দীর্ঘ কবিতা
শরতের আগমনে
গৌরী পাল
‘শরৎ তোমার শিশির ধোওয়া কুন্তলে/ বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে/ আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি’'। (রবীন্দ্রনাথ)
প্রকৃতিতে যখন অগ্নিক্ষরা
গ্রীষ্মের দাপট মুছে গেছে, যখন বর্ষার বিষণ্ণ বিধুর
নিঃসঙ্গতা আর নেই,
তখনই নিঃশব্দ চরণে আসে শরৎ।
শরৎ আসে সুন্দরের ও
স্বচ্ছতার পবিত্রতা নিয়ে।
বাংলার অঙ্গ ঝলকে ওঠে শ্যামলিমায়।
প্রান্তরে প্রান্তরে সবুজ শস্যের শোভা,
আকাশে নির্মল নীলের মায়া,
আর রৌদ্রকরোজ্জল দিন।
শরৎ আসে উদারতার প্রেরণা নিয়ে।
শরতের সৌন্দর্য এই নয়নাভিরাম ,
সৌন্দর্যের তুলনা নেই।
মেঘাবগুণ্ঠিত বর্ষণমুখর
দিনের অবসান হয়েছে,
রোদের রং সোনার বরণ।
ভরানদী তার পূর্ণতার গর্ব
নিয়ে ধেয়ে চলে সাগর পানে।
নদীর তীরে ফুটে থাকে
অজস্র সাদা কাশফুল,
ফুটে ওঠে শেফালি।
নীল আকাশে সাদা মেঘের
ভেলা, এতো সবুজ,
এতো নীল, আর এতো সাদার সমাবেশ ,
শিউলির ঝরে পড়ার মাঝেই
রয়েছে ত্যাগের মহিমা।
ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ার
লুকোচুরির খেলা আকাশে
বাতাসে বাজে মধুর আগমনি গান।
মানুষের মনে লাগে উৎসবের রঙ।
আকাশে বাতাসে উদার
মুক্তির আহবান।
জোছনা পুলকিত রাতের
মোহিনী রূপ উতলা করে।
ঘরের বন্ধন ছিন্ন করে বেরিয়ে
পড়তে ইচ্ছে করে প্রকৃতির হাতছানিতে।
গৃহবন্দি জীবনের ক্লান্তি ভুলতে বেরিয়ে পড়ে দূর দূরান্তে।
আগামি ফসলের সম্ভাবনার
বাণী সে বয়ে আনে।
মাঠে মাঠে নবজীবনের আশ্বাস।
বর্ষায় যে বীজ বোনা হয়েছে
হেমন্তে যে সোনালি ফসলের প্রতিশ্রুতি,
শরতে তারই পরিচর্যা।
অনাগত দিনের স্বপ্ন সম্ভাবনা
থাকে শরতের মাঝে।
ভরা নদীর, ভরা ফসলের
পক্কতায় নয়, পূর্ণতার।
সুন্দরের বুকে ‘অসুন্দরের
আঘাতও আসে মাঝে মাঝে।
শরতকে যেন পেয়ে বসে
হারানো বর্ষার স্মৃতি ,
অথবা কালবৈশাখির আবেগ। তাই কখনও কখনও দেখা
যায় বর্ষণ, ঝড়,
কখনও বা ধেয়ে আসে প্লাবন, বন্যা।
শরতের প্রসন্ন বর্ণবৈভবও
একদিন শেষ হয়ে যায়।
কালের চক্রের আবর্তনে শুধুই
পট পরিবর্তন,
আসে শরতের বিদায় সময়,
শিশির বিছানো,
শিউলি ঝরা পথের উপর
দিয়ে নিঃশব্দে চলে যায় শরৎ।
পথে পথে রেখে যায় ঝরা
শিউলি, বিষণ্ণ কাশের গুচ্ছ,
মাঠ ভরা নতুন ধানের মঞ্জুরী
বিসর্জনের বেদনায় মন ভরে ওঠে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন