নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ
নিমাই আদক
১.
অসুখ
কৃষ্ণবর্ণ মেঘের অন্তরালে হাসছে কেউ
কালো কালো ধোঁয়া,অসময়ে নিম্নচাপ এলোমেলো ঢেউ
পৃথিবীর অসুখ এখন, গভীর থেকে গভীরতর
হে প্রভু আলো দাও, আলো দাও আরো
বিদ্যুতের ঝলকানি, অশনি সঙ্কেত কালবৈশাখীর পূর্বাভাষ
প্রকৃতির সাথে নিষ্ঠুরতা চোখে একরাশ সর্বনাশ
চলো, সবুজের সন্ধানে পথ চলি দিগন্তরেখার শেষ সীমায়
হে বসুধা, তুমি শান্ত হও, আমরা সব এক হই মগ্ন ভালোবাসায় ।।
২.
একদিন
বিবর্ণ মুখের সারি
রুক্ষ মাটিতে দাঁড়িয়ে দুহাত তুলে প্রতিবাদ জানায়
নিজস্ব অধিকারে স্বতন্ত্র উচ্চারণে
রক্ত চক্ষুর ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে
একত্রিত সমবেত শান্তি
না পাওয়ার তীব্র যন্ত্রণায় পিঠ আটকে যায় হতাশার দেওয়ালে
চারদিকে ছলনার সুগভীর গিরিখাদ
লোভাতুর চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে
অধিকার হরণের সুচতুর কৌশল
এত বঞ্চনার প্রাচীরে ভেঙে ছুটে আসে নিরন্ন মানুষের মিছিল
ক্ষুধার্ত মানুষের নাকে ভেসে বেড়ায় নবান্নের গন্ধ
চলো, আজ উনুন জ্বালি
৩.
আলো
তবে কি ভেসে যাব খড়কুটোর মতো
মোহনার দিকে। সব লিখে রাখি মনের যত ক্ষত
নদীর ওপারে সুখ শান্তি ; কালো ছায়া এপারে
অসংখ্য পাখি উড়ে যায় আকাশের শেষ কিনারে।
প্রতিদিন আলো- বাতাস, মেঘ ও রোদ্দুর
সাদা সাদা বক ডানা মেলে যেতে চায় বহুদূর
সবুজ ধান ক্ষেতে বেঁচে থাকি। খুঁজে নিই আলো
চারিদিকে এত অন্ধকার, অন্ধকার শেষে ঘন কালো
তবু একদিন আসবে সকাল, আলো থইথই রোদ্দুর
৪.
প্রণাম
(কবি শম্ভু রক্ষিত স্মরণে)
পাথর ভেঙে তৈরি কর মূর্তি।তাতে লেগে থাকে নরম মাটি
তোমার অন্তরজুড়ে যে উত্তাপ,তা পবিত্র এবং খাঁটি
সবুজ আলপথ ধরে এগিয়ে গেলে তোমার ঠিকানা
৫.
অপেক্ষা
তখন ও সন্ধ্যা নামেনি
গোধূলি আলোয় ক্ষণিক প্রত্যাশায় কেউ
হাতের ওপর হাত রেখে সাঁকো ধরে এগিয়ে যাচ্ছে কেউ
ওই দূরে নির্জন দেবদারুর ছায়ায় অপেক্ষায়
কেউ কেউ মানে আমি, তুমি অথবা আমরা
কেউ কেউ মানে আমি, তুমি অথবা আমরা
এখন সন্ধ্যা গড়িয়ে গভীর রাত্রি
রাতজাগা পাখির মতো ঘুরে বেড়ায় কেউ
নিষিদ্ধ পল্লি থেকে বেসামাল হয়ে বাড়ি ফেরে কেউ
ওই দূরের পথ চেয়ে প্রিয়জনের অপেক্ষায় কেউ
কেউ মানে আমি, তুমি অথবা আমরা
এইভাবেই প্রতিদিন আমরা পরস্পরের অপেক্ষায় থাকি।
শম্ভু রক্ষিতের জন্য শ্রদ্ধা।
উত্তরমুছুন