।। প্রতিদিন বিভাগ।।
।। জুন সংখ্যা।।
বিষয় - গল্প ( ৪০০ শব্দের মধ্যে)
উইকএন্ড ট্যুর
সমাজ বসু
সেদিন সকাল থেকে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। আকাশ মেঘলা। বাইরে খুব একটা হাওয়া নেই। এরইমধ্যে চার বন্ধু ফোনে ঠিক করলাম আজ রাতের ট্রেনেই চাঁদিপুরে যাবো। যে যার অফিসের কাজ সেরে রাতের পুরী এক্সপ্রেস ধরে নেবো। বালাসোর থেকে সড়কে ঘন্টাখানেকের পথ। এই একটা ছোট্ট দিন দুয়েকের ট্যুরে সবাই যে যার কনসেন্ট জানিয়ে দিলাম।
রজত,সুময় আর দীপক বিবাহিত। ওদের পারিবারিক ঝুটঝামেলা থাকা সত্ত্বেও দিব্যি রাজি হয়ে গেল। আমি তো ভাবতেই পারছি না,যে ওরা মাত্র এক ঘন্টার নোটিশে গিন্নিদের রিলিজ অর্ডার পেলো কি করে? ওদের ক্যারিশমার বাহবা দিতে হয়। আমি তো ঝাড়া হাত পা। আমার দিদির কানে যেই কথাটা তুলেছি, ব্যাস্ সঙ্গে সঙ্গে দিদি নিজেই আমার শার্ট-প্যান্ট,পেস্ট,টুথ ব্রাশ গোছাতে গোছাতেই অফিসের রান্নাও সেরে ফেলল।
--- দিদি, জামাইবাবুকে বলার সাহস পাইনি। অফিসে বেরিয়ে গেলে ঝোপ বুঝে কোপ মারিস। দেখিস, আমার এই যাওয়া নিয়ে তোর সঙ্গে যেন অশান্তি না হয়।
--- তুই একদম নিশ্চিন্তে থাক রে ভাই। এই বৃষ্টির মাঝে আমি কি আর তোর চাঁদিপুর ট্যুরের কথা বলব? এই উইকএন্ডটা ভাই এক বন্ধুর বাড়িতে কাটিয়ে আসবে বলতে হবে। আসলে তোর মানবদা তো তোকে নিজের ছেলের মতই ভালবাসে। যদি শোনে এই ওয়েদারে তুই চাঁদিপুরে যাচ্ছিস,তাহলে হুলুস্থুল বাঁধিয়ে ছাড়বে। তাই চাঁদিপুরের কথা ঘুণাক্ষরেও বলা যাবে না।
--- ঠিক আছে,সে তুই যা ভাল বুঝিস করবি। আমি অফিসে তো বেরিয়ে যাই।
অফিসে ডেস্কে সবে ল্যাপটপ খুলে কফিতে চুমুক দিয়েছি,এমডির আদেশ নিয়ে রতনদা হাজির। অগত্যা কফির কাপ রেখে সোজা এমডির চেম্বারে।
--- মিঃ সৌগত আজ সন্ধের ফ্লাইটে আমাকে দিল্লিতে যেতে হচ্ছে। ফরেন ডেলিগেটরা আসছেন। একটা মিটিং আছে। তাই এই উইকএন্ডটা তোমাকে অফিসে থাকতে হবে। রুল অনুযায়ী অবশ্যই স্পেশাল বেনিফিট থাকবে। সোমবার বিকেলের মধ্যেই এপ্রিল মাসের ব্যালেন্সশিট রেডি রাখতে হবে। কাল একটু তাড়াতাড়িই অফিসে আসবে।
এমডির কথায় ঘাড়টাকে পুরোপুরি হেলিয়ে চেম্বার থেকে কোনরকমে পায়ে পায়ে নিজের ডেস্ক অবধি এলাম।
ফোন খুলতেই রজত আর দীপকের চার চারটে মিসডকল আমার দুচোখে বেশ কয়েক মুঠো সর্ষেফুল ছড়িয়ে দিল।
দিদি ঘরে এসে পর্দাটা সরাতেই বুঝলাম আমার সকাল হয়েছে।
রাতে চাঁদিপুরে না যাওয়ার যন্ত্রণা মেখে শুয়েছি জেনে দিদি কিছু কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। দিদি বুঝতে পেরেছে আজ শনিবারও অফিসের মুখ দেখা কি বিড়ম্বনা! শুধু চায়ের কথা বলে বেরিয়ে গেল।
চাঁদিপুর রিসোর্টে চায়ের কাপ হাতে এইসময় ওরা তিনজন সমুদ্রের হাওয়া মাখতে মাখতে নিশ্চয়ই আমাকে এক হাত নিচ্ছে--- আমাদের কেমন নাচিয়ে দিয়ে নিজে দিব্যি কেটে পড়ল।
কিংবা হয়ত একজন এও বলছে,কপালটাই খারাপ।
--- আরে সৌগত,দেখো আজকের কাগজের প্রাইম লাইন। বালাসোরের কাছে পুরী এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত। বেশ কিছু আহতও হয়েছে। জামাইবাবু কথা শুনে চায়ের কাপ ফেলে ছুটে ঘরে গিয়ে ওদের তিনজনকে রিং করলাম। কিন্তু তিনজনের ফোনই সুইচড অফ।
আমি একা একাই আজ এই উইকএন্ডের যন্ত্রণা ভোগ করতে লাগলাম।
অজান্তেই হাত দুটো জড়ো হয়ে এলো তাঁর উদ্দেশে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন