আলোর- উৎসব -১১
দীপক বেরা
১.
এসো মা লক্ষ্মী
কি জানি কোথায়
জ্যোৎস্নারা উড়ে গেছে সব
আজ, কোজাগরীর পূর্ণিমার রাতে!
জ্যোৎস্নাগাছের নিচে জমে আছে অন্ধকার
ওরা কি উড়ে গেছে দক্ষিণের বনে?
জানি, আমার এইসব প্রশ্নের উত্তর
নেই তােমাদের কাছে।
বহুদিন দেখি না আমি সূর্যের মুখ, কিংবা
জ্যোৎস্নার সেই অপরূপ মােলায়েম শরীর
বহুদিন দেখি না তাদের।
বহুদিন দেখি না যাদের,
বড় শঙ্কা হয়
ঘুম ভেঙে যায় বারবার
বড় সাধ হয় সেইসব দৃশ্যময়তা আর মুখ দেখি..
আশা করি ভাল আছে সেইসব চেনা মানুষেরা!
আজ, সব পথই কানাগলি, দুঃস্বপ্নের মত
আসলে, আলাের দিকে পিছন ফিরে আছি সবাই।
আজ কোজাগরীর পূর্ণিমা রাতে
যেন চোখে লাগে লক্ষ্মীপ্যাঁচার মত
মৃদু চাঁপার মত স্বপ্ন-রঙ এক..
হেঁটে আসে দূর আলপথে গৃহলক্ষ্মী
জ্যোৎস্নার আল্পনায় তাঁর পদচিহ্ন এঁকে এঁকে!
২.
পরম্পরা
শারদ উৎসব শেষে সব কোলাহল মুছে যায়
নিঃশব্দ নির্জনতায় একাদশীর ক্ষীণ চাঁদের ছায়ায়
থেমে যায় মন্ত্রোচ্চারণ, নিভে যায় হোমাগ্নি শিখা।
শুধু থেকে যায় --
চোখের গভীরে, মনের ভিতর কিছু দৃশ্যমুখরতা!
কত তাড়াতাড়ি ভুলে যায় মানুষ,
কত আশার আলোয় নির্মীয়মাণ এই গল্প-কাহিনী
মানুষের ভিড়ে অন্তর থেকে অন্তরে এই পরিক্রমার কথা।
সুখী মানুষেরা কী অনায়াসে,
এই কাহিনীর বল্কলগুলি খুলে খুলে রাখে সব
বিকেলের টিভি খুলে বসে, চোখ রাখে
পশ্চিমের হাওয়ায় ফেরি করা বিনোদনে
অথবা, রন্ধন প্রতিযোগিতায় বুঁদ হয় রসনায়।
আমাদের দিনান্তের ছবিগুলি বিকেলের ম্লান আলোয়
মিশে যায় জানালার চতুর্ভুজে, তারপর..
মিলিয়ে যায় অনেক দূরে দিগন্তের বনের নিভৃত ছায়ায়!
সুখী মানুষের কথা মুলতুবি রেখে,
লিখে রাখি আমার স্মৃতির রেখায়
উৎসবের আলোর এইসব একতারা গান
যে মাহাত্ম্য আঁকা হয়ে যায় মনে,
যে ছবি মিশে আছে আমার অস্তিত্বের সারাৎসার জুড়ে।
একটি তারার পাশে জ্বলে থাকে আরও অনেক তারা
এভাবেই আলো জ্বেলে রাখে ওরা,
রচনাপরম্পরায়, উত্তরাধিকারে..
আমার গহীন রাত্রির রঙিন চাতালে,
আমার সুকুমার তন্দ্রায়..!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন