কবিতা গুচ্ছ
সীমন্ত মৈত্র
মঞ্চের কান্না
কালো পর্দা নেমে এসেছে মঞ্চে
শিল্পীরা সব রঙের প্রলেপে ক্লান্ত।
ছড়ানো ছেটানো রস্টামেতে স্বপ্ন...
উইংসের খাঁজে আলোরাও বিবস্ত্র।
মেঝেতে এখনো সিরাজ ছুটছে ঘোড়ায়...
এখনও আগুনে আলো আধারির গঞ্জ...
ওই দেখা যায় মীরজাফরের উষ্ণীব,
এক কোনেতে পরে আছে নির্লিপ্ত।
তরবারিও আলতা রঙে নির্জীব
চোখ আর মনের বিবাদ করে ভঞ্জ।
সভাগৃহতে করতালি সন্ত্রস্ত
কুণ্ঠিত হয়ে আসনেতে ঢাকে মুখ ,
যুদ্ধবাজের হাতের নাগরদোলায়
কিছুক্ষণ সে দিয়েছে বেজায় সুখ ।
আস্তে আস্তে সবাই গেলে চলে
গুটি গুটি পায়ে আঁধার এগিয়ে আসে ...
যেখানে নবাব দিয়েছিলো তার শির,
তারই সাথে আজ সেও নিথর স্থির
ছুঁয়ে যায় মাটি চুম্বনে ভালবাসে ।
আলক্ষ্যে কি যেন তুলে নেয় তার কোলে ...
স্বাধীন ভাবে মরতে সে না পারলেও,
শেকল ভাঙা কান্না একাই কাঁদে।
আত্মীয়
লুকিয়ে রাখোনি জানি,
ঘুড়িয়ে রেখেছো মুখ।
যেন কোথাও থেকেও আজ
যায় না দেখা সুখ!
আমার এখন কষ্ট
তাই দেখছি ফিরে তোমায়;
করোনি অযথা নষ্ট,
আজ গুছিয়ে রাখছো সময়।
জেনো গোছানো জিনিষও
স্যাঁতস্যাঁতে হয়
না পেলে বাতাস আলো,
কখনো অমন দরকারে আর
লাগে না তেমন ভালো।
তখনও যদি জোর হাওয়া লাগে,
নাই বা বললে আমায়,
দেখতে পারি ফিরে তোমাকে...
ঝড়তে পারে ফুঁয়ের আঘাতে
ইতস্তত কঠিন সে জল,
জমাট চোখের কোনায়!
উপহার
জ্বলছে নিবছে নিওন আলো...
এ শহরেতে আজ
তুমি আসবে বলে,
তাই মায়ের কোলের
দুধের শিশুর
আজকে ভীষণ কাজ...
সে জানে তার ঘরটা কালো!
নতুন যত জামা জুতোয়
উড়ছে জাতীর বাপ;
আর কাজের মূল্য
ছেলেটা পায়
শেষ আশ্বিনের তাপ।
সেই তাপই তার সৌর প্যানেল...
ঘরে ফুটো ছাদ,
তবুও শহুরে নিওন আলোয় পড়েছে যা বাদ
ঘরের মাঝে ঝরছে তা হয়ে মায়ের আশীর্বাদ...
দ্যাখো হাসে ছেলে মায়ের কোলে,
বুকে স্নেহ উপহার!
কালপুরুষ
রাত জাগো গোচরে অগোচরে
বহু জমায়েতের মাঝে,
স্থিতধী প্রাজ্ঞের মত;
দেখে যাও বয়ে চলা অবিরাম...
এপারে ভেঙে ঘাট
ওপারে ঘর বাঁধা,
এ কোন স্বরলিপিতে বাঁধা গান!
মায়া চাঁদ, চাঁদ মুখ
দুঃখের সে অসুখ
গোগ্রাসে গিলে খায় হাজার সূর্য...
তরবারি না উঁচিয়ে,
অনিমেষ পাহারায়,
তুমি লুব্ধক কোলে কি যে খুঁজছো!
এখনও তো জানে না
গেছে যার সব খোওয়া
বিশ্বাসে খিল দিয়ে জীবনের দরজায়;
বিচার মুকুট মাথায়
চেনা ভিড়ে, চেনা ঘুমে
কালের প্রহরী সে নিয়োজিত পাহারায়!
স্মৃতি
হাঁটছি আমরা সবাই।
কিন্তু কেউ যাবো না কোথাও;
শুধু সরে যাবে পায়ের তলার মাটি,
পিছিয়ে যাচ্ছে সময়
আর বলা কথাগুলো,
প্রতিধ্বনি হয়ে তারা কেবল আঁকবে ছবি।
নতুন বেলার পাতায়
তখন এ সব কথা
আর যা কিছু না বলা...
খুঁজবে হাতড়ে রঙিন ভোরের আলো,
রংচটা সব পাতা
কাঁচা হাতের লেখায়,
মন খারাপের হাসিটাও হাসতে পারবে ভালো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন