লেবেল

বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

প্রকাশিত হল... অঙ্কুরীশা-র পাতায় গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় শ্রদ্ধাঞ্জলি কবিতা সংখ্যা।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।


সূচিপাতা
তরুন মুখোপাধ্যায় 
দুর্গাদাস মিদ্যা 
তৈমুর খান
বাবলু গিরি 
অমিত কাশ‍্যপ
অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় 
সমাজ বসু
সুধাংশুরঞ্জন সাহা
তপনজ্যোতি মাজি
ফটিক চৌধুরী  
বিকাশরঞ্জন  হালদার 
 দুরন্ত বিজলী
সৌহার্দ সিরাজ
দীপক বেরা
মৃত্যুঞ্জয় হালদার
গৌতম বাড়ই
সুবীর ঘোষ
সঞ্জয় রায়
বীথিকা পড়ুয়া মহাপাত্র
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী
অসিত কুমার রায় (রক্তিম)
তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য 
তাপস কুমার চট্টরাজ
অশোক রায় 
ভুতুম
সুনীতা ব‍্যানার্জী
শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ
নিমাই জানা
দীপা কর্মকার 
সাবিত্রী দাস 
মালা ঘোষ মিত্র
জয়শ্রী সরকার
সালেম সুলেরী
বিমল মণ্ডল 






সন্ধ্যাঞ্জলি
তরুন মুখোপাধ্যায় 

ওগো মায়াভরা চাঁদ 
ওগো মায়াবীনি রাত
এমনই ফাগুন  দিলে 
বিনা মেঘে বজ্রপাত? 

গানে যাঁর  ইন্দ্রধনু 
ছড়ায় রঙের সুর
ঘুম ঘুম চাঁদ তুমি
তাকে নিলে কোন্ দূর 

সুরলোকে? কেন নিলে?
আমাদের রিক্ত করে দিলে!



শ্রদ্ধা 
দুর্গাদাস মিদ্যা 

সন্ধ্যা আসিল নেমে ঘন রাত্রি হয়ে
 সুরের ইন্দ্রধনু ভাঙ্গিল কে আচম্বিতে
 সেই কবে থেকে কোকিল কন্ঠে গেয়েছেন গান, 
সুরে সুরে ভরেছে প্রাণ লক্ষ কোটি মানুষের। 
'মধুমালতীর সুরে থমকে দাঁড়িয়েছি পথে
 সব কাজ ভুলে। 
যৌবনের বন্যায় ভেসেছি কতবার এই গান শুনে
'এই পথ যদি না শেষ হয়। 
এখনো টগবগ ফোটে তাঁর গানের রেশ
আবেশে দুচোখ সজল হয় 
মনে হয় যেন শেষ নেই তার
তবুও আজ ব্যথিত হৃদয় তাঁর প্রয়াণে। 
মৃত্যু নেই তাঁর
তিনি গলার হার হয়ে থেকে যাবেন  চিরদিন
বাঙালি ভুলিবে না তাঁর ঋণ কোনোদিন। 



গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
তৈমুর খান


একটি মায়ার বাঁধন ছিন্ন হল
 যে সুর রোজ ভিজিয়ে যেত
 যে স্বরলিপি বাজতো প্রাণে
 এক জীবনের একটি আকাশ
 আপন করে ডাকতো কাছে

 কোন্ আবেগে কেমন করে
 আমরা সবাই মানুষ হতে শিখেছিলাম
 কোন্ মমতায় কেমন করে
 আমরা সবাই ভালোবাসতে পেরেছিলাম
 তুমিই তা জানিয়েছিলে অনন্ত সেই উচ্ছ্বাস

 তোমার ঝরনার তীরে আজ সেই শান্ত সুর
 নিরবধি তরঙ্গে দোলে আমাদের হৃদয়পুর
 নীরব রাতের তারায় তারায়
 আমরা শুধু লিখে যাই
 তোমার নাম লিখে যাই...




গীতিময়ী সন্ধ‍্যা মুখোপাধ‍্যায়
   বাবলু গিরি 
                         
কৃষ্ণকালো সন্ধ‍্যা নামের গীতিময়ী কন্ঠ, 
প্রানের গভীরে বাজে স্বর্ণালী উষার মতো।
কে বলে তুমি নেই,তুমি আছ সুরের সুরে।সন্ধ‍্যা আসে ইমনের সুরে প্রদীপ জ্বেলে।
ঐ দ‍্যাখ সন্ধ‍্যা কেমন -
মিটি মিটি হাসে উষার আকাশে।
ঝরে ঝরে পড়ে স্বর্ণালী সঙ্গীত -
শিশিরের মতো পৃথিবীর প্রতিটি হৃদয়ে।



শ্রদ্ধাঞ্জলি 
অমিত কাশ‍্যপ

শৈশবকাল কখন যেন ঝাঁপি খুলে দাঁড়ায়
হইহই করে হাততালিতে তারা বলে ওঠে 
সোনালি দিনের কথা, হারিয়ে যাওয়া অতীত 
অতীত কখনো বেদনার, আবার আনন্দেরও

কোকিলকণ্ঠী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ‍্যায় কণ্ঠে 
'উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা' একসময় ভীষণ দোলা দিয়েছিল 
আমার তখন শিশুকাল, আশ্চর্য চঞ্চল করত মন
কণ্ঠ সুর কথা কখন পৌঁছে যেত উপলব্ধির স্তরে 

হঠাৎ কখন হারিয়ে গেল সেই কণ্ঠ, সেই অতীত 
'উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা'র গীতিকার ছিলেন 
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ, আজ বিস্মৃতির পথে 
আজ নিশ্চুপ হলেন কণ্ঠশিল্পী স্বয়ং, প্রণাম



বিষন্ন সন্ধ্যা ও পড়ন্ত শীত রাত্রি
অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় 

বিষন্ন সন্ধ্যায় এক টুকরো 
চাঁদের আলো নেই
চারিদিক এক ঘণ অন্ধকার...
পড়ন্ত শীত রাত্রির ভেতর 
হারিয়ে গেলো সুর মূর্ছনা 
কোথায় যে গেলো তা নিয়ে
ভাবতে ভাবতে দৃষ্টির ভেতর
আলোর বিভ্রম খেলা করে গেলো
আবার এক নৈঃশব্দের ভেতর
দিয়ে হেঁটে যাওয়া দূরে,আরও দূরে...



তির বেঁধা পাখি আর...
সমাজ বসু
 
মধুমালতির ডাকে ফিরে যেতে হয়?
গানের ইন্দ্রধনু ছড়িয়ে কোন্ অজানায় রেখে গেলে 
নিজস্ব ঠিকানা? 
কিছু আলাপের সর্বময়ী কর্ত্রীর এমন স্বার্থ মানায় না।
সজনী গো,কথা শোনো...
শুনলে না---

আজ সুর তাল লয়ের এই নিভে যাওয়া
সন্ধ্যাতারার আঁধার জড়িয়ে
বড় অসহায় আছি,
জানি---
তীর বেঁধা পাখি আর...




গানের পাখি
সুধাংশুরঞ্জন সাহা

সুরের জলসা থেকে গানের পাখি হারিয়ে গেল,
কোনোদিন তীর বেঁধা পাখি আর গাইবে না গান!
সন্ধ্যাশেষে বেনজির দুনিয়া জুড়ে রাত্রির তান,
আলোপথের দিশারী নিজে আঁধারের রূপ পেল!

সময় বদলে যায় সুরের উত্তাল স্রোতে ভেসে।
ভেসে যায় চরাচর, বুনে দেয় সুরের সংসার।
তুমি না হয় থাকতে কাছে কিছুটা সময় আর,
না হয় আরও কিছু কথা বলে যেতে হেসে হেসে।

কিছুক্ষণ আরও না হয় থাকতে কাছে সবার,
মধুমালতি ডাকে যে ফাগুনের চপল খেলায়।
নীল পাহাড়ের সেই আলোময় চূড়ায় চূড়ায়,
মন পবনের দোলা লাগা সেই সকালে আবার।

আলোজ্বালা সেইসব গানের কথা বাজছে কানে,
কোন্ ইন্দ্রধনু স্বপ্ন বুনে দিয়েছিল গানে গানে !



সন্ধ্যাতারা
তপনজ্যোতি মাজি

তারাদের দেশে গান পৌঁছে গেল।
ভরে আছি , তবু মনে হয় নিঃস্ব 
হতে হলো।
আর কতবার ঐশ্বর্যহীন হবে সঙ্গীত সংস্কৃতি?
আর কতবার হারিয়ে খুঁজব প্রিয়নাম?

মেঘেদের দেশে ঠিকানা কি ভাবে লেখা 
হয় , জানা নেই।
দূরভাষ সংযোগ নেই।
পূর্ব আকাশে জ্যোতির্ময়ী তারাটিকে
 ডাকি ' সন্ধ্যাতারা ' নামে।



অনন্তের দিকে
ফটিক চৌধুরী

ফাগুনের কপালে আগুন লেগেছে
            বসন্ত ভুলে গেছে তার ব্যাকরণ
পলাশ ফুটতে ভুলে গেল কি সেদিন
অশোকও কি শোকে মুহ্যমান
কে যেন গেয়ে যায় সারাক্ষণ 
                           বিষণ্ণ সন্ধ্যা সংগীত?
প্রকৃতি যার কণ্ঠে দিয়েছিল ঝরনা-গান
আমের মঞ্জরীতে রেখে গেল
                                   সেই সুরের মূর্ছনা
এবার আমের বোল ধরবে কি মঞ্জরীতে?

যাঁর জাদুগানে রঙিন ইন্দ্রধনু স্বপ্ন ছড়াত
প্রায় একটি শতাব্দী ছুঁই ছুঁই জীবনপ্রবাহ
যাঁর, ভালবাসার সুর ছড়িয়ে দিতে দিতে
                    চলে গেলেন অনন্তের দিকে।




নিঃশব্দ-ধূসর 
বিকাশরঞ্জন  হালদার 

সন্ধ্যার আকাশ ঢেকে দিতে চায় কাল-সন্ধ্যার 
নিঃশব্দ-ধূসর!
           ব্যর্থ  প্রচেষ্টা
 মৃত্যুই শুভ উদ্বোধন অন্য কিংবা অনন্য জীবনের
বাতাসে ভাসে জল-তরঙ্গ বিচিত্র বিভায়!
জেগে থাকে আনমনা সাঁঝ

অবিরাম সুর ঝরে বাংলার অন্তরে 
           সে-তো চিরশ্রী!

সে-তো অনন্ত নিভৃত-চঞ্চল!



অ্যাপিটাফ
দুরন্ত বিজলী


সুরের মূর্ছনায় ছড়িয়ে দিলে আলো
আলোর ভেতর বৃষ্টি নামে খুব

মেঘছায়াতে চোখের কোনে জল
জলের ওপর ভেসে বেড়ায় নদী

নৌকো ভাসে দিগন্ত অবধি
সুর মেখেছে নদীর স্রোতোধারা

ভাসতে ভাসতে আমাদের প্রিয় ভূমি
মগ্ন যখন তোমার গীতশ্রীতে

তখন তুমি নীরব নিথর অশ্রুজল
তির বেঁধা পাখির মতো তুমি

'এসো মা লক্ষ্মী' বলে গাইবে না আর গান
হৃদয় জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে শূন্য-অভিমান



অস্তরাগে সন্ধ্যাতারা
সৌহার্দ সিরাজ


আবার একটি মরুভূমিতে এসে দাঁড়ালাম
বুকের ভেতরের সেই পুরনো কুটির আড়াল হয়ে গেল
যেখানে অন্ধকারের মধ্যে আলো জ্বলতো
আলোকে বুকে নিয়ে বাতাস খেলতো তারুণ্যের উজ্জীবনে

গ্রাম্য যাত্রাগানের আসর,বিয়ে বাড়ির হৈ চৈ
বৃষ্টিতে মায়াহাঁসের ডাক আর্তনাদ হয়ে গেল,
হাতের আঙুল ধরে দাঁড়ালো ভালোবাসার নির্যাস নিংড়ে নেওয়া
একটি অযাচিত শোক।

হে সৃষ্টিমান্য ধনুর্ধর!কী আবেশ মেখে
সন্ধ্যায় নামিয়ে দিলে সন্ধ্যার বিয়োগফল!
ওঠা নামার অমিয় বাগানে প্রার্থনারত মায়ের সাথে একটা কথাও হলো না!
আকাশের অস্তরাগে সন্ধ্যাতারা মিলিয়ে গেল!

মহামিলনের অভিনব তার বেঁধেছিলেন মনে
সে এক সুরের ইন্দ্র গহনে সুচিত্রা সন্ধ্যা!
কেন জানি না কার ঔদ্ধত্যে বিষণ্ন গোধূলি
বাঁকা চোখে কাঠাল পাতায় প্রস্থানের গল্প লিখে গেল!

বিবেকী ভালোবাসার কল্পনা লিখেছিলেন
গীতশ্রী
কণ্ঠের যাদুতে
মানুষ কীভাবে পায় এই মেধা ও ঐশ্বর্য !

সব বিস্ময় আর মুগ্ধতা রেখে
উজ্জ্বল রোদের আস্কারা ছেড়ে
পথের শেষ নেই জেনেও
একঝাঁক  পায়রা অন্ধকারে মিলিয়ে গেল


তুমি না হয় রহিতে কাছে
দীপক বেরা

সুরের আকাশে নেমে এল অস্তরাগ
গানের ইন্দ্রধনুর মাঝে হঠাৎ বিলীন সন্ধ্যা! 
গীতশ্রীর সুরের মায়ায় হেঁটেছি এতটা পথ 
দেখেছি কী অনন্য সৃষ্টির স্বরলিপি 
কীভাবে লুকিয়ে থাকে সন্ধ্যারাগে, 
তোমার বিস্ময় কন্ঠের আশ্চর্য জাদুতে! 
আকাশে-বাতাসে, মানুষের নিত্যযাপনের ছন্দে 
"ঘুম ঘুম চাঁদ, ঝিকিমিকি তারা, এই মাধবী রাত
আসে নি তো বুঝি আর জীবনে আমার".. 
যা, অমর হয়ে থাকবে চিরদিন মানুষের হৃদয়ে।
ভালোবাসা গচ্ছিত রেখে গেয়ে গেছ 
সুরসাগরে মহাসঙ্গীতের অপার মহিমা, 
বিষাদ-বেদনায়, প্রেমের অস্থির আবেগে
শুনিয়েছ জীবনের জাগরণী গান---
"প্রজাপতি মন পাখায় পাখায় রং ছড়ায়"!

জন্ম নিলে, মৃত্যুর সাথে যেতে হবে ঠিক 
অজস্র মৃত্যুর মাঝে, তোমার মৃত্যুশোক
ফল্গুস্রোতে বয়ে যাবে,.. এ কথাও ঠিক, 
তবু যেন কেন মনে হয়---
"তুমি না হয় রহিতে কাছে, 
সুরে সুরভিতে না হয় ভরিত বেলা 
কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে"! 



সুরহারা 
মৃত্যুঞ্জয় হালদার

সেই চেনা সুর
নিঝুম দুপুর
উদাসী মন পাগলপারা
তীর বেঁধা পাখি
উঠবে না ডাকি
শোকে নিমগ্ন আমরা।

দীপ নিভে গেল
সব এলোমেলো
সুরহারা সন্ধ্যায়
কত কথা গান
মনে দেয় টান
ঝড় ওঠে অলকানন্দায়।



ঠিক সন্ধ্যাবেলায় হারালাম গীতশ্রীসন্ধ্যা
গৌতম বাড়ই


উজ্জ্বল একঝাঁক পায়রা সোনালীদিন সেই
সেই সব দিন ছিল আলোমাখা গান ছিল
একে একে উড়ছে, উড়ছে 
সূর্যের জ্যোতিমাখা সীমাহীন নভনীলে---

মনে হয় যেন বলি আমাদের ছুটি- ছুটি বলে
কখনও তোমাদের ছুটি নয়
তুমি না হয় আরও  কিছুক্ষণ রহিতে কাছে

তুমি ছিলে বাংলার মা ছিল গানের জলসায়
সব যায় হারিয়ে জানি মা হারায় না বুকটায়
গান আছে থাকে গান সূর্যের উজ্জ্বল রৌদ্রে

ঘুম ঘুম চাঁদ সন্ধ্যা ছেড়ে নেই যে আকাশে
এই এখানে বুকের দোরে এসো সন্ধ্যা রাগে
কী করে যে বলি তোমায় তুমি আমার মা
তুমি আমার গীতশ্রী  তুমি গানেই ভরা মা
দেহ হারাবে বয়সকালে
শুধু তুমি হারাবে না
গানের মাঝে খুঁজে নেব  সন্ধ্যাতারার ঝাঁকে
আমাদের গানের ইন্দ্রধনুকে...



সুরশ্রী সন্ধ্যার কত গান
সুবীর ঘোষ

 
সুরশ্রী সন্ধ্যার কত গান
ঘুরে ফিরে ভরে এই প্রাণ।

‘ওগো মোর গীতিময়’
সুর তার অমর অক্ষয়।

মধুমালতীরা নীরবেই ডাকে
জলসাঘরের বেলোয়ারি কাঁপে।

 সন্ধ্যাপ্রদীপ বাণীহীন
স্তব্ধতায় ঘেরা সারাদিন।

বাংলার আকাশে বিষাদ
কান্নায় ভরে যায় ছাদ।



সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
সঞ্জয় রায়

যে ভাষা দিয়েছে গান যে গান দিয়েছে কন্ঠস্বর
সে আজ হয়েছে অমর।
যদি যাই ফিরে ফিরে বহু বহু দশকের পার
মননে মেধায় শুধু দেখা হবে তোমার আমার।
এইসব সুরে, ছন্দে রচিত আমার শিশুবেলা
সে সুর জড়ানো মায়ায় আজ অন্তর্গত রয়েছি একেলা।
দিনের রৌদ্রের গন্ধে সন্ধ্যা নামে দূর দ্রাঘিমায়
দূরের তারার দেশ থেকে যাবে আমাদের শিরায় শিরায়।




গীতশ্রী
বীথিকা পড়ুয়া মহাপাত্র

হৃদয়ে-হৃদয়ে অনুরনিত প্রতিধ্বনিত 
মায়া জড়ানো মুখের সুরসন্ধ্যা
ঢলে পড়লো গভীর অন্ধকার রাত্রির দিকে,
অমোঘ করুন সমাপতন,

এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মৃত্যুর পশ্চাতে
অমরত্বের আলোক মালায় প্রাণপন
আঁকড়ে ধরা সুর,

অলিতে গলিতে,অন্তরালে প্রেম-বিরহে,বধূবরণে
গীতশ্রীর কন্ঠের দীপ্ত দীপশিখা
বেঁচে থাকার বাতলে দেওয়া পথ।

এ সময় বন্ধ্যা!
বসন্ত পূর্নিমার চাঁদ আনে
বিষাদের সুর,
বক পাখির পাখায় নামে
সুরহারা সান্ধ্যকালীন নিস্তব্ধতা।



সন্ধ্যা তারা  
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী

আজ ছুটি ছুটি .... বেজে উঠলো জয় জয়ন্তী।
সুরের আবহে কৈশোরের সাউন্ড অফ মিউজিক। 

গানে গানে ছড়িয়ে পড়লো ইন্দ্রধনু আকাশে বাতাসে। 
মধু মালতী উঠল ডেকে।
এ গানের প্রজাপতি মেললো পাখা। 
এ ছিলো শুধুই গানের দিন।

আকাশের অস্তরাগে মায়াবতী তন্দ্রা উঠলো জেগে। 
ঘুম ঘুম চাঁদে আর ঝিকিমিকি তারায় 
সে এক আশ্চর্য নিশিপদ্মে।

চন্দন পালঙ্কে শুয়ে একা একা রাত।
জানিনা ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া।

ওগো মোর গীতিময় আরও কিছুক্ষণ 
না হয় রহিতে কাছে।

জানি তিরবেঁধা পাখি আর গাহিবে না গান।
বাঙালির এক সঙ্গীতময় দিন হলো অবসান।


নক্ষত্র পতন
অসিত কুমার রায় (রক্তিম)

দারুন বসন্ত দিন দুয়ারে এলো
কোয়েলরা সব কোথায় গেল?
স্বর্ণলতা শুকিয়ে গেল,
সন্ধ্যায় কেমন মলিন হোল।
দোলনচাঁপা দুলতে দুলতে
হটাত কেমন থমকে গেল।
সুরের সুরভীতে সুবাস নেই,
অভিমানে মৌমাছিরা ফিরে গেল।

হারিয়ে গেল দুই সুরের মানুষেরা
লতা সন্ধার অস্তরাগে রবি।
তুমি কেন আছো নীরব কবি
বর্ণলিপিতে এঁকে রেখো ছবি।

তুমি যখন হেসে ওঠো
পৃথিবী তখন হেসে ওঠে,
তুমি যখন হেঁটে যাও
গাছে গাছে ফুল ফোটে...
যখন তুমি হারিয়ে গেলে
নদীটাও দেখি পথ হারাল,
বাতাস এসে বলে গেল
গানের সুরে চিরদিনই আমরা আছি...



মায়াবতী মেঘ
 তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য 

 ছোটবেলায় পুজোর প‍্যান্ডেলে প্রথম শুনেছিলাম "মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা"... ।
 বুলা,  টুকটুকি, গোপা, সোনারা  বললো তুই  এসেছিস জানতে পেরেছে মনে হয় !!
 হি হি হি তোর নামে গান।
  আমি  অবাক হয়ে বিরাট হাঁ করা মাইকটার ভেতরে সারা প‍্যান্ডেলে অনেক  খুঁজেছি।
 এই ম‍্যাজিক স্বর টা কার?  তখন আমার  নামের মানেও তেমন জানিনা।
  কেবল জানি গান মানেই কানের আরাম। 
ঘোর বিস্ময়ে সেই  গান ক্রমাগত ইকো হয়েছে আমার  কানে। 
আমার  সমস্ত মেয়েবেলা তেই সেই  সুর সমুদ্রতীরে 
কেবলই  ঘুরেছি পেয়েছি আশ্রয়।
এই ফাগুন দিনে কে ডেকে নিয়ে গেল
 মধুমালতী কে ?  সত‍্যিই  আজ 
বড় ভাঙনের  দিন।আমাদের  মাটির সন্ধ‍্যাতারা সুরলোকে  বাঁধলো  গাঁটছড়া।



মায়াটান
তাপস কুমার চট্টরাজ

সময় উড়ান যাই যাই করে চলে যায়
হাওয়া পরিবাহী সুর আসে ভেসে ভেসে–
" মধু মালতী ডাকে আয় ফুল ফাগুনের এ খেলায়..."
তীব্র হাহাকার অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে
ঝরনার মত

ভিজি, ভিজে ওঠে সুন্দর
কী হতে কী যে হয় জানিনা কেউ
মায়াটানে প্রপঞ্চময় সংসার

মেঘ পেরিয়ে চলে যাও
দৃষ্টির অন্তরালে
সময় মেপে সন্ধ্যা আসে

তুমি শুধু থেকে যাও
হৃদয়ে সবার
ঝরে ঝরে পড়ে সুর মূর্ছনা ।



তোমার পথ  হয়নি শেষ 
অশোক রায় 

সন্ধ্যা নামে চারদিক আঁধার করে আসে
উর্ধমুখী বন্দুকের নল তোলে বোল 
জানি আর  কখনো জাগবে না 
বাজবে না তানপুরা ধ্বনি পুরাণ
শুস্ক পত্র ঝরে পড়ে আছে দাহের অপেক্ষায়
বুঝি ভিজে গেছে চোখ চশমার নিচে 

বুঝি গানের ইন্দ্রধনু উঠবে মরম আকাশে 
বিকশিত সন্ধ্যাতারা আকাশের পটে
দেহপট সনে নাই বা রইলে
ছিলে আছ থাকবে কোটি হৃদয়ে 
গাইবে সঘন বাদলে বা চম্পা চামেলী বাগে
অনুক্ষণ আরো না হয় থাকিলে কাছে ...


      
সন্ধ্যা তারা
ভুতুম

আগামীতেও আসবে বীনাপানি
থাকবেনা আর মানসকন্যা তুমি
বিদায় বেলায় কাঁদছে শুধু দেশ
পাড়িদিলে তোমার স্বর্গ ভূমি।

স্বর আর সুরের মায়াজালে মুড়ি
ধরা ভূমি ছেড়েই গেলে আজ
তুমিই শুধু দেখলেনা'তো চেয়ে
খুঁজছে আঙ্গুল তোমারই এস্রাজ।

কাঁদছে ভীষণ বোকাবাক্স গুলি
খুঁজবে শুধু তোমার গহন স্মৃতি
নেইবা যেতে কাঁদিয়ে কোটি প্রাণ
গাইলে কদিন কি আর হতো ক্ষতি?

শুধু দেহ খানিই ছেড়ে গেছ তুমি
বিশ্ব বিভোর তোমার সুরের লয়ে
নস্বর দেশ বিলীন হল বটে
অনন্তকাল তুমিও যাবে রয়ে।

সুরে সুরে আজকে কাঁপন "ভারী"
বইছে হাওয়া ছন্দহীনা হয়ে
কইল কোকিল তারও গোপন কথা
কণ্ঠ তারও কবেই গেছে ক্ষয়ে।

সে সুর নাকি তোমার গলেই বাজে!
দুঃখ ওদের ছিলনা মোটেও তাতে
আবার ওরা ভাঁজবে ভোরে সুর
গাইবে কে আর?-ছেড়ে'ই গেল মা যে।     


সন্ধ‍্যারাগ
সুনীতা ব‍্যানার্জী

আছে জন্ম,আছে মৃত্যু-,জানি অনিবার্য এসত‍্য !
তবুও...

সূর্যের উজ্বল দিনে ,সর্গীয় সন্ধ্যা-মালতী ফুটেছিল-
বাংলার সুরের বাগানে !

ভাঙাচোরা সভ‍্যতার উঠোনে প্রলেপের মতো
মিষ্টি একটা  কন্ঠস্বর -

উড়িয়ে দিলে এক ঝাঁক উজ্বল পায়রা ।
কথারা গান হোল, সন্ধ‍্যারাগে-
নক্ষত্র জালা দিনে-রাতে
অমোঘ টান ছিলো, প্রান ছিলো।

আজ সন্ধ‍্যে নামার আগে সন্ধ‍্যা নামে সুরলোকে !


আর কোন কথা নয়,  নক্ষত্রের আলোয়-আলোয়
গানে-গানে হবে তার পরিচয় ।

      

গানের সন্ধ্যা
শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ

সবাই থাকে না কেউ কেউ থাকে
নদীর মতন ফুলের মতন,
ঢেউ তুলে নাচে -- গন্ধ ছড়ায়
পুরবাসী করে অনেক যতন।
তুমি ছিলে ঠিক তেমন একটি 
ঠিকরানো জ্যোতি কাচকাটা হিরে
বলো তো  তোমাকে খুঁজব এখন
কোন নদীটির ঠিক কোন তীরে?
তুমি গীতশ্রী সুরাকাশে শশী
দিনের বকুল রাতের চন্দ্রা,
অভিভাবিকার মতনই তো ছিলে
কেন চলে গেলে গানের সন্ধ্যা ?

সেই কবে যেন ছেলেবেলা ছিল
সেই কবে যেন সুরদেবী তুমি,
কত না গানের কত না সুরের 
পরশে পূর্ণ এ মনের ভূমি।
মধু মালতীর চম্পা চামেলী
তুঁহু মন মম মায়াবতী মেঘে
গান যদি ভাসে সুর যদি আসে
যতই ঘুমাই ভোরে উঠি জেগে।
প্রিয় বসুধায় গায়কি সুধায়
কাটে ঘুমঘোর গভীর তন্দ্রা।
অভিভাবিকার মতনই তো ছিলে
কেন চলে গেলে গানের সন্ধ্যা?

এক জীবনের গান-জীবনের 
উজ্জীবনের তুমিই প্রেরণা
তোমার দুচোখে শরীরে মননে
ছিল স্বর্গীয় সংগীত বোনা।
গান কাকে বলে -- কন্ঠ কেমন
হলে গান হয় তুমিই শেখালে,
পরে চলে গেলে সুর-সুধা ঢেলে
ফুল ফুটে গেলে পলাশের ডালে।
সুরের জগতে কিংবদন্তী 
হয়েছিলে তুমি ও মধুছন্দা,
অভিভাবিকার মতনই তো ছিলে
কেন চলে গেলে গানের সন্ধ্যা?



            
এক মানস কন্যা ও সমান্তরাল উপত্যকার সাপেরা
নিমাই জানা


ধীবর পাখিরা সমতল উপত্যকায় ঘুমোলে সমান্তরাল সাপেরা কম্বোজের খোলস রেখে যায় নিজের দেহ মহাশূন্য পারে

এখানে সকলেই কাল্পনিক স্বরলিপির মতো , মৃত্যুর মতো এতো দীর্ঘ গানের স্বরলিপি আর হয় না , যারা বোহেমিয়ান এই উলঙ্গ রাস্তার প্রতিটি কপাটিকার পাশে তাদের হৃদ অসুখের কোন সিমেট্রিক্যাল রিদিম নেই , পূর্ণ কম্পন একটি মৃত অসুখের নাম
ঈশ্বর ক্রমশ তড়িতাহিত হয়ে পড়ছেন একাকী শয়নকক্ষের ভেতর অলিন্দের পাশে বসা কেবল নিশাচর গুলি অদ্ভুত ছায়ার পারদ গায়ে মেখে আমাদের চারটি অশৌচ পোশাক পরিয়ে যায় আমাদের শরীরে স্থলবিন্দু নেই ,  নারীরা আমাদের ঋ আকারের জমাট ঈশ্বরী করে গেছেন মন্বন্তর ছায়া দিয়ে

কোন ভৈরবের আলাদা স্বরলিপি হয়না ,  দীর্ঘ একটি সড়ক বিহীন কণ্ঠস্বর একাকী গান গেয়ে হেঁটে চলে নির্জন ল্যাকেসিস রাস্তায়
এই চতুর্ভুজ ঘরের লাল পোশাক নিয়ে রৈখিক বন্ধনীর পালক হয়ে যায় অনুর্বর শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া
একটি তীর বেঁধা পাখির সাথে ক্রমশ জননতন্ত্র আলগা করে বসে থাকি বাবলা গাছের অসদ বিম্বের ভোকাল কর্ড খেয়াঘাটে
নিরাময়ের সাইপ্রোহেপটাডিন খাওয়ার পর আমাদের বৈকুণ্ঠে নিয়ে যাবেন নীল রঙের কৃষ্ণাত্মা

ঝরাপাতার মতো আমরা দারুচিনি ফলের শুক্রাণুদের বিছিয়ে দেব নীল মুখগহ্বরের কাছে , তিনি গীতশ্রী মানস কন্যা।



সুরসন্ধ্যা
দীপা কর্মকার 


সাঁঝের বেলা আকাশ সন্ধ্যা
চাঁদকে কাছে টেনে
দেয় ভরিয়ে  নীলাম্বরে 
আলোর ঝরনা এনে।

ধরার সন্ধ্যা সুরের স্রোতে
ভাসিয়ে গানের তরী
সুরঝংকারে বিশ্বভুবন  
গানে গানে  দেয় ভরি।

সুরের সন্ধ্যা সোনার রথে 
চলে গেছে বহুদূর
ধরার মাটিতে, আকাশে, বাতাসে 
রেখে গেছে শুধু সুর।

নিয়মের জালে মানব সন্ধ্যা
পঞ্চভূতে আজ লীন
গানের সুরে থেকে যাবে স্মৃতি 
চিরদিন অমলিন।



সন্ধ্যা রাগে 
সাবিত্রী দাস 

নেই সেই  সুর-প্রসাধন,  অভ্যস্ত জীবনের পথ গেছে থেমে। 
নেই মঞ্চের আলোক সজ্জায় সেই  সুর সঙ্গম!
থেমে গেছে মঞ্চ থেকে মঞ্চে সঞ্চরণের  সুললিত  জীবন!
 অবসরের অবকাশে ,অনবকাশে হৃদয়ে  সুর জেগে উঠলে
ভালোবাসার  নিবিড় সহবাসে  সুরধনী বয়ে যেত  অলক্ষ্যেই,
 হৃদয় নিংড়ানো সুরের স্রোতস্বিনী 
একাকার হয়ে বয়ে যেত হৃদয়ের মোহনায়,
শেষ আশ্রয়ের খোঁজে তাই কী চলে গেলে,
 বেলাশেষের শেষ  খেয়ায়।
  নশ্বর শরীর! তবুও মৃত্যুহীন !
জেগে  আছো নক্ষত্রের মতো।
শোকার্ত হৃদয় নিয়ে বেলা বয়ে  যায়, ‌ 
বুকের গভীরে বাজে বেদনার বীণ।

 পার হয়ে গেছে সেই  সব দিন , বহু চর্চিত সুরম্য সে অধ্যায়।
 অখণ্ড জ্যোতির মতো মহা নিষ্ক্রমণের পথে  শেষ  পরিক্রমায়!


 ধ্রুবতারা  
মালা ঘোষ মিত্র

সারা আকাশ জুড়ে সুরের স্বরলিপি
কোকিলকন্ঠীর গানে চরাচরে   মগ্নতা,
প্রতিটি জ্যোতিষ্ক, জোনাকিও
মিটিমিটি করে,
সমস্ত স্পর্শ শিকড় পর্যন্ত গড়িয়ে যায়
বসন্ত আজ বড্ড নিষ্ঠুর, কোকিল ডাকে না,
"সন্ধ্যা" বেলায়"সন্ধ্যা"তারা
সুরের আকাশের ধ্রুবতারা।
বিরহের সুর বাজে বাঁশিতে
ঈশ্বর অপেক্ষায় ছিলেন,
হাত ধরে চলে গেলেন,
উজ্জ্বল নক্ষত্রমন্ডলে।।

  

কে বলে, তুমি নেই?
জয়শ্রী সরকার

সুরের আকাশে ঘনিয়ে এলো সন্ধ্যা , চলে গেলে ঘুম ঘুম চাঁদের দেশে!
গানের জলসাঘরে তোমার সুরের সুরভি ম'ম'করছে আজও ,
কে বলে? তুমি নেই!

শাস্ত্রীয় সংগীতে পারঙ্গম তুমি ,  উজ্জ্বলতম নক্ষত্র তুমি নেপথ্য গায়িকা!
আকাশের অস্তরাগে তোমাকেই যেন খুঁজে পাই ,
ফুল্ল-কলস্বরে মুখরিত তোমার ' ছুটি ছুটি চল্ নেবো লুটি ' তে
আনন্দ-ঝর্ণায় যেন নিজেকেই ভাসিয়ে দি ; আবার
দু'চোখ জলে ভিজে ওঠে ' আমরা তো আর ছোট নেই ' শুনতে শুনতে!
নশ্বর এ দেহ। তবু মন মানে না । তোমাকেই স্মরণ করে গেয়ে উঠি ,
' কিছুক্ষণ আরো না হয় রহিতে কাছে ....! 
সুরের আকাশে ' এ শুধু গানের দিন ' গাইতে গাইতেই অনন্ত তোমার পথ চলা ; 
যেন শুনতে পাচ্ছি , ' মধুমালতী ডাকে আয় ... ! '
কে বলে ? তুমি নেই !

স্মৃতির সরণি বেয়ে যেন ভেসে আসছে ' গানে মোর কোন্ ইন্দ্রধনু ' 
আকুল আর্তিতে তুমি গেয়ে চলো , ' কে তুমি আমারে ডাকো ' , ' প্রভুজী , দাও দরশন ... ! '
সুগভীর আক্ষেপে তোমার ' হয়তো কিছুই নাহি পাবো ' জীবনের অমোঘ সত্য হলেও
মানুষের ভালোবাসার বন্যায় তুমি স্নাতা ! 
দৃষ্টির প্রান্তিকে পায়রা দেখলেই মননের গভীরে আজো যেন শুনতে পাই ,
' উজ্জ্বল একঝাঁক পায়রা ...! ' ' তুমি আমার মা ' শুনলেই আবেগে আবেশে
আত্মবিস্মৃত হয়ে উঠি ; ' জানিনা ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া ' র উত্তর 
মিলেছে কিনা আজও ! 
যেন অন্তহীন সাগরের অজস্র লহরীর ওঠা-নামা থেকে
এখনও শুনতে পাচ্ছি , " ওগো মোর গীতিময় .. " কে বলে তুমি নেই ! "


সন্ধ্যা'র চোখে রাত নেমে এলো
সালেম সুলেরী


সন্ধ্যা'র চোখে রাত নেমে এলো, সন্ধ্যাতারাটি কাত,
গানের সন্ধ্যা—নীরবকন্ঠ,  শোকাহত সংবাদ। 
'ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা, আর ডেকো না'তো কেউ,
হয়তো কিছুই নাহি পাবো' বলে আকাশে মেঘের ঢেউ...।
'এ শুধু গানের দিন' বলে যার—আজীবন গান বলা,
জানিনা ফুরাবে কবে এই পথ—'শেষ হলো জান, চলা! 

লতাজী'র পিছু আকাশমন্চে সন্ধ্যাতারা'র মেলায়
স্বর্গবাসীকে গান শোনানোর মেতে ওঠা নবখেলা—
'সন্ধ্যা' জ্বালালো মৃত্যু-সেঁজুতি, পনেরো ফেব্রুয়ারি,
হায় দু'হাজার বাইশে'র বাঁশি, আহারে গীতের নারী
শীতের পিঁড়িতে সলিল সমাধি, সাত দশকের শাসন,
মার্চের চারে, এক তিরিশের আশ্বিনে অভিবাসন—
জন্মতিথিতে মাতা হেমপ্রভা, পিতাও নরেন বাবু
গানের গহীনে শিশু সন্ধ্যাকে সুরে করে সুখী, কাবু। 

ওস্তাদ 'বড়ে গোলাম আলি' ও খ্যাতিমান সুরবাজ
রাগ মালকোষ, ইমন এবং উচ্চাঙ্গের ভাঁজ—
গলা কারুকাজে সেরাদের সেরা দেবীসম সুরদেবী,
পূজোর গানেও প্রভূ নিবেদিত, ঈশ্বরে দূরসেবী।
বাংলা'র কবি শ্যামল গুপ্ত—ছেষট্টিতেই স্বামী
যাঁর গানে কতো সুর সংগত, যে আলোয় নামি-দামী।
রাধিকার চেয়ে সাধিকা বানাতে স্বামী-সন্তান সবাই
দেখেছে গলার গোপন জাদুটি, তারুণ্যময় প্রভাই।

সেজেছে সেবক—বাংলাদেশের শরণার্থী'র সেবায়, 
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্মৃতিশিখা কে নেভায়?
বিদায় বঙ্গ-বিভূষণ'ময়ী, শেষ প্রতিবাদ জানি,
রাষ্ট্র তোমাকে শেষবেলা এসে দিয়েছে ভূষণখানি, 
নাও নি পদক, ফিরিয়ে দিয়েছো, এড়িয়েছে কতোযুগ,
তুমি শ্রোতা মিলে উপভোগ দিলে— প্রত্যাহারের সুখ। 

পর্দার সেরা জুটি উত্তম, সুচিত্রা সেন— রমা
হেমন্ত আর সন্ধ্যার গলা—শ্রেষ্ঠ পরিক্রমা। 
সাদাকালো থেকে রঙিন ছবিতে যতো গড়া নবযু—
পর্দার সেই মহারসায়ন—সন্ধ্যা'য় উন্মুখ। 
মৃত্যুমহান—তার ছলনায় ভুলবো না, ভুলবো না...
মধু মালতী'র নকশা কাঁথাটি হৃদ-দেহে, খুলবো না। 
সুরের মহিমা কি করে সহি মা—তুমি গান তুমি প্রাণ,
তোমাকে হারিয়ে বাঙালি পাগল, হৃদভূমি খান খান। 

যতোদিন প্রাণে প্রিয় কান আছে, শ্রবণে রয়েছে গতি,
ততোদিন নেবো সন্ধ্যা'র সুধা, রেখো প্রভু সঙ্গতি। 
স্বর্গীয় হোক বিদেহী আত্মা, গলাটিও থাক তাজা,
পরকালে চাই গীতময়ী দি'কে, ফিরে চাই ছিলো যা যা।



সুরের ঈশ্বরী
বিমল মণ্ডল 

তবু যেন আজ সুরের পাতায়
এক ঘন আবেগ বইছে
সারারাত বিদগ্ধ আকাশে 
রাতের নক্ষত্র অশ্রু ফেলে
নদী, পাখি,গাছেরাও স্থির চোখে 
চেয়ে থাকা এই দেশের ভিতরে 
এক এক করে সন্ধ্যা রাগে
ডুবে যায় পৃথিবীতে সুরের স্নানে

কণ্ঠে ভাসে অমৃতসুর
আসলে মানুষের আদলে
সুরের ঈশ্বরী গীতশ্রী 
প্রতিকৃতির ছাপ রেখে  যায়। 






1 টি মন্তব্য:

  1. খুব সুন্দর শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদিত হয়েছে এই
    কবিতাগুচ্ছে। নানান ফুলে সজ্জিত মালার মতো নানান রঙ এবং সুবাসে ভরপুর।

    উত্তরমুছুন