিষ্ট মানুষের পথ উদ্বৃত্ত গন্তব্য।
জন্নত - ই আজম ইয়ে মহব্বত
সিকন্দর! করো না কোনো মন্তব্য।




রংপাখিরা বসেছে শোকসভায়
       

ওদের হাত ধ'রে তুলে নিজেদের পায়ে দাঁড় করিয়ে দেবার কেউ নেই।
মুখ থুবড়ে পড়া
বিষন্ন সবুজ গাছেদের লাশ ঘিরে
মনখারাপ রং পাখিদের শোকসভা বসেছে
স্বজন হারানো বেদনায়।
শুঁয়োপোকা, প্রজাপতি,
মাকড়সা, মৌমাছি
আর ঘাসফড়িংয়েরা মুখ লুকিয়েছে কোথাও
অবাধ্য কান্নায়।
হায় !
অথচ তুমি খুঁজেছো প্রেম
কমনীয় নারীদের সাথে রমনীয় সাক্ষাতে।
তাও আবার হৃদয়ের শাখাপ্রশাখায় নয়
খুঁজেছো তুমি তাদের শরীরের আনাচে-কানাচে।
তুমি খুঁজেছো প্রেম
নরম ঠোঁটের নদী ছুঁয়ে উষ্ণ বুকের উপত্যকায়,
নাভির সীমানা পেরিয়ে
উরু আর জঙ্ঘায়,
সুগভীর গোপন প্রদেশে
তৃণভূমির বিছানায়।

হায়! তুমি আর তুমি নেই।
প্রিয়জন, প্রয়োজন আর প্রজননের পিন্ডি চটকে
তুমি আজ প্রস্তুত
বসেছো অগ্রদানীর প্রধান ভূমিকায়।





হাত পেতে দাঁড়াতে পারি
       

আমার পৃথিবী ভালোবাসার উর্বর জমি।
এমন জমিতে দাঁড়িয়ে
ক্ষুধা আর তৃষ্ণাকে
দূরপাল্লার গন্তব্যে যেকোনো স্টেশনে হাত নেড়ে তুলে দিতে পারি
স্বচ্ছ চোখের আশ্বাসে।
প্রয়োজনে আমি ছেঁড়া-খোড়া ভিখারির মতো
হাত পেতে দাঁড়াতে পারি
সহজ মানুষের দরজায়
দু 'একমুঠো কবিতার জন্যে
আকাঙ্ক্ষিত স্বস্তির বাতাসে।

মানুষ আমার কাছে গাছের মতন সবুজ আশ্রয়।
মানুষীরা অনুভূতির নরম নদী
আর শিশুরা নিষ্পাপ ঈশ্বর।
এমন জমিতে দাঁড়িয়ে সহজাত সংগতিতে
আমরণ আমি হতে পারি
দু'এক পশলা আলোর অভ্যাস।
রূঢ় চোখে ফিরিয়ে দিওনা আমাকে
বৃষ্টিহীন ফেরারি মেঘের মতন।
সুজাতার পরমান্নের বদলে
আমাকে দু'একমুঠো কবিতা ভিক্ষা দাও
মাটি পৃথিবীর
মানবজন্মের ঘরে।




প্রকাশিত গদ্য ও পদ্য পাঠান
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com       



1 টি মন্তব্য:

  1. অসাধারণ! প্রতিটি কবিতাই গভীর অনুভবে আদৃত। সম্মানীয় কবিবর কে অশেষ ধন্যবাদ ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এমন সুন্দর কবিতা উপহার দেওয়ার জন্য। শুভ রাত্রি।

    উত্তরমুছুন