স্বপন বিশ্বাস
ঢোলক
ভেবেছিলে,এভাবেই জীবনটা চলে যাবে
তরুতলে রাধা আর বাঁশি হবে
জীবনের ধূপ-ধুনো ;
সানাই তোমার ভালো লেগেছিল এই তো সেদিন
মাঝে, দু'একটা বীণ।
তারপর ? ভেবেছিলে কখনো
বাদ্যযন্ত্রের দোকানে দোকানে
কেন এত আনদ্ধ ঢোলক টাঙানো ?
ওই ঢোলকের মতো তোমাকেও
যে কেবল ঝুলতে হবে,আর
লাঠির আঘাতে, হাতের চাঁটিতে
ডানদিকে বামদিকে
অনবরত বেজে যেতে হবে
জীবনভর,
বাঁশি হাতে তুমি
ভেবেছিলে কি কখনো ?
রাস্তার শ্রমিকেরা
ওরা ফিরছিল ।
যার যার ডেরা ছেড়ে ,অলিগলি পথ ভেঙ্গে
রাজপথ ধরে পায়ে হেঁটে, হেঁটে
ওরা ফিরছিল।
মাথায় বোঁচকা কারো,ছাতু চিঁড়ে কিছু বাঁধা
কারো হাত ক্ষুধার্ত মেয়েটির হাতে ধরা।
সন্তান-সম্ভবা স্ত্রী,জিরোতে চেয়েও
হাঁটা ফের শুরু করা।
মাথার উপরে রোদ,তেষ্টায় ফেটে গেছে ছাতি
কখনো মিলেছে রুটি,একটি-দুটি
কখন নেমেছে রাত ; দিন-রাত ভুলে
অনেক লোকের দলে
ওরা হাঁটছিল।
পিছনে ভীষণ ভয়,করোনার
তার চেয়ে বেশি ভয় না খেয়ে মরার।
কখনো পুলিশে আটকে দিয়েছে পথ
নামিয়ে দিয়েছে লরি থেকে,
মর্টার মেসিনের খোল থেকে;
তাদের বরাদ্দ নয় ট্রেন,নামেনি যে প্লেন
তাদেরকে দেখে।
নিজ দেশে পরিযায়ী, বোম্বে,পুণে থেকে
আমেদাবাদ থেকে,হায়দ্রাবাদ থেকে
মাইল,মাইল হেঁটে ওরা ফিরছিল।
কখন ছিটকে পড়েছে ছেলে,
পিছিয়ে পড়েছে মেয়ে ;
লুটিয়ে পড়েছে পথে কাউকে না বলে
কেউ জানলো না,কতজন এভাবেই গেল চলে।
কেউ ভোরে, রাজপথ ছেড়ে
হাঁটা দিল রেলপথ ধরে।
হাঁটতে হাঁটতে পথে,পড়ে গেছে কতবার
কতবার,পড়া থেকে বেঁচে গেছে কোনমতে
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তবু হেঁটে গেছে
উঁচু- নীচু রেলপথে।
শ্রান্তিতে,ঘুমিয়ে পড়েছে খুব রাতে ;
সকালের ট্রেন চাপা দিয়ে চলে গেছে
তারা জানল না কেউ ;উঠল না আর জেগে।
- কোন দেশে হেঁটে ফিরছিল তারা
শ্রমিকের দেশ,কোন সে স্বদেশ ?
'কোন দেশ ছেড়ে কোন দেশে' তারা হাঁটছিল?
কেউ জানলো না,কেউ উঠলো না রেগে।
যারা মরে গেছে
যারা মারা গেছে বহুদিন,শুয়ে আছে
চিৎ হয়ে নির্নিমেষ আকাশের দিকে চেয়ে
তারা তো কাঁদতে জানেনা ;
তাদের গল্পগুলি,
কষ্টের কথাগুলি
মিশে আছে পথের ধুলায়।
যাদের নিরক্ত শরীরে,শুষ্ক ঠোঁটে
একফোঁটা প্রেম নামেনি কোনদিন,
অর্থ,যশ মরে যাওয়া স্বপ্নের মতো চুপিসারে ঝরে গেছে
তারা শুয়ে অসহায়
মৃত,প্রতিবাদ-হীন।
যারা মরে গেছে প্রতিদিন
অপমানে নীল, তাদের মাড়িয়ে কতদিন
হেঁটে গেছে বর্বর বুট ;শকুনের পাহারায়
ভেসে গেছে স্রোতে ।
যতই না নদী আজ দিশাহীন
এঁকে বেঁকে খুঁজে ফেরে কোথাও ব-দ্বীপ
যারা মরে আছে,
বেঁচেও ছিল না কোনদিন
তারা যেন ভয়হীন,শুয়ে আছে চিৎ হয়ে
নির্নিমেষ আকাশের দিকে চেয়ে।
যেতে পারি,কিন্তু...
দেখো,এক গাঁও থেকে অন্য গাঁয়
যাওয়াটা কিছু নয় দেবাশীষ;
যাবার বেলা ভোরবেলা, দোর গোড়াতে জল ঢেলে
গোবরের ছড়াটুকু দিয়ে যেতে চাই।
মাচা ধরে লকলকিয়ে উঠে আসছে
লাউডগাখানা,ফুল ফুটলো বলে—
একটা ফল দেখে যাব না ?
উঠোনে ফুটন্ত গোলাপ ;
পাপড়িতে টলোমল এখনো শিশির
আলো এলে সেলফিতে তুলে নেব।
এক গাঁও থেকে অন্য গাঁয়
যেতে পারি,যে কোন সময়েই যেতে পারি
বাক্স গোছানোই ; শুধু সকলের
একখানা গ্রুপ ফটো পেলে চলে যাই।
তাই বলে,এই অকালে,আকালে
একদল ম্লান মুখ,বিষন্ন ভীত মানুষের ছবি নিয়ে
কি করে যাই,বলো ?
ধারা
মন বৃন্দাবনের এই ধারা...
রাধার কৃষ্ণ পাওয়া হয় না
কৃষ্ণের রাধা; মাঝখানে আয়ান
আয়ানের সাথে রাধার নিত্য বসবাস
অথচ নিত্যই যে বংশী ডাকে,বংশী বাজে
কদমতলে বাঁকার।
জীবনভর যত চাও, এই ধারা —
রাধা কৃষ্ণ পায় না,কৃষ্ণ রাধা পায় না
আয়ান,রাধাকৃষ্ণ পায় না।
শুধু এইটুকু বুঝে নিতে
শেষ হয় কুসুমের কাল,বৃন্দাবন বেলা।
যমুনা পুলিনে একদিন
সে রাধাও থাকে না
কৃষ্ণ থাকে না
আয়ান থাকে না ;
জেগে থাকে দীর্ঘশ্বাস,আর
শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি থাকে পৃথিবীতে,
এই ধারা।
অপ্রকাশিত যেকোনো লেখা পাঠান
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন