লেবেল

রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫

।। প্রতিদিন বিভাগ।। ।। জুন সংখ্যা।। বিষয় - গল্প ( ৪০০ শব্দের মধ্যে) —৯ অসুরনাশিনী — দীনেশ সরকার।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।




          

          ।।  প্রতিদিন বিভাগ।। 

             ।।  জুন সংখ্যা।। 

      বিষয় - গল্প ( ৪০০ শব্দের মধ্যে) —৯






অসুরনাশিনী

দীনেশ সরকার

 

 

          ‘দে টাকা দে‘ বলে টলতে টলতে বদন জবার হাত চেপে ধরে।

          ‘না, দেব না, একটা টাকাও তোমায় দেব না।‘ জবা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে।

          ‘ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। আজ শনিবার হপ্তা পেয়েছিস। ভালোয় ভালোয় টাকা বার কর।‘

         ‘বললাম না, একটা টাকাও তোমায় দেব না। তোমার লজ্জা করে না বউএর কামাইয়ের টাকায় মদ গিলতে।‘

          ‘না করে না। বেশী ফ্যাচ ফ্যাচ না করে তুই টাকা বার কর।‘

          ‘বললাম তো মদ গেলার জন্য একটা টাকাও তোমায় দেব না।‘ 

          ‘দিবি না! দেখি তুই দিস্‌ কিনা!’ বদন জবার হাত ছেড়ে দিয়ে জবার চুলের মুঠি ধরে হ্যাচকা টানে নিজের দিকে টেনে এনে শাড়ির আঁচলের খুঁট খোলার চেষ্টা করে। খুঁট খুলে দেখে আঁচলের খুঁটে দুটো লজেন্স বাঁধা। লজেন্স দুটো ঘরের মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আরও জোরে চুলের মুঠি ঝাঁকিয়ে বলে,

           ‘টাকা কোথায় রেখেছিস্‌ বল। শিগগির বার কর।‘

           ‘আজ হপ্তা হয় নি।‘

          ‘আজ শনিবার, হপ্তা হয় নি বললেই আমি বিশ্বাস করবো ভেবেছিস। তুই ভালোয় ভালোয় টাকা দিবি কিনা বল।‘

            ‘না, একটা টাকাও তোমায় দেব না।‘  

           ‘দিবি না! দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা!’ বদন টলতে টলতে ঘরের বাইরে বেরিয়ে যায়। বদন আগে একটা ভ্যানরিক্সা চালাত। যা উপায় করত তার বেশীরভাগটাই মদের ঠেকে দিত। জবা সংসারের জন্য টাকা চাইলে হ’ত অশান্তি। জুটতো চড় থাপ্পড়। ছোট ছোট দুটো ছেলেমেয়ের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য জবা এক কন্ট্রাকটরকে ধরে রাজমিস্ত্রীর যোগাড়ের কাজ জুটিয়ে নেয়। তাতে বদন আরও পেয়ে বসে। যখন তখন মদ খাওয়ার টাকার জন্য জবার ওপর হুজ্জুতি করে। মারধর করে।

            বাবামায়ের ঝগড়া দেখে ছেলেমেয়েদুটো ভয়ে ঘরের এককোণায় সিঁটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জবা লজেন্সদুটো মেঝে থেকে তুলে ছেলেমেয়েদুটোর হাতে দিয়ে ওদেরকে আদর করে।    

            বদন বাইরে থেকে একটা গাছের ডাল ভেঙে এনে জবার পিঠে সাপাসপ কয়েক ঘা বসিয়ে দেয়। বলে, ‘টাকা বার কর্‌! বার কর টাকা!’

            বাচ্চাদুটো ভয়ে কান্না জুড়ে দেয়। জবার সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায়। জবা উঠে দাঁড়িয়ে বদনকে এক ধাক্কা দিতেই বদন ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। আসলে চোলাই মদ খেয়ে খেয়ে বদনের শরীরে শক্তি বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তাই সামান্য ধাক্কাও সহ্য করতে পারে না। জবার চোখ দিয়ে আগুন বের হয়। বদনের হাত থেকে গাছের ডালটা কেড়ে নিয়ে জবা সপাসপ কয়েক ঘা কষিয়ে দেয় বদনকে। বদন চিৎকার করে ওঠে, ‘বাবা গো, মেরে ফেললে গো।‘

          রণচন্ডী রূপ ধরে জবা বলে ,’খুব বউ পেটানোর শখ হয়েছে, না! তোমার বউ পেটানোর শখ আমি ঘুঁচিয়ে দেব। সপাসপ আরও কয়েকঘা কষিয়ে দেয় জবা।

          ‘আর মারিস্‌ নে জবা। আমি মরে যাব।‘

          ‘মরলে তো আমি বাঁচি। আমার হাড় জুড়োয়।‘ জবা ফোঁস ফোঁস করতে থাকে। 

          ‘তুই তোর বরের মরণ চাইছিস্‌ জবা।‘

         ‘বর! যে বর তার বউ-বাচ্চাদের খাওয়াতে-পরাতে পারে না, তেমন বর থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। ভ্যান রিক্সাটা কি করেছ?’

          ‘বেচে দিয়েছি।‘

          ‘টাকা কি করেছ?’

          ‘মদ খেয়েছি।‘

         ‘ভ্যান রিক্সা বেচে মদ খাওয়া!’ জবা আরও কয়েক ঘা কষিয়ে দেয়। ‘তোমার মদ খাওয়া আমি ঘুঁচিয়ে দেব।‘

         ‘ও বাবা গো! মরে গেলাম গো!’

         ‘কান খুলে শুনে রাখ। সকালে উঠে মজুর খাটতে কাজে যাবে। যদি মদের ঠেকের দিকে ঠ্যাং বাড়িয়েছ তো তোমার ঠ্যাংদুটো আমি ভেঙে দেব। এমনিতে তো তোমাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াচ্ছি। তখন ঠ্যাং ভেঙে ঘরে ফেলে রেখে খাওয়াব। আর যদি কোনদিন আমার গায়ে হাত তুলেছ, তোমার হাতদুটোও আমি ভেঙে দেব। আমরা মায়ের জাত, আমরা সব কিছু সহ্য করতে পারি, আবার প্রয়োজনে মাদুর্গার মতো অসুরনাশিনীও  হতে পারি। ভাত রান্না করা আছে, বেড়ে খেয়ে শূয়ে পড়।

           চিৎকার চেঁচামেচি আর বাচ্চাদুটোর কান্না শুনে আশপাশের ঝুপড়ি থেকে বউরা এসে জবার ঘরের সামনে ভিড় জমায়। টিয়া, লক্ষ্মী বলে ওঠে, ‘তুই ঠিক করেছিস্‌ জবা। তুই আমাদের পথ দেখালি জবা। আমরাও আর সোয়ামিদেরহাতে মার খাব না। আমরাও রুখে দাঁড়াব। আমরাও অসুরনাশিনী হব।‘

           জবা বাচ্চাদুটোকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন