রবিবারের গল্প
দীপক বেরা
১.
ই-স্ত্রী
আজ, মি. সুশোভন সেন এর চাকরিতে রিটায়ারমেন্ট এর ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠান। ভাষণপর্ব শেষে ডাকা হল মিসেস সেন কে কিছু বলার জন্য। সুরমাদেবী উঠে দাঁড়ালেন। শাড়ির আঁচলটা গায়ে টেনে দৃপ্ত ভঙ্গিতে মাইকের সামনে এগিয়ে গেলেন।
"নমস্কার! আমি বক্তা নই। তবু, আজকে আমি এই সুযোগ পেলাম কেবলমাত্র আমি মিসেস সেন বলেই। তার জন্য আমি গর্বিত! সারাটা জীবন ধরে স্ত্রী-রা সংসারের ঘানি টেনে চলে নিজেদেরকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত রেখে। পুরুষদের কেরিয়ার, যাবতীয় উন্নতি ও উৎকর্ষতায় নারীদের আত্মত্যাগ এবং প্রেরণা থাকে অপরিসীম। অথচ, এই স্বামীর কাছে স্ত্রীরা চিরকাল শুধুমাত্র আটপৌরে স্ত্রী হয়েই রয়ে যান, হলুদ মাখা নখ ক্ষয়ে যাওয়া হাতে, শ্যাম্পুহীন উষ্কখুষ্ক ময়লা চুলে, আর মাড়হীন ন্যাতন্যাতে শাড়িতে করুণার পাত্রী হয়ে। এই স্ত্রী-রা স্বেচ্ছায় কখন যেন অগোচরে ইস্ত্রী হয়ে যায়। পুরুষদের কুঁচকে যাওয়া অগোছালো শরীরটাকে প্রেস করতে করতে পরিপাটি ফিটফাট করে তোলেন, যাতে তাঁদের পৌরুষের আভিজাত্যে, ব্যক্তিত্বে এতটুকু আঁচ না লাগে।
তারপর, গরম ইস্ত্রীটা শীতল হতে হতে ঘরের এক কোণে পড়ে থাকে চরম অবহেলায় নিতান্ত অনাদরে। তারপর, আবার গরম হয়, সংসারে যখন যার ঠিক যেমনটা দরকার! হায়রে মি. পুরুষ!"
হলঘর তখন পিনড্রপ সাইলেন্ট!
২.
ডিভোর্স
আজ, ডিনার টেবিলে অঙ্কুশ কে ডিভোর্সের কথাটা বলেই ফেলে। তার অফিসের বস রাজেশ কে বিয়ে করতে চায় তিয়াসা। আর এটাও পরিষ্কার করে জানিয়ে রাখে যে তাদের নতুন এই সম্পর্কের মাঝে তিতলি কে রাখার কোনও প্রশ্নই নেই। আচমকা একটা ঝাঁকুনি খেয়ে অঙ্কুশ চুপ মেরে যায়। পাশের ঘর থেকে ওদের বছর তিনেকের মেয়ে তিতলির কান্নায় নীরবতা ভাঙে। খাবার ফেলে ছুটে যায় অঙ্কুশ। আজকাল তিতলির যাকিছু, সব অঙ্কুশকেই সামলাতে হয়।
ডিভোর্সের পর দিনকয়েক কেটে গেল। কিন্তু রাজেশের সঙ্গে কিছুতেই যোগাযোগ করতে পারছে না তিয়াসা। রাতেই বেশির ভাগ ফোনে কথা হয় ওদের মধ্যে। রাজেশ বলেছিল দিন কয়েকের ছুটি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে। তিয়াসাও ক'দিন ছুটির পর আজ অফিসে জয়েন করেছে। হঠাৎ এ্যাকাউন্ট্যান্ট রমেন দা এসে বলে, " আচ্ছা তিয়াসা, রাজেশবাবু যে চাকরি তে রিজাইন করেছেন একবারও বললে না তো?"
-- "রিজাইন! রাজেশ রিজাইন করেছে? কী বলছ রমেন দা!".. তিয়াসার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
যতবারই তিয়াসা রাজেশের নম্বরে ফোন করে, ততবারই ফোনের ওপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে,.. "দি নাম্বার ইউ হ্যাব ডায়ালড্ ইজ কারেন্টলি সুইচড্ অফ্!''।
আরও পড়ুন👇👇
https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/06/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_60.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন