ঘুঘু ও ঘুঘুনি
ঘুঘু ও ঘুঘুনি ডেকে ডেকে আমাদের সমূহ দুপুর নষ্ট করে।কোত্থেকে আসে এই ঘুঘু? কোন গাছে বাসা?ওরা কি জানে না এ মৃদু বাঙালিপাড়ায় দুপুরেই যত ভালোবাসা!রাত্তিরে মৃত্যু এসে উঁকি দিয়ে যায়, মৃত্যুকে অন্ধকার ঘুমের মতো মনে হয়!রৌদ্রে তাই সেরে নেওয়া সৌরকান্তি ঘুম, সূর্যই আমাদের আনন্দ, প্রাণ ও আশ্রয়।ঘুঘুনি কি জানে না স্নেহ প্রেম বাৎসল্য রতিআসলে একেরই ভিন্ন মূরতি?আমাদের চৈতন্য ক'রে ফাঁক, মধ্যিখানে, প্রত্যহ দুপুরে,গ'লে পড়ে নিঝুম নিঃসঙ্গ ঘুঘুডাক।কৃষি ও কবিতাএকজন কৃষক কিছু কবিতা লিখেছিল।কৃষিকাজ জনিত অঢেল শ্রমের দরুণ তার কবিতা সেরকমভাবে ফলল না।তাকে কী বলা যাবে, কৃষক না কবি?একজন কবি গোপনে কৃষিকাজ করত।কবিতা নাকি কাউকে সহ্য করে না, ফলত সেচ সার সময়মতো না হওয়ায় আনাজের ফলনও আশানুরূপ হল না।তাকে কী বলবেন আপনারা, কবি না কৃষক?কৃষকেরা কবিতা লেখে মাঠের মাটির খাতায়সবুজ আখরেএবং সমস্ত কবিই আদতে কৃষক, চিন্তা ও কল্পনার ভূমিতে তাঁরা ফলান বাকশস্য।এরকম তত্ত্বের উদ্ভাবন ভেঙে--- একজন কৃষকবেশ কিছু ভালো কবিতা লিখে ফেলল। আর,একজন কবিও বর্ষায় শীতে আশ্চর্য রকম ফলিয়েছেনবিস্তর আনাজপাতি!বলা বাহুল্য, এই দুজন কবিকৃষক আর কৃষককবির মধ্যে কেউই অবশ্য অধ্যাপক-টধ্যাপক গোছের ছিলেনও না।ন যযৌ ন তস্থৌ---সেই থেকে বাংলা বাজার সাহিত্য পুরস্কার অকাদেমিতাঁদের পুরস্কার ঝুলিয়ে রেখেছে, কারুক্কে দেয়নি!
প্রাতিভাসিকবৃষ্টিতে দিঘি যেন পেটফোলা শিবসাদা হাঁসের পাশে বসে রয়েছে গভীর কালো হাঁস।নির্ভুল দর্শক ছাড়া যে-কোনো দৃশ্যই তো কানা!তবু ধূসর জলে জেগে থাকা লম্বা ঘাসের ডগায় ব'সেউদ্দেশ্যবিহীন আধোখুশি একটা নীলকান্ত রোগা ফড়িং,কমলা রঙের চিক্-কাগজের ডানা।আকাশ পাথর ভেজার মতো নীল, দূরবর্তী আগুনেরজন্মঘরে;সর্ববেদাঃ নৈষ্ঠিক নিষ্যন্দ নীল--- সেই নীল ঠুকরে ঠুকরেজলে ফেলছে একটু একটু ক'রে,দুটি সাদা হাঁস আর কালো হাঁস...দিঘিটি হয়ে উঠছে নীলদিঘি, মাছগুলি তীব্র লাফ দেয়দর্শকের প্রাণের ভিতরে!কলাবিদ্যাযে কবি সে পূর্বজন্মে ছিল নিশ্চিত একজন চোরহাজার স্নানেও যেমন মোছে নাকনুইয়ে লেগে থাকা কাকের ডানার স্পর্শ,তেমন ওই চুরির হাতেই সে লেখে, ওই তার স্বধর্ম।এ জন্মে জড়ো করা তার কাজ, জড়ো ক'রে ক'রেজুড়ে দেওয়া শব্দ ঠিকমতো, যাতে শব্দের নিপুণ আখায়একটি চুরির রহস্য আস্তে এসে ঢোকে, শোয় কবিতায়!ডাকাতিতে ঘোর আপত্তি, চিরদিন অল্পেরই বেসাতি---শাব্দিক সুসমাচার গ'ড়ে সে ক'রেও ফেলে কিছু সুমহানদান খয়রাতিচাই তার ব্রতের আঁধার, এক জন্মে বহু জন্ম পার---ভাবের ঘর খোলা পেয়ে সুড়সুড় ঢোকে, চৌর্যের সুষমা দিয়ে গড়া প্রতিটি লাইনো অক্ষরযে কবি সে প্রকৃতই ক্ষণধার্মিক, প্রত্যাশিত ভবঘুরে শ্লীলএক নগ্নবাহু চোর!
দীপ জ্বেলে যাই : লাস্ট এপিসোডচলতি সিরিয়ালের লাস্ট এপিসোড থেকে বেরিয়ে এসেআমার ছোট্ট মেয়ে 'দিয়া' আরও যেন ছোট্টটি হয়ে যায়আর ফুল তোলে।কেন যে তোলে, কত বারণ করি ওকে!লাল সাদা হলুদ গোলাপি রঙ্গনের পাশে ফোটেচন্দনরঙা ছোট ছোট ফুলপ্রতিদিন ও যখন-তখন ছুটে ছুটে তুলে আনে ভোরের কোহিনূর আর সূর্যহাসিমাখা ফুলের এক-একটি থোকা...আর রেগে গিয়ে আমি ফুলেদের জিজ্ঞেস করি: নিত্যএই পুষ্পহত্যা বিষয়ে তোমাদের আদৌ কি কোনোআপত্তি বা অভিযোগ আছে?গাছেরা ফিসফাস করে, দিয়ার ছোট্ট হাতের মুঠোরভেতর ছোট্ট সেই ফুলেরা খিলখিল হেসে উঠে এ-ওর গায়ে ঢলাঢলি করে..আসলে তারা এমন ভাব করে যেন মানুষ নয়, একগাছ থেকে অন্য গাছের কাছেই যাচ্ছে!ফুল, মেয়ে আর আমার গায়ে লেগে, থেমে থেমেজুড়ন হাওয়া বয়--- মিহি অন্তরালে কে যেন লুব্ধ অনুচ্চারে যায় গেয়ে...বীরুৎ আমার পাশে ফুলের মতো দাঁড়ায় গেছোল মেয়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন