লেবেল

বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস।। ... এবং ইরাবতির প্রেম(পর্ব- ৭)।।গৌতম আচার্য।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।






ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস 

...
এবং ইরাবতির প্রেম(পর্ব- ৭)
গৌতম আচার্য



ট্রেনে বসে আছে সত্যেন।।  হোটেলের ঘরে বসেই সে ইরাবতি কে তার মেসেজের জবাব দিয়ে এসেছে।। খুব রোমান্টিকতা মিশিয়ে লিখেছে, "তাই? আমার মতো একজন আকাঠ মানুষকে ভালোবাসা যায়? আর কি দেখে বুঝলেন আমি ভালোমানুষ? আমি কিন্তু একটুখানিও ভালো মানুষ নই।। ভীষণ পেটুক।। তাছাড়া রোমান্টিক তো একদমই নই।।" সত্যেন এরপর আরও লিখেছে, "যে অন্যকে ভালো বলতে পারে, সে যে কতোখানি ভালো, তা বোঝবার মতো বুদ্ধি আমার আছে।। আর ভালো মানুষের সঙ্গে তো মেশবার ইচ্ছে সবার থাকে।। আমাকে জীবন সঙ্গী করার কথা বলছি না, তবে ক্যাসুয়াল বন্ধু ভাববেন না তো"?

"আমাকে জীবন সঙ্গী করার কথা বলছি না, তবে ক্যাসুয়াল বন্ধু ভাববেন না তো"? কথাটি ইচ্ছে করে, জেনে বুঝেই সত্যেন লিখেছে।। এবার কি উত্তর আসে তার জন্য-ই যতো প্রতীক্ষা- উৎকন্ঠা।। সত্যেন ইরাবতি কে নিয়ে এ্যতো সব আকাশ কুসুম ভাবনা ভেবে ফেলেছে যে, ইতিমধ্যেই ইরাবতি তার কাছে প্রায় জীবন সঙ্গীর পর্যায় চলে এসেছে।। প্রতি মূহুর্তে ইরাবতিকে নিয়ে নানা স্বপ্নের জাল বুনে চলেছে সত্যেন।। বারবার মোবাইল টি নেড়ে চেড়ে দেখে নিচ্ছে প্রতীক্ষার অবসান হলো কিনা? ইরাবতি কি উত্তর করলো।।

ট্রেন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে হাওড়ার দিকে।। প্রায় আটটা বাজে।। একদল আদিখ্যেতা দেখিয়ে ইতিমধ্যেই রাতের খাওয়া শেষ করে এবার শোয়ার ধান্দা করছে।। একজন তো আরও এক কাঠি এগিয়ে বললো, দাদা খেয়ে নিন, আমি শুয়ে পড়লে কিন্তু আলো নিভিয়ে দেবো।। সত্যেন মনে মনে ভাবলো, তাকে জিজ্ঞেস করবে কিনা, "আপনি নরেন্দ্র মোদি না মমতা ব্যানার্জী, যে দেশ কিম্বা রাজ্য চলবে আপনার ইচ্ছায়"? কিন্তু কিছুই না বলে চুপ থেকে এড়িয়ে গেলো।। নিজে কখনও রাত ন'টার আগে রাতের খাবার খায় না।। আজও খাবে না।। যদি ভদ্রভাবে লোকটি বলতো, মানা যেতো।। কিন্তু যে জমিদারী বা পাড়ার হিরো স্টাইলে কথাটি বলেছে, তারপর আর সত্যেন কিছুতেই ন'টা বাজার আগে খাবে না।।

মনের ভিতরে ইরাবতি নিয়ে ভাবনাটি জাঁকিয়ে বসে আছে।। ইরাবতি কি লেখে তার জন্য উৎকন্ঠায় ভরে উঠেছে মন।। মাঝখান থেকে এই উটকো ঘটনা সব রোমান্টিকতা নষ্ট করে দিয়ে মনে একটি ক্ষোভ বিক্ষোভের সৃষ্টি করে দিলো।। তবু একবার মোবাইল খুলে দেখলো সত্যেন।। না এখনও তার কথার জবাব দেয়নি ইরাবতি।। মেসেঞ্জার অন্- ই করেনি সেই থেকে।। ভদ্রলোক আবার সত্যেনকে স্মরন করালো, এবার হিন্দীতে, "ভাইয়া হামে জলদি শো জানে কি আদৎ হ্যায়।। আপ খা লো জলদি।। বাত্তি বুতা দেগা হামে"।।

সত্যেন এবার কড়া চোখে তাকালো তার দিকে এবং ট্রেনের টিকেটটি পকেট থেকে বার করে দু'বার এই দিক, ওই দিক করে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, আপনার নাম কি? ভদ্রলোক একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো, কাহে দাদা? সত্যেন এবার বললো, না দেখছি পিছনে লেখা ইনস্ট্রাকশনে আপনার কথা শুনে চলতে হবে লেখা আছে কিনা? "মতলব আপ্ বোলনে ক্যা চাতি হ্যায়"? এবার বেশ দাপটের সঙ্গে বলে ওঠে লোকটি।।

ধীর শান্ত গলায় সত্যেন এবার বলে ওঠে, দেশ চলছে মোদীর ইচ্ছায়, রাজ্য চলে মমতার ইচ্ছায়, এই ট্রেন চলছে গার্ডের ইচ্ছায়, আর এই কম্পার্টমেন্ট চলছে টিটির ইচ্ছাতে।। যাঁদের রিজার্ভেশন নেই, দেখুন হত্যে দিয়ে পড়ে আছে টিটির পিছনে।। ফাঁকা সিটে যেখানে টিটি চাইবে যাকে খুশি পাঠিয়ে দেবে।। এই কথা শুনে ভদ্রলোক ধৈর্য হারিয়ে বললো, বোলনা  ক্যা চাতি হায় বোলো না জলদি।। সত্যেন ততোধিক শান্ত গলায় বলে উঠলো, কি মনে করছেন নিজেকে আপনি? "আরে হিন্দি মে বোলোনা ক্যা বোলনা হ্যায়" প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে পড়ে লোকটি।। সত্যেন উত্তর দেয়, আমি তো বাঙালি, আর ট্রেন চলেছে বাংলায়, আপনিও বোধহয় সেই দিকেই চলেছেন, সেই কারণেই বাঙলায় বলছি।। হিন্দি বলবো না।।

এ্যতোক্ষন যারা চুপ করে মজা দেখছিলো, এবার তারাও এক এক করে মুখ খুলতে শুরু করেছে।। একজন বললো, লোকটি ওঠা থেকে জ্বালিয়ে মারছে--- "পায়ের হাটাও, ইয়ে হামারা সিট", "পৌনে ন' বাজ যায়গা তো শো জানে পড়েগী", "আহিস্তা বাত্ করো"--- শুধু ইনস্ট্রাকশন দিয়ে চলেছে, নিজেকে নবাব ভাবছে।। "আপনারা চুপ কেন থাকছেন" বলে ওঠে সত্যেন।। "কি বলি বলুন তো"? একজন মহিলা বলে ওঠেন।।

সত্যেন সেই লোকটিকে বলে, "আরে হিরো, কান খুলে শুনে নাও, রাত ন'টার আগে আমি খাবো না, দশটার আগে শোবো না।। আর না শোওয়া পর্যন্ত আলো নেভাতে দেবো না।। তবে যদি এখানের আটজন এর মধ্যে পাঁচজন বলে, আলো নেভানোর কথা, তাহলে অন্য কথা।। চারজন বললে টস্ হবে, আর তুমি যেমন সবাই চাইবে, তেমনই করবে।। কি কথা কানে গেলো"? লোকটি বিরক্ত মুখে তাকালো সত্যেন এর দিকে।। সত্যেন বললো, দিস্ ইজ কল্ড গণতন্ত্র.... I mean Democracy. কথাটি বলেই সত্যেন অধীর আগ্রহে মোবাইল খুললো।। না এখনও ইরাবতি মেসেঞ্জারে অন্ হয়নি।।

সত্যেন মনে মনে ভাবে, কি যে করে ইরাবতি, নতুন প্রেমিক প্রেম নিবেদন করছে অথচ সে....।। সত্যেন এর মনে পড়ে যায়, দুষ্মন্ত আর শকুন্তলার কথা।। ব্যাটাচ্ছেলে দুষ্মন্ত তো ভুলেই গেছিলো শকুন্তলা কে।। আর শকুন্তলা? কি আছাড়িপিছাড়ি মন নিয়ে প্রতীক্ষার প্রহর গুনতেন? নিজেকে তার শকুন্তলার সঙ্গে তুলনা করতে ইচ্ছে করছে।। তার মনের ভিতরে ইরাবতির জন্য আকুলিবিকুলি হচ্ছে, অথচ ইরাবতি?

তার পরেই মনটি হঠাৎ ভারাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে সত্যেন এর।। হতে তো পারে, স্বামীহারা অসহায়া ইরাবতিকে দিয়ে সংসারের জোয়াল টানিয়ে নিচ্ছে পরিবারের লোকজন গুলি।। ভাবতে থাকে.... আহারে কি খাটনি না খাটতে হচ্ছে ইরাবতি কে।। কল্পনায় সত্যেন দেখতে পায়, এই বড়ো একটি কড়াইয়ে এ্যতো বড়ো একটি খুন্তি চালিয়ে ঘর্মাক্ত হয়ে নাজেহাল ইরাবতি।। পারছে না তবু, দুই হাতে খুন্তি ধরে আপ্রান প্রচেষ্ঠা।। মাথা টাল খেয়ে যাচ্ছে।। তবুও...

অস্থির  হয়ে ওঠে সত্যেন।। না।। ইরাবতিকে উদ্ধার করতে হবেই।। যে ভাবে হোক, এই নরকযন্ত্রণা থেকে সে উদ্ধার করবে তার ইরাবতিকে।। ইরাবতি শুধু তার আর ইরাবতি কে সে সুখে রাখবেই রাখবে।। ইরাবতি কে সে বিশ্রাম দেবে।। নিশ্চয়ই সকলের খাওয়ার পর যা অতিরিক্ত হয়, তাই খেয়েই কাটে ইরাবতি র।। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ইরাবতি কে সে সুখী করবেই।।

চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন