জাগো কবিতা জাগো
তপনজ্যোতি মাজি
জাগো কবিতা জাগো।
ওষ্ঠে প্রথম আলোর মতো জেগে
ওঠো শব্দরা।
নির্জন ঝর্ণা
কিংবা সুন্দরবনের মোহনামুখী
নদীর মতো জাগো।
বিপুল আলোড়ন শব্দের সাদা কালো
শরীরে।
তুমি পূর্বাভাস বোঝো ,
প্রতিবাদ , প্রেম ও সম্পন্নতা বোঝো।
জেগে ওঠো শব্দরা
আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির মতো।
তোমার ঘুম-ওষ্ঠে ওষ্ঠের নীরব স্পর্শের
মতো ধীর লয়ে উচ্চারিত হোক
নিবিড় শব্দরা।
নর্মদা তীরবর্তী আশ্রমে যে ভাবে জাগ্রত
হয় আলোর আভাস ,
মৃদুস্বর শব্দরা জেগে উঠুক
অরণ্যের আলো ঝিল মিল
ঝরোকার মত।।
কতদিন শরতের শিশিরে ভিজেনি তোমার
ভ্রূপল্লব !
কতদিন নিশীথ প্রতিমার মতো দাঁড়াওনি
রাত্রিছাদে একা !
কতদিন অঝোর শ্রাবনের মতো শাওয়ারের
নিচে দঁড়িয়ে
উচ্চারণ করোনি সুনীলের কবিতা ,
' ভ্রুপল্লবে ডাক দিলে চন্দনের বনে …'
কতদিন !
জাগো কবিতারা , জাগো।
জানালার পাশে বৃষ্টি সকাল,
দেখা হলো কবিতা রমণী।
চশমার কাঁচে মেঘ বৃষ্টির লাজুক আকাশ ,
এই মুহূর্ত কবিতার।
সমগ্র শরীরে সবুজের নীরব প্রস্তুতি ,
জাগো , কবিতা , জাগো।
প্রণয় রেখার মতো জাগো ,
নদীর বুকে নিভৃত জ্যোৎস্নার মতো
জাগো ,
কবিতা , জাগো।
এই ধরিত্রী সর্বংসহা।
গ্রাম ঘিরে আছে সবুজ মাঠ ,
মাঠে গর্ভবতী শস্যের নিঝুম ঘুম।
এই নৈঃশব্দ মথিত প্রহরে
জাগো ,
কবিতা জাগো।
তোমার শরীরে সহস্র বছরের শ্লোক
দেওয়াল লিপির
মতো এঁকেছে পটুয়া ,
বাণী চিত্রকর।
জাগো , কবিতা জাগো।
করোনা পীড়িত কাল।
দারুন এ দুঃসময়।
কতদিন
স্পর্শের ব্যবধানে আছে সম্পর্ক !
দ্বিধা ও সংকোচ নিরাকার
তর্জনীর মতো নির্দেশক
দূরত্বে রেখেছে
বৃষ্টি ও পাতার অন্বয় !
সব তুচ্ছ করে ,
মেঘস্বরে বলতো কবিতা।
দীপ্ত ও উন্নত ভঙ্গি মুছে দিক
নিষিদ্ধ দ্রাঘিমা।
একবার !
কাল অনিঃশেষ।
খন্ড প্রস্তরের মতো গড়িয়ে যাচ্ছে
গৃহবন্দী জীবন।
হিল স্টেশনে রাত্রির রূপ
দেখছেননা কবি , শিল্পী ,
হানিমুনে যাওয়া হলুদ দম্পতি।
তুমি অবরুদ্ধ সময়ের পর্দা সরিয়ে
শোনাওতো
পুর্ণেন্দুর প্রেমের কবিতা ,
' সেই গল্পটা '।
এক বার উছ্বসিত সবাই বলুক
আমরা করবো জয়।
এই চান্দ্রপ্রান্তর তোমার
উচ্চারণ ভূমি।
তুমি স্বাধীন ও স্বয়ম্বর রমণীর মতো
নির্বাচন করো
পাহাড় ও অরণ্যের সংকলন।
প্রেম ও প্রকৃতি ,
ব্যাথা ও প্রতিবাদের দীর্ঘ কবিত।।
তোমার ওষ্ঠ হোক এই অবরুদ্ধ সময়ের
প্রথম রোদ।
প্রথম বৃষ্টি।
কবিতার অনাঘ্রাত আলো মুছে দিক
মৃত্যু ভয় ,
প্রাণের গৌরবে।
۔
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন