অভিশাপ
ঝড় এলেই মেয়েটা ছুটে বেরিয়ে যেত। খোলা চুল। শাড়ির আঁচল কোমরে জড়ানো। সর্পিল দেহলতার মত ঝড় যখন দাঁত কিড়মিড় করে ছুটে আসত, সে চেয়ে থাকত স্থির দৃষ্টিতে। দুন্দুভি বাজত বুকে। দু'হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে ঝড়কে যেন এফোঁড় ওফোঁড় করে দিত। ঠিক যেমন সনাতনকাকা ঘুমন্ত তাকে দুই উরুর মাঝখান এফোঁড-ওফোঁড় করে দেয়। খোঁড়া বাপ অভিশাপ দেয় শুধু। বাঁচাতে পারে না।
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
রেড জোন
আজ একুশ দিন পর রিক্সা নিয়ে বের হয়েছে সহদেব। লকডাউন ঘোষণা হবার পর এই প্রথম। পেটে মাল পড়েনি, পা চলছে না। সকালে সরমা চালের ফাঁকা হাঁড়িটা ঠক করে তার সামনে উপুড় করে দিল। একটাও দানা নেই।
দুটো ভাড়া খেটে সবে দু'কেজি চাল, আলু এক কেজি কিনে বড় রাস্তার মুখে গ্যাছে, লাঠি হাতে পুলিশ তেড়ে এল। "শালা রেড জোন, গাড়ি নিয়ে মারাতে এসেছো!" লাঠি গায়ে না পড়ে হাতে পড়ল। সব চাল আলু তখন রাস্তার ধুলোয়।
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
মৃত গন্ধ
প্রতিদিনের মত আজও তিনি স্নান সেরে ছাদে এসেছেন। হাতের ঘটিতে গঙ্গা জল। জ্বলন্ত ধূপকাঠি। টবের গাছ থেকে একটা জবাফুল তুলে তুলসী মঞ্চে রাখলেন। তারপর তুলসী গাছে তিনবার জল দিয়ে ধূপ ঘোরালেন। আর সূর্য প্রণাম করতে গিয়েই তাঁর মুখোমুখি। আজ মুখে একটু হাসি মনে হল। স্লিভলেস পরেছেন। বুকের কাছের কাপড় অন্যদিনের থেকে বেশি সরে গেছে। মায়াময় মুখে আশ্চর্য এক আলো। যা কোমরেও নেমে এসেছে। শমিতের সারা শরীর জুড়ে একটা যৌন উত্তেজনা।
পরক্ষণেই তার মনে হল সমস্ত ঘর যেন মৃত স্ত্রীর গায়ের গন্ধে ভরে উঠল।
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
না-লেখা গল্প
প্রায় প্রতি ভোরে সে আমাকে জাগিয়ে দেয়। দরজার আড়াল থেকে মুখ বের করে এক টুকরো রহস্যময় হাসি ছুঁড়ে পালায় । তারপর সারাদিন হন্যে হয়ে তাকে খুঁজি । ঘরে, পথে, নিজের মধ্যে, কাজের জায়গায়, এমন কি শূন্য করিডরে তার জন্য অপেক্ষা করি। তবু সে অধরাই থেকে যায় ।
ঘরে ফেরার আলো-আঁধারিতে, নিয়ন বাতিতে, ত্রিফলার অনুজ্জ্বল আলোয় ক্ষণিকের জন্য তার মুখ দেখতে পাই। অবয়ব গড়ে ওঠার আগেই সে অদৃশ্য।
বিকেলে গঙ্গার পাড়ে, বাবুঘাটে, চা খেতে খেতে তাকে খুব নরম গলায় একদিন জিজ্ঞেস করলুম, "কে তুই?"
সে ফিচেল হাসি দিয়ে চায়ের ভাঁড় ফেলে বলল, "চিনলে না, আমি তোমার না-লেখা গল্প।"
পরমুহূর্তে লাফ দিয়ে ফেরিলঞ্চ ধরে সে গঙ্গার পারে হাওড়ার দিকে চলে গেল।
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
বিস্মৃতি
--হ্যালো…
--বলি, বেঁচে আছিস? তিন দিন হল ফোন কচ্ছিস না কেন!
--এক্সপায়ার ডেট এসে গ্যাছে। আমাদের এখানে রেড জোন। সব বন্ধ। পাতা নেই, ঢুক্কুস নেই…
--পাতা! তুই পাতা খাস? মৌপিয়া সন্দিগ্ধ । আর ঢুক্কুস কী? বল্…
ঋষভ প্রমাদ গোনে। ম্যানেজ করতে হবে।
--না, মানে চা পাতা। চা পাতা শেষ হয়ে গ্যাছে তো তাই চুমুকও নেই। ঢুক্কুস।
--ওঃ তাই বল্ । আমি তো ভাবলাম…
--কী ভাবলি! আমি পাতাখোর। বাংলা টানি। এই তো!
--উত্তেজিত হচ্ছিস কেন। আমি কি তাই বল্লাম। শিগ্গির আনলক ওয়ান হবে। একদিন দেখা কর্।
--কেন? গলায় মালা দিবি?
--দিতেও তো পারি।
--আর তোর সেই পোস্ট ডক্টরেট করতে যাওয়া অর্কর কী হবে।
যেকোনো বিভাগে অপ্রকাশিত লেখা পাঠান
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com
আন্তরিক ধন্যবাদ,বিমল...
উত্তরমুছুন