ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস ( পর্ব- ৫)
ট্রেকিংয়ের পথে রহস্য
অনন্যা দাশ
কেক, বিস্কুট আর সুপের টিন পেয়ে লুই তো ভারি খুশি। মিটিমিটি হেসে বলল, “গ্রান্ট খুব ভালো ছেলে ছিল। আমাকে অনেক খাবার এনে দিত। তোমরাও ভালো!”
রক অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এদের বলো তুমি সেদিন কী দেখেছিলে।”
ওর কথায় কান না দিয়েই লুই বলে চলল, “ওই কালো চশমা, কালো টুপি পরা লোকটা ভালো নয়। গ্রান্টের পিছন পিছন গেল। একটু পরেই লোকটা ফিরে এল কিন্তু গ্রান্ট আর ফিরল না। গ্রান্ট আর আসবে না তাই না?”
“লোকটা ফিরে এসে কোন গাড়িতে উঠল?”
“কালো রঙের ট্রাক, একটা কালো রঙের ট্রাক। আমি ওকে গ্রান্টের কথা জিজ্ঞেস করব ভাবছিলাম কিন্তু লোকটা ভালো নয় তাই লুকিয়েই রইলাম, কিছু বললাম না। কালো ট্রাকে, কালো চশমা, কালো টুপি পরা বাজে লোক!” এতটা বলেই লুই বিস্কুট খেতে এমন ব্যাস্ত হয়ে পড়ল যে ওর মুখ থেকে আর কোন কথা বের করানো গেল না।
“লুই যে মিথ্যে কথা বলছে না তা কী করে বুঝব,” ফেরার পথে অঙ্কন জিজ্ঞেস করল।
“ও মনে হয় না বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে পারে। মানসিক দিক থেকে একেবারে শিশুর মতন। এই ধরনের লোকেরা মিথ্যে বলে না খুব একটা,” ভজা বলল।
“ঠিক বলেছো। খিদের তাড়নায় একটা দোকান থেকে খাবার চুরি করে খেয়েছিল। তখন দোকানের মালিক ওকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশকে ও সব সত্যি কথা বলে আর ওরা ওকে মেরে ধরে জেলে পুরে দেয়। সেই জন্যে গ্রান্টের খুব মায়া হত ওর ওপর!”
অঙ্কনের গাড়িতে করেই গিয়েছিল ওরা। রকের গাড়িটা ওয়ালমার্টের বিশাল পার্কিং লটে পার্ক করা ছিল, ফেরার সময় রককে সেখানে নামিয়ে দিয়ে ওরা অঙ্কনের দিদির বাড়ির দিকে যেতে লাগল। দুপুরের খাবার ওখানেই খাবার কথা ওদের। হঠাৎ ভজা বলল, “গাড়িটাকে নিয়ে ওই পাশের গলিতে ঢোক চট করে!”
“ওই শুরু হয়ে গেল! কিন্তু কেন?”
“অত প্রশ্ন করিস না! যা বলছি কর!”
অঙ্কন কোন রকমে হুড়মুড় করে পাশের গলিটায় ঢোকালো গাড়িটাকে। একটু পরেই একটা ধূসর রঙের হুন্ডাই ইলান্ট্রা এসে ঢুকল।
“কী ব্যাপার বলবি তো!”
“বাছাধনরা অনেকক্ষণ ধরে আমাদের পিছু নিচ্ছে। সত্যি আমাদের পিছন পিছন আসছে নাকি এমনি ওই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছে জানার জন্যে এখানে ঢুকলাম!”
“বাহ, বেশ। হ্যাঁ, পিছুই নিচ্ছিল বোঝা তো গেল কিন্তু এবার? সামনে তো রাস্তা বন্ধ!”
“বাড়িটার সামনে দিয়ে ঝাঁ করে ঘুরিয়ে নিয়ে ওর পাশ দিয়েই বেরিয়ে যা।”
“হুঁ, অত সোজা নয় বৎস! এটা ওয়ান ওয়ে!”
“এ বাবা! কী হবে এবার? সেটা তো খেয়াল করিনি!”
“তা কেন করবি? আমাকে আর ওই সিনেমার ঢঙ্গে গাড়ি টাড়ির পিছনে ছুটতে বলিস না বাপু! এবার তুই নিজে গাড়ি কিনেছিস তুইই করবি ওই সব!”
“তোকে চেস করতে বলেছি নাকি। তোকে তো অন্যরা চেস করছে!”
“থাক থাক। আমার আর জেমস বন্ড হয়ে কাজ নেই। এখানে ভোঁদার মতন দাঁড়িয়ে রয়েছি আর ওরাও দাঁড়িয়ে রয়েছে! কী জ্বালা!”
“ওই ওপাশের সরু গলিটায় ঢুকতে পারবি?”
অঙ্কন দেখে বলল, “হ্যাঁ, তা পারব। কিন্তু রাস্তা তো চিনি না। দিদির বাড়ি পৌঁছব কী করে?”
“আরে ফোন রয়েছে কী করতে? ওটাই তো জি পি এস!”
হঠাৎ অঙ্কনের ফোনটা বেজে উঠল। ফোন ধরে কিছুক্ষণ হুঁ হাঁ করল তারপর ছেড়ে দিয়ে অঙ্কন বলল, “আমাদের বাড়ির কাছে পার্কিং লটে কী সব গন্ডগোল হয়েছে। পুলিশ এসেছিল। পঙ্কজ ফোন করেছিল বলতে।”
“ও কী গন্ডগোল?”
“কার নাকি গাড়ির লক ভাঙ্গার চেষ্টা করছিল কেউ। অ্যালার্ম বাজতে শুরু করেছিল আর তাই শুনে লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছিল। সিকিউরিটি পুলিশ সব চলে এসেছিল। কিন্তু তার আগেই বাছাধন পগার পাড়!”
“ও তা শোন আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। এখুনি তোর দিদির বাড়িতে যাব না। লাইব্রেরিতে চলে যাই। আজকে ওরা বিকেল পাঁচটা অবধি খোলা। দেখি যারা পিছু নিচ্ছে তাদের কত দম! লাইব্রেরির সামনে কতক্ষণ অপেক্ষা করতে পারে আমাদের জন্যে। তোর দিদিকে ফোন করে বল লাঞ্চে পৌঁছতে না পারলে আমরা ডিনারে গিয়ে খাবারগুলো খাবো!”
ভজার উপায়তেই কাজ হল। ওরা দুজনে লাইব্রেরি থেকে খেয়াল রাখছিল। কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করেই ধূসর গাড়ি লাইব্রেরি চত্বর ছেড়ে যেতে ভজা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, “চল এবার! উর্বশীদির মাটন কারির জন্যে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না দেখছি। কী মতলব কে জানে ব্যটাদের। লুইর সঙ্গে কথা বললাম বলেই কী পিছু নিচ্ছে?”
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন