বর্ষা ও বাঙালি (অন্তিম পর্ব)
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
ক্যালেন্ডার মেনে কি আর বর্ষা হয়? অনেকক্ষেত্রেই আগেও হয় বা পরেও হয়! বর্ষার সাথে বাঙালির প্রেম মিলে মিশে একাকার । তাই কাগজেকলমে শ্রাবণ শেষ হলেই যে ধারাপাত(মনেও) শেষ হবে তার কোন মানে নেই । তাই বিলম্বিত বর্ষাও বেশ স্বাভাবিক ।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মের দিন প্রচুর ঝড় বৃষ্টি হয়েছিল বলে কথিত আছে । আমরা ছবিতেও দেখি। শ্রীকৃষ্ণ বাঙালি না হলেও, বাঙালি হৃদয়ে কিন্তু ' লভ সিম্বল '। প্রেম কোন বাধার কাছে , তথাকথিত নৈতিকতার সামনে মাথা নোয়ায় না!
তাই জন্মাষ্টমীর দিনে বাঙালির মনে বর্ষা, প্রেম ও শ্রীকৃষ্ণ-মিলেমিশে একদম একাকার । এই প্রেম শুধু মানবিক প্রেম নয়। বিশ্বজনীন । সার্বজনীন । সব কিছুর উর্ধ্বে ।
বাস্তবের মাটিতে কৃষিকাজ ও ফসল উৎপাদনের বিষয়টা এখনো অনেকটাই বর্ষা-নির্ভর! অন্তত আমাদের দেশে । শস্য শ্যামলা বাংলাও চাতকের মত বর্ষার মুখ চেয়েই থাকে। মৎসচাষ, বিভিন্ন শিল্পের প্রয়োজনে জলের সরবরাহ ইত্যাদিও বর্ষার উপরে নির্ভর করে।
কখনো সখনো অতি বর্ষা জনজীবনে দুর্ভোগ বয়ে নিয়ে আসে বটে! তবে সঠিক ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা তাকে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ করতেও পারে।
বর্ষা কিন্তু বাঙালির কবিসত্ত্বার গোড়ায় জল দেয়। তাই আজ একটি কবিতা উল্লেখ করে বলি -
বৃষ্টি প্রেম আনে
এক বৃষ্টির জন্য মরিয়া জগৎ- রুক্ষ্মভূমি যেন চাতক
পাহাড়ের গা বেয়ে পড়া- মুক্তোধারা,প্রাণদায়ক
প্রচন্ড শব্দে দ্বিখন্ডিত আকাশ- বিদ্যুৎ খেলে শিরদাঁড়ায়
অপেক্ষা এক বৃষ্টিযুগের- ডুবছে গাছ পাহাড়ের তলায়
বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে কলজেটা ঝিম ধরে- বৃষ্টির ফোঁটা গোনে
দৈনন্দিন স্পর্শে চিলেকোঠায় রোমাঞ্চ আনে-অনাহূত যৌবনে
বৃষ্টি পড়ে অঙ্ক খাতার ওপর- ভিজে যায় সব বীজগণিত
জানালা দিয়ে অমোঘ হাতছানি-নোটের ভেতরে প্রেমপত্রাঘাত
শহুরে জীবন কিন্চিৎ থমকে দাঁড়ায়-মেঘের আনাগোনায়
কৃষ্ণচূড়ার রং আকাশের ক্যানভাসে- রামধনুকে সাজায়
বর্ষার তুলি তার পেলব ছোঁয়ায়- আঁকে বখাটে জলছবি
কিশোরীর ভেজা চুল মাতায় মন-চঞ্চল হয় কিশোরকবি
ভেজা হাতে ফসকে যায় প্রেম-মুহূর্তের অসাবধানে
মনে মনে কত অগ্নিসংযোগ- হয় চুপিসাড়ে
বর্ষার বারিধারা দ্রবীভূত করে সব- অবিশ্বাস ও জেদ
ধীরে ধীরে ভরে ওঠে সব- মনের সোনালী শস্যক্ষেত
বর্ষার জলে মনে যেন বাজে- জলতরঙ্গের সুর
আজো বাঁচিয়ে রাখা বিশ্বাস- ভরসা ভরপুর
এমন একটা বৃষ্টি নামুক হৃদয়জুড়ে- প্রাণের কলতানে
ধুয়ে যাক সব দীর্ঘশ্বাস - সুস্থ মন ও প্রাণে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন