লেবেল

শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১

আজ থেকে শুরু হল —ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস ( প্রথম পর্ব) ।। আবীর গুপ্ত — মুখোশের আড়ালে।। Ankurisha ।।E.magazine ।Bengali poem in literature ।।

 





ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস ( প্রথম  পর্ব)

আবীর গুপ্ত




মুখোশের আড়ালে


দিল্লীর একটি ফোর স্টার হোটেল। সময়টা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ। তিনতলার রুম নম্বর ৩০৩। এই ঘরে একটা মিটিং চলছে। মিটিংয়ে উপস্থিত কলকাতার চার জন ব্যবসায়ী এবং দিল্লীর একজন ব্যবসায়ী। এই দিল্লীবাসী ব্যবসায়ীই মিটিংটা ডেকেছেন এবং কলকাতার ব্যবসায়ীদের নিজের খরচে এখানে ডেকে এনেছেন। প্রচন্ড ঠান্ডা, তাই প্রত্যেকের হাতেই হুইস্কির গ্লাস। দিল্লীর ব্যবসায়ী কোন রকম ভনিতা না করে মিটিং শুরু করে বললেন –

- একটা বিশেষ ধরনের ব্যবসার জন্য আপনাদের ডাকা হয়েছে। এতে আপনাদের ইনভেস্টমেন্ট নামমাত্র থাকবে। পুরো ইনভেস্টমেন্ট আমার। লাভ মাসে ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেলে কোটি কোটি টাকা। আপনারা কি এই ধরনের ব্যবসা করতে ইন্টারেস্টেড? 

একজন ব্যবসায়ী একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞাসা করলেন –

- কী ব্যবসা! যাতে ইনভেস্টমেন্ট নামমাত্র অথচ লাভ কোটি কোটি টাকা! কোনরকম মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত ব্যবসা নয়তো?

- ধরে নিন তাই। এবারে বলুন, আপনারা কি রাজি আছেন? যদি রাজি থাকেন তাহলে পুরোটা খুলে বলবো। 

কলকাতার ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে নিচু স্বরে কিছুক্ষণ আলোচনা করে নিলেন। একজন ব্যবসায়ী বাদে বাকিরা এই ব্যবসায় নামতে রাজি হলেন। তাঁরা সে কথা জানালেন দিল্লীর ব্যবসায়ীকে। যিনি রাজি নন, তিনি বললেন –

- আমার চোরাচালানের ব্যবসা আছে মানছি, কিন্তু মাদকদ্রব্য অত্যন্ত খতরনাক জিনিস। ওই ব্যবসায় নামতে মন থেকে সায় পাচ্ছি না। আপনি এ ব্যবসা থেকে আমার অব্যহতি দিন। 

উনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। দিল্লীর ব্যবসায়ী আবার মিটিং শুরু করলেন। বিজনেসের খুঁটিনাটি বর্ণনা করলেন। কলকাতার ব্যবসায়ীদের কী করনীয় তাও বললেন। কার ভাগে কত পারসেন্ট লাভের ভাগ পড়বে তাও জানালেন। অবশেষে, মিটিং শেষ হল। সবাই হাতে হাত মেলালেন। কোটি কোটি টাকা লাভের স্বপ্ন দেখতে দেখতে সবাই চলে গেলেন যার যার নিজেদের হোটেলের রুমে। অন্য একটা হোটেলে প্রত্যেকের নামে রুম বুক করা ছিল। শুধু যেই ব্যবসায়ী এই ব্যবসাতে নামতে রাজি হননি তিনি ঘরে ফেরার পর একটা ফোন পেলেন রিসেপশন থেকে। ওঁর সঙ্গে একজন দেখা করতে এসেছেন, নিচে রিসেপশনে অপেক্ষা করছেন। ব্যবসায়ী ভদ্রলোক নিচে নামলেন। একটি অল্প বয়সী ছেলে ওঁর অপেক্ষায় নিচে সোফায় বসে আছে। ওঁকে দেখে ছেলেটি বলল ওকে দিল্লীর ব্যবসায়ী পাঠিয়েছেন। একটা গিফ্ট ওঁকে দিতে বলেছেন। ছেলেটির হাতে একটা বড়ো গিফ্ট পেপারে মোড়া বাক্স। ব্যবসায়ী ভদ্রলোক গিফ্ট নিয়ে নিজের ঘরে গেলেন। গিফ্ট পেপার খুলে বাক্সের ঢাকনা খুলতেই প্রচন্ড বিস্ফোরণ হল, ভদ্রলোকের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। 

বিস্ফোরণের পর পুলিশ এসে তদন্ত শুরু করল। একটি ছেলে এসে ঘটনার আগে যে একটা প্যাকেট দিয়ে গিয়েছিল তা রিসেপশনিস্ট জানালেন। ছেলেটির ডেস্ক্রিপশনও দিল। মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফ, লম্বা চুল আর চোখে চশমা। পুলিশ বুঝতে পারল ছেলেটি ছদ্মবেশে ছিল। দাড়ি-গোঁফ আর লম্বা চুল ফলস্। চোখের চশমাটাও মেকি। ছেলেটির ছবি রিসেপশনিস্টের বর্ণনা অনুযায়ী আর্টিস্টকে দিয়ে আঁকানো হল। সেই ছবি নিয়ে পুলিশ তোলপাড় করলেও ছেলেটির হদিশ পেল না। একই সঙ্গে পুলিশ নিহত ব্যক্তিরও পরিচয় জানার চেষ্টা করছিল। হোটেল রেকর্ডে দেখা গেল মৃত ব্যক্তির নাম চন্দন রায়। হোটেলের নিয়ম অনুযায়ী নিহত ব্যক্তি অর্থাৎ চন্দন রায় হোটেলে চেক ইন এর সময় যে ভোটার কার্ড আই কার্ড হিসাবে জমা রেখেছিলেন পুলিশ তদন্ত করে দেখল সেটা ফলস্। হোটেলের রেজিস্টারে লেখা ছিল চন্দন রায় পুনে থেকে এসেছেন। পুনে থেকে আসা কোন ফ্লাইট বা ট্রেনের রিজার্ভেশনে চন্দন রায় নামটা পাওয়া গেল না। নাম পাওয়া গেল কলকাতা থেকে দিল্লীর একটি বেসরকারি ফ্লাইটে। যেদিন ঘটনাটি ঘটে সেদিন সকালে চন্দন রায় কলকাতা থেকে দিল্লী ওই ফ্লাইটে গিয়েছিলেন এবং সম্ভবত ফ্লাইটে চেক-ইন এর সময় এই ফলস্ ভোটার কার্ডই দেখিয়েছিলেন। ব্যাস, এই পর্যন্তই দিল্লী পুলিশ এগোতে পারল। এরপর ওঁরা কলকাতা পুলিশের সাহায্য চাইলেন। মৃত চন্দন রায়ের ছবি কলকাতা পুলিশকে পাঠানো হল। অনুরোধ করা হল মানুষটির সঠিক পরিচয় বার করার জন্য। কলকাতা পুলিশ তদন্ত শুরু করলো। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে অবশেষে পাওয়া গেল মানুষটির সঠিক পরিচয়। উনি একজন ব্যবসায়ী, নাম সুবিনয় ঘোষাল। বাড়ি যোধপুর পার্কে। ভদ্রলোকের ইমপোর্ট এক্সপোর্টের বিজনেস। এই বিজনেসের আড়ালে যে চোরাচালান করেন সেই তথ্যও তাঁরা পেলেন। সমস্ত তথ্য দিল্লী পুলিশকে জানিয়ে কলকাতা পুলিশ ফাইল বন্ধ করে দিল। 

দিল্লী পুলিশ এই তথ্য পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসল। একজন চোরাকারবারি দিল্লীতে ফলস্ পরিচয়ে কেন এসেছিলেন! তাঁকে খুন করা হল কেন! তাহলে কি দিল্লীতে কোন রকম অপরাধের ছক কষা হচ্ছে? ওঁরা তদন্ত চালিয়ে জানতে পারলেন ঘটনার দিন দুপুরে সুবিনয় ঘোষাল কোথাও একটা গিয়েছিলেন, তারপর একটু ডিস্টার্বড্ অবস্থায় ফেরত আসেন। কোথায় গিয়েছিলেন তা অবশ্য জানা গেল না। কারণ উনি রিসেপশনে ঘরের চাবি জমা দিয়ে বেরোলেও কোথায় যাচ্ছেন তা বলেন নি। এর বাইরে দিল্লী পুলিশ আর কোন তথ্য জোগাড় করতে পারল না। তদন্ত এখানেই থমকে গেল। দিল্লী পুলিশ কিছুদিন বাদে ফাইল বন্ধ করে দিল।






একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক যোধপুর পার্কের বাজারের সামনে নিজের গাড়ি পার্ক করলেন। যাঁর খোঁজে এসেছেন তার ফ্ল্যাট এখানেই, বাজারের উল্টোদিকে। একটা অ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে ঠিকানাটা বার করে মেলালেন, একই ঠিকানা। ঘড়ি দেখলেন, সবে সকাল সাড়ে সাতটা বাজে। রবিবার, তাই বাজারে যেমন ভিড় তেমনই উল্টোদিকের রাস্তাতেও অনেকেই পসরা সাজিয়ে বসেছে। উনি সেসব এড়িয়ে অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে পড়লেন। সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলেন দোতলায়। দোতলায় পাশাপাশি তিনটি ফ্ল্যাট। একটা ফ্ল্যাটের দরজায় নেম প্লেট লাগানো – “অনামিকা চৌধুরি, সত্য সন্ধানী”। ভদ্রলোক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেলের সুইচ টিপতে গিয়ে থমকে গেলেন। ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে “হু - হা –আঃ” নানারকম শব্দ ভেসে আসছে! ভয়ে ভয়ে বেল টিলেন। একটি অল্প বয়সী ২৩/২৪ বছরের আকর্ষণীয়া শর্টস পড়া মেয়ে দরজা খুলে জিজ্ঞাসা করল –

- কী ব্যাপার? কাকে চাই? 

ভদ্রলোক ইতস্তত করে জিজ্ঞাসা করলেন –

- ম্যাডাম, অনামিকা চৌধুরী কি আছেন? ওঁর সঙ্গে দরকার ছিল। 

- আমিই অনামিকা চৌধুরি। 

- আমাকে কলকাতা পুলিশের কমিশনার রনজয় সাহেব পাঠিয়েছেন। আসলে রনজয় আমার বিশেষ বন্ধু। 

- ও-কে, আপনাকে একটু বসতে হবে। আসলে এক্সেরসাইজ করছিলাম। এক্সেরসাইজ শেষ করে তারপর আপনার সঙ্গে কথা বলব। 

অনামিকা ভদ্রলোককে ড্রইংরুমে বসিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে পড়ল। যাবার সময় অবশ্য হরিকাকাকে ভদ্রলোককে চা দিতে বলে গেল। ঘরের দরজা বন্ধ করে অনামিকা প্র্যাকটিস চালিয়ে গেল। 

হরিকাকা অনামিকাকে ছোট্ট থেকে মানুষ করেছেন। নিজের সন্তানের মতোই স্নেহ করেন। বাবা-মাহীন এই মেয়েটির কোন কষ্ট সহ্য করতে পারেন না। অনামিকাও হরিকাকাকে কাজের লোক বলে ভাবে না। সংসারে হরি কাকা ছাড়া আর যে ওর কেউ নেই। হরিকাকা চা আর স্ন্যাকসের ট্রে-টা ভদ্রলোকের সামনে রেখে বলল –

- দাদাবাবু, দিদিমনির প্র্যাকটিস ঠিক আটটায় শেষ হবে। ততক্ষনে আপনি চা-টা খেয়ে নিন। 

ঠিক আটটার সময় প্র্যাকটিস শেষ করে একটা জিন্সের প্যান্ট আর টপ্ পড়ে ড্রইংরুমে ঢুকে সোফায় বসে ভদ্রলোককে বলল –

- এবারে আপনার কী সমস্যা খুলে বলুন। 

ভদ্রলোক একটু ভেবে নিয়ে বললেন –

- আমার নাম সম্বুদ্ধ ঘোষ। আমি সাদার্ন এভিনিউতে মেঘমল্লার অ্যাপার্টমেন্টে থাকি। আমার ফ্ল্যাটটা পাঁচ তলায়। আমার একটা সমস্যা নিয়ে আমার স্কুলের বন্ধু রনজয়ের কাছে গেছিলাম। রনজয় যেহেতু পুলিশ কমিশনার, তাই ভেবেছিলাম ও হয়তো এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে। ও সব শুনে আপনার সাহায্য নিতে বলল। তাই আসা, এখন আপনিই ভরসা। 

- আপনার সমস্যাটা কী? 

- খুলে বলছি সবটা। আমার একমাত্র ছেলে দেবাঞ্জন ক্লাস নাইনে পড়ে। কোলকাতার পার্কস্ট্রিটের একটি নামী বেসরকারি স্কুলের ছাত্র। পড়াশোনায় বেশ ভালো, টিচারদের প্রিয়। আমি কখনও স্কুলে টিচারদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ওঁরা ওর প্রশংসাই করেন। মাস তিন-চারেক ধরে ওর একটা অদ্ভুত নেশাগ্রস্ত ভাব আমার আর ওর মার নজরে আসে। দিন পনেরো আগে বুঝতে পারি ও কোন মাদকদ্রব্যের নেশা করছে। এইটুকু বাচ্চা ছেলে, ওকে আমরা যতটুকু হাত খরচা দিই তাতে সম্ভবত মাদক দ্রব্য কিনে নেশা করা বেশ কঠিন। আমরা ওকে অনেক বুঝিয়েছি, বকাঝকাও করেছি, কিন্তু কোনো ফল হয়নি। ও প্রতিদিনই স্কুলে যাচ্ছে আর স্কুল থেকে নেশা করে ফিরছে। আমার ছেলে একটু ইন্ট্রোভার্ট টাইপের। বেশি রাগারাগি করতে ভয় লাগে, যদি কোনকিছু করে বসে। এখন, আপনিই ভরসা। যা হয় একটা কিছু করে ওর এই নেশা করাটাকে বন্ধ করুন। 

- আপনি ছেলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বললেন, ও এ বিষয়ে কি বলছে? 

- ও তো যতবার জিজ্ঞাসা করেছি ততবারই বলেছে এ বিষয়ে কিছু জানে না। ও নাকি স্বজ্ঞানে কোন রকম নেশা করে না। `

- আপনি স্কুলের কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন? 

- ওদের প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি শুনে খুব চিন্তিত কারণ আমার মতো আরও কয়েকটি ছাত্রের বাবা-মাও নাকি একই সমস্যা নিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। 

- আপনার ছেলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা দরকার। আমি দেবাঞ্জনের সঙ্গে কথা বলতে চাই। আপনার আপত্তি আছে?

- না-না, আপত্তি থাকবে কেন! আমিই তো আপনার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি। 

- ঠিক আছে, আপনাদের অ্যাপার্টমেন্টটা আমি চিনি। আজ তো রবিবার, দেবাঞ্জন নিশ্চয়ই বাড়িতে আছে? 

- হ্যাঁ, আছে। 

- আমি তাহলে বিকালে, এই পাঁচটা নাগাদ যাব। ওকে বাড়িতে থাকতে বলবেন। 

ভদ্রলোক অনামিকার কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। অনামিকা একটু চিন্তিত মনে ড্রয়িংরুমে বসে রইল। তারপর, পুলিশ কমিশনার রনজয় দত্তকে ফোন করল। উনি ফোনটা ধরে হেসে বললেন –

- ছুটির দিনে সকালে ফোন! নতুন কেস? 

- হ্যাঁ। আপনার বন্ধু সম্বুদ্ধ ঘোষ এসেছিলেন। সব শুনলাম। আপনার কী বক্তব্য? 

- আমি ওর ছেলে দেবাঞ্জনকে চিনি। খুব ভালো ছেলে। বাজে সঙ্গে পড়ে নেশা ভাং করার ছেলে ও নয়। নিশ্চয়ই অন্য কোন ব্যাপার আছে। এ কারণেই তোমার কাছে পাঠিয়েছি। বিষয়টা এমনই, এ মুহূর্তে পুলিশের এ বিষয়ে কিছু করণীয় নেই। 

- আপনার কী ধারণা, এর পিছনে কোন ড্রাগ রেকেট কাজ করছে? 

- করতে পারে। যদি সেরকম কোন রেকেটের সন্ধান পাও তাহলে জানবে তোমার পিছনে পুলিশ আছে। সেক্ষেত্রে, আমার তরফ থেকে সব রকমের সাহায্য পাবে। আসলে বিষয়টা এত সেনসিটিভ, ছেলেটা একটু অন্যরকম বলেই ভয়ের। বেশি চাপাচাপি করলে যদি সুইসাইড করে বসে? তুমিই পারবে ওর সঙ্গে গল্পগুজব করে কথার মারপ্যাঁচে আসল সত্যটা উদ্ধার করতে। ও-কে, বেস্ট অফ লাক। 

উনি ফোনটা কেটে দিলেন। অনামিকা ব্রেকফাস্ট সেরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। গ্যারেজ থেকে ওর অল্টো ৮০০টা বার করল। ও নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে গাড়ি চালিয়ে চলে গেল লেক থানায়। ওসি সুধাময়বাবুকে থানাতে পেয়ে গেল। সুধাময়বাবু ওর শুধু পরিচিতই নয়, উনি ওকে বেশ স্নেহ করেন। ওকে দেখেই হেসে বললেন –

- এ –কী! এত সকালে! এ যে মেঘ না চাইতেই জল! নতুন কোন কেস?

অনামিকা হেসে ওর উলটো দিকে বসে আদুরে গলায় বলল –

- কাকু, চা খাওয়াবেন? আপনার সঙ্গে গল্প করতে এলাম।

- চা অবশ্যই খাওয়াবো, তবে শুধু শুধু গল্প করতে আসার মেয়ে তো তুমি নও। কেসটা কী?

- ড্রাগ কারবারিদের সম্বন্ধে জানতে এলাম। এ মুহূর্তে কলকাতায় ওরা কিভাবে ড্রাগ সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে? পুলিশের কাছে নিশ্চয়ই এর সম্বন্ধে কিছু ইনফরমেশন আছে। সেটা জানতেই আসা। তার সঙ্গে আপনার সঙ্গে গল্প করা। আমার এই ইনফর্মেশনগুলো দরকার। আপনার কথা মনে পড়ল, তাই চলে এলাম। 

চা খেতে খেতে কথা হচ্ছিল। সুধাময়বাবু ড্রাগ রেকেট সম্বন্ধে যতটুকু জানেন তা বলছিলেন, অনামিকা মন দিয়ে শুনছিল। সুধাময়বাবুর কথা অনুযায়ী মাদক দ্রব্য যেমন কোকেন, গাঁজা, চরস বা হেরোয়িন কলকাতা শহরে বেশ প্রচুর পরিমাণেই আসছে। কোথা থেকে আসছে, কীভাবে আসছে তা সঠিকভাবে এখনও জানা যায়নি। পুলিশের সন্দেহ এসব মাদকদ্রব্য সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে সুন্দরবন হয়ে আসছে অথবা নেপাল থেকে উত্তরবাংলা হয়ে কলকাতায় ঢুকছে। ঠিক কোথা দিয়ে আসছে তার সঠিক প্রমাণ এখনও পুলিশের হাতে আসেনি। দু'জায়গায় বর্ডারের কাছে বর্ডার পুলিশ মাদকদ্রব্য কিছু লোকের কাছে পেয়ে তা আটক করেছে। কিন্তু, এই আটক মাদকদ্রব্যের পরিমাণ এতই অল্প যে তার থেকে কিছুতেই বলা যাবে না যে ওই পথেই প্রচুর পরিমাণে মাদকদ্রব্য পশ্চিমবাংলায় ঢুকছে। মাসখানেক আগে একজন ক্রিমিনাল ধরা পড়ে। তার কাছে বেশ খানিকটা পরিমাণ কোকেন আর মারিজুয়ানা পাওয়া গিয়েছিল। তাকে জেরা করে পুলিশ এক অদ্ভুত তথ্য পায়। তার বক্তব্য অনুযায়ী এই মাদক দ্রব্য নাকি দিল্লি থেকে কলকাতায় এসেছে! লোকটি মিথ্যা কথা বলছে নাকি সত্যি কথা বলছে তা বোঝা যায় নি। আশ্চর্যের বিষয় হল লোকটি পুলিশ কাস্টডিতে থাকাকালীন সুইসাইড করে। সায়ানাইড বিষে তার মৃত্যু হয়। পুলিশের থেকে প্রেসকে বলা হয়েছিল সুইসাইড, কিন্তু পুলিশেরই একাংশের ধারণা ওকে খুন করা হয়েছিল। এই হল নাকি পুরো ঘটনা এর বাইরে আর কিছু জানা নেই বলে সুধাময়বাবু তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন।


চলবে...









এই ধারাবাহিক  রহস্য উপন্যাসটি প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহের  প্রথম  রবিবার   অঙ্কুরীশা -র  পাতায় প্রকাশিত হবে।আপনারা  পড়ুন ও  মতামত জানান।  


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন