সম্পাদকীয় ✍🏼✍🏾
করোনার অতিমারির সাথে সাথে আমফানের পরে ইয়াসের আক্রমণ— এই সব সারাক্ষণ আমাদের মৃত্যুর হিমশীতল আতঙ্ক নিয়ে সহবাস! বিশ্বজুড়েই মানুষের মৃত্যুর যেন মিছিল চলছে! প্রায় প্রতিদিনই চেনাজানা মানুষ শুধু নয় প্রিয় মানুষ জনের মৃত্যু আমাদের দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে! বেঁচে থাকার আনন্দটাই জীবন থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে! আজ চারধারে বন্যার্তদের হাহাকার — এই সংকটময় সময় আমাদেরকে গভীরতর অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে! এই সংকটের শেষ কোথায় তা আমাদের জানা নেই বলে কিছুতেই আমরা সুস্থির হতে পারছি না!“পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন”।এরকম অস্থির, জটিল এবং হতাশাময় সময়ে আমরা যাঁরা অক্ষর সাধনায় নিমজ্জিত,তাঁরা ও এর থেকে রেহাই পাইনি। তবুও তার মধ্য দিয়ে তাঁরা অঙ্কুরীশা-য় কবিতায় সাজিয়ে তুলেছেন সময়ের এক অনন্য রূপে। তাই তাঁদের কবিতার ডালি নিয়ে অঙ্কুরীশা-য় ' বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল' সংখ্যার আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে সবাইকে স্বাগত জানাই।
"বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল" কবিতা সংখ্যা
কলমে-
আরণ্যক বসু
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
গৌতম হাজরা
সৌমিত বসু
রবীন বসু
রবিন বণিক
সঞ্জীব দে
দুর্গাদাস মিদ্যা
সুধাংশুরঞ্জন সাহা
মঙ্গল প্রসাদ মাইতি
ডঃ রমলা মুখার্জি
ফটিক চৌধুরী
দীপক বেরা
অশোককুমার লাটুয়া
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
রঞ্জন ভট্টাচার্য
অমিত কাশ্যপ
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
দুরন্ত বিজলী
অশোক রায়
স্বপন কুমার রায়
জগদীশ মণ্ডল
জয়শ্রী সরকার
দীনেশ সরকার
রাজেশ কান্তি দাশ
সামসুজ জামান
ভবানী প্রসাদ দাশগুপ্ত
নন্দিনী মান্না
মালা ঘোষ মিত্র
মহাজিস মন্ডল
হামিদুল ইসলাম
সেন্টু রঞ্জন চক্রবর্তী
সুব্রত চৌধুরী
শুভঙ্কর ঘোষ
শুক্লা রাণী দাস
মোঃ ইজাজ আহামেদ
শেখ সিরাজ
রাসমণি ব্যানার্জি
উজ্জ্বল ঘোষ
বিমল মণ্ডল
ঋতুর নীলদিগন্ত
আরণ্যক বসু
( "দিল আজ খুশিসে পাগল হ্যায় ....
অ্যায় জানে ওয়াফা তুম খুব মিলে....
দিল কিঁউ না বনে পাগল...")
ঠিক যেখান থেকে বৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ের আঁচল ওড়ানো শুরু হয়, মেঘবিকেলের অবিশ্বাস্য হাতছানিতে...
ঠিক যেখানে বিম্বিত রোমাঞ্চে নীলদিগন্ত এসে, চুপ করে অপেক্ষা করে--ঋতু নামের এক কবিতার নারীর পায়ের আওয়াজ শুনবে বলে...
ঠিক যেখানে প্রথম বৃষ্টির সোঁদা গন্ধে, অসহায় বোধের বেদনায়, নির্বাণহীন মরণ
নতজানু ক্ষমা চায়--উন্মুখ জীবনের কুঁড়ি ও সংলাপের কাছে...
ঠিক সেখানেই ,স্বপ্ন-অবাক উতলা উত্তরীয়ের কাছে, একরাশ উচ্ছ্বাস ও মৃদু প্রগলভতার
লুটোপুটিতে মেতেছে-- আগামী বর্ষণের মেঘরঙ চূর্ণি ওড়ানো ঋতুর আশ্চর্য রঙিন চুড়িদার, আর, ছিমছাম সাইকেলের রাঙা টুকটুক লাজুক সাজ...
যেন, কাশ্মীর কি কলি দুলছে,দুলছে....
রফির পাগল করা বৃষ্টিগানে...
সাওন কি ঘটা ছায়ি...
ইয়ে দেখকে দিল ঝুমা,
লে প্যার মে...
প্যার মে কী কবি ?
বলো বলো--উৎস ও গন্তব্যহীন এই যে আলোকবর্ষ ভালোবাসা, সেখানেই কি তোমার আমার সেই হিরণ্ময় জীবনের কুটোখড় বাবুইবাসা?
সেখানেই কি দিওয়ানা হুয়া বাদল !
সেখানেই কি সাওন কি ঘটা ছায়ে !
মিষ্টি নারী ঋতু আর লাজুক সাইকেলে, হেমন্তের গানে গানে--
অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো....
বৃষ্টিবিন্দু, ঋতুর কেয়ারলেস চুলের বেপরোয়া দামালপনা থেকে গড়িয়ে, লজ্জায় থরথর নাকের পাটা থেকে বুকের খাঁজে...
তারপর ,
কে জানে, কোন নিখোঁজের
নেই-ঠিকানায় মিলিয়ে গেলো !
জীবনের সব দড়িদড়া
ওলোট পালোট করে, বর্ষণ-পাগল মল্লারের ঋতু , তার নীলদিগন্তের খোলা বুকে মাথা রেখে ,
অভিমানী নাকছাবিতে কনেদেখা আলো লুটিয়ে বারবার জানতে চাইছে-- বলো না কবি, এই আবরণ ও আভরণ ক্ষয় করে,যদি আকাশ , তারপর, আকাশ পেরিয়ে মহাকাশ হতে নাও পারি ; তবু, এই রূপসী বাংলার কোথাও না কোথাও তো এক টুকরো আদিম জঙ্গল আজও আমাদের নিরিবিলি কোল দেবে বলে হয়তো ঘন ঘন প্রহর গুনছে!
ও কবি, আমি, তুমি আর আমার এই সাইকেল...
চলো না!
যাবে ?
বর্ষা
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
যারা বৃষ্টি ভালোবাসে
বর্ষাকালের বৃষ্টি তাদের কাছে কয়েক ফোঁটা
অকারণে বৃষ্টির পায়ে পা দিয়ে যারা ঝগড়া করে
একফোঁটাতেই তাদের বাড়ি ঘর সব ভেসে যায়
ঝগড়ায় ভালোবাসায়
নাচতে নাচতে বর্ষা আসে
সবাই হাসতে হাসতে
পাত পেড়ে গরম ভাত খায়
এখন আর কোনো মুখে
কোনো দাগ নেই
সব পাতা এক হয়ে যায়
মেঘের জানলায় মুখ রেখে
বর্ষা হাসে।
বৃষ্টিলেখা
গৌতম হাজরা
১.
বৃষ্টি প্রণীত দৃশ্য। সমস্তই
চেতনার এই ভাঙা ঘরে
রমণীয় রাঙতায় বিদ্যুৎ ঝলসায়
উদ্দেশ্য বিধেয় না জেনেই
খুন হয়ে মরে!
২.
চাঁদের কথা ভাবলেই
চন্দ্রবিন্দুর কথা চলে আসে
আকাশফেরতা চোখে দেখি
বৃষ্টিভেজা রাত একা ভাসে।
৩.
প্রতিটি বৃষ্টির পাশে
এক একরকমের সংশয়
সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই
দুরুদুরু বুকে লাগে ভয়!
সংসার তোমার-তাহার
সৌমিত বসু
তোমায় ভালোবাসি
এটা কোনো বড় কথা নয়।
চোখ খুললেই আকাশে তোমার ছবি
এটাও কিন্তু কোনো বড় কথা নয়।
পৃথিবীতে অনেকে তোমাকে চায়
এটা স্বাভাবিক।এটাও তেমন কিছু নয়।
তুমি যাকে ভালোবাসো সে আমার প্রিয়
সে তোমায় এঁকে রাখে নতুন নতুন নামে।তুমি হাসো।
আমি জেনো যেভাবেই পারি তোমাদের মিলিয়ে দেবোই
এটা কিন্তু সত্যিই অনেক অনেক বড় কথা।
মেঘলা মেয়ে
রবীন বসু
ওই যে দূরে একটা পুকুর পরে
দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা দিনের মেয়ে
কদম তার মাথায় ধরেছে ছাতা
বৃষ্টি এবার আসবে আঁধার বেয়ে।
মেয়ের চোখে অনেক দিনের ছায়া
কাঁপছে যেন করুণ দারুণ রাগে
এবার বর্ষা তাহার ভাসায় বুক
আমরা চেয়ে দেখব যে সোৎসাহে।
মরা বিকেল একটু হলেও হাসে
জলের মায়ায় ছবি অনেক আঁকে
মেঘলা মেয়ে শরম আড়াল করে
মা দেবে ফুঁক এবার সন্ধ্যার শাঁকে।
বৃষ্টি বিকেল দিনের অন্তে সাজছে
মেঘলা মেয়ের বুকে বর্ষা নাচছে।
বসবাস জুড়ে জল
রবিন বণিক
কে আমি, অযথা ফুলের বিরুদ্ধে কথা
অযথা উদ্ভিদ সেজে বিকল্প টেনে আনি
জলেরও কিছু কথা এড়িয়ে গিয়েছি এতকাল
কে আমি, বীজের মতো ছড়িয়ে দিয়েছি শুক্রাণু
হাওয়ারা উদ্ভিদ ভেবে শিকড়ে ঢালছে জল
এখনো শিখিনি আলিঙ্গন, এলোচুলে এতো কোলাহল
হে আমি– জলের বিরুদ্ধে এতো পতাকার কল
নির্বোধ সেজে আমারই দৈর্ঘ্য মাপছি জলে
শেকল পড়িয়ে পাতার পায়ে আমারই অস্তাচল
রহস্য
সঞ্জীব দে
নদীর বুকে তৃষ্ণা ভাবটা কাটে নি এখনো মনে মনে তপ্ত স্মৃতি আওড়ে চলে।
শুকনো ধুলো পেরিয়ে আসা হয় নি ওর আর আমার বাড়ি,
ঘাটে বাঁধা খেয়া স্বপ্ন আঁকে চোখে
পাড়ি দেবে এবার
দেখতে দেখতে মুখপানা কালো করে থাকে আকাশ
যেখানে পাতা ঝরা গাছেদের আলাপচারিতায় নিঃসঙ্গতা ধরা পরে।
সেখানে কে যেন জাদু কাঠির ছোঁয়ায়
জাগিয়ে তোলে রুনুঝুনু পা'য় মেঘমল্লারে!
ঠিক যেমন চুপটি করে এসে তুমি
পিছন থেকে সুবাসিত নরম হাতে
দুটো চোখ জাপটিয়ে ধরো,
আমি বুঝে ও না বোঝার ভানে থাকি রহস্য নিয়ে।
মেঘদূত
দুর্গাদাস মিদ্যা
মেঘদূত লিখবে বলে
মেঘে চড়ে
বৃষ্টি আনতে
গিয়েছিল কালিদাস।
তারপর আকাশ ভেঙে বৃষ্টি সে কি।
দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো
আর স্বপ্নের নায়িকা
চলে গেল পাশ দিয়ে
বিদ্যুতের রেখা হয়ে।
জ্বলে পুড়ে গেল দুচোখ
সেই শোকে অন্ধ হয়ে গেল কালিদাস। তা হোক
তবু লেখা হোক মেঘদূত
এই বর্ষায়।
প্রেম
সুধাংশুরঞ্জন সাহা
দিনের শেষে বাদল এল
তোমার কথা মনে পড়ল মিতা।
বোশেখ মাসে ঝড়ের বেশে
যেদিন তুমি দেখালে নয়া দিশা।
নিজের মতো উঠলে ভেসে
রাত আকাশে চিরকালীন তারা।
ভোরের বেলা নদীর কাছে
ফিরে এলাম দিলাম এসে সাড়া।
আকাশে মেঘ জমে উঠল
চারপাশটা ভূতের মতো কালো।
খুঁজছি আমি খুঁজছি একা
আকাশ থেকে বাতাস থেকে আলো।
ঠিক করেছি এবার থেকে
মুখোশ খুলে বদলে নেব ভাষা।
তোমার কাছে ফিরে আসব
নিয়ে আসব ভালোবাসার আশা।
এবার বলো বর্ষা শেষে
তোমায় আমি কোথায় পাব একা?
কোন দেশের কোন আকাশে
কিংবা কোন কদম ডালে সখা!
বর্ষা মানে
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি
বর্ষা মানেই আকাশজুড়ে বজ্র মেঘের খেলা
তপ্ত ধরার বুকে শুরু বৃষ্টি মুখর বেলা ।
বর্ষা মানেই বৃষ্টি ধারা একসা ভিজে সবই
মাঠঘাট সব জল থৈ থৈ রূপকথারই ছবি।
বর্ষা মানেই কড়কড় কড় বিজলীর ঝনঝনি
পুকুরপাড়ে, ঝিলের ধারে ভেকের কলধ্বনি।
বর্ষা মানেই পাড়ার শিশুর কাদায় মাখামাখি
হৈ-হুল্লোড়, ছোটাছুটি, খুশির ডাকাডাকি।
বর্ষা মানেই বাদলা বাতাস, কদম ফুলের ঘ্রাণ
হাসনুহানার গন্ধে মাতাল উদ্বেলিত প্রাণ।
বর্ষা মানেই গাছের পাতায় মিষ্টি সবুজ হাসি
টুপটাপ টুপ বৃষ্টির সুর পৃথিবী যায় ভাসি।
বর্ষা মানেই চাষির প্রাণে খুশির প্লাবন ছোটে
হাতে তাদের নতুন চারা আনন্দ ফুল ফোটে।
বর্ষা মানেই নদীর স্রোতে জোয়ার ডাকা বান
তরীখানা নিয়ে মাঝির কন্ঠে সারি গান।
বর্ষা মানেই হৃদয় তলে ছেলেবেলার কথা
কাগজ কেটে নৌকা বানাই স্মৃতির আকুলতা।
বর্ষা মানেই প্রিয়ার ছবি, ভেজা চোখের পাতা
মনের ঘরে কালিদাসের অমর কাব্য-গাথা।
বর্ষা মানেই সৃষ্টি নতুন স্বপ্ন হাজার দোলে
শ্বেতবলাকার মতো তারা সদাই ভেসে চলে।
বর্ষা মানেই বেঁচে থাকার মন্ত্র খুঁজে পাওয়া-
এই বৃষ্টি এই রোদ্দুর সুখ-দু:খের হাওয়া।
দুঁহু-মিলন
ডঃ রমলা মুখার্জী
বরষার ঘনধারা সবুজ বনানী,
জলপরি নেচে চলে বাজায়ে নূপুর
এলায়েছে মেঘকেশ, নিঝুম দুপুর।
বাজাইছে পরিবেশ বেতারে রাগিণী।
বৃক্ষকুল বড় সুখে করে কানাকানি,
বীজ হতে নবীনেরা মেলেছে আঁকুর,
দিঘিজল টলমল কাঁচের মুকুর,
মুকুলিত তরুরাজি সাজে রাজরাণী।
প্রিয়তম আসিয়াছে আমার দুয়ারে,
আনমনে ছিনু বসে লয়ে ফুলদলে।
স্রোতোস্বিনী নদী মোর প্লাবিল জোয়ারে।
বসাইল আমারে সে আপনার কোলে
বহুদিন পরে হল মিলন দোঁহারে।
রতিসুখ লাগি অঙ্গ শিহরণে দোলে।
প্রথম কদম ফুল
ফটিক চৌধুরী
এক.
বৈশাখ থেকে শ্রাবণ
গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা
মনজুড়ে রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথই ভরসা।
উনি ঈশ্বর সমতুল
প্রথম কদম ফুল।
দুই.
বর্ষণ মুখর দিনে
যে ফুলকে চিনে
নিতে হয় না ভুল।।
কিশোরীর ভীরু বুকে
জেগে থাকে সুখে
প্রথম কদম ফুল।।
তিন.
আমার হল সারা
তোমার হল শুরু
চারিদিকে গর্জায়
মেঘ,বুক দুরু দুরু।
মন হয় আকুল
প্রথম কদম ফুল।
বাদল দিনের গান
দীপক বেরা
"মন মোর মেঘের সঙ্গী
উড়ে চলে দিগদিগন্তের পানে"...
দূরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি
ঝরে পড়ে টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটা অবিরাম
মুগ্ধতা ছড়িয়ে ঠিক ভালোবাসার মত
অনুভূতিরা থমকে দাঁড়ায় স্মৃতির দরজায়
শূন্যতাকে অবলম্বন করে চিনে নিই মহাশূন্য
একটা নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে তল্লাশি আজও
ভেঙে পড়ে শ্যামগম্ভীর মেঘলা আকাশ
ময়নাপাড়ার মাঠে কালো মেয়ে কৃষ্ণকলি
আর, তার ঘনকালো হরিণ-চোখ
আমার চোখে মিলেমিশে একাকার
পাগলা হাওয়ার এই বাদল দিনে
তখন উড়ে যায় মন নিঃসীম শূন্যে
হে বৃষ্টি, এসো আলিঙ্গন করি---
মাহেন্দ্রক্ষণে প্রত্যাশার ডালিম সুখে
ভাসিয়ে দাও হৃদয়ের একূল ওকূল
গাই জীবনের গান, নবযৌবনের গান
"বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান,
আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান"..
একফোঁটা বৃষ্টির অক্ষরে
অশোককুমার লাটুয়া
প্রথম ঋতুর সবে তো দ্বিতীয় মাস।
শুকনো গদ্যের মতো কাঠফাটা শরীর এবং হৃদয় মরুভূমি
বৃষ্টির অক্ষরে খোঁজে মেঘের স্বরলিপি।
জল চেয়ে চেয়ে গাছ, মাটি, পাখি
গণতান্ত্রিক স্বপ্নে এবং সাংবিধানিক প্রেমে
ভিজে যেতে চায় সরস সজলে
জীবনের গান গেয়ে।
একমুঠো আকাশ কবিতার মতো
আরও একবার পাঠাও মহাকবি তোমার কলমে
মিলনের মেঘদূত।
রামগিরি থেকে বহুদূরে
অলকাপুরীতে অপেক্ষায় আছি একফোঁটা বৃষ্টির অক্ষরে। বীজ বুনেছি শব্দের
চাতক বুকের ভিতরে। এবার শুধু ভিজে যেতে চাই
রিমঝিম ঝিম সেতারে
জয়জয়ন্তী আর মেঘমল্লারে।
আমার বৃষ্টিরা
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
বৃষ্টির জলে স্মৃতির ফসফরাস জ্বলে
কাল সারারাত পথ চলা
আঙ্গুলে আঙ্গুল
এক ছাতায় একাকার দুই হৃদয়
বৃষ্টির জলে স্মৃতির ফসফরাস জ্বলে
ফাঁকা মিনিবাসের পিছনের সিট
আবেশে বুঁদ দুই শরীর
কখন যেন আস্তে আস্তে গাছ হয়ে যায়
বৃষ্টির জলে স্মৃতির ফসফরাস জ্বালে
ঘন পাইন বনে
চুঁইয়ে পরা বৃষ্টির জল তরঙ্গ
পাহাড়ের বুকে চুমু খেয়ে মেঘ হয়ে যায়
বৃষ্টির জলে স্মৃতির ফসফরাস জ্বলে
মাধবীলতার ভেজা
শরীর নেভাতে গিয়ে
বিস্ফোরণের সলতেতে আগুন লাগায়
কাল সারারাত
স্মৃতির শরীর পুড়ে
সকাল চেয়ে দেখে
ছাই হয়ে পড়ে আছে আমার বর্তমান
এলে তুমি এলে
রঞ্জন ভট্টাচার্য
চৈত্রের অবসান...
ঘন মেঘে আঁধার হয়েছে মন
জানে না কেউ আপন কী পর
নিঝুম নিবিড় ঘন আচ্ছন্ন সন্ধ্যায়
বসে একা আশায় আশায়
এই বুঝি এলো ঝড়...
এই বুঝি এলো বৃষ্টি
দু'বাহু মেলে আজই রাতে আমার দুয়ার খুলে।
অপেক্ষায় থেকে থেকে শেষ হলো অবসান
তুমি এলে শত বাহু মেলে উন্মুক্ত উরসে
ভিজে ভিজে মদিরাচ্ছন্ন হৃদয় গহীনে
তুমি এলে তুমি এলে।
আমি আর বৃষ্টি
অমিত কাশ্যপ
হাতের ওপর বৃষ্টি এসে বসল
চারিপাশে এখন শুধু বৃষ্টি গন্ধ
আমার পাশে এক আশ্চর্য নীরবতা
মেঘের ব্যালকনিতে কারা যেন দাঁড়ায়
সকাল থেকেই মনটা কেমন ভার
ভেজা ঘ্রাণের চিঠি আসে দূরে
পায়ে পায়ে বেরিয়ে আসি মাঠে
মাঠের ওপর কদম গাছের সারি
বৃষ্টি বসে ছুঁয়ে থাকল হাত
আমি আর বৃষ্টি, বৃষ্টি ও আমি
কদম ফুল তুমি কিছু দেখলে
মাটি, তুমি দেখলে, বাদল দিন, তুমিও
কোন দূরে ভেসে আসে বর্ষা সংগীত
'বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান'
স্বরলিপি
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
শ্রাবণে ঝিমঝিম বারিপাত হলেই অহংকারী নদীতে
ইলিশের বাণ ডাকে না।তার মানে এটা ধরে নেবেন না
আমি খুব ইলিশভক্ত আর পচা বা নোনা খেতে খেতে
শেওলাবিলাসি।অথবা পান চিবুতে চিবুতে হাতে
একটা পদ্মার রুপোলি পাত ঝুলিয়ে গদাইলস্করি
না দেখালে আভিজাত্য নর্দমায় যাবে।
এখনতো সেলাই করে করে সম্পর্ক বাঁধার সময়
আলালের বাবু হতে সাধ সাধ্যের বাইরে স্রোতের সম্পর্ক
ব্যাঙের ছাতার মতো দুরন্ত ফুটে ওঠা আর শুকিয়ে যাওয়া।
ঝিমঝিম ক্লান্তির বিকেল বড়ো আগেই আসে
বৈঠকখানা জুড়ে আঁধার জমে খেলা জমেনা।
স্বরগুলো জাফরির ফাঁক দিয়ে উড়ে যায়...
বর্ষার বৃষ্টিকথা
দুরন্ত বিজলী
"মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে।।
...........................................
দূরের পানে মেলে আঁখি কেবল আমি চেয়ে থাকি,
পরান আমার কেঁদে বেড়ায় দুরন্ত বাতাসে। "
-রবীন্দ্রনাথ
বর্ষা মানে হৃদয়জলে
একূল ওকূল ভাসা,
বর্ষা এলে বৃষ্টিসুধা
প্রাণে ভরায় আশা।
বর্ষা মানে ঐ সুদূরে
চোখেরা যায় চলে,
দুঃখগুলো কত রকম
সুখের কথা বলে।
বর্ষা এলে এই পৃথিবী
সজীব সুখময়,
ঝুলবারান্দায় মনের ভেতর
প্রেমযমুনা বয়।
তোমাকে খুব মনে পড়ছে
বাইরে কী ধারাপাত!
লকডাউনে বন্দি ঘরে
সাথে রবীন্দ্রনাথ।
ফুল ফোটানো্র বাদল
অশোক রায়
ঘন কালো নবযৌবনা মেঘেদের দল
বায়বীয় নির্যাস শুষে রসভরা ফল
রওনা দিয়েছে সুদুর আরব সাগর হতে
মেঘ-ঝড়-বৃষ্টি-রোদ চক্র পার হয়ে।
জ্যৈষ্ঠের মাথায় কর্কশ নিদাঘের কনক ঝলক
ঝলসানো মন অবসাদ-ক্লিষ্ট এক মাইল-ফলক
বারান্দায় কবি ইজিচেয়ারে দৃষ্টি সুদুর
সহসা পাতার মর্মরে বেজে ওঠে বর্ষারানির নুপুর
সোঁদা গন্ধে ম ম পাগল হ্যাংলা বাতাস
নৃত্যে উণ্মাদ কল্লোলিনী ধায় বক্ষে ধরা আকাশ
পাখির মত বাচ্চাগুলো ধেই নাচে তা থই থৈ
কবি-মন উতরোল ঘন বর্ষায় ফোটে গানের খই ।।
বৃষ্টি পড়ে বৃষ্টি আসে
স্বপনকুমার রায়
বৃষ্টি পড়ে
আমবাগানে বৃষ্টি কচু পাতায়
লঙ্কা ক্ষেতে পুঁইমাচা আর আমার কালো ছাতায়।
বৃষ্টি আসে
পুবের থেকে আকাশ ঢাকে মেঘে
মেঘ গর গর মেঘ গর গর ডাকছে ভীষণ রেগে।
বৃষ্টি পড়ে
টিনের চালে বৃষ্টি ফাঁকা মাঠে
জলের নীচে তিনটে সিঁড়ি ডুবল পুকুর ঘাটে।
বৃষ্টি আসে
সবুজ ঘাসে ভর্তি ডোবা নালা
সন্ধ্যে হলে সোনা-ব্যাঙের গান গাইবার পালা।
বৃষ্টি পড়ে
ঝম-ঝমা-ঝম সরস সুধা ঢালো
ফলবে মাঠে সবুজ-সোনা মনে আশার আলো।
মেঘ জমেছে
জগদীশ মন্ডল
মেঘ জমেছে আকাশ জুড়ে
বৃষ্টি ঝরা গান,
টাপুর টুপুর সারা দুপুর
শীতল করে প্রাণ।
মাঝে মাঝে মেঘের ডাকে
চমকে ওঠে পিলে,
কদমফুল দুলিয়ে মাথা
বলছে কোথায় ছিলে।
বনের মাঝে নাচে ময়ূর
পুচ্ছ পাখা তুলে,
প্রজাপতি রঙিন ডানায়
আদর করে ফুলে।
পাকুড় গাছে একটি পাখি
ডাকছে চিঁহি সুরে,
মা বুঝি তার খাবার খোঁজে
গেছে অনেক দূরে!
আকাশ জুড়ে আলপনা দেয়
ধূসর মেঘের ছবি,
খাতার পাতায় তুলির টান
দিচ্ছে ভাবুক কবি।
শ্রাবনের ধারার মতো
জয়শ্রী সরকার
বৃষ্টি নামেতে দেখি যাদু মেঘ আছে
শ্রাবণের ধারা বেয়ে ওই আসে কাছে।
কাঠফাটা মাটি ছিল ভুখা এতদিন
শ্রাবণের জল খেয়ে নাচে ধিনা ধিন্!
কদমের ডালে বসে ওই সাদা বক
আপন খেয়ালে মেতে করে বক বক।
ময়ূরের নাচ দেখি পেখম তুলে ,
চাষীবউ মাঠে যায় শোক-তাপ ভুলে !
শ্রাবণের ধারা যেন মনে আনে সুখ
রবিঠাকুরের গানে ভরে ওঠে বুক।
গ্রীষ্মেরই দাবদাহ বনভূমি সয়
শ্রাবণধারাতে ওরা ঋতুমতী হয়!
ব্যাঙেদের সমবেত কন্ঠেরই ডাক
সুরে-তালে-ছন্দেতে লেগে যায় তাক।
গরীবের কুঁড়ে ঘরে নদী বয়ে যায়
পেটেতে আগুন জ্বলে দ্বিগুণ জ্বালায় !
রবিঠাকুরের লেখা ' সোনার তরী '
একা একা আনমনে শুধুই পড়ি ,
শ্রাবণের ধারা দেখে আজকের কবি
অক্ষর-তুলি দিয়ে এঁকে যায় ছবি!
শ্রাবনধারা ঝরে যখন
দীনেশ সরকার
শ্রাবনধারা ঝরে যখন
খুশিতে মন ভরে
কদম ফুলে গাছ ঢেকেছে
সুবাস ঝরে পড়ে ।
এমন দিনে কেমন করে
মনকে ঘরে রাখি
গগনতলে দুহাত তুলে
শুধুই বৃষ্টি মাখি ।
গাছগুলোও আমার মতো
খায় যে জলের আদর
আকাশ জুড়ে ভেসে বেড়ায়
বাদল মেঘের চাদর ।
গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠি
রবি কবির গান
কানায় কানায় মন ভরে যায়
সুধা ঢালে প্রাণ ।
আষাঢ়
রাজেশ কান্তি দাশ
পত্রে পত্রে লেগেছে বৃষ্টির ফোঁটা, সুশোভিত
পাতার সাথে খেলছে পাতা হর্ষে অবিরত।
হাওয়ার তালে দোলছে পত্র দোলকি দুলে
প্রকৃতি যেন দ্বার খুলেছে নব নয়ন মেলে।
নীল সঘন মেঘে আকাশটা গেছে ঢেকে
বৃষ্টি আসবে এখ্যুনি হয়ত ঝরে অশ্রু চোখে।
বৃষ্টি যখন পড়বে তলে টপটপাটপ করে
কাঁঠাল গাছের ঝরাপাতা বিষাদহীন উড়ে।
মালতী গাছে ফুটেছে সন্ধ্যে সৌরভের ফুল
ঝাঁকে ঝাঁকে প্রজাপতি খাচ্ছে তাতে দোল।
বরষার বাদলে ভরা মেঘলা হাওয়া বয়
প্রকৃতির অন্তর পুলকে যেন হেসে কথা কয়।
আষাঢ়ে ফুটেছে ফুল কদম গাছের শাখে
নীড়হারা পাখি বসে তাতে বর্ষার ছবি আঁকে।
বাদলের নামতা
সামসুজ জামান
চারিদিক ফুটিফাটা চারিদিক রুক্ষ
বর্ষা তখনই আসে মুছে দিতে দুঃখ।
অহরহ ধারাপাত, মাঠে-ঘাটে ভরা জল।
নদী-নালা ফুঁসে ওঠে শুধু রব কল কল।
কী যে মজা রিমঝিম সেই জলে ধারাস্নান।
মন জুড়ে বাদলের নামতার সুর-গান।
বাজ পড়ে কড় কড়, ঝলসায় বিদ্যুৎ।
আঁধারেতে চারপাশে গল্পের যত ভূত।
ব্রহ্মদত্যি আসে, আসে শাঁখচুন্নি।
গল্পেতে তেনারাই মান্যিগন্যি।
সোনায় সোহাগা হয় তার সাথে জোটে সাপ।
কেউটে, চন্দ্রবোড়া, শঙ্খচূড় উরেব্বাপ!
জানি বটে বন্যায় দু'চারটে ভাঙ্গে ঘর,
তবু বলি বর্ষা তুমি ঝরো ঝর ঝর।
বৃষ্টিতে ঝ'রে পড়ে তোমার আশীর্বাদ।
তাই বাঁচে ধরনী, মেটে যে মনের সাধ।
বর্ষাকাল
ভবানীপ্রসাদ দাশগুপ্ত
আষাঢ় মাসে থেমে থেমে
হালকা বৃষ্টি হয়,
শ্রাবন মাসে পুরো দমে
অঝোর ধারা বয়।
নদী নালা পুকুর ডোবায়
কানায় কানায় জল,
চারিদিকে যেদিক তাকায়
নামছে পানির ঢল।
প্রবল বেগে বাতাস আসে
সাগর কুলে ঢেউ,
বানের তোড়ে সবই ভাসে
রক্ষা পায় না কেউ।
ক্ষেতের ফসল জলে ডুবে
চাষার ক্ষতি হয়,
শ্রমিক মজুর বেকার সবে
ঘরে বসে রয়।
ঝড়ে ঘরের চালা উড়ে
উপড়ে পড়ে গাছ,
বনের পাখি মরে নীড়ে
বানে ভাসে মাছ।
এক মুঠো বৃষ্টি
নন্দিনী মান্না
সম্পূর্ণা প্রকৃতির বিচিত্র সবুজের টানে,
উদাসী মন ছুটে যায়, দিকশূন্যপুরের পানে।
রুক্ষ উষ্ণতার দাবদাহে দারুন তৃষার আর্তি,
চপলা বিদ্যুতের ঝিলিক হানে মেঘ- প্রকৃতি।
মেঘের ঠোঁটে স্নেহের পরশে নামে বৃষ্টি,
ভেজা কদম ফুলের শোভা- সুবাসের সৃষ্টি।
বাতায়ন-পাশে অমোঘ- নিরব বৃষ্টির মূর্ছনা,
অপরূপ সুরের কঙ্কনে, মেতেছে সুর- অর্চনা।
আদর মাখা ছন্দের ধারায়, উভয়ের অশেষ মিলন,
মৃদু- মন্দ হিমেল সমিরন, প্রাণে জাগায় শিহরণ।
খেলা
মালা ঘোষ মিত্র
বর্ষা নামলে ভীষণতর
একাকীত্ব নির্বাক করে
ভারী বর্ষনের হিসাব কি মেলে!
দীর্ঘতম বর্ষনের হাল্কা আভা...
এলোমেলো করে,
নৈঃশব্দ্যে...
ভালোবাসার গভীরতম মানুষ
সমুদ্রের গভীরতায় গভীরভাবে ভাবায়
চাঁদের আলোর আলেয়া
উন্মুক্ত করে
মৃদুগন্ধ...
মাঝসমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ে...
প্রস্ফুটিত মনকে
নিবিড় করে।
বর্ষা
মহাজিস মণ্ডল
বৃষ্টি বলি আমরা যাকে
কেউ বা বলে বর্ষা,
গ্ৰীষ্মকালে জুড়ায় পরাণ
সেই আমাদের ভরসা।
গল্প গানে কথায় কথায়
তার যে নানান চলা,
ছন্দ ছলে শব্দ বলে
হাজার ছলা কলা।
শূন্য ডালে সবুজ আনে
নতুন কচিপাতায়,
দহন মুছে হৃদয় ভরে
স্বপ্ন শত সাজায়।
বর্ষার জলের মতো ঈশ্বর
হামিদুল ইসলাম
হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি দিগন্ত নীলিমায়
দুরন্ত মেঘ ছায়া ফেলে জলে
দুপুরের ভাতঘুম
গুণে রাখি ক্রান্তিকাল
ঈশ্বর প্রতিদিন বর্ষার জল। জলের মতোন।
বিশ্বাসের ছায়ারা মাড়িয়ে চলে জল কাদা নুন
প্রশ্বাসে নিশ্বাসে পসরা সাজাই
মনের মানুষ
পড়ে থাকে বর্ষার জলে। ঠিক যেনো ঈশ্বর
ঠিক যেনো করবি ফুল।
এক হাতে বর্ষা আর এক হাতে বর্ষার জল
কথাগুলো মরেও স্মৃতি হয়ে জাগে
তৃষার্ত চিতল হরিণ
ছুঁয়ে দেখি জল জল জল
জলের ভেতরে বর্ষার জলের মতো ঈশ্বর।
নতজানু পৃথিবীর উৎসব
আমরা হেলায় বিকিকিনি করি বর্ষার জল
জলে ভাসে ঈশ্বর।
এসো
সেন্টু রঞ্জন চক্রবর্তী
এসো
বৃষ্টিতে ভিজি দুইজনে,
গায়ে মাখি কাদা মাটি
শিশুদের মতো করি খেলা,
কে বলে
বড় হয়ে গেছি অনেক ?
জানো?
মনটা আমার সব সময়
সবুজ শস্য শ্যামলা |
এসো
পূর্ণিমার আকাশ দেখি
দেখি পূর্ণিমার আলোয় তোমার অপরূপ,
কি করে ছড়ায় তোমার জ্যোতি
এসো
অন্তরে দুয়ে পোড়াই
গন্ধ বিধুর ধূপ |
এসো
কাদা মাটির গন্ধ শুকে
ভরি উতাল মনো প্রাণ,
এসো
এই বৃষ্টির জলে করি খেলা
করি স্নান |
বর্ষার ছড়া
সুব্রত চৌধুরী
একটি ছড়া টক ঝাল আর
একটি ছড়া মিষ্টি,
একটি ছড়া মেঘ গুড় গুড়
ইলশে গুঁড়ি বিষ্টি।
একটি ছড়া কদম ফুল আর
একটি ছড়া ব্যাঙের,
একটি ছড়া এক টানা সুর
ঘ্যাঙর, ঘ্যাঙর, ঘ্যাঙের।
একটি ছড়া থৈ থৈ জলে
শাপলা ফুলের মালা,
ময়ূর নাচে পেখম মেলে
রূপের ভরা ডালা।
একটি ছড়া বৃষ্টি জল আর
কাদা মাখা গায়ের,
দুষ্ট খোকা রুষ্ট হয় যে
বকা খায় যে মায়ের।
মেঘ-বৃষ্টির গপ্পো
শুভঙ্কর ঘোষ
এক যে ছিল মেঘ,
তার সঙ্গী ছিল বৃষ্টি;
মেঘ বৃষ্টির মিলমিশেতে,
এক গল্প হলো সৃষ্টি।
মেঘ কুমারের বাড়ির পাশেই,
বৃষ্টি মেয়ের বাড়ি;
এ ছাদ ও ছাদ উঁকি-ঝুঁকি,
দেখতে তাড়াতাড়ি।
জমজমাটি খুনসুটি হয়,
কখনো ঝগড়া-বিবাদ;
উদয় হয়ে সূয্যিমামা -
করেন সুপ্রভাত।
কখনও বা প্রেমকাননে
বৃষ্টি নেমে আসে,
সুজলা-সুফলা ধরনী দেখে;
মেঘ বৃষ্টি তে ভাসে।
মেঘ কুমারের হাতটি তখন,
বৃষ্টি মেয়ের হাতে;
শুভ পরিণয়ে ঝমঝমিয়ে
এক পশলার সাথে।।
মাছওয়ালা
শুক্লা রানী দাস
উষা হাসে বিহগের গানে
বসুমতী জাগে কলতানে
একে একে সাজে রণসাজে
বাকঁ কাঁধে চলে রণমাঝে
জীবন যুদ্ধে দলে দলে ৷
মাছ বেঘোরে মরে মরে৷
আসে দালালের ঘরে ঘরে৷
মাছ নিয়ে ডাকে ঘরে ঘরে৷
পথে পথে হাকে বারে বারে৷
মাছ রাখবেন দিদি মাছ,
রাখবেন দিদি ভাল মাছ৷
শীতের দাপট পথে ঘাটে,
ধারালো নখ আঁচড় কাটে ৷
খর রোদ ঝিকিমিকি করে ৷
মাছের কদর ঘরে ঘরে
জিভ ভিজে লালসার ঝড়ে ৷
তাদের সাথে
মোঃ ইজাজ আহামেদ
বর্ষা রানী অশ্রুসজল নয়নে মন ভারী করে এসেছে,
তার আগমনে আকাশের মনও ভারী হয়েই দুঃখেই থাকে,
মাঝে মাঝে মেঘ রোদ্দুর লুকোচুরি খেলে;
বর্ষারানীর সাথে আজ আকাশটা কান্না করে
মনটা হালকা করেছে বিকেলে;
সোনালী মিষ্টি রৌদ্র উঁকি মেরে চেয়ে আছে,
সাদা পোশাক পরিহিত মেঘবালিকারা হেসে বেড়াচ্ছে,
সাদা মেঘের ভেলা পাড়ি দিচ্ছে দিক-দিগন্তে;
আমি চেপেছি ছাদে,
আমি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি তাদের দিকে,
দেখি কয়েকটি ঘুড়ি আনন্দে হেসে নাচানাচি করছে শুভ্র মেঘেদের সাথে;
আমার মনটাও তাদের সাথে উঠেছে নেচে;
আমি কল্পনার যানে চড়ে চলে গেছি তাদের মাঝে;
মহানন্দে খেলা করছি, পাড়ি দিচ্ছি তাদের সাথে
অজানা পথে জানার তাগিদে।
বর্ষার ছড়া
শেখ সিরাজ
বর্ষা কালে জলে জলে
ভরলো নদী পুকুর ঘাট
চাষীরা সব লাঙল নিয়ে
চাষ করছে ধানের মাঠ।
ঘরে বসে নীল আকাশে
দেখছি কত মেঘের হাট
জানলা দিয়ে লাগছে এসে
গুড়ি গুড়ি জলের ছাট।
খোকাখুকু দাওয়ায় বসে
পড়ছে তারা সহজ পাঠ
বৃষ্টির তরে সকাল সকাল
বন্ধ হল দোকান পাট।
জলে ভেজা ডানা নিয়ে
পাখি গুলো খাচ্ছে লাট
বর্ষা কালে সব দূর হয়
মানুষের ঠাট বাট।
বর্ষার ছড়া
রাসমণি ব্যানার্জী
বর্ষা মানে কালো মেঘে
আকাশ খানা ঢাকা
মেঘের ডাকে সাড়া পাড়া
হয়ে যায় যে ফাঁকা।
গ্রাম শহরের উপর দিয়ে
নদী বয়ে চলে
বাদল রাতে কুকুর বেড়াল
করুণ কথা বলে।
জানলা দিয়ে ঝাপটা এসে
ভেজায় কাপড় চোপড়
মনে পড়ে ছেলে বেলার
কচু পাতার টোপর।
রাস্তার ধারে জমা জলে
ওঠে ল্যাটা কই
বিন্দি পিসির মুখে যেন
ফোটে গরম খই।।
বর্ষা
উজ্জ্বল ঘোষ
বর্ষা তুমি ঋতুর রাণী এসো নেচে নেচে
ধনধান্যে পূর্ণ করো ভারতমাতার বুকে
তোমার কান্না অশ্রুতেযে, মাঠ-ঘাট হয় পূর্ণ
চারিদিকে ব্যাঙ-ব্যাঙীরা করে সোমারহ।।
রাস্তাঘাটে জল জমে, হয় যে ভীষন কাদা।
মানুষদেরই যাতাযাতে হয় অসুবিধা।।
চাষীরা সব মাঠে মাঠে চাষ করে আনন্দে।
উদয়াস্ত চাষীরা সব পড়ে থাকে জমিতে।।
বর্ষার আগমনে গ্রীষ্ম হয় ভস্ম।
ময়ূরেরা পেখম তুলে শুরু করে হর্ষ
বর্ষার আগমনে নদী আপনমনে-
নিয়ে যায় দুই কূল ভেঙে।।
রানী তুমি এলে পরে গ্রীষ্মের দ্বাহজ্বরে।
সকলকে করিত ছারখার।
যেন মনে হতো এই গোলক ধাঁধাটাই
ঝলসানো রুটির সমান।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন