লেবেল

বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২২

ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস ( পর্ব-৩) ।। ....এবং ইরাবতির প্রেম —গৌতম আচার্য।। Ankurisha। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 


ধারাবাহিক  প্রেমের উপন্যাস ( পর্ব-৩)


.
...এবং ইরাবতির প্রেম
গৌতম আচার্য


এক কথায় ইরাবতি প্রতি মূহুর্তে উদ্বেগে ফেলে দিচ্ছে সত্যেনকে। একদিন, দুই দিন করে সাত সাতটি দিন অতিক্রান্ত। ইরাবতি এখনও তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অনুমোদন করে নি।সত্যেন-ও কিছু বুঝতে পারছে না ইরাবতির ভাবগতিক এর।সত্যেন  আস্তে আস্তে এবার ইরাবতিকে মাইনাসের দলে ফেলে দিতে শুরু করেছে। মন থেকে 'ইরাবতি আকর্ষণ' একটু একটু করে ফিকে করে দেওয়ার মনস্থ করেছে। সে ভেবে নিয়েছে, "ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যরে লহ সহজে...কেউ বা তোমায় ভালোবাসে...কেউ বা বাসতে পারে না যে"।

কি হবে মনে রেখে তাকে যে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পর্যন্ত খুলে হয়তো দেখেনা? ব্যবসার কাজে মনোনিবেশ করেছে সত্যেন। এই সপ্তাহে তার উড়িষ্যা যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পরিবর্তিত মানসিক পরিস্থিতিতে সেটা হয়ে ওঠেনি। আজ অ্যাকাউন্ট্যান্টকে ডেকে আগামী মঙ্গলবার রাউরকেলা যাওয়ার টিকেট করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সে।কোম্পানীর সেলস্ ম্যানেজারকে ডেকে পাঠিয়ে তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ধুইয়ে দিয়েছে সেলস্ টার্গেটের ধারে কাছে না পৌঁছানোর জন্য। এক কথায় মনের দিক থেকে সত্যেন একেবারেই বিক্ষিপ্ত পরিস্থিতিতে পৌঁছে গিয়েছে।। কারণ অবশ্যই "ইরাবতি"। মাত্র এই কয় দিনেই কেমন যেন বদলে গিয়েছে সত্যেন।

রাউরকেলা হচ্ছে সত্যেন এর বেস্ শহর।যতো কাজ এই ট্যুরে, তার পঞ্চাশ ভাগ এখানেইএখান থেকে ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে ঝারসুগুদা হয়ে সেখান থেকে আরও যেতে হবে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার।তবেই দুই দিক ঘন জঙ্গলে ঘেরা অরন্য পথ পেরিয়ে পৌঁছাবে "ওড়িশা পাওয়ার জেনারেশন কর্পোরেশন" এ।ভারী চমৎকার ছোট্ট একটি জনপদ।মূলত এই কর্পোরেশনের লোকজন রাই বসবাস করেন।আর আছেন কিছু আদিবাসী মানুষজন।

এক সময় এই আদিবাসীদের হটিয়েই ঘন অরন্যের বুক চিরে চতুর্দিকে উঁচু পাঁচিল দিয়ে গড়ে তোলা হয় এই পাওয়ার জেনারেশন কর্পোরেশন- কে।এখনও চারিধারে ঘন জঙ্গলে যত্রতত্র হায়না, চিতাবাঘ আর হাতির দেখা মেলেকপালে থাকলে দেখা মেলে নীল গাই এর ও।সেই জঙ্গলের রূপ দেখতে দেখতে গাড়ির ভেতরই সত্যেনের মনটি মায়াবী হয়ে ওঠে।

একঝাঁক বুনো টিয়া একসঙ্গে পাড়ি জমিয়েছে নীল সাদা আকাশে। সাদা মেঘে ঢাকা আকাশ এই অংশে টিয়াপাখীর সবুজ রং এ প্রায় সবুজ হয়ে উঠেছে। সেই সজীবতা সত্যেনের চোখে আরাম এর পরশ ছোঁয়ালেও মনের গভীরতায় ইরাবতি ক্রমশই গাছের হলুদ পাতায় পরিনত হয়ে চলেছে।যে কোন মূহুর্তে সে ঝরে পড়তে পারে সত্যেন এর মন থেকে।

"ওড়িশা পাওয়ার জেনারেশন কর্পোরেশন" এর দৌলতে এখন এখানে জঙ্গলের বুক কেটে তৈরি হয়েছে পিচের রাস্তা।তেমন চওড়া না হলেও এই রাস্তায় অবলীলায় দুটি গাড়ী চলাচল করতে পারে।সমস্যা হয় যখন মাল বোঝাই ট্রাক ঢুকে আসে বা মাল ডেলিভারী করে যখন সেই ট্রাক ফেরত যায়।এই সময় গুলির কথা মাথায় রেখে মাঝে মাঝে দুদিকেই কিছুটা করে রাস্তা মূল রাস্তার থেকে একটু বেশি চওড়া করেই তৈরি করা হয়েছে।যাতে সেই পকেটে গাড়ি সাময়িক ঢুকে ট্রাক যাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যায়।

তাকে প্রতিসময়ে প্রাথমিক কথা বলতে হয় মিষ্টার সি এস দাশ এর সঙ্গে।তারপর জি এম সাহেব মিষ্টার শেট্টি।শেট্টি সাহেব ভীষণ ভালো মানুষ। তাঁর নাম করে দাশ সাহেব দুই পয়সা কামিয়ে নেন। সত্যেন এর সঙ্গে রফা হয়েছে, সত্যেন অর্ডার পাবেন-ই, তার বিনিময়ে দুই লক্ষ টাকা সে দেবে দাশ সাহেব কে। দাশ সাহেবের কথা মতো "ও জি এম সাহাব সে অ্যাকাউন্টস্ তক্ হর আদমী ছুপ্ ছুপ্ কে পইসা খাতা, ঔর স্রিফ্ দশ হাজার হাম্ লেকর বদনামী কা ভাগীদার হাম্ হোতে হ্যায়। লেকিন্ হাম মজবুর হ্যায়, আগার নেহি লে তো,সব মিল্ কে  হামারি পিছে পড় যায়েগী "।

সত্যেন মনে মনে হাসে আর প্রস্তুতি নেয় এবার লাঞ্চ করাতে হবে দাশ সাহেব কে। সেই লাঞ্চে একই সঙ্গে ইলিশ্ মাছ, খাসীর মাংস এবং সেখানকার সব থেকে দামী আইটেম্-- চিলি মাশরুম খাইয়ে বিশাল বিল মেটাতে হবে তাকে। সবথেকে মজা, শেষ পাতে টক্ দই আর রাঙতা জড়ানো মতি চূড়ও ছাড়বে না দাশ সাহেব।। তবে সবটাই, "কোলকাত্তা সে স্যার আয়া, বহুৎ বড়া আদমী, ঠিক সে খিলাও উনকো" শব্দ গুলি তার মুখে বারবার উচ্চারিত হবে।। আসলে এই অতি গভীর অঞ্চলের শিক্ষার আলো না পাওয়া গরীব গুর্বো মানুষ জন কোলকাতা নিয়ে স্বপ্ন দেখে।। তাঁদের কাছে কোলকাতা মানে রূপকথায় পড়া যে কোনও নগরীর থেকে কম কিছু নয়।

অফিসের বিভিন্ন দফতরে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা শেষ করে এবং নিজে না পান করলেও বেশ কয়েক প্যাকেট ফিল্টার. উইলস্ এর সদ্ব্যবহার করে এবার রাউরকেলার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো সত্যেন। আজ রাতে রাউরকেলায় রাত্রিবাস।কাল সকাল বেলা বেদব্যাস এ একটি ক্লায়েন্ট স্পঞ্জ  আয়রণ কোম্পানীর বস্ এর সঙ্গে দেখা করে এবং কালুঙ্গা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এস্টেট ভিজিট করে তবে রাতে ফেরার ট্রেনে  চাপা।

রাতের খাওয়া শেষ হয়েছে।এবার একটু মোবাইল নিয়ে বসা। নিত্যদিনের অভ্যাসে ফেসবুকে নিজের ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা বিভিন্ন ফেসবুক কবিদের পোস্ট করা লেখা গুলিতে কমেন্ট করা শুরু করলো সত্যেন। মজার এটাই, কারও লেখা,সে লেখা আদৌ কবিতা হোক বা না হোক.... দারুণ হয়েছে,  কেমন করে এ্যতো ভালো লেখো?... কি অসাধারণ লেখা... থেকে শুধুই মুগ্ধতা অথবা বাক রুদ্ধ হয়ে গেলাম পড়ে...সব লিখতে হয় তাকে।। ফেসবুকে সময় কাটানো বন্ধু। মিছিমিছি কেন শত্রুতা করা? এমনকী এমন-ও হয় যার লেখা এক লাইনের বেশি দুই লাইন পড়া যায় না, তাকেও না পড়েই অসাধারন লিখতে হয় মাঝে মাঝেই।

সবে চোখটিতে একটু ঘুম ঘুম এসেছে। সত্যেন তার টাইম লাইনে গুড নাইট পোস্ট করে দিয়েছে, ঠিক তখনই নোটিফিকেশান মেসেজ ঢুকলো, "ইরাবতি এ্যক্সেপ্পেড ইওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট"।মূহুর্তে সত্যেন যেন কেমন হয়ে গেলো। ঘুম মাথায় উঠলো। যাকে সে ভুলে যাবে বলে মনস্থির করে নিয়েছিলো, নতুন করে সেই- ই আলোড়ন তুললো সত্যেন এর মনের গভীরে। বিগলিত- উদ্বেলিত সত্যেন সোজা ঢুকে পড়লো ইরাবতি নামের মেসেঞ্জারে।

চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন