৭৪তম স্বাধীনতা দিবসের এমন সময়েও দাঁড়িয়ে আমরা নত হই ভারতমাতার সেই সব বীর শহিদ সন্তানদের প্রতি। চরম সময়ে থেকেও আমরা এক জাতি এক প্রাণ হয়ে থাকতে চাই। আমরা যেকোনো পরিস্থিতি থেকে উঠে দাঁড়াবোই। এমন শপথ আজ এই দিনে এই শহিদ তর্পণ দিনে আমরা নিতেই পারি। তাই আজ কবিতার অঞ্জলি দিয়ে উদযাপন করলাম দিনটি।
৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে অঙ্কুরীশা-র কবিতা অঞ্জলি-
কলমে-
১. জ্যোতির্ময় দাশ
২.বিকাশ গায়েন
৩. দীপ মুখোপাধ্যায়
৪.তৈমুর খান
৫.অনীশ ঘোষ
৬.গৌতম হাজরা
৭.সাতকর্ণী ঘোষ
৮.অমিত কাশ্যপ
৯.অংশুমান চক্রবর্তী
১০.মঙ্গল প্রসাদ মাইতি
১১.শুভঙ্কর দাস
১২.বিকাশ দাস (মুম্বাই )
১৩. ফটিক চৌধুরী
১৪.দেবপ্রসাদ জানা
১৫.শ্রীশুভ (ভুতুম)
১৬.সৈকত নায়েক
১৭.দীপক বেরা
১৮.রঞ্জন ভট্টাচার্য
১৯.তপনজ্যোতি মাজি
২০.অরুণ ভট্টাচার্য
২১ জুলি লাহিড়ী
২২. রাখহরি পাল
২৩.অশোককুমার লাটুয়া
২৪.সন্দীপ রায়
২৫. মালা ঘোষ ( মিত্র)
২৬.বিমল মণ্ডল
২৭.সৌরভ ঘোষ
২৮. মোঃ হুমায়ূন কবির(অর্ণব আশিক)
১.
স্বাধীনতার স্বপ্ন
জ্যোতির্ময় দাশ
এক আজব দেশে একটা আশ্চর্য রকমের বাড়ি ছিল
সে বাড়ির সদর দরজা দিয়ে কেউ ভেতরে ঢুকলে
বেরিয়ে আসার সময় সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষ হয়ে যেত
কিভাবে যেন আমূল রূপান্তর ঘটে যেত তার চরিত্রে!
বিদ্যাসাগর সে বাড়িতে গেলেন ক্লাইভের সঙ্গে দেখা করতে
দেখা গেল লর্ড ক্যানিংয়ের সাথে বেরিয়ে আসতে মির্জাফরকে
এর উল্টোটাও অনবরত ঘটত বৈকি!
একবার এক মন্ত্রী সেই বাড়িতে ঢুকেছিল সদর দিয়ে
খানিক বাদে যখন তিনি খিডকি দিয়ে বেরিয়ে এলেন
তাঁকে আর চিনতে পারা যাচ্ছিল না একেবারেই—
তারপর থেকে আশ্চর্য ব্যাপার, তিনি আর কাটমানি নেন না
নির্বাচনী বক্তৃতায় মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া বন্ধ করলেন
আর তার থেকেও অভূতপূর্ব ঘটনা যেটা ঘটল—
তিনি সেদিন থেকে নি:স্বার্থভাবে হয়ে গেলেন পরম দেশসেবক!
এখন সে দেশে নির্বাচনের দিনে কোনও ক্যাডার মারা যায় না!
কুসুমকুমারী দাশ সে বাডিতে বসে নতুন কবিতা লিখেছিলেন
‘আমাদের দেশে হবে সেই বাড়ি কবে...’
২.
ভুল
না,তুমি কোন অন্যায় করোনি।
মেনে নিয়েছিলে,বর্ষায় ছাত থেকে যে জল পড়ে
সেটা তোমারই অক্ষমতা ।
মেনে নিয়েছিলে, শীতকালে জামার উপর
একটা সোয়েটার মানেই বিলাসিতা।
মেনে নিয়েছিলে, পচা নর্দমা,
খানাখন্দময় পথঘাট---কালের নিয়ম।
মিড-ডে মিলের চাল,একশ দিনের কাজ,
ব্যাংকের পাশ বইয়ে চলে আসা অল্প কিছু টাকা
মেনে নিয়েছিলে, এসবই তোমার উপরিপাওনা।
কাজ হারিয়ে ,ঘর হারিয়ে ,মাইলের পর মাইল
হেঁটে আসাকে তুমি ভেবেছিলে স্বাভাবিকতা।
মন্দির মসজিদ গীর্জা ও গুরুদ্বার বিতর্কে
কোন একটাকে বেছে নিতে তোমার কোন সমস্যাই হয় নি।
হাত পেতে দাঁড়াতে দাঁড়াতে দাঁড়াতে
তুমি ভাবতেই পারোনি যে তোমার
একদিনের শুধু একটি ভুলের জন্য
বিক্রি হয়ে যেতে পারে একটা গোটা দেশ।
৩.
স্বাধীনতা দিবসেদীপ মুখোপাধ্যায়
এ কেমন স্বাধীনতা বুঝে ওঠা যায়নাকেউ আছে ভরপেটে কেউ খেতে পায়নাঐক্য ও সংহতি সবই লোক দেখানোআছে কিছু মর্যাদা তাও মুখ বেঁকানো।দিনভর ব্যস্ততা মাইকের আওয়াজেমুখরিত রাজপথ সেনা কুচকাওয়াজেপ্যারেডের সাথে সাথে আছে ব্যান্ড বাজানোভারতমাতাকে যেন ধুয়ে মুছে সাজানো।রঙিন বেলুন কত,ওড়ে ঘুড়ি আকাশে-সূর্যটা আজ গাঢ় লালরং মাখা সেতাজা প্রাণ বলিদান ইংরেজ তাড়াতেতবুও পারেনি ওরা কলকাঠি নাড়াতে।কত ত্যাগ-তিতিক্ষা হয়েছিল জানতে?পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা আনতে-মাটিটাও ভিজে আছে শহীদের রক্তেকালাপানি পেরিয়েছে শত দেশ ভক্তে।তিনরঙা পতাকায় দেশটা যে জড়ানোসত্যি কঠিন খুব ভিতটাকে নড়ানোওলটানো বইখাতা মন ভারী বিবষেকরি ছুটি উপভোগ স্বাধীনতা দিবসে
৪.
তৈমুর খান
নষ্ট হবার আগে কিছুক্ষণ
আমি জেগে থাকতে চাই
এই ছোট ঘর আরও ছোট আমার সীমানা
ভাত খাওয়ার থালা ,জল খাওয়ার গ্লাস
স্বাধীনতা দিবসের গান
আমাকে দেখুক সবাই
নেতাজির সন্তান হওয়া যাবে না জেনেও
এই স্যাঁতসেঁতে ভিজে মাটি
সাড়ে তিনহাত
আমার ভারতবর্ষ
মনে মনে আমি ক্ষুদিরাম!
৫.
ভারতবর্ষ
অনীশ ঘোষ
স্বাধীনতাহীনতা মেনে নিতে চাননি আমাদের পূর্বপুরুষরা
ওঁরা আমাদের দিয়ে গেছেন মুক্ত একটি দেশ
জন্মেই স্বাধীন আমরা
আমাদের ছেলেমেয়েরাও নিজেদের মতো
স্বাধীনভাবে চলতে ফিরতে কথা বলতে শিখেছে
তবু কেন আজ মনমরা তুমি, প্রিয় দেশ আমার ভারতবর্ষ!
চারদিকের তুমূল হুল্লোড় আর উৎসবের আঁচে ঝলমলে রঙিন হয়ে উঠতে উঠতে
নিশ্চয়ই বুঝে গেছো তুমি
বয়সের থাবা জাঁকিয়ে বসেছে অনেকখানি
বুকের বাঁদিকে আজকাল একটা চিনচিনে ব্যথা হয় প্রায়
চুলও সবকটা ফকফকে সাদা হয়ে এলো...
কষ্টের আগুনে দগদগে পুড়তে থাকার তবু যেন শেষ নেই আজও
তোমার সন্তানসন্ততি অসহিষ্ণু সময়ের আঁচে সিদ্ধ হয়ে চলে
চারপাশে ঝাড়েবংশে বেড়েই চলেছে ষড়যন্ত্রীদের দল
দশদিকে ছড়িয়ে আছে বাদুড়ের চোখের মতো ভিজে অন্ধকার
ধোঁয়া আর রক্ত মেখে মেখে ক্লান্ত আশরীর জন্মভূমি তুমি
দেয়ালে পিঠ রেখে যুঝে যায় দেখো জীবনের মূল্যবোধ
অস্তিত্বরক্ষার জন্য নিরন্তর দীর্ঘ লড়াই...
আসমুদ্র হিমাচল আজ সুস্থতা চায়
চায় প্রকৃত স্বাধীনতা চিন্তার ধর্মের কৃষ্টির...
বিগতযৌবনা জন্মভূমি তুমি নষ্ট স্মৃতির ভার মুছে
দূষণের কোলাহল ঠেলে বিষ গান জাহান্নামে ছুড়ে
সম্পন্ন শস্যের মতো একবার মাথা তুলে দাঁড়াও
একবার প্রকৃত স্বাধীনতার এক নিটোল ছবি আঁকো
সমগ্র শরীরে ও মনে
ফুল্লকুসুমিত সুজলা সুফলা হয়ে ওঠো... প্রিয় স্বদেশ।
৬.
স্বাধীনতা
গৌতম হাজরা
বাইরে পতপত্ করে উড়ছে ওই তেরঙ্গা পতাকা
ভারতবর্ষ যার নাম।
ভিতরে নিরণ্ণ বিধ্বস্ত মুখ, বেকার, গৃহহারা আরও কত বিশেষ্য
বিশেষণ এবং সব'নাম।
স্বাধীন হয়েছি বটে। স্বাধীনতার মানে কী আমরা
এখনো বুঝেছি?
চোরাস্রোতে নদী বয়, পালটায় কত রীতিনীতি।
এদেশে কারা সুখী? যারা ওই বড় কথা বলে?
যারা শুধু রক্ত শোষে ছলে বলে আর কৌশলে?
দিন যায় দিন আসে স্বাধীনতা আজও বেড়ি পায়
স্বপ্নে ফেরে না কিছুই, ইতিহাসও মুখ ঢাকে হায়!
৭.
স্বাধীনতা
সাতকর্ণী ঘোষ
এই সুন্দর সকাল বাউল গাইছে পবিত্র বাতাসে
কী প্রবল উচ্ছাসে মাথা নাড়াচ্ছে বীথিদল
মাটির স্পর্শে নেমে আসছে ফুল ফল আর পাতা
পাখির ডানায় শুভ্র রোদ্দুর বসে উড়ে যাচ্ছে
দিক হতে দিগন্তে সোনালি রূপোলি মেঘের দেশে
ওই দূরে নদী কলকল সুরে গাইছে প্রভাতী
ছলাৎ ছলাৎ দাঁড় বাইছে মাঝি
নদীর উচ্ছ্বল জল করছে আদর
মাটি প্রাণখুলে হাসছে আকাশে
মাছেরাও মাঝে মাঝে দেখা দিয়ে যায়
এখানে ঝুপড়ি নেই উত্তাপ নেই ক্রোধের
হাড়গিলে ছেলে নেই মেয়ে নেই
যৌবন বিকৃতি নেই ভরপুর নিখাদ সংসার
মিলেমিশে সব প্রাণ উদার উনুন জ্বেলে
টগবগ ভাতের গন্ধ ছড়াচ্ছে বাতাসে
এখানে হিংসা নেই সুর আছে অনন্ত
ব্যথা নেই ব্যথা দেবারও কেউ নেই
সুখ আর দুঃখ অমৃত
ঘরে ঘরে জ্বলে মঙ্গলদীপ ঘর জ্বালানোর কেউ নেই
স্নেহ আছে প্রণাম আছে অস্বীকার নেই
স্বপ্ন আছে সত্যি আছে ভাঙার কেউ নেই
৮.
চুয়াত্তরতম স্বাধীনতা দিবস
অমিত কাশ্যপ
অগোছালো আলোর মধ্যে ভেসেছিল
শান্তিলতা প্রাথমিক বিদ্যালয়
এখন আজ শোভনসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়
এগিয়ে যাওয়া দিনের সাথে গ্রামও
গ্রাম আর গ্রাম নেই, সমৃদ্ধি, শিক্ষায়
নিরঞ্জনবাবুর গর্ব, মায়ের নামে স্কুল
এত বছর পর আলো, আশার আলো
স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ ছিল এই গ্রামে
এই গ্রাম কেন, সমগ্র ভারতভূমি ছিল
স্বাধীনতা সংগ্রামের মন্ত্রবারিতে সিক্ত
আমরা আজ প্রণাম করি ভারতমাতাকে
শহীদ ভাই-বোনেদের স্বাধীনতা দিবসে
৯.
স্বাধীনতা
অংশুমান চক্রবর্তী
স্বাধীন দেশে করছি বসবাস
ভুলে গেছি অনন্ত সংগ্রাম,
সারা বছর একটি দুটি দিনে
স্মরণ করি বিপ্লবীদের নাম।
বিশেষ দিনে তেরঙা ফ্ল্যাগ তুলি
দুপুরবেলা মাংস দিয়ে ভাত,
ভাগের মা-কে ঠাঁই দিই না ঘরে
ভাইয়ের সঙ্গে করেছি সংঘাত।
আমরা আবার পাড়ায় দাদা সাজি
বিলিয়ে যাই শ্রদ্ধা এবং প্রীতি,
সবাই ভাবে, মস্ত জনসেবক
লক্ষ্য পূরণ, এটাই তো রাজনীতি।
ভোটে জিতে নিজের কথা ভাবি
দেশের কথা ভাবার সময় কই?
পাঁচটি বছর থাকি রাজার হালে
পরের বারে জানি তো হারবোই।
বিপ্লবীরা জানতো এমন হবে?
জানলে মুখে হারিয়ে যেতো কথা,
চোখের জলে ভেজে শহীদ বেদী
ভোগ করছি আমরা স্বাধীনতা...
১০.
স্বাধীনতা তুমি
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি
স্বাধীনতা তুমি –
সূর্য আলোর একরাশ উজ্জ্বল দীপ্তি,
ভোরের ফোটা টাটকা-সতেজ ফুল,
সকালের স্নিগ্ধ পবিত্রতা,
তুমি আকাশের নীল সুষমা, ঘন বনানীর
অপরূপ মায়া, পাখির মধুর কাকলি,
নদীর কলতান।
স্বাধীনতা তুমি –
আমার গাঁয়ের চাষির লাঙলের ফলা,
কোমল মাটির বুকে সবুজের আল্পনা,
তুমি কাস্তে ছোঁয়া সোনার ফসল,
পর্ণকুটিরে আনন্দের বান;
তুমি আমার শ্রমিক ভাইয়ের অনাহারক্লিষ্ট
মুখে একমুঠো খাবার,
দুখিনী বিধবা মায়ের চোখে
একফালি হাসি – বাঁচার নতুন আশা।
স্বাধীনতা তুমি –
আমার বোনের কপালে আঁকা
ভালোবাসার জ্বলজ্বলে এক টিপ,
মায়ের বুকের গন্ধ
তুমি কৃষাণি বধুর হাতে জ্বলা সন্ধ্যাপ্রদীপ,
মঙ্গল শঙ্খধ্বনি গাঁয়ের শান্ত –
সন্ধ্যার বুকে।
স্বাধীনতা তুমি-
বিজয়ের মন্ত্র, মুক্ত বাতাস চলার পথে;
স্বপ্নের গড়া কবিতা তুমি
মাঠে-ঘাটে-পথে-প্রান্তরে-বন্দরে
জীবনের স্পন্দন – সাম্যের জয়গান।
১১.
স্বাধীনতা
শুভঙ্কর দাস
স্বাধীনতা কীরকম দেখতে?কোথায় পাওয়া যায়? মাথায় মাখে না কি ভাত মেখে খাওয়া যায়?
স্বাধীনতা কি লালকেল্লার কেচে ইস্ত্রি করা তিনরঙা কাপড়! না কি কোনো স্বাধীনতা সংগ্রামী ধুলো পড়া পেনশনকাগজের কালসিটে দাগ?
স্বাধীনতার কতদূর শক্তি?
হতে পারে কি শস- সহস্র অভুক্ত দুপুরের দুবেলার দুমুঠো গরম ভাত!
হতে পারে কি কোনো ধর্ষিতার সসম্মানের অলৌকিক শাড়ি!হতে পারে কি কোনো মন্দির বা মসজিদের সামনে বসে থাকা বিকালঙ্গ ভিখিরির সম্ভ্রম!
স্বাধীনতা মানে কী?
এত সংগ্রামীর বাণী ও ছবি,এত জীবনীর পাতার পর পাতা,এত কুচকাওয়াজ, এত অস্ত্র-সস্ত্রের সমাবেশ!
এই কি স্বাধীনতা!
স্বাধীনতা কেমন দেখতে?
সূর্যের আগে ওঠা অভুক্ত শিশুটি উড্ডীন পতাকার দিকে দেখে আর তার হাসিমুখে লেগে থাকে সাদা মিয়ানো মুড়ি...
তার হাসিটি একেবারে স্বাধীনতার মতো দেখত।
১২.
স্বাধীনতা
বিকাশ দাস(মুম্বাই)
স্বাধীনতা...
আকাশের মেঘ ছায়া রোদ্দুর। শস্যের জ্যোৎস্না দূর বহুদূর রাত্রি মধুর।
কিশোর কিশোরীর রমণ সাঁতার।সুখের উল্লাসে সরসী। রুপালী বৃষ্টি দুপুর।
মানুষের উত্তরণ সতেজ সাহসী হাসি। প্রজন্মের নির্ভীক বটবৃক্ষ ছায়া
তরুণ তরুণীর অনিরুদ্ধ সংলাপ। উঠোন ঘর-দুয়ার জননীর সৃজন মায়া।
স্বাধীনতা...
উদ্যান ঘরবাড়ি। বৃদ্ধগাছ লতাপাতার গান। বাতাসের অরণ্য অভিসার
নিজের ইচ্ছেই বলা-কওয়া লেখা।কবিতার খাতায় ইষ্টি শব্দের সম্ভার।
দিগন্তের হাতে হাতে তেরঙ্গা। জ্বলন্ত সূর্যের অঙ্গবাস। শিরদাঁড়া চেতনার
সিঁথির সিঁদুর শানিত মাটির রক্তাক্ষর ধ্বনিপ্রতিধ্বনি অতর্কিত চমত্কার।
স্বাধীনতা...
বুকের ফুসফুসে সৃষ্টির জন্ম। প্রতীক্ষার আগুনে ঝলসে বলিদান
একতার দৃষ্টান্ত ইশতেহার। সলতে পোড়া সকালসন্ধ্যার খতিয়ান।
রক্ত ঘাম শ্রম বিশ্বাস বাসনার মিছিলে মিছিলে ক্ষুধা-জ্বালার বহ্নিতাপ
ধানের সবুজে সাদা ভাতের স্বাদ। নির্ভরতার নিঃস্বার্থ হিতৈষীর ভাপ।
১৩.
ঠিকানাফটিক চৌধুরী
ঠিকানা হারিয়ে বসে আছি
ঠিকানা কি খুব কাছাকাছি?
সেতো অনেক দূর , কিভাবে যাবো?
তোমার কথা তুমি নিজেই ভাবো।
সোজা রেললাইন ধরে চলে যাও
দেখো নিজের ঠিকানা যদি পাও
এর বেশি কিছু বলা তো বাতুলতা
এটাই ৭৪ তম ভারতের স্বাধীনতা।
১৪.
আজ স্বাধীনতা দিবস
- দেব প্রসাদ জানা
বাবু মশাই -
আজ স্বাধীনতা দিবস।
কোথায় তোমরা? ও বাবু মশাইরা।
তিয়াত্তরে পড়ল তোমাদের রক্তদান,
বীর শহীদ-
তোমাদের নামে এখনো উথলে ওঠে
সাগর, মরু,পাহাড়, সমতল।
তোমাদের নামে বাজে দামামা।
কেঁপে ওঠে পাকপাখালির দল।
বুকে বাজে ডমরুর ধ্বনি।
জাতীয় পতাকায় লাগে উত্তাল বাতাস।
বাবু মশাই -
এখনো তোমাদের বজ্রকন্ঠ ধ্বনিত হয়
কর্ণগোচরে।
বীর শহীদগন এসো সামিল হও
তোমাদের দেওয়া স্বাধীনতার উৎসবে।
আকাশ জুড়ে আজ বাজছে
স্বাধীনতার গান।
তোমাদের গলায় মালা দিয়ে
উৎসর্গ করি, জাগ্রত করি
হৃদয়।
শত্রু নিধনের পালা
করবো শুরু।
যে স্বাধের স্বাধীনতা তোমরা দিয়ে গেছো
তাকে রক্ষা করার সংকল্প করি আজ।
হে বীরশহীদগন এসো আজ
আমাদের ঘরে।
তোমাদের চরণযুগলে ঢালি শেষ রক্তবিন্দু।
আকাশ জুড়ে রামধনু উঠুক আজ।
তেরঙ্গা হোক বিশ্ববন্দিত।
দাবানল লাগুক শত্রু শিবিরে।
আজো যারা স্বপ্ন দেখে-
ভারত মায়ের হাতে শৃংখল দেবে।
তাদের হাত গুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দিই
আরো একবার।
তোমাদের মতো করে হাসি মুখে
রক্ত ঢেলে দি
ভারত মায়ের চরণতলে।
নতুন আলো ফুটুক ভারতের
আনাচে কানাচে।
হাজার বছরেও যেন কারোর সাহস না হয়
ভারত মায়ের দিকে তাকাবার।
জয়হিন্দ।
১৫.
বুভুক্ষু স্বাধীনতা
শ্রীশুভ/( ভুতুম )
ছুটছে সবাই উঠবে ধ্বজা' গান স্যালুটের সম্মানে
বুভুক্ষু পেট খুঁজেই চলে "স্বাধীনতা" কোন খানে ।
স্বাধীন আমার ভারতবর্ষ,সন্তান'তো আমরাও তার
দু'আনা মানুষ শুধুই জেতে, চোদ্দ আ'নার শুধুই হার।
নেতায় নেতায় মিথ্যে লড়াই লোক দেখানো ভাষণে জোর
ভুখা শিশুর পথ গলিতে খাবার খোঁজায় লাগে ঘোর ,
তেরঙ্গা'তে দেশ সাজিয়ে বছর ভরই ভোটের মেলা
ভাঙা ঘরের জল মেঝেতে স্বাধীনতার আজব খেলা ।
স্বাধীন ওরা চিরদিনই, সেএক পরাধীনের জ্বালা বুকে
কাল কি খাবে আজ জানেনা,তবুও ওরা আদুল সুখে।
আবার বছর আসবে ফিরে স্বাধীন স্বাধীন চলবে খেলা
বাঁচার তরে বাঁচবে ওরা, জুটবে না সেই দুটি বেলা ।
বছরভর আয়োজনে লাল বাড়িতে উঠবে ধ্বজা
ওদের হাতে হাততালি টায় নেতার বুকে লুটের মজা ।
নেতাও বলে - ওরাও বলে বন্দেমাতরম
ওদের থেকে নেতার গলা কোথায় যেন কম।
নেতার হাতে - ওদের হাতে দুটোই তেরঙ্গা
ওদের মুখে নির্মল হাসি, নেতা'তে শঙ্কা ।
জনগণ গাইছে ওরা নেতাও সেই দলে
ওদের গাওয়া ভালোবেসে, নেতার ? কেজানে কোন ছলে।
১৬.
একটা খোঁজ চলছে
সৈকত নায়েক
লাল চশমায় চোখ রেখে আগস্ট খুঁজছি
উৎপীড়ণের উঠোন থেকে কেমন ছুটছে
হাহাকার আজ উৎসবেরই নামান্তর
ব্যাবিলন থেকে গদ্য নিয়ে হাঁটছে
এখন আমরা বড়োই এদিক ওদিক
চঞ্চলতায় ভর করে রই দিগন্তে
ঋজুরেখার সমান্তরাল দিনগুলি
ভুলেছি আমরা আমাদেরই অজান্তে
যুবদিবস দাঁড়িয়ে আছে হাড়গুলোয়
মন্ত্রোচারণ করি যখন বাইবেলের
শিকল ভাঙা জীবনের ওই গানগুলো
বিঁধছে তখন ঝাপটামারা এই বুকে
আমরা শুধু দাঁড়িয়ে থাকি ঠায় রোদে
বিনিদ্রতায় কাটবে যদি এমন রাত
লালচশমায় এগিয়ে যাব এই ভেবে
আত্মত্যাগের এমন সময় সুপ্রভাত
১৭.
অর্জিত স্বাধীনতা
দীপক বেরা
কত প্রাণের বিনিময়ে
ভেঙ্গেছি পরাধীনতার শৃঙ্খল
এনেছি আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা।
কিছুদিন পরেই আস্তে আস্তে
নিজের চেহারাটা
সে বদলাতে শুরু করে,
অদ্ভূত এক হাওয়া খেলে যায়
গ্রামের মাটিতে, জলে-জঙ্গলে
পাহাড়ে-পর্বতে, সীমান্তে
শহরে-বন্দরে, মানুষের জীবন প্রবাহে---
কেউই আর ফিরতে পারল না
নিজেদের অতীতে;
চেনা পথগুলো কেমন করে যেন
হারিয়ে যায় বিস্মৃতির অন্তরালে!
প্রতিটি ধূলিকণায়, প্রতিটি ঘাসের বুকে
আজ, চরম দ্রোহের আগুন
দূরে গাছের পাতার আড়ালে
ছোট্ট পাখিটারও তীক্ষ্ণ ভারি আওয়াজ
বহুদিন জ্বলেনি আগুন উনুনে
খালি হাঁড়ির আওয়াজ
অভুক্ত শিশুর কান্নার ধ্বনি
মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়!
ধীরে ধীরে আমাদের সম্বিত ফেরে---
আসলে, প্রতিটি শাসকই হয়
সেই একই নির্মম শোষক!
শাসক চিৎকার করে বলে চলে,
"তোমরা আমার কথা শোনো"।
অনেকেই বাধ্য ছেলের মত কথা শোনে,
করে যায় কেবলই মাটি কর্ষণ...
কার্যকারণ শেষে, অসারতার মাঠে
সকলের ভ্রুক্ষেপ নিয়ে
চুড়ান্ত অবহেলায় ফুটে থাকে,
... কিছু ঘ্রাণহীন ফুল!
হায়, আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা!
১৮.
শিকল
রঞ্জন ভট্টাচার্য
আমরা স্বাধীন
ঘরে বাইরে
মনের মাঝে
কই ?
বিদেশীরা
বপন করে
পরাধীনতার
মই !
আমরা স্বাধীন
স্বাধীনতার
অর্থ বুঝি
কী ?
দেশের খনি
লুটে নিচ্ছে
নিচ্ছে তুলে
ঘি!
আমরা স্বাধীন
এগিয়ে চলি
শিক্ষার আলো
কই?
কথার মাঝে
অনেকটা ফাঁক
যেন যশুরে
কই !
আমরা স্বাধীন
ঘরে ঘরে
পরাধীনতার
বেড়া
চলতে গিয়ে
চলার পথে
মনের বাঁধন
ছেঁড়া।
মনকে যখন
বাঁধব বলে
শক্ত করে
বাঁধি।
শিয়াল কাঁটা
জড়ায় পায়ে
মনের মাঝে
আধি।
তবুও আজ
চলতে হবে
জীবনযুদ্ধে
তাই
পরাধীনতার
শিকল আজও
তাইতো ভাঙতে
চাই!
১৯.
ঊনিশ সাতচল্লিশ দু'হাজার কুড়ি
তপনজ্যোতি মাজি
সনাতন সামন্তের জন্ম হয়েছিল উনিশ সাতচল্লিশের
পনেরোই অগাস্ট রাত্রিতে I
বৃষ্টির রাত I
ঝিম ঝিম বৃষ্টির বাদ্যি I
তালপাতার ছাউনি দেওয়া মাটির উঠোনে বসে
সনাতনের বাবা শুনেছিল দেশ স্বাধীন হয়েছে রাতে I
অভাবের ঘরে পুত্র সন্তান আর স্বদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি I
পরের জমিতে দিনমজুর সনাতনের বাবা বুঝেতে পারেনি ,
ঠিক কোন কারনে তার আনন্দিত হওয়ার কথা।
নদীতীরবর্তী খেলার মাঠে যুবক আর মুরুব্বিরা মিলে
বাঁশের মাথায় তিন রঙের পতাকা তুলেছিল I
সনাতনের বাবা গুটিগুটি পায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল
একবার I
বন্দে মাতরম ধ্বনিতে বুকে আগুনের উত্তাপ টের পেয়েছিলো
সনাতনের বাবা I
ঠিক যেমন সদ্যজাত সন্তানের মুখ দেখে তৃপ্তির উষ্ণতায় নদীর
জোয়ার জেগেছিলো সারা শরীরে I
সদ্যজাত সেদিনের সনাতন এখন তিয়াত্তর বছরের বৃদ্ধ I
টালির ছাউনি তিন খুপরি ঘরে তিন ছেলে নাতিনাতনি নিয়ে
জনবহুল সংসার I
ছিটেফোঁটা শ্রী ফিরলেও অভাব এবং অনিশ্চয়তা এখনো
নিত্যসঙ্গী I
তিয়াত্তর বছর পরেও সনাতনের বাবার মতো
বৃদ্ধ সনাতন বুঝতে পারছেনা
কি ভাবে অভাব ও অনিশ্চয়তার উঠোন পার হয়ে
একবার আনন্দিত হতে পারবে
স্বদেশ ও স্বাধীনতার জন্যে !
২০.
স্বাধীনতা এবং অরুণ ভট্টাচার্য
স্বাধীনতা ! 'ভয়'কেন প্রতিটি প্রহর গুনে
তুমিও রয়েছো চুপ এত সব দেখেশুনে ।
'ব্রিটিশ ভারত ছাড়ো' তুমিই তো বলেছিলে তারপর এযাবৎ সবকিছু মেনে নিলে।
কি কারনে লজ্জা কিংবা কি কারণে ভয় ?সহজিয়া প্রাণ ভাবে কখন কি হয় !
কিভাবে কি হাঁটাচলা ভুল হয়ে যায়
হার্মাদ ছায়ারা সব রিপোর্ট পাঠায়,
এইভাবে অন্ধকার পাড়ায় পাড়ায়
গ্রাম থেকে শহর যে সবাই ঘুমায়।
জাগ্রত করো আজ নতুন সে গানে -
স্বাধীনতা হোক শুধু জীবনের মানে ।
২১.
বন্দেমাতরম
জুলি লাহিড়ী
দু'মুঠো স্বাধীন মাটি মাথায় ঠেকিয়ে প্রদীপ গড়ে তুলি। তুলসী তলায় জ্বালিয়ে আমার দেশের বীর সংগ্রামীদের পাই স্পর্শ। মনের মনিকোঠায় অন্ধকারে জ্বলে ওঠে ঝলমলে আলো
সবুজ হরিৎক্ষেত্র স্বর্ণ ধানের অন্তরালে ঠিক জোনাকির মতো।
তেরঙ্গা পতাকার ভেতর আমার ভারত মায়ের চাতক বুকের পিপাসা মুখ ঢেকে নেয়। শান্ত দুটো করুণ চোখ, বৃষ্টিতে নিভু নিভু প্রদীপ খুঁজতে থাকে ভারতকন্যার সম্মান। স্বাধীন দেশে স্বাধীন যাপনে কবে খিলখিলিয়ে হেসে উঠবে ভারতমাতা?
প্রদীপের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছটায় প্রতিটি কোনায় ধ্বনিত হবে বন্দেমাতারম...
২২.
জাগিয়ে রাখি আগুন পাখি
রাখহরি পাল
আগুন বুকে সুপ্ত থাকে আগুন পাখি
জাগতে জানে সময় কালে বিসুভিয়াস।
ঝলসে গেছে সেদিন যত তরুন আঁখি
এমনই এক স্বপ্ন দেখে,-- আজ ইতিহাস।
ভুলতে পারি কিশোর বালক মজফ্ফপুর?
ফাঁসির দড়ি থমকে দাঁড়ায় প্রশ্ন শুনে,
---মোম লাগানো হয় কেন অই দড়ির উপর?
ভারত সেদিন কেঁদেছিল একলা মনে।
মা গো, তোমার প্রদ্যোত কি মরতে পারে?
শেষ চিঠিতে, মাকে জানায়,সোনার ছেলে।
হিজলী জেলের ফুলকি আগুন বারুদ ভরে
শেষ করেছো জেলা বোর্ডের মিটিং হলে।
এমনি হাজার রক্ত লেখা তোমার বুকে
কোনারকের রথের চাকায় সত্য আঁকা
বুকের মাঝে সুপ্ত আগুন জাগিয়ে রেখে
আজকে দাঁড়াই তোমার তলে, ও পতাকা।
২৩.
এই দ্যাখ,স্বাধীনতা খাচ্ছিরে
অশোককুমার লাটুয়া
রাজপথ ধ'রে স্বাধীনতা দিবসের শোভাযাত্রা চলেছে শহীদস্তম্ভের দিকে।
হাতে হাতে প্লাকার্ড, ফেস্টুন, ব্যানারে দেশপ্রেমীদের ছবি আর লেখা নানা কথা। কারো কারো হাতে উড়ছে তিনটি রঙে আঁকা স্বাধীন পতাকা।
মাঝেমাঝে গান —' এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি'...
মিছিলে আওয়াজ উঠলো সিঙ্গেলে — অমর শহীদ অমর রহে।
জবাব উঠলো কোরাসে — অমর রহে অমর রহে।
আবার আওয়াজ উঠলো সিঙ্গেলে —
শত শহীদের রক্ত, হবেনা তো ব্যর্থ।
জবাব উঠলো কোরাসে — হবেনা তো ব্যর্থ।
মিছিলের একেবারে প্রথমে একজন ব্যবসায়ী শহীদস্তম্ভের পাদদেশে পৌঁছে শিল্পপতির কন্ঠস্বরে বলে উঠলো — স্বাধীনতা পেয়ে গেছি।
সুদীর্ঘ লাইনের একেবারে শেষে কপালের ঘামে ভেজা একজন খেটেখাওয়া সাধারণ বৃদ্ধ মানুষটি বলে উঠলো পাঁজরকাঁপানো দীর্ঘশ্বাসে — স্বাধীনতা আর কতদূরে? আরও কতটা পথ যেতে হবে?
মিছিলের মাঝখানে দাঁড়ানো অবসরপ্রাপ্ত একজন চশমাচোখে শিক্ষক
মধ্যবিত্ত কন্ঠে বলে উঠলো —
হয়তো স্বাধীনতা আছে, হয়তো বা নেই।
রাস্তার ধারে শ্যাওলা পড়া চুল, চোখের কোণে পিচুটি, ময়লা ভর্তি শরীর এক প্রাচীন পাগল ছেঁড়াফাটা ঠোঙা থেকে
একমুঠো শুকনো মুড়ি মুখে নিয়ে বলে উঠলো তীব্র স্বরে — এই দ্যাখ, ক্ষুধায় থেকে থেকে কতদিন পরে আমি স্বাধীনতা খাচ্ছিরে, স্বাধীনতা খাচ্ছি!!!
স্তব্ধ হয়ে গেলো মিছিলের সমস্ত শব্দ। বাঁশে বাঁধা পতাকা তুলতে তুলতে দড়ি হাতে থমকে গেলো একজন পাকাচুল বয়সের স্বাধীনতা সংগ্রামী। পাথর শহীদের গলায় দামী মালা দিতে গিয়ে থতমত মন্ত্রী মহোদয়।
প্রদীপ জ্বালাতে গিয়ে মেয়েটির আঙুলে দেশলাইকাঠি পুড়ে পুড়ে শেষ। মাইক্রোফোন হাতে বক্তব্যহীন অবাক যুবক।
ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো চুপচাপ অনেকেই নানান ভঙ্গিতে।
ক্লিক-ক্লিক-ক্লিক ঝলসে ওঠা সমস্ত ক্যামেরার চোখে মুহূর্তে জমে উঠলো অসংখ্য স্থিরচিত্র।
পরেরদিন প্রতিটি ভোরের কাগজে প্রথম পাতার হেডলাইনে বড় বড় কালো অক্ষরের আগুনে লেখা হলো —
এই দ্যাখ, স্বাধীনতা খাচ্ছিরে!!!
আর লেখার ডানদিকে, বামদিকে, পাশে ও নীচে জায়গা ক'রে নিয়েছে আশ্চর্য সেই পাগলটার ছবি।
২৪.
রক্তাক্ত কাশ্মীর
সন্দীপ রায়
বরফ ঢাকা ভূস্বর্গে আবার একটা রক্তাক্ত দিন
ভালোবাসার গোলাপ দেয়া-নেওয়ার দিনে রক্তাক্ত কাশ্মীর।
স্তম্ভিত দেশ থমকে দাঁড়িয়ে রক্ত হোলির বিভীষিকায়।
জীবন থমকে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর উপত্যকায়
জীবন থমকে সন্ত্রাসবাদী বিস্ফরণে, বন্দুকের নলে
অথচ জীবন অন্য কথা বলে ।
জীবন কাঁটার বিনিময়ে ফুল দিতে জানে
রক্তে রাঙানো তাজা লাল গোলাপ ;
ভালোবাসার ছোঁয়া লাগা গোলাপ উষ্ণতায় ।
পৃথিবীর সব কান্না,যন্ত্রণার সুর এক
সব মৃত্যুর আবেগ একই ফ্রেমে বাঁধা
মা কী ভুলতে পারে সন্তান হারানো ব্যথার আগুন।
আমরা আর কতদিন কাঁদবো?
আর কতদিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মার খাবো সন্ত্রাসবাদী থাবায় !
অথচ দেশ চাইছে একবার ঘুরে দাঁড়াবার।
অনেক হলো রাজনীতির ঘোলা জলে ডুব সাঁতার--
এবার সামনে কঠিন সময়, বন্দুক হাতে তুলে নেবার শপথ
বিভেদ ভুলে দেশ রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার।
২৫.
নতুন স্বপ্ন নিয়ে
মালা ঘোষ (মিত্র)
স্বাধীনতা তুমি আসবে বলে
বুকের মধ্যে কত কি যে হয়,
সূর্যাস্তের পর উঠবে
নোতুন দিনের সূর্য।
ত্রিরঙা পতাকায় সাজবে
গোটা দেশ।
একটা পতাকা পেলে
অভাগী মেয়ের দল শ্বাস নেবে
প্রান ভরে, পাতার মর্মর-এ
ওম পাবে।
সে শুধু স্বাধীনতা খোঁজে স্বপ্ন দেখার।
স্বাধীনতা যেন এক সুখের মায়া।
তৃপ্তির গানে ঘুম নেই কারো...
স্বাধীনতার আকাশ দিগন্ত প্লাবিত
৭৪টা বছর...
একবুক স্বপ্ন নিয়ে সবাই প্রতীক্ষারত
কবে হবে মুক্তির স্বাধীনতা।
২৬.
স্বাধীনতা
বিমল মণ্ডল
আমার ছোট্ট একটা চাওয়া
যা দিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে যেতে পারি
দুই হাত সামনে বাড়ানো
আশাময় দীপ্ত আলোকচ্ছটা
অজান্তেই মাথা ঘিরে আছে
ঝলমলে রক্তের
সামনে লোহার ফটক
কয়েকটি ঘেরা সিঁড়ি
চক্রাকার পথে শুধু হেঁটে যাওয়া
হাতে পতাকা - সারা শরীরে
লাল রঙের ঋতু
যা দিয়ে মুছে যায় সব রং
ফিরে পাই আবারও স্বাধীনতা।
২৭
স্বাধীনতার অন্তর্জাল
সৌরভ ঘোষ
সে রাতে যেমন ডিঙি ভরা আলো ছিল
তেমন রঙিন প্রজাপতি...
ফেনিল জোয়ার যেন সাদা সাদা বক...
ইদানিং
জাল ফেলে আদর খুঁজি
মুঠো মুঠো শূণ্যে নৌকা কালো
জলের ভেতর হাত রাখি
মাছরাঙা মরন ঘুমে... অচিন্ত্য নগরী
আলোতে দুধভাত মেখে শুয়ে শুয়ে খাই ;
দাঁড়াতে গেলেই বক্রতল, পা হড়কায়
সীমানার কাছে অনেকে সাঁতার কাটে
কেউ ডুবে ডুবে কেউ ভেসে ,
সকলেই সমস্বরে বলে , "দাও, আরো দাও"।
স্বাধীনতার অন্তর্জাল একটু একটু করে ভেসে যায় ...
ক্ষুদিরাম
মোঃ হুমায়ূন কবীর ( অর্ণব আশিক)
সব অনাচার বঞ্চনার দরজা উন্মুক্ত ছিল
নৈরাজ্যের পাগুলো শস্যখেত দলিত করেছে
অখন্ড ভারত বর্ষের
স্বাধীনতার স্বপ্ন বুকে নিয়ে তুমি ঝাঁপ দিলে
বিপ্লবের মহা মন্ত্রে।
ক্ষুদিরাম তুমি সংগ্রামের লিপি
কৃষ্ণ আঁধারে সূর্যোদয়
বিপ্লব শিক্ষায় আলোর পাদটীকা।
রাষ্ট্র বক্ষে ঘুটঘুটে আঁধার
ক্ষুদিরাম তুমি
কৃষ্ণ গগনে আলোর পরশ
বিপ্লবের মহান সাধক।
ঘড়ির দোলকে সময় প্রহর
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে তুমি শুভ্র আলোড়ন
সমাজ গহীনে নতুন ডাক
বিপ্লবের মহান প্রতীক।
সবাইকে অবাক করে আঘাত হানলে
বৃটিশ মননে, নিশানা ঠিক ছিল
মানুষটি ভুল ছিল মৃত্যুর
একটি কিশোর ব্যাঘ্র আত্মহুতির দহনে রিক্ত হলো।
বিপ্লবীর মৃত্যু অবিনশ্বর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন