লেবেল

শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০

কবিতা গুচ্ছ । মনোজ ভৌমিক

 



কবিতা গুচ্ছ
মনোজ ভৌমিক 



 তুমি অন্তহীন 


আজও তোমার গানের সুর হৃদয় ছুঁয়ে যায়! 

যখন থাকি একলা প্রাণে ক্লান্ত মন ব্যাথায়। 

গানের কলি সব ভাসতে থাকে মনের কোণে কোণে,

মনের মাঝেই মনকে খুঁজি ভীষণ সঙ্গোপনে। 


যে গান তুমি গেছো গেয়ে হয়নি সে আজও হারা,

অসীমের মাঝে ব্যাপ্ত সে সুর হৃদয় পাগলপারা। 

বাউলিয়া মন হেঁটে চলেছে পশ্চিমী পথ ধরে,

ভাটিয়ালি সুর দোলা খেয়ে যায় পদ্মাগঙ্গা তীরে। 


ভুলেও তোমায় পারিনি ভুলতে  রয়েছ হৃদয় জুড়ে, 

শতাব্দী হতে শতাব্দী তোমায় খুঁজছি নতুন সুরে। 

শ্রাবণের ধারা বয় যে এখনো হৃদয় বীণার তারে,

অসীমের মাঝে তুমি অম্লান ভুলবো কেমন করে!


সময় আগুনে জ্বলছে হিয়া  জীবন সঙ্গহীন,

সাথী হয়েছে আজ তোমার বাণী তুমি অন্তহীন।




পঁচাত্তরেও উড়ো


এসো এখন আমরা সবাই 

ধ্বজা ধ্বজা খেলি, 

লক্ষ ধ্বজা লুকিয়ে এ মনে

মনের কথা বলি। 

রক্তে ভেজা ওই ধ্বজাটা

উড়েছে কবে বলো!

ভাবনাটাকে মনের মাঝে 

বৃথাই কেন ছলো!!

ফাঁসির মঞ্চে বীর ক্ষুদিরাম 

সুভাষ নিরুদ্দেশ! 

মাতঙ্গিনী পতাকা বুকে 

গুলিতে হলো শেষ!! 

অহিংসার পূজারী হয়ে

লাভটা হলো কী? 

সাতচল্লিশের পতাকায় আজো

ধর্মের ছাপ দেখি! 

জাতের নামে বজ্জাতিটাও

আজকে দেখি বড়! 

চুয়াত্তরের ও ধ্বজা তুমি 

পঁচাত্তরেও উড়ো।



সাম্যের সামিয়ানা 

         

রক্ত ঝরা স্মৃতি বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাঁটাতার!

বিপর্যস্ত মানবিকতার এক নিদারুণ ইস্তেহার।

বিভেদকামী নীতির স্মারক ধর্মান্ধ মানসিকতার,

আন্তরিকতার সন্ধানে ফেরা আজ বড় দায়ভার।


অপাংক্তেয় স্বাধীনতা ভাসছে নীরব অশ্রুজলে,

ভাতৃত্ববোধ মরে গেছে মসনদ লোভীদের ছলে।

মৌলবাদী সন্ত্রাসী নীতি মাথাচাড়া দেয় দিগ্বিদিকে ,

সময়ের বিড়ম্বনায় হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে চৌদিকে।


অযাচিত স্বাধীনতার পরও খুঁজছে কারা জঘন্য বিভেদ নীতি!

ওরা কি বোঝে না এ দেশের ভাবনা আজও সম্প্রতি।

সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু নিয়ে প্রতিবেশীর রিক্ত প্রহসন,

পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখুক কোথায় আমুল অধঃপতন!


অহেতুক উস্কানীতে কারা বাঁধতে চায় এ দেশে কাঁটাতার!

এ ধর্মনিরপেক্ষ দেশে চোখ না রেখে নিজেরে দেখুক বারংবার।

নিউক্লিয় শপথ না ভেঙে এসো গাই মহামিলনের গান,

সর্বধর্ম সমন্বয়ে আজও এ দেশ বিশ্বে মহান।


সময় হারানো বেলায় এসো জাগ্রত করি মহাত্মা ভাবনা,

আজ তোমার জন্মদিনে টাঙিয়ে দাও সাম্যের সামিয়ানা।


শেষ আবেদন 


সংখ্যাগুন লাভ কি হবে! 

গুনতে থাকো সময়, 

মৃত্যু দূত দাঁড়িয়ে শিয়রে

প্রাণেতে সদাই ভয়। 

কার গলাতে পড়বে ফাঁন্দ

বুঝতে পারে না কেউ, 

মুখোবাস আর দূরত্বতে 

চলছে বাঁচার ঢেউ! 

মানুষ তুমি তো বিশ্বশ্রেষ্ঠ 

তোমার তুলনা নাই, 

তোমার তুলনা তুমি নিজে 

তার আগে সব ছাই। 

পৃথিবীটাকে ভাগ করেছো

দুই শত রেখা দিয়ে, 

হিংসা বিদ্বেষ দলাদলি 

ভুবনে দিলে ছড়িয়ে! 

ধর্ম দিয়ে গড়লে বিভেদ 

মানুষ হতে মানুষ, 

জাতের নামে বজ্জাতিটাও

তোমার গড়া ফানুস। 

বারুদে খেলা হয়নি শেষ 

কীটাণুতে সসাগরা! 

আধিপত্যের অহংকারে

নিজেকে জাহির করা। 

একবিংশের ধ্বংস যজ্ঞে

কত যে দিলে আহুতি! 

মানুষ তুমি মানুষ হও

দেখো পুরাতন স্মৃতি।

হ্যদয়মাঝে উঠুক জেগে

ঊনবিংশের উচ্ছাস, 

সবাই যেন বাঁচতে শেখে

মনেতে নিয়ে বিশ্বাস।


1 টি মন্তব্য: