মহাজন্ম
ভূমিষ্ঠ করেছিলে
গর্ভ ছিঁড়ে রাতভর কি বিষ্ময়ে দেখেছিলে, সৃষ্টিকে ।
গর্ভফুল খসামাত্র, মায়াপথ-
ষড়মন্ডলের হাড় মাস রক্ত মুত্র ।
উলু বাজলো,ঘিরে ফেলল বোবা শব্দ ধ্বনি ।
ফিরে আসি খড়ম ও জড়ুলে ।
এই তবে গোবরজল, তুলসীতলা,
হলুদমাখা স্নান ।
কেউই জানেনা আমি ছাড়া, পদ্মনাভী-
কিভাবে কাদায় ফুটে থাকি ।
কেন যে এসেছি আর কেনইবা মিশে যাবো
মাটি ও বাতাসে, সপ্তধাতুতে, এই মায়াভূমে ।
এ আমার মহাজন্ম, বরণ কর ষোড়শপাচারে ।
খিল খিল হা হা, এই কবিজন্ম,
ফুৎকারতা ।
সেই বোধিবৃক্ষতলে -
পরমান্ন দিও আমি ক্ষুধার্ত ।
যুদ্ধ যন্ত্রণা
জ্যোৎস্নার জানালা দিয়ে দেখছিলাম
আলোকিত বৃষ্টি স্নানঘরের সাওয়াবের মতো
বাড়িটাকে এবং শহরটাকে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো ।
গভীর রাত আর গভীর জোছনার বর্ষণ ।
আর এই নিঃশব্দ ঝমঝম রাত্রিতে -
হাসপাতালে ক্রমশই বেড়ে চলেছে মৃতদের ভীড়
গতকাল গলবান ঘাটিতে কুড়িজন ভারতীয় সেনার মৃত্যু
দক্ষিন কোরিয়ার উপরে মার্কসের শহর উত্তর কোরিয়ার মিশাইল হানা ।
এই ঝমঝমে ভুতুড়ে বর্ষার রাত্রি দেখে
একটুও বোঝা যাচ্ছে না পৃথিবী এখন ফুঁসছে ।
প্রতিটি দেশ এখন ধ্বংস যাত্রার জন্য তৈরী হচ্ছে ।
মার্কস কি এটাই চেয়েছিলেন
পৃথিবীর অর্থনৈতিক ধ্বংস হলেই মানুষ
ধীরে ধীরে তার ছত্রছায়ায় আসবে ।
ভাইরাস ঢুকিয়ে নাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের উস্কানি দিয়ে •••••
এইভাবে নিরুত্তর রাত্রি জেগে আছে
আসন্ন যুদ্ধের দুশ্চিন্তায় ।
এই জোৎস্নামাখা বৃষ্টি ক্রমশ ভয়ঙ্কর হচ্ছে
ঘন ঘন বিদ্যুতের ঝলকানিতে
মানুষেরা প্রস্তুতি নিচ্ছে যুদ্ধ যন্ত্রণার ••• ।
কবি
আমি এক কবি -
ভোরের সূর্য মেখে কি ছন্দে ফুল ফোটে
কি মন্ত্রের শ্লোক মধু পোকা অবিরত জব করে
মহাকবি চিন্তামণি বাঁশি হাতে
প্রেম ছড়াচ্ছেন, কিভাবে যুদ্ধ ও গীতা -
কিভাবে নির্মাণের গোপন সংকেত,বিশ্বরূপ ।
ওই অনাদি ক্ষুদ্রাতিতম বিন্দু, বৃহতের বৃহত্তম
অন্তরিক্ষ কবিতা রচনা করলেন
তারকা ও সপ্তর্ষিমন্ডল নির্মাণে ।
আমিও এক তারকার শরীরে পৃথিবী নামে
বাসস্থান, অতি ক্ষুদ্র মানব কবি ।
রচনাকরি চব্বিশ তত্ত্বের -
ব্রহ্মান্ড উপাখ্যাণ ।
ঐ চঞ্চলা নদী, দেহ,নাম,সৌন্দর্য নিয়ে -
সমুদ্রে নামহীন রূপহীন মহাকবি হয়ে ওঠে ।
এই আমি কবি -
এই রূপ আরূপ, সভ্যতা রচনা করি
কবিঘরে যেমন ছড়ানো আছে বৃক্ষ,
মধুপাখির সংসার, স্কুল কলেজ, অস্ত্রাগার ।
এ সবই আমার কবিঘর,
আমার ময়াভরা পাগলামি,
এ সবই আমার কবিকর্ম, নির্মাণ ।
আমার কাম বাসনা, জন্ম মৃত্যু ।
খুঁজে দেখ তোমার ভিতরেও আমি এক
মহাকবি বসে আছি।
নির্মাণ
গাঢ় চ্যাটচ্যাটে অন্ধকার হাঁ করে আছে
সুন্দরী উলঙ্গ জ্বলন্ত চাঁদ গিলে নিচ্ছে ।
চাঁদ হঁটছে একই পথে যেতে হবে
বিবস্বানের সাথে সাথে ।
কোথায় যেতে হবে, এই অন্ধকার চিরে ।
সূর্য যেমন চলতে চলতে, ঢুকে পড়ে
কোনো এক গ্রামে, ধানগোলার উঠোনে,
কোনো এক অরন্যের নদীতে স্নান সেরে
বৃক্ষ মাখে । জনপথ, বাশুলীতলা-
এভাবেই হেঁটে যায়,গোধুলির বাতাস
দোল খায় গাছে গাছে,
আদিম জলের গোপন যাত্রা-
চাঁদ যেমন দেখেছে সন্ধাবাতি - পালাগান-
বিবাহ বাসর, অন্তর্জলি যাত্রা ।
এভাবেই হেঁটে যায়, অন্ধকার ও রৌদ্রময় পথে ইতিহাস গিলতে গিলতে
আমাদের জন্ম মৃত্যু, ইহকাল পরকাল -
শুধু কবির নির্মণের কছে নতজানু হয় -
আর তখনই শুরু হয় বীজ বীর্য ও প্রাণ ।
মুক্তির পথ
একি বেদনা এই ব্রহ্মান্ড ভরা শরীরে ।
চতুর্দিকে এই যন্ত্রণার জঞ্জালে বেঁচে থাকা
যেভাবে অনেক খুঁজে খুঁজে নিজেকে
গচ্ছিত রেখেছিলে ভালোবেসে ।
ভেবেছিলে এ তোমার একান্ত সংসার ।
বোঝনি একই আত্মা হলেও অহং
প্রত্যেকের নিজস্বতা ।
এই অহং এর গভীরে কেউ কারর নয় ।
কখনো শরীর কেঁদে যায় কখনো হেসে ওঠে
শরীর হাসছে,না কি স্বয়ং আত্মার হাসি ফুটে ওঠে শরীর হয়ে ?
এই বেদনার ব্রহ্মান্ডভরা শরীরে -
বুঝে যাই ব্রহ্মান্ডেরও যন্ত্রণা আছে ।
তারকাও যন্ত্রণায় জ্বলে যায় নিরন্তর ।
আজ মনে হয় একই আত্মা
ব্রহ্মান্ডে ও শরীরে, এই শরীর বড় একা ।
মহাশূন্যে আমরা প্রত্যেকে খুঁজে চলেছি
স্বার্থপরের মতো, ফিরে যাওয়ার রাস্তা ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন