টিক টিক টিক.... অনুত্তমার মনে হল এই একটা জায়গায় অন্তত টিকটিকি টা ওকে সাপোর্ট করলো.... অবশ্য বর রাহুল ও..... মাত্র তিরিশ দিন.... হ্যাঁ এর মধ্যেই অনুত্তমা কে যে কোনো মূল্যে কনসিভ করতেই হবে.... তারপর সোজা লন্ডন সস্ত্রীক.... না কাকপক্ষীটিও টের পাবে না মিত্র ইন্ডাস্ট্রি র একমাত্র উত্তরাধিকারী কিভাবে ও কার মাধ্যমে এল... নপুংসক রাহুল মিত্র কে যদি কোনোদিন ব্ল্যাক মেইল করে পেশায় জিগেলো জেমস স্মিথ রাও... কথা টা মনে আসতেই বুকটা ধড়াস ধড়াস করে উঠলো... টিক টিক টিক... জন্তু টার কাজ নেই... কিন্তু ওকেই এখন বড়ো আপনার বলে মনে হল অনুত্তমা।
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
কাক
কাক দুটো রোজ আসে... সৌম্য বলে ওরা অপয়া.... সত্যিই তাই... কিছুদিনের মধ্যেই করোনা পরিস্থিতি আর লক ডাউন... গৃহবন্দি সৌম্য র সারাদিন বাড়িতে বসে অফিস ওয়ার্ক আর বেটার হাফ তিথির ঘরের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব.... এরপর এল উমফুন.... তারপর কী ভূমিকম্প? এসব হিজিবিজি ভাবতে ভাবতে জানলা র একপাশে এ সি মেশিনের ওপরে কাক দম্পতির কুড়িয়ে আনা কাঠকুটো তার ইত্যাদির ওপরে নজর পড়লো... আহা এই সাংঘাতিক ক্রাইসিস টাইমমেও ওরা দিব্বি বিন্দাস... পরিবার গঠনের চিন্তায় মশগুল... তিথি মনে মনে ঈশ্বর কে ডাকল...আগামী জন্মে ও কাক হয়ে জন্মাবে...
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
পরিযায়ী
পেশায় রাজমিস্ত্রি নন্দর পা ভেঙে গেছিল গত মাসে... পুরো ছমাস বেড রেস্ট... কিন্ত মাস দুয়েক কাটতে না কাটতেই লক ডাউন... উমফুনে গ্রামের বাড়ির আর অস্তিত্ব নেই অথচ পরিবারকে টাকা পাঠাবে কিভাবে...ভাবতে ভাবতে রোজগারের শেষ সম্বল টুকু বুকে করে দেশের উদ্দেশ্যে বেরিয়েই পড়লো...মাঝ রাস্তায় এক্সিডেন্ট... আর কিছু মনে নেই নন্দ র.... এমনকি নাম ও...ছবি তুলতে আসা একটা লোক কিসব প্রশ্ন করছিল... নন্দ ওই লোকটাকে কিছু বলতে গিয়ে ও পারলো না...গলা থেকে একটাই শব্দ অস্ফুটে শোনা যাচ্ছিল...পরিযায়ী পরিযায়ী।
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
বসন্ত এসে গেছে
লোকে বলে ধিঙ্গি... কিন্তু এর জন্য বছর বত্রিশের তিতলির কিন্তু বিন্দুমাত্র আফশোস নেই... ম্যাট্রিমনি আর পাত্রপক্ষের চক্করে যা সব অভিজ্ঞতা হয়েছে... না এর থেকে বাপমায়ের ঘরে জীবন কাটানো ঢের সম্মানের...আঠাশতম বয়ফ্রেন্ড উল্লাস ও বোধহয় ওকে ডিচ করবে যদিও আজ ওর জন্মদিন... কিন্তু এবার আর নয় অনেক হয়েছে... এর আগেই ওই ছেলেটার সঙ্গে আগবাড়িয়ে ব্রেকআপ করতেই হবে...ভাবনাগুলো যখন মাথার মধ্যে কিলবিল করছে ঠিক সেইসময় দুটো বলিষ্ঠ রোমশ হাত তিতলিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো... শুভ জন্মদিন বলার আগেই এক খাবলা রঙ মুখে মাখিয়ে তিতলির কানে কানে ছেলেটা বললো আমাকে বিয়ে করবে?...একি স্বপ্ন না সত্যি !মন বললো ঋতুর রকমফের...বসন্ত এসে গেছে।
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
অন্তিম
-কী হল কাছে এসো... আরও কাছে
একি যত ডাকছি দূরে সরে যাচ্ছ?
আমাকে দেখে তোমার ঘেন্না করছে... তাই না? সারা শরীরে প্লাস্টিক জড়ানো দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে... আর মহাকাশচারির মতো সেজেগুজে আমার আশেপাশের মানুষেরা কেমন ঘুরে বেড়াচ্ছে !অনুদেব সেন... এইমাত্র যমরাজের দপ্তরে আমার ডাক পড়লো...চারিপাশে আমার মতো দেখলাম অসংখ্য ক্যান্ডিডেট.... এদেরকেও মনে হয় আবর্জনার মধ্যে ফেলে আগুন জ্বালানো হয়েছিল...আমার মতো তাদেরও এই ছোঁয়াচে রোগ হয়েছিল করোনা.... বাবা মরতে সকলের এতো ভয়? অহনা সেন তুমি আমার স্ত্রী হয়ে আমার মৃতদেহ টা দেখতেও এলে না... কিন্তু আমি তোমায় ছাড়বো না... আমার কাছে ডেকে নেবো খুব শিগগিরই...তুমি যেদিন আমার অসুখ হয়েছে বলে বাড়ি থেকে বের করে দিলে আমি ঠিক তার আগেই তোমার সারা আলমারি আসবাবে হাত মুখ ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে অশুদ্ধ করে দিয়েছি.... এসব কেউ জানবে না...শুধু জানেন ঈশ্বর কারণ তাকে আমি কথা দিয়েছি যে আমরা একসঙ্গে মর্তের মতো পরোলোকবাস করবো... স্বামী স্ত্রীর মতো।
অপ্রকাশিত লেখা গদ্য ও পদ্য পাঠান
অভিমত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন