ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব-২৪)
বিশ্বেশ্বর রায়
ফল ফলিয়েজ (Fall Foliage) বলে একটা ব্যাপার ঘটে এখানকার গাছে গাছে,পাতায় পাতায়। সেটা ঘটে অক্টোবরের দ্বিতীয়-তৃতীয় সপ্তাহ জুড়ে। পনেরো-বিশ দিনের মধ্যে ঘটে এই অপূর্ব ঘটনাটি। আমাদের দেশে শীতের মুখে অল্প কিছু সংখ্যক গাছের পাতা হলুদ বা লালচে হয়ে ঝরে যায়। তার অল্প দিন পরেই সেই সব গাছে নতুন পাতা গজায়। গাছে গাছে ফুল ফুটে ওঠে। এখানেও তদ্রূপ। প্রায় সব গাছের পাতা প্রথমে হলুদ, তারপর মেরুন শেষে প্রায় লালচে হয়ে ওঠে। তবে সব গাছের পাতা তত সুন্দর দেখায় না। ম্যাপল ট্রির পাতাগুলো এমনিতেই খুব সুন্দর,বাহারি। সেই গাছগুলোর পাতায় যখন রঙের খেলা চলে তখন তা এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা ঘটায়। রাস্তার দু'ধার জুড়ে অসংখ্য গাছে গাছে এই রঙের খেলা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। তবে তা মাত্র কয়েকদিনের জন্য। তারপর সব পাতা ঝরে গিয়ে গাছগুলো ন্যাড়া, বিসদৃশ হয়ে উঠবে। শীত এবং তুষারপাতের সঙ্গে লড়াই করার জন্য শক্তি সঞ্চয় করে। তারপর দীর্ঘ পাঁচ মাস পর গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়, ফুলে ফুলে ভরে ওঠে গাছের শাখাগুলি। এই দৃশ্য দেখার জন্য মানুষ মাইলের পর মাইল গাড়ি ছুটিয়ে যায়।
গোছগাছ প্রায় সম্পূর্ণ। আগামী কাল এই বন্দরের কাল শেষ হবে। যেতে হবে নতুন বন্দরে, নতুন অজানা দেশে। পরে দেখেছি এখানকার প্রতিটি শহর এবং জনপদ প্রায় একই রকম দেখতে,একই রকম সুন্দর। অপূর্ব মসৃণ ঝকঝকে তকতকে রাস্তাঘাট। সুদৃশ্য ছবির মতো বাড়িঘর, বাগান, গাছপালা, যানবাহন। ডাউনাউনগুলো দেখার মতো। সুউচ্চ অট্টালিকা আর ফ্লাইওভারের ছড়াছড়ি। অসংখ্য চওড়া চওড়া মসৃণ রাস্তা এদিক ওদিক ছুটে চলেছে। একটার উপর আর একটা, তার উপর আরও একটা। এখানকার রাস্তাগুলিও অবশ্য দ্রষ্টব্য। আগেও বলেছি। বার বার বলতে ইচ্ছে করে। অবশ্য শুধু রাস্তাই নয়, এখানকার সবকিছুই সুন্দর,পরিপাটি,পরিচ্ছন্ন।
' দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি, বেলা দ্বিপ্রহর'। ঠিক এগারোটায় ট্যাক্সি এসে গেল দুয়ারে। আগেই ফোন করে বলা ছিল। আমরাও প্রস্তুত হয়েই ছিলাম। কারণ, এখানে ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে রাখা মানে টাকা গোনা। মিটার চড়তেই থাকে। সাড়ে এগারোটায় ব্র্যাডলি এয়ারপোর্টে পৌঁছানো গেল। এখান থেকে আমরা Delta Airlines-এর ফ্লাইটে প্রথমে যাবো ডেট্রয়েট(Detroit)। ওখান থেকে ফ্লাইট বদলে শার্লট(Charlotte).
আমাদের বোর্ডিং পাস আগেই করানো ছিল। ফলে আমারা সোজা Security check-এর লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এদেশে আবার জুতোও খুলতে হয়। এমনকি ওভারকোট বা জ্যাকেট পরা থাকলে তাও। সবকিছু সেরে আমারা লাউঞ্জে গিয়ে বসলাম। তখন বারোটাও বাজেনি। সাড়ে বারোটায় ফ্লাইট ছাড়বে। বোর্ডিং শুরু হল ঠিক বারোটায়। ছত্রিশ হাজার ফুট উচ্চতায় ফ্লাইট উড়ে চলেছে। ভারত থেকে আসার সময় প্রায় সতেরো ঘন্টা ফ্লাইটে বসেও কানে বিশেষ কোনও অসুবিধা হয়নি; কিন্তু এই দু'ঘন্টার জার্নিতে কানে ভীষণ যন্ত্রণা হতে শুরু করল।পরের ফ্লাইট ডেট্রয়েট থেকে শার্লট। এখানেও প্রায় দু'ঘন্টার উড়ান। এখানেও কানের যন্ত্রণা তীব্র থেকে তীব্র হতে শুরু করলো। বিশেষত শেষ দশ-পনেরো মিনিট তো অসহ্য হয়ে উঠলো যন্ত্রণার মাত্রা। শার্লট এয়ারপোর্টে যখন পৌঁছালাম তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় ছটা ছুঁইছুঁই। বাইরে বেরিয়ে বাবাইকে ফোন করলাম। ও গাড়ি নিয়ে হাজির হল। Residence Inn Marriott-এ পৌঁছাতে মিনিট কুড়ি লাগলো। অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে দেখি রান্না করার প্রায় কোনকিছুই নেই। ফলে একটু ফ্রেশ হয়েই আবার বেরোতে হল। গন্তব্য Wal-Mart. মিনিট বারোর ড্রাইভ। চাল-ডাল, আলু-পেঁয়াজ, মাছ-মাংস, ফুলকপি-বাঁধাকপি, বেগুন-ঢ্যাঁড়স-শিমুল, কলা-আপেল-পাঁউরুটি, তেল-মশলা,নুন-চিনি ইত্যাদি প্রায় পনেরো দিনের রান্না-খাওয়ার যাবতীয় জিনিসপত্র কিনে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরতে ফিরতে রাত্রি প্রায় সাড়ে নটা। রাত্রের খাওয়ার ব্যবস্থা করা গেল অধিক রাত্রে। বাবাই তো রান্নাই করতো না প্রায়। রাত হলেও অসুবিধা নেই। আগামী দু'দিন বাবাইয়ের অফিস নেই। আর আমাদের তো অনন্ত অবসর।এই ম্যারিয়ট রেসিডেন্স ইন-এ আমরা আগামী মাসের কুড়ি তারিখ পর্যন্ত থাকবো। নতুন কোনও Project-এ নতুন কোনও জায়গায় গেলেই Deloitte-এর সঙ্গে Tie-up এই Mariott-এ এক মাস থাকতে পারে employee-রা। বাবাইও সেই সুবাদে এখানে এক মাস থাকবে। ফলত: আমরাও। এখানে এই এক মাস বাস-কালে ওকে নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্টে খুঁজে নিতে হবে। সেপ্টম্বর একুশ থেকে অক্টোবরের কুড়ি পর্যন্ত মেয়াদ। বাবাইয়ের ইচ্ছা পুরো অক্টোবরটা এখানে কাটিয়ে পয়লা নভেম্বর থেকে নতুন অ্যাপার্টমেন্টে যায়। তাহলে মাসের মাঝখান থেকে ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্টে যেতে হবে না।
এই Mariott Residence Inn-এ অনেক সুবিধা। রান্নার ব্যবস্থা তো আছেই। আছে বিশাল ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ, চার বার্নারের বৈদ্যুতিক ওভেন, কফি মেকার, পোস্টার, মোটামুটি প্রয়োজনীয় বাসনপত্র, ডিসেম্বর ওয়াসার, গ্রিলার ইত্যাদি আধুনিক রান্নাঘরের যাবতীয় সরঞ্জাম। এর উপর আছে প্রতিদিন ফ্রি ব্রেকফাস্ট এবং সোম থেকে বুধবার পর্যন্ত ফ্রি ডিনার। এছাড়াও ফাইভস্টার রিসর্ট বা হোটেলের অন্যান্য সুবিধা। অতএব আশা করা যায় মাসখানেক বেশ ভালোই কাটবে।
ক্রমশ...
আরও পড়ুন👇🏾👇🏾
*প্রেমের কবিতা পর্ব-৩৭*
*আজকের কবি*
সুধাংশুরঞ্জন সাহা ❤️
https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/09/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন