আমার শিক্ষক
স্মরণে-অনীশ ঘোষ
উত্তর কলকাতার গলিঘুঁজির পুরনো বসবাস ছেড়ে যখন উত্তরের আরেক মফস্সল শহরে— উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে ঠাকুর্দার ভিটেতে নিজের পরিবার নিয়ে আমার পিতৃদেব থিতু হলেন, তখনও আমার বিদ্যালয় গমন শুরু হয়নি। তবে স্কুলে ভর্তির বয়স হয়ে গিয়েছিল বলে সেখানে বসবাস শুরু করার পরেই তিনি বাড়ির একেবারে কাছে ছেলেদের সবচেয়ে নামী ও ভালো সরকারি স্কুলটিতে যোগাযোগ করলেন। বারাসত রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয় অর্থাৎ ইংরেজিতে বারাসত গভর্নমেন্ট স্কুল নামে যার ব্যাপক পরিচিতি সে সময়। এখন অবশ্য তার নাম বদলে প্রথম প্রধান শিক্ষক ‘ফার্স্ট বুক অফ ইংলিশ’খ্যাত বরেণ্য প্যারীচরণ সরকারের নামে হয়েছে। শতাব্দীপ্রাচীন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো বটেই, এটির প্রতিষ্ঠা ও বেড়ে ওঠার সঙ্গে তৎকালীন সারস্বত বঙ্গসমাজের অনেক কিংবদন্তী মানুষ জড়িয়ে ছিলেন। সে প্রসঙ্গ এখানে না বললেও, ওই বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে আমার ভর্তি হওয়ার কাহিনীটি অবশ্যই এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। কেননা এই ছোট্ট লেখাটি আমার যে শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের উপচার হিসাবে পেশ করছি— সেই প্রণম্য মানুষটিই তখন ওই বিদ্যালয়ের প্রাতঃকালীন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বা টিচার ইনচার্জ হিসাবে বহাল ছিলেন। আমাদের স্কুলের মর্নিং সেকশনের হেডমাস্টার মশাই হিসাবে পরিচিত ও কর্মরত শ্রদ্ধেয় সেই মানুষটি হলেন প্রয়াত ধীরেন্দ্রনাথ কুমার।
১৯৬০ সালের কথা বলছি। প্রাতঃকালীন বিভাগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ধীরেন কুমার মহাশয়ের সঙ্গেই আমার পিতৃদেব দেখা করে আমার ভর্তির বিষয়ে কথা বলেন। সে বছর তখন নতুন শিক্ষাবর্ষের কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং যথারীতি প্রতিটি ক্লাসের পঠনপাঠনও চালু। দেখা গেল, প্রথম শ্রেণীতে নয়, দ্বিতীয় শ্রেণীতে একটিমাত্র আসন অপূর্ণ আছে। আমাকে সেই শ্রেণীতে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে হবে বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক মহাশয়। বললেন, বয়সের হিসাবে অবশ্য কোনও অসুবিধে নেই তাতে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওই সরকারি বিদ্যালয়টিতেই আমাদের ঘোষবাড়ির প্রায় প্রতিটি ছেলে সাধারণত আগে ও পরে বিভিন্ন সময়ে পড়াশুনো করে গেছে। এমনকি আমাদের বাড়ির সম্পর্কে আত্মীয়রাও যাঁরা কাছাকাছি থাকতেন, তাঁদের অনেকের পুত্রসন্তানরাও ওই স্কুলের ছাত্র ছিল। যে সময়ের কথা বলছি, তখন ওই বিদ্যালয়টি মানের দিক থেকে এতদঅঞ্চলে এক নম্বরে থাকলেও, যেহেতু এলাকার জনসংখ্যা আজকের মতো এত বিপুল ছিল না, ফলে আজ ওই সরকারি স্কুলে ভর্তি হতে গেলে যে চাপ ও সমস্যার মুখে পড়তে হয় অভিভাবকদের, বা চাইলেও ভর্তি করতে পারেন না সন্তানদের, সে সময় এমন সমস্যা ছিল না। যদিও পড়াশুনোয় মনোযোগী না হলে তখনও এই সরকারি স্কুলে পড়ার সুযোগ মিলত না, ভর্তি হয়েও বার্ষিক পরীক্ষায় পর পর দু’বছর অকৃতকার্য হলে তখনও স্কুল থেকে বিদায় দেওয়ার নিয়ম চালু ছিল।
বারাসত স্টেশন ও যশোর রোডের পুবদিকের অঞ্চলের ছেলেরাই সাধারণত পড়ত এই স্কুলে, পশ্চিমের ছেলেরা অন্য স্কুলে। পরবর্তীতে এই সীমানা ভাগ যেমন প্রায় ভিত্তিহীন হয়ে গেছে পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে, তেমনই এলাকা হিসেবে বারাসতের বিস্তৃতি আজ অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়ে গেছে, এমনকি লাগোয়া ও দূরবর্তী এলাকার মানুষজনও দিন দিন এই স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করার জন্য যেন উঠেপড়ে লেগে পড়েন, কেননা এই বিদ্যালয়ের সুনাম আজও আগের মতোই সসম্মানে বিদ্যমান। ফলে সেই সময়কার মতো শুধু চৌধুরিপাড়া, শেঠপুকুর বা দক্ষিণপাড়ার ছেলেরাই, অর্থাৎ শুধু এদেশীয় বনেদি পাড়ার ছেলেরা আজ বারাসত রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ে পড়ে না, অন্য বহু এলাকার ছেলেরাও এই স্কুলে পড়াশুনো করে চলেছে।
যা–ই হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরি। ভর্তির পরীক্ষা তো দিলাম এবং মনোনীতও হলাম দ্বিতীয় শ্রেণীর একমাত্র শূন্য আসনটিতে ভর্তির যোগ্য হিসাবে। কিন্তু ওই ক্লাসে ভর্তি হওয়া আমার হল না। ঘটনাটা বলি। আমার এক খুড়তুতো দিদির পরিবারও বারাসতে আমাদের পরিবার বসবাস করতে আসার কিছুদিন আগেই বাইরে থেকে এসে সেখানে থিতু হয়েছে। জামাইবাবুর বদলির চাকরির সূত্রে। তাঁর বড় পুত্রটি, মানে সম্পর্কে আমার তুতো দাদা (বয়সে আমার থেকে এক বছরের কিছু বড়) আগের বছর পরীক্ষা দিয়েও প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পায়নি এবং সেবার প্রথম শ্রেণীতে আসন শূন্য থাকায় যথারীতি আমি ছাড়াও আরও কয়েকজনের সঙ্গে একই ক্লাসে অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তির পরীক্ষা দিয়েছে সে। কিন্তু মনোনীত তো হয়েছি আমি। তালিকার পরের নামটি অবশ্য আমার ওই দাদার ছিল। এখন আমাকে ভর্তি না করিয়ে বাবা যদি সুযোগটা ছেড়ে দেন, তবে তার দাবিদার সে হয় এবং তাতে সে বছর তার ভর্তি সুগম হয়— এই অনুরোধ এল আমার সেই জামাইবাবুর তরফে। তখন একান্নবর্তী পরিবারগুলো একটু একটু করে ভাঙতে শুরু করলেও তুতো সম্পর্কগুলো কিন্তু যথেষ্টই জুড়ে জুড়ে ছিল। যথেষ্ট আত্মিক যোগ ছিল সে সব সম্পর্কে। বাবাও বুঝলেন, এবারেও ভর্তি হতে না পারলে ওই দাদার বয়স আরও বেড়ে যাবে এবং তাতে তার পড়াশুনোর সমস্যা বাড়বে। এককথায় তাই তিনি রাজি হয়ে গিয়ে জামাইবাবুকে বললেন, ঠিক আছে, শুভ যখন বয়সে বড়, এ বছর ওকেই না হয় ভর্তি করে দাও। বাবু পরের বছর আবার পরীক্ষা দেবেখন। ফলে ওই দাদা দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে গেল। ধীরেনবাবু যে ছাত্র হিসাবে আমাকে চেয়েছিলেন, বিষয়টা যে তাঁর মাথায় ছিল, তা বোঝা গেল মাস খানেক পর।
হঠাৎই একদিন তিনি স্কুলে ডেকে পাঠালেন আমার বাবাকে। আকস্মিক এক সুযোগ তৈরি হয়েছে সে বছরই আমার ওই স্কুলে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে। কেননা প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া একটি ছাত্র ওই স্কুল ছেড়ে অনিবার্য কারণে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। বাবাকে ডেকে পাঠিয়ে তিনি এই কথাটিই জানিয়ে বললেন, ক্লাস ওয়ানে যে আসনটি খালি হয়েছে, আপনি চাইলে আমরা আপনার ছেলেকে সেখানে ভর্তি করে নিতে পারি। নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, ও তো ক্লাস টু–তে সিলেক্টই হয়ে গিয়েছিল। ওর মেরিট আছে। সুতরাং অসুবিধা হবে না। বাবা তো আমাকে প্রথম শ্রেণীতেই ভর্তি করতে চেয়েছিলেন, সিক্স প্লাস বলে এবং প্রথম শ্রেণীতে আসন না থাকায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তির জন্য আমার পরীক্ষা দেওয়াটা অনুমোদিত হয়। সুতরাং এই সুযোগটি এসে যাওয়ায় আর কোনও সমস্যাই থাকল না। আমিও শেষ পর্যন্ত ভর্তি হয়ে গেলাম ক্লাস ওয়ানে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ধীরেনবাবুর বদান্যতায়।
এর পর থেকে ক্রমে আমি তাঁর প্রিয় ছাত্র হয়ে উঠি, প্রতিটি ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করার সুবাদে, অর্থাৎ ক্লাসের ফার্স্ট বয় হওয়ার কারণে। আমার শিক্ষা জীবনের শুরুতে তিনিই হয়ে ওঠেন এক বটবৃক্ষের মতো। তাঁর স্নেহচ্ছায়ায় মসৃণভাবে এগোতে থাকে আমার প্রাথমিক স্তরের পঠনপাঠন। একটু ভারী চেহারা, বিরল কেশ, ধুতি–পাঞ্জাবি পরিহিত মাস্টার মশাইয়ের ক্লাসঘরের সামনে পায়চারি করা, স্নেহের ধমক, কখনও–সখনও দু–একটা ক্লাস নেওয়ার প্রায় সবটুকুই স্মৃতিতে অম্লান আজও। অন্য শিক্ষকদের স্নেহ থেকেও অবশ্য কোনওদিনই বঞ্চিত হইনি। টানা ১১ বছর একই স্কুলে পড়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করি। আর পড়াশুনো ও সাহিত্য–সংস্কৃতির সঙ্গে ওই বয়সেই জড়িয়ে থাকার সুবাদে অনেক শিক্ষক মহাশয়েরই যথেষ্ট স্নেহ, ভালোবাসা পেয়েছি বরাবর। মনে পড়ে মর্নিং সেকশনের নিশারানী দিদিমণি, কানাইলালবাবু, হরিনারায়ণবাবু, সমরজিৎবাবু, আশুবাবু থেকে শুরু করে ডে সেকশনের বুদ্ধিপদবাবু, জ্যোৎস্নাময়বাবু, জ্যোতিষবাবু, গোবিন্দবাবু, শীতলবাবু, মিহিরবাবু, দেবপ্রসাদবাবু, পলাশ স্যার, দিলীপবাবু, শুভাশিসবাবু, পণ্ডিত স্যার, মৌলবি স্যার বা দেবব্রতবাবুর কথা। এঁদের অনেকের সঙ্গেই স্কুলের বাইরেও একটা আলাদা যোগাযোগ বা সম্পর্ক ছিল। বিশেষত যাঁরা এই শহরেই মূলত বসবাস করতেন। এঁদের অনেকের সঙ্গে নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ, কথাবার্তাও হত, স্কুল ছেড়ে কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কর্মজীবনে প্রবেশের পরও অনেকের সঙ্গে এই সম্পর্কটা দীর্ঘদিন বজায় থেকেছে। এঁদের কেউ কেউ বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেলেও কখনও দেখা হলে দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে তাঁর কুশল নেওয়া, প্রণাম করা বা তাঁর জিজ্ঞাস্যর জবাবে নিজের খবর জানানো— এ সব সেই সময়ে চালু ছিল। শিক্ষকদের আমরাও যথেষ্ট শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম। তখনও শিক্ষাক্ষেত্রে আজকালকার মতো নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়নি। এটা মূলত ঘটেছে সত্তর দশকের শেষের দিক থেকে এবং আজও যা নিঃসন্দেহে সমাজে এক বড় আক্ষেপের জায়গা।
প্রসঙ্গত এখানে আরও দুজন বরণীয় শিক্ষকের কথা একটু আলাদা করে উল্লেখ না করাটা অনুচিত হবে। একজন হলেন প্রয়াত জাতীয় শিক্ষক নারায়ণচন্দ্র চন্দ্র। আমি যখন প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হই, তখন তিনি বারাসত সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু যখন দিবা বিভাগে উন্নীত হলাম, ততদিনে তিনি বদলি হয়ে অন্য স্কুলে চলে গেছেন, তাঁর জায়গায় প্রধান শিক্ষক হিসাবে কার্যভার নিয়েছেন প্রয়াত সতুগোপাল প্রামাণিক মহাশয়। ফলে কখনও নারায়ণবাবুর প্রত্যক্ষ ছাত্র না থাকলেও যেহেতু তিনি ছিলেন একজন খ্যাতিমান ‘জাতীয় শিক্ষক’ এবং সাহিত্যিক, তাঁর স্থায়ী বসবাসও ছিল বারাসতেই, স্কুল–কলেজের পাঠ শেষ করে ফেলার পরেও তাঁর সঙ্গে হৃদ্যতার সম্পর্ক বজায় ছিল আমার। তাঁর বাড়িতে নিয়মিত যেতাম, তাঁর একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ছিল সেখানে, সেটা ব্যবহার করতাম, তিনি তাঁর লেখা পড়ে শোনাতেন, আমিও আমার লেখা স্যারকে পড়াতাম, তাঁকে দিয়ে সংশোধনও করিয়ে নিতাম মাঝেমধ্যে। সংবাদপত্রের অফিসে স্থায়ী চাকরি পাওয়ার পর যোগাযোগ ক্রমে কমে যায় কাজের চাপে, কিন্তু মনে আছে আমার জীবনের প্রথম চাকরির আবেদনপত্রটি তিনিই লিখে দিয়েছিলেন সস্নেহে। আর সতুগোপালবাবু স্কুল জীবনে বহুবার আমার সহায় হয়েছেন নানা বিষয়ে। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় বাবা মারা যাওয়ার পর উদ্যোগ নিয়ে পড়ার খরচ ‘ফুল ফ্রি’ করে দেওয়া, পুওর ফান্ড থেকে সাহায্য–সহ ফার্স্ট বয় হিসাবে কেন্দ্র সরকারের বুক গ্রান্টের ব্যবস্থা করে দেওয়ার পিছনে তিনিই ছিলেন আসল মানুষ, যা আমাকে চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্যেও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে মদত জুগিয়েছে। সরকারি স্কুলের এই সব সুযোগ–সুবিধা তাঁর জন্যেই নিতে পেরেছিলাম। পরিবার নিয়ে তিনি থাকতেন স্কুলেরই কোয়ার্টারে। স্কুলের নির্দিষ্ট সময়ের পরেও সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করাটা আমার কাছে ছিল অবাধ। কয়েক বছর পর তিনিও অন্যত্র বদলি হয়ে যান। দুর্ভাগ্য, স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ তখনই ছিন্ন হয়ে যায়।
ধীরেনবাবুর প্রসঙ্গে ফিরে এই স্মৃতিচারণা শেষ করি। পঞ্চম শ্রেণীতে উঠে যখন সকালের বদলে দিবা বিভাগে ক্লাস শুরু করলাম, পড়াশুনোর বিষয়ে তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে না থাকলেও, সম্পর্ক অটুট থেকে গেছে বহু বছর যাবৎ। যতদিন তিনি ওই স্কুলে চাকরিরত ছিলেন এবং তারও পরে খুবই কাছে স্থানীয় এলাকাতে তাঁর স্থায়ী বসবাসগৃহ হওয়ায় স্যার জীবিত থাকাকালীন সেই বাড়িতে আমার প্রায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তাঁর পুত্র বিমানদাও আমার যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন, রাস্তাঘাটে দেখা হলে আমার খবর নিতেন, বাবার খবরও দিতেন। স্যার আসলে একজন প্রকৃত সাহিত্যানুরাগী মানুষ ছিলেন। আর সেদিকে আমার প্রথমাবধি খানিক ঝোঁক বা চর্চা লক্ষ্য করেই হয়ত আমার প্রতি তাঁর মনের কোথাও আলাদা স্নেহ, প্রীতির ধারাটি পুষ্ট থেকে গিয়েছিল জীবদ্দশায়। বারাসত সরকারি স্কুলে আমাকে যে কোনও প্রকারে ভর্তি করে নেওয়ার পিছনে তাঁর যে সচেষ্ট প্রয়াস ও ভূমিকা আজ থেকে অর্ধশত বছরেরও বেশি আগে প্রথম দিনটিতেই অনুভব করতে পেরেছিলাম, সেটিই পরবর্তী কালে অনির্বাণ দীপশিখার মতো হৃদয়ে প্রজ্জ্বল থেকে গেছে। কোনওদিন ভুলিনি। কালের নিয়মেই তিনি প্রয়াত হয়েছেন বহু বছর হয়ে গেল। তবু এই প্রণম্য মানুষটির প্রতি আমার মনে এক বিশেষ আসন তোলা আছে আজও। সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই আমার প্রথম শিক্ষাজীবনের গুরু, প্রয়াত শিক্ষক ধীরেন্দ্রনাথ কুমারের প্রতি। আমার অন্য শিক্ষক মহাশয়দেরও বিনম্র প্রণাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন