লেবেল

মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০

নির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ ।। খুকু ভূঞ্যা

 










নির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ 

খুকু ভূঞ্যা



রূপালী বিকেল

বন্ধনের ভেতর আছড়ে পড়ে মাঠ,

সবুজ ঘাসে থৈ থৈ

গোরুর ঠোঁটে আনন্দ

শূন্যতার মাঝে বাঁশের বেড়া দিয়ে কেউ ঘর বাঁধছে,

সে দগ্ধ জীবনের কেউ নয়

আলোর স্বপ্ন

সূর্যের অঙ্কুর দেখবে বলে নির্মাণ করছে নির্জনতা।


মাঠ দেখলে মন খুলে যায়

আলপথ ধরে হেঁটে আসে মা

হাতে পাটশাক দুধের বোতল

বেড়ে যায় সাধ


কতদিন পর মা আমি পাশাপাশি, রূপালী বিকেল,

একঝাঁক সামখোলের উড়ে যাওয়া দেখলাম--



ভেজা মাটি


ধোয়া কাপড় ঝুলছে বাঁশে

কয়েক মিনিট আগে পাশাপাশি বসে ভাত খেতে খেতে

পরস্পরের ভেতর মরুভূমি কাঁটাচর ভ্রমণ করে এলাম।

এসবের ভীড়েও তুমি গুনে রেখেছো নয় রাত ঘুমিয়েছো ঘামপাতা বিছানায়,

নয় দুপুরের সাঁকো পার করে বাগদিডাঙা পেরিয়ে গেলে


কত যাওয়া দেখতে দেখতে বৃষ্টি জমা হয় চোখে

একপেশে মাথাধরা গোপন করে হাত নেড়ে বলি

আবার এসো,

কেউ কেউ কথা রাখে কেউ রাখে না


শুধু তুমি ভয়াল শূন্যতায় দীপ জ্বেলে যাও বারবার,

ভেজা মাটি জননী আমার---




সংকট শিখর


ঘাস খেতে খেতে কংকাল হয়ে যাচ্ছে গোরু

ভাত খেতে খেতে শিশু

স্বপ্ন খেতে খেতে চোখ

আর ধাক্কা খেতে খেতে জীবন।


অক্ষর, পাখির ঠোঁট থেকে খসে পড়া ক্ষুদের কণা

মাটি পেলেই কুরে খায় পিঁপড়ে

শুনতে পাই না অঙ্কুরের শব্দ। তবুও

প্রত্যাশার ভরসা দাঁড় করিয়ে রাখে ধানফুলের পাশে

দিগন্ত থেকে ছায়া নামছে ধীরে 

সেরে ওঠার স্পর্শ পেতে--


খরা প্রহর


ভোর না হতেই পাখি পাড়ায় তুমুল বিবাদ

জল সংকটের আভাস পেল কি?

কিংবা শুনেছে হয়তো শিকড়ের আর্তনাদ

লু বাতাস আর পোড়া ধুলোর ধোঁয়াশায় ছটফট করছে নীড়ের ডিম। 

শুনতে পাচ্ছি মাটি ফাটার শব্দ

শোক বিনিময় করতে করতে শিকড় ছিন্ন করছে গাছ

দুর্গম অন্ধকার নেমে আসছে আলপথ থেকে রাজপথে


তবু বুক কাঁপছে না,ঠান্ডা হয়ে আসছে না রক্ত কেন?

এখনও স্বাভাবিক!

দীর্ঘশ্বাস আর হাহাকারে ঝরে যাচ্ছে না খরাপ্রহর!

শান্ত হয়ে পুজোয় বসছি!

পাঠ করছি ধর্মগ্রন্থ!

ভাত রাধছি! সেলাই করছি!

আমার কি মৃত্যু কাম্য ছিল না হে ধরিত্রী, তোমার আদেশে---



স্নান


অক্ষরের সে সাহস কোথায় ছুঁয়ে থাকে তোমার রক্তাক্ত দুপুর?

আগুন ঢালা মাঝবিলে কিভাবে বুনে দাও ধান

অঙ্কুরের শব্দ শোনো প্রাণ পেতে,বুঝি না

একবিন্দু আলো চেয়ে হুতাশন দানা খুঁটে চলেছি,মাঠ মাঠ পায়রার মতো।


মেঘের গর্ভাশয় থেকে নেমে আসা বৃষ্টি কিভাবে ভাঙিয়েছে বীজের ঘুম দেখিনি

কান্না ধুতে স্নান সেরেছি তেঁতুলফুল বৃষ্টিতে

কোটরের কাঠবেড়ালি দেখেছে ভেজা শরীর

দেখিনি তার ঠোঁটের তৃষ্ণা


তোমার মাঠ, আমার আঁচ

তোমার ফসল, আমার ধোঁয়া

এসবের ভীড়েও দেখি খড়ের চালে দুটো শালিক

ভিজিয়ে নিচ্ছে ক্ষোভ বেদনা

শূন্যতাগুলি হিংস্র হয়ে ওঠার আগে---



পাণ্ডুলিপি


নষ্ট যত বলবে, অগ্নি শুদ্ধির

উন্মাদনায়

পৃথিবীর সব আগুন গিলে নেব গোগ্ৰাসে।

ভয়ঙ্কর এক শীত নামবে মাটিতে ঘাসে ফুলে ফসলে,

আকন্ঠ শীত খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেব গাছেদের,

ঝরিয়ে দেব পালক,

কার কাছে ফাগুন চাইবে তুমি?


পাখির মতো যে নদীর চোখ

ফুলের মতো যার হৃদয়

গন্ডি পেরোলেই ঝাঁক ঝাঁক বিষচোখ--


তুমি নষ্ট হলে ঘরে বসে,কলতলায় পুকুরপাড়ে

পেরিয়ে এসেছি চৌরাস্তা

শরীরে ধুনোর গন্ধ,প্রশ্বাসে চন্দন।


নষ্টা বলে ডাকো

আরো শুদ্ধ হব, পবিত্র উজ্জ্বল ইস্পাত বুকে বাজে না,

ফাটল ধরবে না, চিৎকার করব না

অগ্নিস্নান করেছি অক্ষর হোমে


হে পৃথিবী--

নষ্ট বলে ডাকো--









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন