বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুর কমিশন
কোভিড-১৯ সঙ্কটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য যে সুপারিশ এনেছেন তা কতটা যুক্তিযুক্ত এই বিষয়ে সাক্ষাৎকারঃঃ-
বিমল মণ্ডল - করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে পরীক্ষার সময়, নতুন শিক্ষাবর্ষ এই নিয়ে আপনার অভিমত কী?
মীর রেজাউল করিম - এখন সারা পৃথিবী জুড়ে যে মারণ ব্যাধি তা নিশ্চিত ভাবে কবে মুক্ত হবো জানি না। তবে পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে ইউজিসি যে সুপারিশ গ্রহণ করছেন তা কতটা ছাত্র ছাত্রীদের জন্য সঠিক প্রযোজ্য হবে তা ভাববার বিষয়। যদিও বলেছেন যে স্নাতক স্তরের পরীক্ষা জুলাইতে আর শিক্ষাবর্ষ সেপ্টেম্বরে । এটি কি আদৌ সম্ভব ?
এখন এই করোনা থেকে কবে কি ভাবে মুক্ত হবে তার ঠিক ঠিকানা নেই। তাতে মনে হয় এই সিদ্ধান্ত যুক্তিহীন। কারণ সারা দেশে তথা পশ্চিমবঙ্গেও রেড জোন, গ্রীন জোন, অরেঞ্জ জোনে ভাগ করা হয়েছে। সেখানে যদিও অরেঞ্জ আর গ্রীন জোনে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা গেলেও রেড জোনে তা প্রয়োগ হবে না। সেক্ষেত্রে এই সুপারিশ যুক্তিহীন ।
বিমল মণ্ডল - আপাতত অন্তরবর্তী সিমেস্টার অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের সেরে ফেলার কথা বলেছেন তাতে কতটা পড়ুয়াদের লাভ বলে মনে হয়?
মীর রেজাউল করিম - এই বিষয়ে আমি বলবো যে এই পদ্ধতি একেবারে আইন সঙ্গত নয়। এখানে ছাত্র- ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। কি করে এই অন্তর্বতী সিমেস্টারের পড়ুয়াদের মূল্যায়ন ইন্টারনাল পরীক্ষা এবং আগের সিমেস্টারের নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা যায় না। এখানে কোনো ভাবেই এইরূপ করা যায় না। তাতে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে । তাই বিষয় নিয়ে আর একবার কমিটির সঙ্গে আলোচনা করা উচিৎ ।
বিমল মণ্ডল - কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠলে আগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বরে শিক্ষাবর্ষের কথা ভেবেছেন তা কতটা যুক্ত সংগত বলে মনে হয় আপনার ?
মীর রেজাউল করিম -এক্ষেত্রে আমি বলবো যে এই করোনা নিয়ে যে জোন গুলো ভাগ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সমানভাবে সব বিশ্ববিদ্যালয় একই সময়ে চালু করতে পারবে না। কারণ বিভিন্ন জেলার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে এই শিক্ষাবর্ষ। আবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এখনো শেষ হয় নি সেখানে রাজ্যসরকার ঘোষণা করেছেন জুনে পরীক্ষা নেবেন। সেই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর খাতা কেটে রেজাল্ট তৈরি করতে বেশ সময় লাগবে তাহলে কী করে আগষ্টের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া আর ক্লাস শুরু করা যাবে। এই ভাবনাও ভুল।
আবার যদি শিক্ষাবর্ষ চালু হয়ও সেক্ষেত্রে আদৌকি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে? এই প্রশ্ন এসে যায়। আবার এই সব পরীক্ষার শেষে আর একটা পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।তা হল যে সমস্ত সাধারণ বাড়ির ছেলে মেয়ে কষ্ট করে বাইরে পড়াশোনা করে সেক্ষেত্রে কি এরপর আদৌ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে? এই নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে সংশয় এবং নানান চিন্তা দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যেন গোটা ব্যবস্থাটা অন্ধকারে ।
বিমল মণ্ডল - ইউ জি সি ভেবেছেন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর পর সপ্তাহে ৬দিন শিক্ষকদের ক্লাস করতে হবে। তাতে আপনার মতামত কী?
মীর রেজাউল করিম— এক্ষেত্রে আমি একমত । কারণ সর্বস্তরের কথা ভেবে সপ্তাহের প্যাটার্ন অনুসরণ করতে হবে। তা না হলে ছাত্র- ছাত্রীরা ভীষণ অসুবিধায় পড়ে যাবে। তাই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত ইউ জি সির এই সুপারিশ মেনে চলা।
বিমল মণ্ডল - অনলাইনে যে পড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে তা কতটা সঙ্গত?
মীর রেজাউল করিম - একেবারেই সঙ্গত নয়। অনলাইন বিষয়ট প্রযোজ্য হবে শহরের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনোমতেই জেলার গ্রামগুলোতে এই পদ্ধতি কাজে লাগবে না। কারণ এই অবস্থাতে বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রীদের ল্যাপটপ নেই,স্মার্ট ফোন নেই।নেটওয়ার্ক প্রোব্লেম । তারা অনলাইন ক্লাস থেকে পিছিয়ে পড়বে। তাই সেটি সম্ভব হবে তখনই যদি ইউ জি সি এবং সরকার সমস্ত ছাত্র - ছাত্রী যাতে একইরকম পড়ার সুযোগ পায় তার দায়িত্ব নেয়। আবার জোন অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতির কথা ভেবে। শুধু অনলাইন চালু করলাম দায়িত্ব শেষ তা যেন না হয়। কলেজগুলোর রোল স্ট্রেথ অনুযায়ী দেখতে হবে এবং একজনও না যেন এই পড়াশোনা থেকে বাদ না যায়। সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
বিমল মণ্ডল - এম ফিল, পিএইচডি যে সমস্ত ছাত্র- ছাত্রীরা করছেন তাঁদের এই লকডাউনের জন্য ছয় মাস সময়সীমা বাড়িয়েছেন । সে ক্ষেত্রে আপনার মতামত কী?
মীর রেজাউল করিম- আমি এক্ষেত্রে ধন্যবাদ জানাই ইউজিসির এই সুপারিশকে। কারণ যে সমস্ত ছাত্র - ছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার কাজ করছে তাদের এই কাজের সময় যে বিশেষ ভাবে সময় নষ্ট হলো।
তা এই ছমাস সময় পেয়ে তারা তাদের যথাযথ কাজটা শেষ করতে পারবে । তাই এই সিদ্ধান্ত যথার্থ। আরও বলা যায় যে এই লকডাউন চলাকালীন এই বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রয়োজনে ল্যাবরেটরিতে গিয়ে পরীক্ষা করতে পারছে না কিংবা ফিল্ড ওয়ার্ক করতে পারছে না। তাদের ক্ষেত্রে এই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ ।
বিমল মণ্ডল - এম ফিল, পিএইচডির ক্ষেত্রে অনলাইনে মৌখিক পরীক্ষা সারা যেতে পারে বলে ইউজিসি সুপারিশ করেছেন। তাতে আপনি কি বলেন?
মীর রেজাউল করিম - এই পদ্ধতি একেবারে ঠিক নয়। কারণ এই রকম একটা উচ্চশিক্ষায় অনলাইনের মাধ্যমে কি মূল্যায়ন নেওয়া যায়? তাতে গবেষণার কাজ শেষ করে ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া যায় কী? আমি মনে করি এই ভাবে উচ্চশিক্ষায় ডিগ্রি দেওয়া যায় না। তাই তাদের সময় দেওয়া হোক। সবকিছু ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলে নিয়ম অনুযায়ী এই ডিগ্রি লাভ করুক ছাত্র- ছাত্রীরা। তাই এটাই সুপারিশ কমিটির দৃষ্টি গোচর হোক এই কামনা করি।
বিমল মণ্ডল - সবশেষে বলি এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি বিবেচনায় উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কী ভাবা যেতে ০পারে ?
মীর রেজাউল করিম - আমি এই প্রসঙ্গে বলবো যে ইউজিসি এবং সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে লকডাউন কেটে গেলে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পড়াশোনার কাজ শুরু হবে কিন্তু তার মধ্যে যদি আবার গরমের ছুটি দেওয়া হয় তাতে তো হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি হবে। তাই ছাত্র- ছাত্রীদের কথা ভেবে সার্বিকভাবে ছুটি কমাতে হবে। তবেই সর্বস্তরের লাভ হবে। আর অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশোনা যাতে সার্বিক ভাবে হয় তার দিকে নজর দতে হবে।
এই বিভাগে ছবি সহ লেখা পাঠান।
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com
সবার মতামত একান্ত কাম্য।
উত্তরমুছুনখুব জরুরি সাক্ষাৎকার। সময়ের দাবি।
উত্তরমুছুন